বিবাহের খুতবা আরবী ও বাংলা উচ্চারণ সহ এবং বিয়ে পড়ানোর সঠিক নিয়ম

প্রিয় পাঠক, অত্র পোস্ট থেকে জানতে পারবেন কিভাবে বিবাহের খুতবা আরবীতে দিতে হয়। বিয়ে পড়াতে হলে অবশ্যই বিয়ের খুতবা জানতে হবে। আর বিবাহের খুতবা আরবীতে দিতে হয়। সেজন্য আজকের এই পোষ্ট বিয়ের আরবী খুতবা সম্পর্কে। বিবাহের খুৎবার জন্য যে আরবি ইবারত উল্লেখ করা হয়েছে তার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ উল্লেখ করেছি৷ সুতরাং বিবাহের খুতবা বাংলা অনুবাদ এই পোস্ট থেকেই পেয়ে যাবেন। পাশাপাশি বিয়ে পড়ানোর সঠিক নিয়মও বলে দেয়া হবে পোস্টের শেষে।

বিবাহের সংজ্ঞা কি?

  1. نكح“নিকাহ” শব্দটি মাসদার বা মূলধাতু এর আভিধানিক অর্থ।
  2. ইমাম ফাররা রহঃ এর মতে সহবাস করা
  3. ইবনে হাজ্জার আসকালানী রহঃ এর মতে মিলানো বা সংযুক্ত করা।
  4. কারো কারো মতে বন্ধন।
  5. কারো কারো মতে এর অর্থ হলো একত্রিত করা।
  6. আর একদলের মতে ভালো সঙ্গ বিচারের জ্ঞান।
  7. তাহলে বুঝা গেল নিকাহ এর প্রকৃত অর্থ! আবার নিকাহ এর অর্থ কি এ ব্যাপারে ইমামদেও মাঝে মতভেদ আছে।
  8. ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর মতে নিকাহ শব্দের হাকিকী তথা আসল অর্থ হলো সহবাস করা এবং রূপক অর্থ হলো বন্ধন।
  9. পারিভাষিক সংজ্ঞাঃ যৌনাঙ্গ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে পুরুষ ও নারীর মধ্যে সংঘঠিত বৈধ বন্ধনকে বিবাহ বা নিকাহ বলে।

সুন্নাত তরীকায় বিবাহ

মোটকথা, আমরা উপরের আলোচনার ভিত্তিতে সুন্নাত তরীকায় বিবাহ করার জন্য এভাবে বলি –

  • পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দীনদ্বারিত্ব প্রাধান্য দেওয়া।
  • মোহরানা পাত্রের সাধ্যের মধ্যে রাখা।
  • বিবাহ মসজিদে হওয়া।
  • পাত্র-পাত্রী যথাসম্ভব উত্তম পোশাক পরিধান করা।
  • পাত্রের পক্ষ থেকে বিবাহ পরবর্তীতে ওলীমার ব্যবস্থা করা। কণের পক্ষ থেকে নয়।
  • বিবাহ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ছেলে পারলে ভালো, অন্যথায় যিনি পড়বেন তিনি সংক্ষিপ্ত আকারে একটি খুতবা পড়তে পারেন। বিবাহের সময় খুতবা পাঠ করা রাসূল সাঃ এর সুন্নাত।

 خطبة النكاح —বিবাহের খুতবা

إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونؤمن به ونتوكل عليه .ونعوذ بالله من شرور انفسنا ومن سيئات اعمالنا. من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له.
واشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له.واشهد ان سيدنا ومولانا محمد عبده و رسوله.

الذي أُرسل الى الناس كافةً بشيرا ونذيرا. وداعيا الى الله بإذنه سراجا وقمرا منيرا .
‏اما بعد . فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم. بسم الله الرحمن الرحيم.

يا أيها الذين أمنوا اتقوا الله حق تقاته ولا تموتن إلا وأنتم مسلمون

وقال تعالى يا ايها الناس اتقوا ربكم الذي خلقكم من نفس واحده وخلق منها زوجها وبث منهما رجالا كثيرا ونساء. واتقوا الله الذي تساءلون به والارحام .ان الله كان عليكم رقيبا

وقال تعالى يا ايها النبي يا ايها الذين امنوا اتقوا الله وقولوا قولا سديدا .يصلح لكم اعمالكم ويغفر لكم ذنوبكم ومن يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما

وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم. اذا تزوج العبد فقد استكمل نصف الدين فليتق الله فی النصف الباقي.

وقال عليه الصلاه والسلام .النكاح سنتي فمن رغب عن سنتي فليس مني

বিয়ের খুতবা বাংলা উচ্চারণ

ইন্নাল হামদা লিল্লাহি নাহমাদুহু ওয়া নাস্তাইনুহু ওয়া নাস্তাগফিরুহু ওয়া নাঊযুবিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা ওয়ামিন সায়্যিআ-তি আ’মালিনা, মাই ইয়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদ্বিল্লালাহ, ওয়া মাই ইউদ্বলিল ফালা হাদিয়া লাহ।

ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ, আল্লাযি উরসিলা ইলান্না-সি কা-ফ্ফাতাম বাশীরাও ওয়া নাযিরা।
ওয়া দা-ইয়ান ইলাল্লা-হী বিইযনিহী ওয়া সিরাজাও ওয়া ক্বামারাম মুনীরা।

আম্মা বা’দ: ফাআঊযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম। বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম।

ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আমানুত তাকুল্লাহা হাক্কা তুকাতিহি ওয়ালা তামুতুন্না ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমুন।

ওয়াক্বালা তা’য়ালা—ইয়া আইয়্যুহান্নাসুত তাকু রাব্বাকুমুল লাযি খালাকাকুম মিন নাফসিও ওয়াহিদাতিও ওয়া খালাকা মিনহা যাওজাহা ওয়া বাসসা মিনহুমা রিজালান কাসিরাও ওয়া নিসা, ওয়াত তাকুল্লাহাল্লাযি তাসা আলুনা বিহি ওয়াল আরহাম, ইন্নাল্লাহা কানা আলাইকুম রাকিবা।

ওয়াক্বালা তা’য়ালা—ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানুত তাকুল্লাহা ওয়া কূলূ কাওলান সাদিদা। ইউসলিহ লাকুম আ’মালাকুম ওয়াগ ফির লাকুম যুনুবাকুম, ওয়ামাই য়ূতিয়িল্লাহা ওয়া রাসূলাহু ফাকাদ ফাযা ফাওযান আযিমা।

ওয়াক্বা-লা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম: ইযা তাযাওয়াযাল আব্দু ফাকাদ ইসতাকমালা নিসফাদ দ্বীন‚ ফালইয়াত্তাক্বিল্লাহা ফীন নিসফিল বাক্বী। (সহীহ হাদীস শুয়াবুল ইমান)

ওয়াক্বা-লা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম: আন্নিকাহু সুন্নাতী, ফামান রাগিবা আন সুন্নাতি ফালাইসা মিন্নী। (সহীহ)

ভিন্ন একটি বিবাহের খুতবা

আপনি চাইলে উপরোক্ত (ومن يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما) ‘ফাকাদ ফাযা ফাওযান আযিমা’ বলার পর নিম্নোক্ত আয়াত ও হাদিসটি পড়তে পারেন:

اما بعد! فيا ايها المسلمون. قال الله تعالى. ومن اياته ان خلق لكم من انفسكم ازواجا لتسكنوا اليها وجعل بينكم موده ورحمه ان في ذلك لايات لقوم يتفكرون (سُوْرَةُ الرُّمِ ٢١)

وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم النكاح من سنتي فمن لم يفعل بسنتي فليس مني. و تزوجوا فاني مكاثر بكم الامم .

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم. ِيا معشر الشباب، من استطاع منكم البأءة فليتزوج فإنه أغض للبصر وأحصن الفرج ومن لم يستطيع فعليه بالصوم. (الكتاب صحيح مسلم)

ايها الشباب بارك الله لك وبارك عليك وجمع بينكما في خير

বিয়ের খুৎবার বাংলা উচ্চারণ

আম্মা বা’দ, ফা ইয়া আইয়্যুহাল মুসলিমুন, কালাল্লাহু তায়ালা, ওয়ামিন আয়াতিহি আন খালাকা লাকুম মিন আনফুসিকুম আযওয়াজান লিতাসকুনূ ইলাইহা ওয়াজা আলা বাইনাকুম মাওয়াদ্দাতাও ওরাহমাহ, ইন্না ফি যালিকা লা আয়াতিল লিকাওমিই ইয়াতাফাক্কারুন। সূরা রূম ২১

ওয়াকালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আন নিকাহু মিন সুন্নাতি, ফামান লাম ইয়াফআল বিসুন্নাতি ফালাইসা মিন্নী। ওয়াতাযাওয়াজু ফাইন্নি মুকাসিরুন বিকুমুল উমাম।

ক্বলা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইয়া মা’শারাশ শাবাব, মানিস তাত্বায়া মিনকুমুল বায়াতা ফালিয়াতাযাওয়াজ। ফাইন্নাহু আগায্যু লিল বাসারি ওয়া আহসানু লিল ফারজি ওমান লাম ইয়াস তাত্বি ফা আলাইহি বিস সাওম।

আইয়্যুহাশ শাবাব,বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা ওয়াজামাআ বাইনাকুমা ফি খাইর।

বিবাহের খুতবা বাংলা অনুবাদ

নিশ্চয়ই প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তার প্রশংসা করছি। তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা আমাদের নফসের অকল্যাণ থেকে এবং আমাদের খারাপ কর্মগুলো থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত করেন তাকে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারেনা আর আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তাকে কেউ হেদায়াত করতে পারেনা। এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁ বান্দা ও রাসূল।

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো সত্যিকারে ভয় এবং মুসলিম না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না।

হে মানবজাতি তোমরা তোমাদের প্রতিপালক কে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার জোড়া কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। ভয় করো যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট জিজ্ঞাসা করো এবং সতর্ক থাকো রক্ত আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তিক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন সূরা নিসা আয়াত ০১

হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো। তিনি তোমাদের কর্মক্ষেত্র ত্রুটি মুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করে। সূরা আহযাব আয়াত ৭০-৭১

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা যখন বিবাহ করে তখন সে তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে নেয়। অতএব তাকে তার অবশিষ্ট অর্ধেক দ্বীনের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা উচিত।

অতঃপর হে মুসলিমগণ আল্লাহ বলেছেন: এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম যে তিনি তোমাদের থেকেই তোমাদের সঙ্গী-সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন। যেন তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও। এবং তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন পারস্পরিক ভালোবাসা ও দোয়া। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। সূরা রূম আয়াত ২১

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: বিয়ে আমার সুন্নত বা রীতি। কাজেই যে ব্যক্তি আমার সুন্নত পালন করবে না সে আমার সাথে সম্পর্কিত নয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা বিবাহ করো, কারণ আমি আমার উম্মতের বর্ধিত সংখ্যা দিয়ে অন্যান্য জাতির কাছে গৌরব প্রকাশ করব।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্তানকে হেফাজত করে। আর যে বিয়ে করতে সামর্থ রাখে না সে যেন রোজা রাখে। (সহীহ মুসলিম)

হে যুবক, আল্লাহ তায়ালা তোমার উপর বরকত দিক এবং চিরকল্যাণের সহিত তোমাদেরকে একত্রিত রাখুন, আমিন।

প্রিয় পাঠক, আশা করি বিবাহের খুতবা আরবীতে দিতে পারবেন। বিয়ের খুতবা খুবই সহজ।

ভিডিওতে আরও দেখুন: বিবাহের খুতবা ও বিবাহ পড়ানোর সঠিক পদ্ধতি

বিয়ে পড়ানোর নিয়ম

প্রথমে পাত্রপাত্রীর পরিচয় জেনে নিবেন। পাত্রপাত্রী উভয়ের মধ্যে বিয়ে বৈধ কিনা? মোহর নির্ধারণ হয়েছে কিনা। সাক্ষী উপস্থিত আছে কিনা? পাত্রী ও তার অভিভাবকের সম্মতি আছে কিনা? সবকিছু ঠিক থাকলে দাঁড়িয়ে বিয়ের খুতবা পড়বেন। বিয়ের একটি মাত্র খুতবা। অতঃপর সম্ভব হলে পাত্রপাত্রীকে পরস্পরের হক সম্পর্কে নসীহত করবেন। তারপর পাত্রীপক্ষ থেকে ইজাব (বিয়ের প্রস্তাব) দিবেন এবং স্বামী থেকে ‘কবুল’ স্বীকৃতি গ্রহণ করবেন। তারপর নবদম্পতির জন্যে বিবাহের দোয়া পড়বেন—বিবাহের শুভেচ্ছা বা বিবাহের দোয়া আরবী:
بارك الله لك وبارك عليك وجمع بينكما في خير
বারাকাল্লাহু লাকা ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া জামায়া বাইনাকুমা ফি খাইর।

বিবাহের দোয়া বাংলা

আল্লাহ তোমার কল্যাণ করুন, তোমাকে বরকত দান করুন, এবং তোমাদের দাম্পত্য জীবন কল্যাণময় হোক।

তারপর মিষ্টিজাতীয় কিছু বিতরণ করুন। ব্যস, বিয়ের কাজ শেষ। আশা করি বিবাহের খুতবা আরবী সম্পর্কে একটু ধারণা পেয়েছেন।

বিবাহের খুতবা আরবি pdf

বিবাহের খুতবা আরবি pdf পেতে এখানে ক্লিক করুন

বিয়ের সুন্নত তরিকা, শুরু থেকে শেষ | সবার জানা জরুরি

বিয়ে আল্লাহর অশেষ নেয়ামত এবং রাসুল (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। চারিত্রিক অবক্ষয় রোধের শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। আদর্শ পরিবার গঠনে, মানুষের জৈবিক চাহিদাপূরণে কিংবা মানবিক শান্তি লাভের প্রধান উপকরণ। বিয়ে ইসলামী শরিয়তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ম। ইসলামে বিয়ের যাবতীয় নিয়ম-কানুন এবং বিধি-বিধানসহ আনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করা হলো-
১/ বিয়ের রুকন বা খুঁটি ৩টি
এক: বিয়ের ক্ষেত্রে সবধরনের প্রতিবন্ধকতা হতে বর-কনেকে মুক্ত হওয়া।
দুই: মেয়ের অভিভাবক বা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বরকে প্রস্তাবনা পেশ করা।
তিন: বর বা বরের প্রতিনিধির পক্ষ থেকে কবুল বা গ্রহণ করা।
২/ বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত
(১) বর এবং কনে উভয়কে গ্রহণযোগ্যভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়া।
(২) বর ও কনে একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, “বিধবাকে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া (অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে তাকে বলে তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে) বিয়ে দেয়া যাবে না। কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি (কথার মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে) ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কেমন করে তার সম্মতি জানব? তিনি বললেন, চুপ করে (লজ্জায়) থাকাটাই তার সম্মতি। ” (বুখারি, হাদিস নং : ৪৭৪১)

(৩) বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবকদের পালন করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও। ’ (সুরা নুর, ২৪:৩২)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ১০২১)

(৪) বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই। ’ (সহিহ জামে, হাদিস নং : ৭৫৫৮)

সাক্ষী হতে হবে এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পান। (আদ-দুররুল মুখতার-৩/৯; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮)

বিয়ের প্রচারণা নিশ্চিত করাও জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ের বিষয়টি ঘোষণা কর। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং: ১০৭২)

৩/ বিয়ের অভিভাবক

ফিকাহবিদগণ অভিভাবকদের ধারা নির্ণয় করেছেন। সুতরাং কাছের অভিভাবক থাকতে দূরের অভিভাবকের অভিভাবকত্ব কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কাছের অভিভাবক না থাকলে দূরের অভিভাবক গ্রহণযোগ্য হবে।
বিয়ের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্তঃ
১. সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হতে হবে।
২. প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে।
৩. দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্ত হতে হবে।
৪.অভিভাবককে মুসলিম হতে হবে। সুতরাং কোন অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না। অনুরূপভাবে কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না।
৫. আদেল অথবা ন্যায়বান হতে হবে।। অর্থাৎ ফাসেক হওয়া চলবে না। যাকে তিনি বিয়ে দিচ্ছেন তার ভালো-মন্দ বিবেচনা করার মত যোগ্যতা থাকতে হবে।
৬.অবশ্যই পুরুষ হতে হবে। দলীল হচ্ছে মহানবী (সাঃ) বলেছেন- “এক মহিলা আরেক মহিলাকে বিয়ে দিতে পারবে না। অথবা মহিলা নিজে নিজেকে বিয়ে দিতে পারবে না। ব্যভিচারিনী নিজে নিজেকে বিয়ে দেয়।”[ইবনে মাজাহ (১৭৮২) ও সহীহ জামে (৭২৯৮)।
৭. বুদ্ধিমত্তার পরিপক্কতা থাকতে হতে হবে। এটি হচ্ছে বিয়ের ক্ষেত্রে সমতা (কুফু) ও অন্যান্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করতে পারার মত যোগ্যতা।

৪/ বিবাহের যত সুন্নাত

১. সহীহ বিবাহ অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি, গান-বাদ্য, ভিডিও-অডিও মুক্ত হবে এবং তাতে কোন যৌতুকের শর্ত বা সামর্থ্যের অধিক মহরানার শর্ত থাকবে না। (হাদীস নং- ৩৬১২, তাবরানী আউসাত)
২. সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর খোঁজ করে বিবাহের পয়গাম পাঠান । কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তা সুন্নাতের পরিপন্থী ও বর্জনীয়। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৪ : ২০০/ বুখারী হাদীস নং- ৫০৯০)
৩. শাওয়াল মাসে এবং জুমু‘আর দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা সুন্নত। তবে যেকোন মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা জায়েয আছে। (মুসলিম, হাদীস নং- ১৪২৩/ বাইহাকী, হাদীস নং- ১৪৬৯৯)
৪. বিবাহের কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিয়ের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার মাঝে খেজুর বণ্টন করা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫১৪৭)
৫. সামর্থ্যের মধ্যে মহর ধার্য করা।(আবু দাউদ: হাদীস নং- ২১০৬)
৬. বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের কিছু চুল হাতে নিয়ে এই দু‘আ পড়াঃ
اَللّهُمَّ إنِّيْ أسْألُكَ مِنْ خَيْرِهَا وَخَيْرِ مَا جَبَلْتَ عَلَيْهِ . وأعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَ عَلَيْهِ.
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসয়ালুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা জাবালতাহা আলাইহি। ওয়া আউজু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালবাহা আলাইহে (আবু দাউদ, হাদীস নং- ২১৬০)।
বিয়ের সুন্নত তরিকা সুন্নতি বিয়ের নিয়ম ইসলামে বিয়ের যোগ্যতা ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম বিবাহের সুন্নাত ইসলামে বিয়ের রুকন বিয়ের সঠিক নিয়ম
বিয়ের সুন্নত তরিকা, শুরু থেকে শেষ | সবার জানা জরুরি

৭. স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমেই অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তারপর যখনই সহবাস-এর ইচ্ছা হয়, তখন প্রথমে নিচের দু‘আ পড়ে নেওয়া
بِسْمِ اللّهِ اَللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطانَ مَا رَزَقْتَنَا.
“বিসমিল্লাহ, আলহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা।” (মুসলিম/১৪৩৪)
মনে রাখবেন, উপরের দু‘আ না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার উপর কু-প্রভাব পড়ে। যারফলে সন্তান বড় হলে, তার মধ্যে ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে থাকে এবং সন্তান নাফরমান ও অবাধ্য হয়। সুতরাং পিতা-মাতাকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
৮.”বাসর রাতের পর দু’হাতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং গরীব-মিসকিনদের তাওফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা। (মুসলিম, হাদীস নং- ১৪২৭)”
মনে রাখতে হবে-
(ক) কোন পক্ষ অলংকারের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকে যৌতুক দাবি হারাম। (আহসানুল ফাতাওয়া, ৫ : ১৩)
(খ) কনের ইযন(অনুমতি)-এর জন্য সাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই। সুতরাং ছেলের পক্ষের কোন লোক ইযন শুনতে যাওয়া অনর্থক এবং বেপর্দা। সুতরাং তা নিষেধ। মেয়ের কোন মাহরাম বিবাহের উকিল হওয়ার অনুমতি নিবে। (মুসলিম, হাদীস নং- ১৪২১)
(গ) চুক্তি করে বরযাত্রীর নামে বরের সাথে অনেক লোক নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর চাপ সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ২০৭২২/ বুখারী হাদীস নং- ২৬৯৭)

(ঘ) ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উঁচু মানের খানার ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক নয়। বরং সাধ্যানুযায়ী খরচ করাই সুন্নাত । যে ওলীমায় শুধু ধনী লোকদের দাওয়াত করা হয়, দীনদার ও গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত করা হয় না, সে ওলীমাকে রাসুল(সাঃ) নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের নিকৃষ্ট ওলীমার আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত।(আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৭৫৪)

(ঙ) ওলীমার মজলিসে হাদিয়া/উপহার লেন-দেন ঠিক নয়। কেউ দিতে চাইলে নিজের সুযোগ মত পাঠিয়ে দিবে, প্রচার/প্রকাশ করবে না, গোপনে দিবে, এটাই হাদিয়ার সুন্নাত।

৫/ মেয়ে দেখার নিয়ম

আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمْ امْرَأَةً فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهَا إِذَا كَانَ إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا لِخِطْبَتِهِ وَإِنْ كَانَتْ لَا تَعْلَمُ.

‘‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোন রমণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাবের জন্যই তাকে দেখে, তবে তা দূষণীয় নয়; যদিও ঐ রমণী তা জানতে না পারে।’’

হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত,

عن أبي هريرة، قال: كنت عند النبي صلى الله عليه وسلم، فأتاه رجل فأخبره أنه تزوج امرأة من الأنصار، فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أنظرت إليها؟»، قال: لا، قال: «فاذهب فانظر إليها، فإن في أعين الأنصارشيئا»

তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পাশে বসা ছিলাম। এমন সময় একব্যক্তি এসে বলল, আমি আনসারি এক মহিলাকে বিয়ে করতে চাই। রাসূলুল্লাহ বললেন,তুমি কি পাত্রী দেখেছো?তিনি বললেন,না।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,যাও গিয়ে পাত্রী দেখে আসো।কেননা আনসারীদের চোখে নীল বা এজাতীয় কিছু থাকে।(সহীহ মুসলিম-১৪২৪)

মনে রাখবেন, পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা করা বৈধ। তবে অনেক সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় এবং বারবার বা বহুবার দৃষ্টি রাখাও অবৈধ। একিভাবে একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয়।

৬/ বরযাত্রী আগমন এবং আপ্যায়ন

বিয়ে উপলক্ষে বরযাত্রী যাওয়া ও কনের বাড়িতে আপ্যায়ন যদি কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা ছাড়া এবং সানন্দে হয়, তাহলে তা বৈধ, আর না হয় অবৈধ। কিন্তু বর্তমানে বরযাত্রী গমন ও মেয়ের বাড়িতে খাবারের আয়োজনের জন্য পারিবারিক/সামাজিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা খুবই নিন্দনীয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি মেয়ের পরিবারের যুলুম। সুতরাং এমন কাজ বর্জন করা উত্তম। (আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস : ১১৫৪৫, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ : ৭/৫২২)

৭/ বি‌য়ের স্বাক্ষী

ইসলামী নীয়মে বি‌য়ের জন্য ২ জন স্বাধীন ও ন্যায়বান স্বাক্ষীর প্র‌য়োজন।
সাক্ষীকে অবশ্যই পুরুষ হ’তে হবে। একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা বা চারজন মহিলা হলেও চলবে না। কেননাম মহানবী (সঃ) বলেছেন, ﻻَ ﻧِﻜَﺎﺡَ ﺇِﻻَّ ﺑِﻮَﻟِﻰٍّ ﻭَﺷَﺎﻫِﺪَﻯْ ﻋَﺪْﻝٍ
“বিবাহ সংগঠিত হবে না অভিভাবক (ওয়ালী)ও দু’জন সাক্ষী ব্যতীত।”
বিয়ের সময় একজন উকিল থাকতে হয়। তিনি যেকোন পক্ষের হতে পারেন। তবে সাধারণত কনে পক্ষ থেকেই উকিল থাকে। উকিল প্রথমে কনেকে জিজ্ঞাসা করেন কনে বিয়েতে রাজি আছে কি না? কনে রাজি থাকলে বরকে তা বলা হয়। অতঃপর দোয়া কালাম পড়িয়ে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়।

৮/ মোহরের পরিমাণ ও তার সুন্নত

মোহর স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার। তার অধিকার সে যেন সঠিকভাবে পায় এবং নারীর যেন অবমূল্যায়ন না হয় তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। মোহরের শরইয়ী বিধান হলো, ১০ দিরহামের কম না হওয়া (১০ দিরহামের পরিমাণ বর্তমান হিসাবে পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপা) এবং স্বামীর সামর্থ্যের ঊর্ধ্বে না হওয়া। স্ত্রীর বংশের ও অন্য মেয়েদের মোহরের পরিমাণ বিবেচনা করাও উচিত। মোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ শরিয়ত নির্ধারণ করেনি। (বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭৫, মিরকাতুল মাফাতিহ : ৬/৩৫৮)

হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) ছাড়া নবী (সা.)-এর অন্যান্য স্ত্রীর মোহর ছিল ৫০০ দিরহাম, যা প্রচলিত হিসাব অনুযায়ী ১৩১.২৫ ভরি খাঁটি রুপা বা তার সমপরিমাণ বাজারমূল্য। যেহেতু পরিমাণ নির্ধারণে শরিয়ত বিশেষজ্ঞদের ভেতর সামান্য মতবিরোধ রয়েছে, তাই সতর্কতামূলক পূর্ণ ১৫০ ভরি ধরাই ভালো। উম্মে হাবিবা (রা.)-এর মোহর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশি আদায় করেছিলেন ৪০০ দিনার, যা বর্তমান হিসাবে দেড় শ ভরি খাঁটি সোনা, অপর বর্ণনায় ৪০০ দিরহাম রুপা। (মুসলিম, হাদিস : ১৪২৬, তিরমিজি, হাদিস : ১১১৪, আবু দাউদ : ২১০৮

৯/ মোহরে ফাতেমির বিধান ও তার বাজারদর

স্ত্রীর সম্মান ও স্বামীর সাধ্যানুযায়ী মোহর ধার্য করা সুন্নত। কেবল মোহরে ফাতেমিকেই সুন্নত মনে করা সঠিক নয়। তবে ফাতেমি মোহরে ধার্য করা বরকতময় ও উত্তম। বিশুদ্ধ মতে মোহরে ফাতেমির পরিমাণ ৫০০ দিরহাম তথা ১৩১.২৫ ভরি (এক কেজি ৫৩০.৯০০ গ্রাম) খাঁটি রুপা অথবা এর বাজারমূল্য। সহজ কথায় ১৫০ তোলা খাঁটি রুপার কথা বলা হয়ে থাকে। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ২৭৪২; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৩/২১৫; ফতোয়ায়ে রহিমিয়া : ৮/২৩১)

১০/ মোহর পরিশোধ করা

বর্তমান সমাজে সাধ্যের বাইরে মোহর ধার্য এবং তা আদায়ে অনীহার মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। মেয়েপক্ষ বিয়ের সম্পর্ক রক্ষার জন্য মোহরের অঙ্ক বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং ছেলে পক্ষ চিন্তা করে এটি আদায় করতে হবে না। ইসলামী শরিয়তে এমন মনোভাব গর্হীত। কেননা মোহর আদায়ের নিয়তবিহীন বিয়েকে হাদিসে ব্যভিচারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী মোহর ধার্য করা এবং তা যথাসম্ভব দ্রুত পরিশোধ করা শরিয়তের বিধান। নবী করিম (সাঃ) বলেন, ‘সর্বোত্তম মোহর হলো, যা আদায় করতে সহজ হয়।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ২৭৪২)

হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা নারীদের মোহরের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কোরো না। কেননা তা যদি দুনিয়ায় সম্মানের ও আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় হতো, তবে আল্লাহর নবী (সা.) এই সম্মানের বেশি উপযুক্ত ছিলেন। অথচ নবী করিম (সা.)-কে নিজের বিয়েতে এবং তাঁর মেয়েদের বিয়েতে ১২ উকিয়ার (৫০০ দিরহাম) বেশি নির্ধারণ করতে দেখিনি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১১৪)

অতএব সামর্থ্য অনুযায়ী মোহর ধার্য করা এবং ধার্য করা মোহর পরিশোধ করা চেষ্টা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘যে পুরুষ বিয়েতে মোহর আদায়ের নিয়তবিহীন মোহর ধার্য করল, চাই তা বেশি হোক বা কম, সে হাশরের দিন আল্লাহর সামনে ব্যভিচারী হিসেবে উপস্থিত হবে।’ (আল মুজামুল আওসাত, হাদিস : ১৮৫১)

১১/ বিবাহের খুতবা

বিবাহের খুতবা পাঠ করা মোস্তাহাব। এই খুতবা ইজাব কবূলের পূর্বে পাঠ করবে। বিবাহের খুতবা দাঁড়িয়ে পড়াই নিয়ম। বসেও পড়া জয়েয। এবং তা চুপচাপ শোনা ওয়াজিব।

১২/ মজলিসে খেজুর বিতরণ

বিয়ে আকদের পর খেজুর বিতরণ/ নিক্ষেপ করা সুন্নত। তবে মসজিদে বিয়ে হলে মসজিদের সম্মান রক্ষার্থে এবং অন্যান্য পরিবেশেও মজলিসের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে খেজুর নিক্ষেপ না করে বিতরণ করা উচিত। (মুস্তাদরাকে হাকেম : ৪/২২, আসসুনানুল কুবরা, হাদিস : ১৪৬৮৪, তালখিসুল হাবির : ৩/৪২৪, এলাউস সুনান : ১১/১১)

১৩/ বিবাহে আনন্দ করা

আয়েশার (রা.) আরও বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বিয়ে সম্পর্কে বলেন, “এই বিয়ের ঘোষণা প্রদান কর এবং মসজিদে তা সম্পাদন কর। আর এজন্যে দফ পেটাও। (তিরমিযি)”
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) তাঁর এক আত্মীয়াকে বিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জানতে চাইলেন, তারা কি এমন কাউকে তার সাথে পাঠিয়েছে যে গাইতে পারে? যখন তিনি না বোধক উত্তর দিলেন, তখন রাসুল বললেন, খুব ভাল হত যদি তোমরা তার সাথে পাঠাতে যারা গাইতে পারে-তোমাদের কাছে আমরা এসেছি, তোমাদের কাছে আমরা এসেছি। অতএব, আমাদেরকে স্বাগতম এবং তোমাদেরকে স্বাগতম। (ইবনে মাজাহ)

১৪/ স্বামী-স্ত্রীর প্রথম সাক্ষাৎ ও জামাতে নামাজ আদায়

এক হাদিসে স্বামী-স্ত্রী একসাথে জামাতে নামাজ পড়ে দোয়া করার নির্দেশ পাওয়া যায়। অতঃপর এই দোয়া করবে, ‘হে আল্লাহ! আমাদের পরিবারে বরকত দিন, স্ত্রী থেকে আমাকে উপকৃত করুন এবং আমার থেকে তাকে উপকৃত করুন, যত দিন ভালো হয় আমাদের একসাথে রাখুন এবং যেদিন চিরতরে একে অপর থেকে আলাদা হওয়া ভালো হয় সেদিন আলাদা করুন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৬০, আল মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৪০১৮)
স্বামী-স্ত্রী জামাতে নামাজ পড়লে স্বামী অবশ্যই ইমামতি করবে এবং স্ত্রী তার এক কদম পেছনে দাঁড়াবে। নাহয় নামাজ শুদ্ধ হবে না। তবে সে নামাজ স্বামী-স্ত্রী একান্তে আদায় করবে।

১৫/ ওলিমা

বিয়ের পর ছেলের পক্ষে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও গরিব-মিসকিনদের সামর্থ অনুযায়ী আথীতিয়তা করাকে ‘ওয়ালিমা’ বলে। বাংলায় ওয়ালিমাকে বউভাত বলা হয়ে থাকে। বিয়ের পরদিন বা পরবর্তী সময়ে সুবিধানুযায়ী নিকটতম সময়ের মধ্যে ওয়ালিমা করা ভাল। তবে ৩ দিনের মধ্যে করা উত্তম। যেকোনো প্রকার খাদ্যবস্তু দিয়ে ওয়ালিমা করা যায়। মনে রাখতে হবে ওয়ালিমা একটি ইবাদত। ”এক দিন ওয়ালিমা করা সুন্নত, দুই দিন ওয়ালিমা করা মুস্তাহাব, তিন দিন ওয়ালিমা করা জায়েজ। (মুসলিম: ১৪২৭)”
বিয়ের সুন্নত তরিকা সুন্নতি বিয়ের নিয়ম ইসলামে বিয়ের যোগ্যতা ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম বিবাহের সুন্নাত ইসলামে বিয়ের রুকন বিয়ের সঠিক নিয়ম

বিবাহের খুতবা
বিবাহের খুতবা আরবী ও বাংলা উচ্চারণ সহ এবং বিয়ে পড়ানোর সঠিক নিয়ম

বিয়ের সুন্নত তরিকা, শুরু থেকে শেষ

ওয়ালিমা এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও ওয়ালিমা করেছেন এবং সাহাবিদেরও করতে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-কে বিয়ে করার পরদিন ওয়ালিমা করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস নম্বর-৫১৭০)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ছাফিয়াহ (রা.)-কে বিয়ের পর ৩ (তিন) দিন যাবৎ ওয়ালিমা খাইয়েছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস নম্বর-৩৮৩৪)।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) আবদুর রহমান ইবনে আওফের শরীরে হলুদ রঙের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? তিনি বললেন, আমি এক খেজুর আঁটির ওজন স্বর্ণ দিয়ে একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি। রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমার বিবাহে বরকত দান করুক। একটি বকরি/ছাগল দ্বারা হলেও তুমি ওয়ালিমা করো।’ (বুখারি: ৫১৫৫; মুসলিম ও মিশকাত, হাদিস নম্বর-৩২১০)।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জয়নব (রা.)-কে বিবাহ করার পর যতবড় ওয়ালিমা করেছিলেন, এতবড় ওয়ালিমা তিনি তাঁর অন্য কোনো স্ত্রীর বেলায় করতে দেখা যায়নি।। (বুখারি: ৫১৬৮; মুসলিম: ২৫৬৯; মিশকাত, হাদিস নম্বর-৩২১১)।

হজরত আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ছাফিয়াহ (রা.)-কে মুক্ত করে বিবাহ করলেন এবং তাঁর মোহর নির্ধারণ করেছিলেন তাঁর মুক্তিপণ। তিনি তাঁর বিবাহের ওয়ালিমা করেছিলেন ‘হায়স’ নামক বিশেষ খাদ্য দিয়ে, যা খেজুর, পনির ও ঘি দ্বারা তৈরি ছিল। (বুখারি: ৫১৬৯; মুসলিম: ২৫৬২; মিশকাত, খণ্ড: ২, হাদিস নম্বর-৩২১৩)।

ওয়ালিমায় অতিরিক্ত খরচ করা কিংবা খুবউঁচু মানের খাবার ব্যবস্থা করা জরুরি নয়। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করাই সুন্নত। হজরত আনাস (রা.) বলেন, খায়বার থেকে ফিরে আসার সময় নবী (সা.) খায়বার ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থানে ৩(তিন) দিন অবস্থান করলেন এবং সেখানে মহিলা সাহাবি ছাফিয়্যা (রা.)-কে আনা হলো। রাসুল (সাঃ) ওয়ালিমার ব্যবস্থা করলেন আর আমি মুসলিমদের ওয়ালিমার দাওয়াত দিলাম। এই ওয়ালিমায় রুটি বা গোশত কিছুই ছিল না। এই ওয়ালিমার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) একখানা চামড়ার দস্তরখান বিছানোর আদেশ করলেন। অতঃপর এই দস্তরখানের ওপর কিছু খেজুর, পনির ও ঘি ঢেলে দেওয়া হলো। (বুখারি: ৫৩৮৭; মিশকাত, হাদিস নম্বর-৩২১৪)।

