পাকস্থলীর ক্যান্সার আছে কীভাবে জানবেন? এই লক্ষণ দেখলেই সাবধান ক্যান্সার সবসময় যে চরিত্রগত লক্ষণ দেয় তা কিন্তু নয়। অনেক সময়, ক্যান্সার নীরব থাকে, অর্থাৎ সামান্য বা কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয় না। সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে এটিকে সনাক্ত করা কঠিন হয়ে ওঠে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারের উপসর্গগুলি অনেকটা নিয়মিত সংক্রমণ বা অবস্থার মতো হয় যার ফলে প্রায়ই ভুল রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে অথবা রোগ দেরিতে ধরা পড়ে।
পাকস্থলীর ক্যান্সার আছে কীভাবে জানবেন
এরকম একটি ক্যান্সার হল পাকস্থলী বা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার (Stomach Or Gastric Cancer) যা প্রায়শই প্রথম পর্যায়ে তেমন কোনও নির্দিষ্ট উপসর্গ থাকে না এবং শুধুমাত্র পরবর্তী বা শেষ পর্যায়ে লক্ষণ দেখা দেয়। পাকস্থলী পেটের মাঝখানে থাকে এবং এটি শারীরিক কার্যকলাপের পাশাপাশি অন্যান্য অঙ্গ যেমন লিভার, অগ্ন্যাশয়, খাদ্যনালী এবং কোলনের সাথে সম্পর্কিত।
এই কারণে, ক্যান্সারের ভয়াবহ রূপ নেওয়ার সাধারণ একটি ঝুঁকি থেকে যায়। বেশিরভাগ পাকস্থলীর ক্যান্সার হল অ্যাডেনোকার্সিনোমাস যা পেটের ভেতরের আস্তরণের গ্রন্থি কোষে তৈরি হয়। পাকস্থলীর গঠনগত এবং কার্যকরী অবস্থানের কারণে, পাকস্থলীর ক্যান্সারের ফলে উৎপন্ন উপসর্গগুলি সহজেই উপেক্ষা করা বা ভুল বোঝা হয়। এর প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে, পাকস্থলীর ক্যান্সারের (stomach cancer) লক্ষণগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে – প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ এবং উন্নত পর্যায়ের লক্ষণ।
প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ
পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ের তেমন কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। কিন্তু, যখন ক্যান্সার বাড়তে শুরু করে এবং রোগটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন রোগী কিছু লক্ষণ অনুভব করতে পারেন
যেমনঃ–
- নাভির উপরে পেটে ব্যথা
- অম্বল
- অল্প খাবার খাওয়ার পরেই পেটের উপরের অংশে পরিপূর্ণ মনে হয়
- ঘন ঘন বদহজম
- বমি বমি ভাব এবং বমি
- খিদে কমে যাওয়া
- প্রচুর ওজন হ্রাস
এই লক্ষণগুলির পাশাপাশি নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে যেমন খিটখিটে মেজাজ, বদহজম, খাবারে অ্যালার্জি, পেটের আলসার, ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ইত্যাদি। বেশিরভাগ মানুষ এর থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করেন, খুব কমই ডাক্তারের কাছে যান।
ক্যান্সার আছে কীভাবে জানবেন
উন্নত পর্যায়ের লক্ষণঃ পশ্চিমের দেশগুলির তুলনায়, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার (Gastric cancer) ভারতে খুব সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। সাধারণ ক্যান্সারের মধ্যে এটি চতুর্থ স্থানে রয়েছে এবং পুরুষদের মধ্যে এটি তৃতীয় সর্বাধিক সাধারণ ক্যান্সার। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ সনাক্ত না করা হয়, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে পাকস্থলীর ক্যান্সার ভয়াবহ আকার নেয় এবং লিভার, ফুসফুস এবং পেরিটোনিয়ামের মতো অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ের তুলনায় পরবর্তী পর্যায়ে ক্যান্সারের লক্ষণগুলি অনেক বেশি গুরুতর হয়।
এই লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:-
শরীরের সাধারণ দুর্বলতা এবং ক্লান্তি
মলে রক্ত
অনিয়ন্ত্রিত বমি
জন্ডিস যখন ক্যান্সার লিভারকে প্রভাবিত করে
তল পেট ফুলে যাওয়া বা তরল জমা হওয়া (Ascites)
লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যায় (অ্যানিমিয়া)
পাকস্থলীর ক্যান্সার সাধারণত পরবর্তী পর্যায়ে সনাক্ত হওয়ার প্রাথমিক কারণ হল এর জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং এর অভাব। যাইহোক, জাপানের মতো দেশে, যেখানে পেটের ক্যান্সার একটি সাধারণ সমস্যা, সেখানে নিয়মিত স্ক্রিনিং করা হয় যার ফলে রোগটি প্রথমদিকেই সনাক্ত করা যায়।
পাকস্থলীর ক্যান্সার আছে কীভাবে জানবেন? এই লক্ষণ দেখলেই সাবধান
যদিও, রুটিন স্ক্রিনিং এর জন্য উপকারী কিনা তা প্রমাণিত হয়নি। রোগীর মধ্যে লক্ষণীয় উপসর্গের উপর ভিত্তি করে, ডাক্তার গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার নিশ্চিত করার জন্য আপার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এন্ডোস্কোপি, বায়োপসি এবং/অথবা সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দিতে পারেন। পাকস্থলীর ক্যান্সারের পর্যায়ের উপর ভিত্তি করে, রোগীকে উপযুক্ত চিকিত্সা দেওয়া হয়।
এবং সাধারণত, প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণ এবং রোগ নির্ণয় করা হলে এই ধরনের ক্যান্সারের চিকিত্সায় সাফল্যের হার বেশি। নভেম্বর মাস পাকস্থলীর ক্যান্সার সচেতনতার মাস হিসেবে পালন করা হয়। আসুন আমরা সকলে মিলে এই রোগের কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ায়।