চাকরি সন্ধান কর্মপরিকল্পনার ৬টি ধাপ ক্যারিয়ার ব্যবস্থাপনা আমরা মানুষ, যারা কিনা এই প্রকৃতির সকল প্রকার জীব থেকে একেবারেই আলাদা একেবারেই ভিন্ন ধাঁচের। প্রকৃতিতে অবস্থানকৃত সকল জীবকেই পরিবেশের সাথে লড়াই করে প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। প্রত্যেকটা জীব খাবার পানিও গ্রহণ করার মাধ্যমে বেঁচে থাকে। ঠিক একইভাবে, মানুষ খাবার পানীয় এবং নিজেদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে এই প্রকৃতিতে অবস্থান করে।
চাকরি সন্ধান কর্মপরিকল্পনার ৬টি ধাপ ক্যারিয়ার ব্যবস্থাপনা
জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকা হিসেবে একজন মানুষকে কোনো না কোনো কাজ করতেই হয়। যেটা তার ভবিষ্যতের জন্য অন্যতম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। মূলত প্রত্যেকটা মানুষের কিছু করার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য থাকে, সেটা হচ্ছে: জীবিকার নির্বাহের জন্য টাকা রোজগার করা। আর তাই প্রত্যেকটা মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে চাকরির সন্ধান করে থাকে এবং নিজেই নিজের একটি কর্মপরিকল্পনা করতে থাকে।
তবে অনেকেই চাকরির সন্ধান কর্মপরিকল্পনা কিভাবে করবেন? কোন কোন বিষয় মাথায় রাখবেন বা চাকুরীর সন্ধান কর্ম পরিকল্পনার প্রধান ধাপগুলো আসলে কি কি, এ বিষয়ে একদমই অবগত নন। তাই আজকের আলোচনায় আমরা জানাবো— ক্যারিয়ার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একজন মানুষকে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে এবং চাকরির সন্ধান কর্ম পরিকল্পনার বাছাইকিত ছয়টি ধাপ সম্পর্কে।
চাকরির সন্ধান কর্মপরিকল্পনা
চাকরির সন্ধান কর্মপরিকল্পনার সবচেয়ে সহজ ও সরল ধাপসমূহ হচ্ছে:-
- ১.নিজেকে মূল্যায়ন করা
- ২. ক্যারিয়ারের লক্ষ্যসমূহ গবেষণা করা
- ৩. পরিকল্পনা প্রণয়ন করা
- ৪. নিজ বিপণী কৌশল নির্ধারণ করা
- ৫. চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা
- ৬. বাধা-বিপত্তির সাথে খাপ খায় নিজ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
নিজেকে মূল্যায়ন করা
চাকরির সন্ধান কর্ম পরিকল্পনার জন্য এবং ক্যারিয়ার ব্যবস্থাপনায় অবশ্যই সবার প্রথমে আপনার নিজেই নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে। তাই সবসময় ভালো কিছু করার জন্য প্রথমত নিজেকে মূল্যায়ন করা শেখা উচিত। আপনি যদি নিজের ভুলগুলো নিজে ধরতে পারেন, নিজের ভালো দিকগুলো আলাদাভাবে নির্বাচন করতে পারেন তাহলে সেটাই আপনার জন্য সর্বোত্তম। কেন না আপনার মাঝে থাকা ভুলগুলো আপনি ছাড়া আর কেউ এতটা পারফেক্ট ভাবে ধরতেই পারবে না।
তাই নিজের ভুলগুলোকে লুকাবার চেষ্টা না করে সেগুলো ধরুন সংগ্রহ করুন এবং শুধরে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। এক্ষেত্রে আপনি যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন বা যে প্রশ্নগুলো নিজেই নিজেকে করতে পারেন সেগুলো হচ্ছে:
- আমার মূল্যবোধক গুলো কি কি?
- আমার প্রধান শক্তি গুলো কি?
- আমার সবচেয়ে দুর্বল দিক গুলো কি কি?
- আমার জীবন দর্শনে কর্মের স্থান আসলে কোথায়?
- আমার জীবনে কোন বিষয়টি আমার জীবনকে অনেক বেশি অর্থপূর্ণ করেছে?
- আমার এই জীবনের উদ্দেশ্য কি?
- আগামী কয়েক বছরে আমার উদ্দেশ্য বা প্রাধান্য গুলো কি কি থাকবে?
- আমি কত দিনের মধ্যে আমার জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসার পরিকল্পনা করব এবং পাঁচ অথবা দশ বছর পর আমার পরিকল্পনা কি হবে?
- আমি যা করছি আমি যেভাবে যেটা করতে চাচ্ছি তার উদ্দেশ্য কি?
- আমি যেটা পরিকল্পনা করছি সেটা কেবলমাত্র অর্ধ উপার্জন নাকি এটা আমার ভালোলাগা এটা আমার কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য এবং কতটা বর্জন যোগ্য?
- আমি যেটা করার পরিকল্পনা করছি সেটা আমার জন্য কতটা পারফেক্ট এবং আমি কতটা অভ্যস্ত?
আশা করা যায় এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি আপনি নিজেই নিজেকে করেন এবং সেটা সমাধান করার চেষ্টা করেন তাহলে অবশ্যই আপনি পারফেক্ট ভাবে আপনার ব্যক্তিত্বকে আপনি আপনার নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারবেন। এবার আসুন আলোচনা করা যাক সেকেন্ড স্টেপ নিয়ে।
ক্যারিয়ারের লক্ষ্যসমূহ গবেষণা
ক্যারিয়ার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চাকরির সন্ধান কর্ম পরিকল্পনার জন্য দ্বিতীয় ধাপ হবে এটি। কেননা আপনি আপনার ক্যারিয়ার জীবনে যে পেশাকে বেছে নিচ্ছেন তার মূল লক্ষ্য কি? এটা আপনার জন্য কতটা গ্রহণযোগ্য আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাচ্ছেন তাদের সাথে আপনি কতটা সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন এই বিষয়গুলো পূর্বে ভাবনা চিন্তা করাটা জরুরী। ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে যদি আপনি আপনার পছন্দমত চাকরি বা স্থান বেছে নেন তাহলে সেটা আপনার জন্য অধিক বেশি ভালো হবে।
কেননা জোরপূর্বক বা মনের অনিচ্ছায় যদি কোন কাজ করেন সেটা অবশ্যই ভালো হবে না এবং কিছুদিন করার পরবর্তীতে আপনার একঘেয়েমি ভাব চলে আসবে। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনাকে কাজের ক্ষেত্র নির্ধারণ করতে হবে এবং বিশেষণ করতে হবে।
যেমন:-
- ✓আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য যেতে চাচ্ছেন– এ খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চাইতে এই প্রতিষ্ঠান কেন আলাদা?
- ✓ সেখানে কাজের পরিবেশ কেমন এবং আপনি কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন?
- ✓প্রতিষ্ঠানের কতটা সুনাম রয়েছে?
- ✓ কর্মচারীদের সাথে সেই প্রতিষ্ঠানটি সর্বদা কেমন আচরণ করে এবং তাদের সংস্কৃতি মূল্যবোধ ও প্রাধান্য গুলো আসলে কি কি সেই সাথে প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তি এবং তাদের লক্ষ্য আসলে কি?
কেননা এ বিষয়গুলো জানতে পারলে আপনি সেই পরিবেশের সাথে নিজেকে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারবেন এবং আপনার জন্য উক্ত চাকরিটি আদর্শ চাকরি হিসেবে বিবেচ্চ হবে এবং আপনি অনেক কম্ফোটেবল ফিল করবেন। পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় নির্ধারণ করাটা জরুরী সেগুলো হলো:
- কোন ধরনের সেবা সে প্রতিষ্ঠানটি প্রদান করে থাকে এবং সেখানে প্রধান কর্মক ও সম্ভাবনাময় ব্যক্তি কারা?
- প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের পেছনের প্রধান নিয়ামক গুলো আসলে কি কি?
- তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আসলে কেমন এবং ভবিষ্যতে ওই খাতে লোক নিয়োগের সম্ভাবনা আসলে কতটুকু রয়েছে?
- কোন ধরনের প্রতিভাকে এই খাতে আকর্ষণ ও নিয়োগ করা হয়ে থাকে এবং কোন ধরনের লোকজন প্রয়োজন?
পরিকল্পনা প্রণয়ন করা
পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের অগ্রিম সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি প্রক্রিয়া। ভবিষ্যতে আপনি কোন কাজ কখন কিভাবে কার দ্বারা সম্পাদন করবেন এসব বিষয়ে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিকে মূলত এক কথায় পরিকল্পনা বলা হয়।
ব্যবস্থাপনার প্রথম ও প্রধান ধাপ হচ্ছে পরিকল্পনা। তাই চাকুরীর সন্ধানের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে কর্মপরিকল্পনা করতে হবে এবং তা প্রণয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে মূলত আপনার যা করণীয় কাজ হবে–
- ✓ আপনার পছন্দনীয় প্রতিষ্ঠান ও ভূমিকায় আপনার অবস্থানের বাস্তবসম্মত বিচার বিশেষণের মাধ্যমে চাকুরীর বিকল্প গুলো খুঁজে বের করা।
- ✓ প্রাধান্য নির্ধারণ করা এবং তা বাস্তবায়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
- ✓ প্রধান পছন্দনীয় প্রতিষ্ঠানের লোক নিয়োগ সময়ের ভিত্তিতে চাকুরীর সন্ধানের সাধারণ সময় নির্ধারণ করা।
নিজ বিপণী কৌশল নির্ধারণ করা
কৌশলগত ব্যবস্থাপনা হল প্রাতিষ্ঠানিক মৌলিক লক্ষ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষণ নির্ধারণের একটি প্রক্রিয়া এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য ক্রিয়া পরিকল্পনা করা ও বাস্তবায়ন করার প্রক্রিয়া। তাই নিজ বিপণি কৌশল প্রণয়ন করতে আপনাকে সবার প্রথমে মাথায় রাখতে হবে বক্তাকে দেওয়ার মতো আপনার কোন দক্ষতা বার যোগ্যতা রয়েছে!
পাশাপাশি চাকরির বাজারে আপনার মূল্য ঠিক কতখানি? আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা দক্ষতা অভিজ্ঞতা সবমিলিয়ে আপনি ঠিক কেমন পজিশনে যেতে পারবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। সে সাথে কোন ধরনের বিষয়বস্তু আপনার পেশাগত দক্ষতা কে তুলে ধরে এবং চাকরির বাজারে কিভাবে নিজেকে পরিবেশন করবেন আপনি ইত্যাদি এই বিষয়গুলোও নিজ বিপনী কৌশল প্রণয়নের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে।
চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা
চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার কোন বিকল্প নেই। কেননা চাকুরীর সাক্ষাৎকারে অনেক মানুষ পরীক্ষায় খুব ভালো মার্ক পাওয়ার পরবর্তীতেও রিজেক্টেড হয়ে যায়। তাই যেকোনো চাকরির সাক্ষাৎকারে যাওয়ার আগে আপনাকে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে, আপনার দক্ষতা অভিজ্ঞতা যোগ্যতা মেধা ও শক্তির কতখানি আপনি তাদেরকে দিতে পারবেন তা নিজেকে জানতে হবে এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে জানাতে হবে।
সেই সাথে–
- একটি সাক্ষাৎকারে কি ধরনের প্রশ্ন করা হতে পারে তা জানতে হবে
- প্রচুর পরিমাণে জ্ঞান অর্জন করতে হবে
- সাক্ষাৎকারের সময় মত উপস্থিত হতে হবে
- আচার আচরণ এবং নিজের সবটা দিয়ে পেশাগত মনোভাবের পরিচয় দিতে হবে
- অনুশীলন, সংশোধন ও আরো অনুশীলন করতে হবে আপনাকে।
বাধা-বিপত্তির সাথে খাপ খায় নিজ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা
মূলত চাকরি সন্ধান কর্ম পরিকল্পনার সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে বাধা-বিপত্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিজের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করা। কেননা সবসময় আপনি আপনার মতো করে কোনো পরিবেশ পাবেন না তাই সেই পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে কিছুটা এডজাস্টমেন্ট করতে হবে আপনাকে।
সুতরাং এ ক্ষেত্রে নিজেকে যে প্রশ্নগুলো করবেন এবং যেভাবে নিজের দুর্বল জায়গাগুলো শক্তিশালী করে তুলবেন সেগুলো হচ্ছে:–
- কোন কাজটি আপনার দ্বারা ভালো হচ্ছে এবং কোনটি হচ্ছে না?
- আপনার মাঝে কি কি বিষয় অ্যাড করতে হবে?
- কিভাবে আপনি আপনার মাঝে ইমপ্রুভমেন্ট আনবেন?
- কোন ধরনের সাহায্য বা পরামর্শ আপনার প্রয়োজন?
- আপনার কর্ম সম্পাদনে কোথায় গলদ রয়েছে এবং সেটা কিভাবে সংশোধন করবেন?
- আপনার অবস্থানের উন্নয়নে কিভাবে আপনি মোটিভেশন ধরে রাখবেন।
ব্যাস আপনি যদি শুধুমাত্র এই বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন তাহলে ক্যারিয়ার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আপনি সফল হবেন এবং আপনার পরিকল্পিত কর্মটি খুব ভালোভাবে সম্পাদন করতে পারবেন।