হযরত ছাফিয়্যা বিনতে শায়বা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) উনার এক স্ত্রীর ওয়ালিমা করেছিলেন মাত্র দুই ‘মুদ’ (বা এক ‘সা’, অর্থাৎ সাড়ে তিন কেজি) যব দ্বারা। (বুখারি: ৫১৭২; মিশকাত, হাদিস নম্বর-৩২১৫)।
বিবাহের ক্ষেত্রে কেবল ছেলের জন্য ওয়ালিমা করা সুন্নত। বর্তমানে কনের বাড়িতে যে ভোজের আয়োজন করা হয়, তা শরিয়তসম্মত নয়। বিয়েতে কনেপক্ষের কোনোরূপ খরচ করার কথা নয়। এরপরও যা করা হয়, সেটা সৌজন্যমূলক আপ্যায়নমাত্র। (বুখারি, হাদিস নম্বর-৬০১৮)।

কনেপক্ষের অনিচ্ছাকৃত চাপের মুখে বাধ্যতামূলক মেহমানদারি সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এতে অংশ নেওয়াও হারাম। কারও ওপর জোর প্রয়োগ করে কোনো খাবার গ্রহণ করা জুলুমের শামিল। (আল দায়েউস সানায়ে, কিতাবুন নিকাহ; দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার)।

১৬/ ওলিমা অনুষ্ঠানে উপহারসামগ্রী গ্রহণ
বর্তমানে দেখা যায়, বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহার গ্রহণের জন্য চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে ক্যাম্প খুলে বসে। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও নিচু মনের পরিচায়ক। এতে আগত অথিতিরা লজ্জায় পড়ে যায়। যেসব উপহার দেওয়া-নেওয়া হয়, তা যদি চক্ষুলজ্জার খাতিরে বা সামাজিক চাপে বা সুখ্যাতি কিংবা তার বিনিময় পাওয়ার উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তা করা অবৈধ। আর যদি আনন্দচিত্তে ভালোবাসার স্মৃতিস্বরূপ দেওয়া হয় বা না দিলে কোনো রকম অপমান করা না হয়, তাহলে তা গ্রহণ করা বৈধ। (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ১১৫৪৫; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৪/৩৮৩)

১৭/ স্ত্রীর মন প্রফুল্ল করার চেষ্টা করবে
স্বামী প্রথম সাক্ষাতের সময় স্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরন করবে যেন তার মন প্রফুল্ল হয়। যেমন—তাকে দুধ বা শরবত পান করিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের সময় একটি দুধের পেয়ালা থেকে নিজে কিছু পান করলেন, অতঃপর আয়েশা (রা.)-কে পান করানোর জন্য পেয়ালা এগিয়ে দিলে আয়শা(রাঃ) লজ্জায় মস্তকাবনত করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৭৫৯১)

১৮/ স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের গোপনীয়তা রক্ষা করা

স্বামী-স্ত্রী্র পরস্পরে সংঘটিত লজ্জাজনক কথাবার্তা ও আচরন কোন বন্ধুবান্ধবের সামনে প্রকাশ করা হারাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে তার স্ত্রীর সহিত মিলিত হয়, অতঃপর তার গোপনীয়তা অন্যদের কাছে প্রকাশ করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৩৭)

১৯/ যেসব কুসুংস্কার হারাম

১) মেয়ের অনুমতি আনার জন্য ছেলেপক্ষ সাক্ষী পাঠিয়ে থাকে, শরীয়াতের দৃষ্টিতে এর কোন প্রয়োজন নেই। পর্দার বিধান খেলাফ হয় বলে তাহা হারাম।
,
২) বিবাহের সময় অনেকে বর-কনেকে তিনবার করে ইজাব কবূল পাঠ করিয়ে থাকে (একবার বললেই হবে) এবং পরে তাদের দ্বারা আমীন বলানো হয়, শরীয়াতে এর কোন ভিত্তি নেই।

৩) ইজাব কবূলের মাধ্যমে আকদ সম্পাদন হওয়ার পর মজলিসে উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে সামনে দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে উচ্চ স্বরে বর যে সালাম করে থাকে তারও কোন ভিত্তি নেই।

৪) ঝগড়া-ফাসাদের সম্ভাবনা সত্ত্বেও খেজুর ছিটানোকে খুব জরুরী মনে করা। অথচ এ সম্পর্কিত হাদীসকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম যঈফ বলেছেন। (বিশৃঙ্খলা না হলে সমস্যা নেই)।

৫) বরের নিকট কনে পক্ষের লোকেরা হাত ধোয়ানোর টাকা, পান পাত্রের পানের সাথে টাকা দিয়ে তার থেকে কয়েকগুণ বেশী টাকা জোর করে আদায় করা না জায়েয। মূলতঃ এসব হিন্দুয়ানী প্রথা। দীর্ঘদিন যাবত হিন্দুদের সাথে বসবাস করার কারণে আমাদের মধ্যে এই কুসংস্কারগুলি অনুপ্রবেশ করেছে।

৬) অনেক সময় গেইট সাজিয়ে সেখানে বরকে আটকে টাকা না দেয়া পর্যন্ত ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এটাও একটা গর্হিত কাজ।

৭) বিয়ের সময় যৌতুকের বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রকাশ্য মজলিসে সকলের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এটাও অন্যায় ও নির্লজ্জতার উদাহরণ।

৮) বিবাহ পর শ্বশুর বাড়ীতে নববধূকে বিভিন্ন কায়দায় গ্রহণ করা হয়। কোথাও ধান, দুবরা ঘাস, দুধের স্বর ইত্যাদি দিয়ে বরণ করা হয় এবং সবাইকে বউ দেখানো হয়; এসবই হিন্দুয়ানী প্রথা। কোন মুসলমানের জন্য এসব কাজ করা জায়েয নেই।

৯) অনেক সময় বিয়ের আগের দিন বা পরের দিন মেয়ের বাড়ী থেকে ছেলের বাড়ীতে মাছ-মিষ্টি ইত্যাদি পাঠানো হয়। এটাও বিজাতীয় নাজায়েয প্রথা। তবে চাপে নয়,বরং সন্তুষ্টি চিত্তে পাঠাইলে সেটি জায়েজ।

১০) কোন উতসব বা কোন মৌসুমে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে চাল, আটা, ময়দা, পিঠা ইত্যাদি পাঠানো এবং এ প্রচলনকে জরুরী মনে করার প্রথা অনেক জায়গায় চালু থাকতে দেখা যায় । আবার অনেক সময় আনুষ্ঠানিকভাবে জামাইকে এবং তার পরিবার-পরিজনকে কাপড়-চোপড় দেয়ার প্রথা আছে। এমনকি এটাকে এতটাই জরুরী বিবেচনা করা হয় যে, ঋণ করেও তা দিতে হয়। এটা শরীয়াতের দৃষ্টিতে সীমালঙ্ঘন ছাড়া আর কিছু নয়, তাই এসবই বর্জনীয় ও গর্হিত কাজ।

১১) আজকাল বিবাহ অনুষ্ঠানে বেগানা পুরুষ মহিলাদের সাজ-সজ্জা করে একত্রিত হতে দেখা যায় এবং যুবক যুবতীদের অবাধে মেলা-মেশা করতেও দেখা যায়। এধরনের বেপর্দা আর বেহায়াপনার কারণে উক্ত মজলিসে উপস্থিত নারী পুরুষ সকলেই মারাত্নক গুনাহগার হবে।

১২) বিবাহ উপলক্ষে গান-বাজনা, পার্ট্, ছবি তোলা ও ভিডিও করা ইত্যাদি মহামারী আকার ধারণ করেছের শরীয়াতের দৃষ্টিতে এসব হারাম ও নাজায়েয।

১৩) মেয়েকে উঠিয়ে দেয়ার আগ মুহূর্তে মেয়ের বাড়ীতে পাড়া-প্রতিবেশী সব মেয়ে-মহিলারা একত্রিত হয়, আর জামাইকে অন্দর মহলে এনে সকলে মিলে খেল-তামাশা করে তার মুখ দর্শন করে। বিভিন্ন উপায়ে নতুন দুলাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। এধরনের কাজ শরীয়াতের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।

১৪) অনেক জায়গায় প্রথা আছে যে, নববধূকে বর নিজে বা তার ভগ্নীপতি অথবা তার ছোট ভাই গাড়ী থেকে নামিয়ে কোলে করে ঘরে নেয়। তারপর উপস্থিত মহল্লাবাসীর সামনে নববধূর মুখ খুলে দেখানো হয়। এসবই হারাম এবং নাজায়েয।

১৫) বর্তমানের এংগেজমেন্টের যে রীতিনীতি ইসলাম তা কখনো সমর্থন করেনা, যা বিধর্মীদের প্রথা। (বিবাহের পূর্বে কথাবার্তার দিন কনের হাতে আংটি পরানো)।

বিবাহ পড়ানোর নিয়ম নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ বিবাহের খুতবা দাঁড়িয়ে পড়বে না বসে পড়বে? এবং তা শ্রবণ করার হুকুম কি?

উত্তরঃ বিবাহের খুতবা দাঁড়িয়ে পড়াই নিয়ম। বসেও পড়া জয়েয। এবং তা চুপচাপ শ্রবণ করা ওয়াজিব। (দেখুনঃ ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া)

প্রশ্নঃ খুতবা পাঠ করার পর বিবাহ কিভাবে পড়াবে?

উত্তরঃ খুতবা পাঠ করার পর দুজন স্বক্ষীর সম্মুখে তাদেরকে শুনিয়ে উকীল (বা পাত্রী) পাত্রকে বা তার নিযুক্ত প্রতিনিধিকে পাত্রীর পরিচয় প্রদান পূর্বক বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবে এবং পাত্র বা তার প্রতিনিধি তার পক্ষ হয়ে আমি কবুল করলাম বা আমি গ্রহণআমি গ্রহণ করলাম বা ইত্যকার কোন বাক্য বলে সে প্রস্তাব গ্রহণ করবে। ব্যস, বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেল। (দেখুনঃ আহকামে জিন্দেগী)

প্রশ্নঃ বিবাহের খুতবা পাঠ করার শরয়ী বিধান কি? এবং তা কখন পাঠ করবে?

উত্তরঃ বিবাহের খুতবা পাঠ করা মোস্তাহাব। এই খুতবা ইজাব কবূলের পূর্বে পাঠ করবে। এবং তা ঐ সময় হওয়া সুন্নাত।

প্রশ্নঃ আকদ করতে চাইলে প্রথমে কি কাজ করতে হবে?

উত্তরঃ আকদ করতে চাইলে পূর্বে মহর ধার্য না হয়ে থাকলে প্রথমে মহর ধার্য করবে। (সামর্থ অনুযায়ী) কম মহর ধার্য করার মধ্যেই বরকত নিহিত।

প্রশ্নঃ বিবাহের খবর প্রচার করার হুকুম কি?

উত্তরঃ এ’লান বা ঘটা করে অর্থাৎ, বিবাহের খবর প্রচার করে বিবাহের আকদ সম্পন্ন করা সুন্নাত। বিনা ওজরে এ’লান ছাড়া গোপনে বিবাহ পড়ানো সুন্নাতের খেলাফ। (দেখুনঃ ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া)

আরও পড়ুন: বিবাহের খুতবা pdf, বিবাহের খুতবা আগে না পরে, বিবাহের খুতবা পড়া কি, সুন্নত তরিকায় বিবাহ পড়ানোর নিয়ম, বিবাহের খুতবা আরবি pdf, বিবাহের খুতবার আয়াত, বিবাহের খুতবা খুতবাতুল আহকাম, বিবাহের খুতবার বই, বিবাহের খুতবা, বিবাহের খুতবা ওয়াজ, নবীর বিবাহের খুতবা, হাদিসে বর্নিত বিবাহের খুতবা আরবী, বিয়ের খুতবা, বিবাহের খুতবা, বিবাহের খুতবা আরবীতে, বিবাহের খুৎবা, হিরার চেয়ে দামি এই বিবাহের খুতবা, খুতবা,bibaher khutbah বিবাহের খুতবা পড়ার নিয়ম, বিবাহ, বিবাহের খুতবা আরবী বিবাহের খুতবা বিবাহের খুতবা, বিবাহের খুতবা পাঠ, বিবাহের খুতবা, ফাতেমার বিবাহের খুতবা,বিবাহের খুতবা কখন পড়বে, বিবাহের খুতবা পড়ার নিয়ম, ঈদের খুতবা, বিবাহের সময় খুতবা দেওয়া

About admin

Check Also

বলুন তো, কয়জন মেয়ে আছে এই ছবিতে? সবাই ভূল উত্তর দিয়েছে

ছবিটি ভালো করে দেখুন। তারপর বলুনতো ছবিতে কয়জন মেয়ে আছে। এক দুই তিন চার…গুনে দেখলেন …