ক্যান্সার যোদ্ধাদের জন্য বাঙালি খাবারের তালিকা ক্যান্সারের নাম শুনে কেমন যেন একটা গায়ে কাঁটা দেয়। এমন মারণ রোগকে কে না ভয় পায়! চিকিৎসা এবং বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সারের নানান ওষুধ ও চিকিৎসা উপায় এসেছে ঠিকই কিছু জিনিস মেনে চলতেই হবে। ক্যান্সার ফাইটারের (Cancer Fighters) ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমটি হল, সেই পর্যন্ত লড়াই করার অদম্য মনের জোর, দ্বিতীয়টি হল সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, আর তৃতীয়টি হল সঠিক ডায়েট প্ল্যান বা খাদ্য তালিকা। সঠিক ডায়েট প্ল্যান আপনার শরীরকে যেমন সঠিক পুষ্টি জোগাবে তেমনই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যথেষ্ট শক্তির জোগান দেবে। সেইসঙ্গে এটি ক্যান্সারের চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্লান্তি ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার চিকিৎসার সময় কী আমার ডায়েট পরিবর্তন করা উচিতঃ আপনি বিভিন্ন অনলাইন সংস্থান পাবেন যারা “সেরা” ক্যান্সার ডায়েট সম্পর্কে বলে। তারা হয়তো আপনাকে মেডিটেরিয়ান ডায়েট (mediterranean diet) বা ভেগান ডায়েটের (vegan diet) পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু আসল বাস্তবটা হল ক্যান্সার রোগীদের প্রায়শই চিকিৎসার সময় খাবার এমনকী নিজের পছন্দের খাবার খেতেও সমস্যা হয়।
এইরকম পরিস্থিতিতে অন্য অপরিচিত কোনও ডায়েট বেছে নেওয়া একেবারেই ঠিক হবে না। আমরা সুপারিশ করি, আপনি যে খাবার খেতে পছন্দ করেন, সেই খাবারই খান। অযথা অভ্যস্ত নন এমন কোনও খাবার তৈরি করা এবং খাওয়ার অতিরিক্ত চাপ নিতে যাবেন না। যাইহোক, আপনার রোজকার খাবারের মধ্যে থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়া ভালো। আমাদের এই খাদ্য তালিকার মাধ্যমে, আমরা উচ্চ প্রোটিন এবং উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত বাঙালি খাবারগুলি তুলে ধরলাম যা আপনাকে সম্পূর্ণ পুষ্টি জোগাবে।
ক্যান্সার চিকিৎসার সময় কী আমিষ খাবারের চেয়ে নিরামিষ খাবার ভালো? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হল, আপনি যদি আমিষ খাবার খেয়ে অভ্যস্ত, তাহলে আমিষ খাবার খাওয়া চালিয়ে যেতে পারেন। আর আপনি যদি নিরামিষভোজী হন তাহলে আপনি সেই ডায়েটই ফলো করুন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনি যাতে খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে প্রোটিন পান, সেটা সুনিশ্চিত করুন।
ডিম, মুরগির মাংস এবং মাছের মতো আমিষ খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে এবং আপনাকে আপনার শরীরের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।
নিরামিষভোজী ক্ষেত্রে অনেক বেশি করে মসুর ডাল এবং মটরশুটি খেতে হবে, যা প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে। পনির এবং দুধের মতো অন্যান্য খাবারও থেকেও প্রচুর প্রোটিন পেতে সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি নিরামিষ খান তাহলে প্রোটিনের মাত্রার বিষয়ে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে উচ্চ প্রোটিন যুক্ত নিরামিষ খাবার আপনার ডায়েটে যোগ করুন।
ক্যান্সার চিকিৎসার সময় কোন খাবার এড়িয়ে চলা ভালো? এমন অনেক খাবার রয়েছে যা ময়দা দিয়ে তৈরি অথবা ডিপ ফ্রাই। এই ধরণের খাবারে ফাইবারের মাত্রা কম থাকে এবং খাবারের সামগ্রিক পুষ্টিগুণ কমিয়ে দেয়। এই জাতীয় খাবার (ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার বা বেশি ভাজা খাবার) এড়িয়ে চলা ভালো। বাঙালির অন্যতম পছ্ন্দের খাবারের মধ্যে হল লুচি।
ডুবুডবু তেজে ভাজা ময়দার লুচি হলে তো সকালের জলখাবারটা জাস্ট জমে যায়। তবে ক্যান্সার রোগীদের জন্য লুচির বদলে রুটি পা পরোটা অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। একইভাবে, মুচমুচে ভাজা মাছের বদলে মাছ ভাপা বা মাছের ঝোল খাওয়ার চেষ্টা করুন। তাই বলে, আপনি যদি এই পরিস্থিতিতে যখন কোনও কিছু খেতে পারছেন না, এই জাতীয় কোনও কিছু খাওয়ার ইচ্ছে হলে যে তা একেবারে খাওয়া যাবে না তা কিন্তু নয়।
শুধু আপনার খাদ্য তালিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে খান এবং সবসময় আপনার খাদ্য তালিকায় যাতে প্রচুর তাজা শাকসবজি এবং ফল থাকে সেটা সুনিশ্চিত করুন। যে সমস্ত রোগীদের মুখে আলসারের সমস্যা রয়েছে তা অত্যধিক মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপির মতো চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মুখ ও জিভে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই হালকা মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার সবচেয়ে ভালো। সেইসঙ্গে খুব গরম খাবার খেয়ে অনেকের বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। তাই খাবার ঠান্ডা করে, হালকা গরম খান।
বাঙালিদের জন্য (আমিষ) খাবারের তালিকা
আমরা বিভিন্ন রন্ধনপ্রণালীর খাবারের পরিকল্পনার উপর একটি ব্লগ সিরিজ চালাচ্ছি, যাতে আপনি আপনার পরিচিত খাবার খাওয়া চালিয়ে যেতে পারেন। পাশাপাশি আপনার শরীর যাতে জন্য সঠিক পরিমাণে ক্যালোরি এবং পুষ্টি পায়।
এখানে একজন বাঙালি যিনি আমিষ খেতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য সাপ্তাহিক খাবারের পরিকল্পনা তুলে ধরা হলঃ-
এই নিবন্ধে যে খাবারের পরিকল্পনাটি তুলে ধরা হয়েছে সেটি হল পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামের বাসিন্দাদের জন্য এবং যারা ক্যান্সার চিকিৎসার সময় এই খাবার খেতে পছন্দ করেন। বাংলাদেশিদের কাছেও এই খাদ্য তালিকা অনেকটায় একই রকম মনে হতে পারে।
খাদ্য তালিকায় উল্লিখিত প্রতিটি খাবারের জন্য, আপনি PDF সংস্করণ ডাউনলোড করে এবং খাবারের নামের উপর ক্লিক করে রেসিপিটি খুঁজে পেতে পারেন। বেশিরভাগ রেসিপি একাধিকবার পরিবেশনের জন্য, তাই আপনাকে উপাদানগুলির পরিমাণের পাশাপাশি আপনার স্বাদ অনুসারে মশলার মাত্রায় সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে।