বিমানবালা হতে কি কি যোগ্যতা লাগে সম্পর্কে A টু Z বিমানবালা হতে কি কি যোগ্যতা লাগে, এ সম্পর্কে জানতে অনেকেই আগ্রহী। কেননা যারা আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেন, পাখির মত আকাশে উড়ে বেড়াতে চান এবং পুরো বিশ্বকে খুব কাছ থেকে দেখতে চান তাদের জন্য এই চাকরিটি একেবারে সোনার হরিণের মতো। আর তাইতো বিমানবালা অর্থাৎ এয়ার হোস্টেস বর্তমানে একটি আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে অবস্থান করছে।
যাদেরকে আকাশ কন্যা নামে অভিহিত করা হয়। মূলত মেয়েদের জন্য এই চাকরি টি একটা চার্মিং জব। আর তাই আজকে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব— বিমানবালা হওয়ার যোগ্যতা, বিমানবালা হওয়ার উপায় এবং এই চাকরির সুযোগ সুবিধা ও বেতন ভাতা সম্পর্কে এ টু জেড।
বিমানবালা হতে কি কি যোগ্যতা লাগে
প্রত্যেকটি চাকরির জন্য চাকরি প্রার্থীকে অবশ্যই যোগ্য হতে হবে। আর এটা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে নয়। এডুকেশন কোয়ালিফিকেশন অবশ্যই আশানুরূপ থাকতে হবে তবে এর পাশাপাশি যোগ্যতা হিসেবে আরো লাগবে।
আত্মবিশ্বাস
ধৈর্য ও ক্রিটিক্যাল সময় হ্যান্ডেল করার মন-মানসিকতা
কম্পিউটার দক্ষতা
ভাষাগত দক্ষতা
ইংরেজি দক্ষতা সহ প্রয়োজনীয় বেশ কিছু যোগ্যতা।
তবে আপনি যদি একজন এয়ারহোস্টেস হিসেবে নিযুক্ত হতে চান সেক্ষেত্রে আপনার যা যা যোগ্যতা থাকতে হবে সেগুলো আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব। তবে আসুন তার আগে জেনে নেই— বিমানবালা কাকে বলে এবং একজন বিমানবালার মূলত কি কি কাজ করতে হয় সে সম্পর্কে।
বিমানবালা কাকে বলেঃ বিমানবালা হল বিমানের একটা চাকরি। মূলত যারা বিমানে বহনকারী যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সৎ সঙ্গে ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করেন তাদেরকে বিমানবালা বলে। তবে সচরাচর আমরা তাদেরকে এয়ারহোস্টেস বলে সম্বোধন করে থাকি।
বিমানবালার কাজ কি
বিমানবালার কাজ কিঃ যারা বিমানবালার চাকরি করতে অধিক বেশি আগ্রহী তারা মূলত অনেক বেশি জানার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন যে, একজন এয়ার হোস্টেস মূলত কি কি কাজ করে থাকে? তাহলে আসুন আলোচনার এ পর্যায়ে জেনে নেই বিমানবালা এর কাজ কি সে সম্পর্কে।
- একজন বিমানবালার কাজ হচ্ছে পরিছন্নতা
- খাবার-দাবারের সরঞ্জাম পৌঁছানো
- বিমানে ওঠা নামা সংক্রান্ত সকল তথ্য পাইলটের হয়ে যাত্রীদের জানানো
- জরুরী ইকুইপমেন্ট
- সকল প্রকার ফাস্ট এইট সাথে রাখা
- যেকোনো বিপদ আপদ এর পূর্বাভাস পেলে যাত্রীদের সে সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া
- যাত্রীরা বিমানে ওঠার পর তাদের টিকেট মিলিয়ে দেখা
- যাত্রীদের সিট দেখিয়ে দেওয়া এবং সিট বেল্ট বেঁধে নিতে বলা
- কেবিন লাগেজ গুলো সিটে পৌঁছাতে সাহায্য করা সহ খুঁটিনাটি কাজ সমূহ।
একজন বিমানবালা হতে কি কি লাগে
একজন বিমানবালা হিসেবে নিযুক্ত হতে চাইলে উক্তপার থেকে অবশ্যই যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রথমে ব্যাসিক কোর্সে ভর্তি হতে হয়। আর সেই কোর্সে ভর্তি হবার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস হতে হয় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে। অতএব যারা স্নাতক পাস করেছেন তারাও বিমানবালা করছে ভর্তি হতে পারবেন।
তবে এক্ষেত্রে আপনার যোগ্যতা হিসেবে যেগুলো থাকতে হবে সেগুলো হলো:-
বয়স সর্বনিম্ন ১৬ বছর
উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি বা তার বেশি।
চোখের দৃষ্টি শক্তি ৬/৬
আত্মবিশ্বাসী
বন্ধুসুলভ স্বভাব
স্মার্ট ও উদ্যোগে
ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা
দায়িত্ব পালনে সচেষ্টতা
ইংরেজিতে দক্ষ এবং ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার
শরীরের কোন ক্ষত বা কাটা দাগ না থাকা
চুলের আকার ছোট হওয়া এবং চুল লম্বা হলে সেগুলো পরিপাটি ও গোছালো হওয়া।
তাই আপনি যদি বিমানবালা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাহলে বিমানবালা হওয়ার যোগ্যতা গুলো আপনার মাঝে রয়েছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করুন এবং পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিন।
বিমানবালা হতে গেলে কি কি জানা প্রয়োজনঃ বিমানবালা মূলত একেবারেই আলাদা বা ভিন্ন রকমের একটা চাকরি। আর তাই বিমানবালা হতে চাইলে অবশ্যই তাকে বেশ কিছু জিনিস জানতেই হবে। বলতে পারেন নিজের মাঝে কিছু যুক্ত করতে হবে এবং কিছু কিছু বিষয় ছাড়তে হবে।
যেমন:–
যদি কেউ সাঁতার কাটতে না জানে, তাহলে তাকে অবশ্যই সাঁতার জানতে হবে
চুল অতিরিক্ত বড় বা অগোছানো হলে ছোট করতে হবে
শরীরে কোনরকম ট্যাটু অথবা ফোড়া থাকা চলবে না।
জঙ্গলে টিকে থাকার ক্ষমতা থাকতে হবে কেননা কখনো কখনো ইমারজেন্সিতে দুর্গম এলাকায় বিমান ল্যান্ড করানো হয়
যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে শারীরিক দিক থেকে
মানসিকভাবেও শক্তিশালী হতে হবে
মুখে কোন বিশ্রী জন্মদাগ থাকলে চলবে না
হাতের নখ সব সময় ছোট থাকতে হবে
বিমান বেলায় আগ্রহী প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ্য নির্দিষ্ট উচ্চতা থাকতে হবে
নির্দিষ্ট দৈহিক ওজন থাকতে হবে
সুন্দর না হোক, তবে রূপ লাবণ্যে তারুণ্যতা থাকা জরুরী
পাশাপাশি কুংফু প্রশিক্ষণ নিতে হবে, কেননা কখনো কখনো বিপদজনক পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলাতে বা কারো থেকে টিজের শিকার হওয়া থেকে মুক্তি পেতে এই প্রশিক্ষণ বা ট্রেনিং এর আবশ্যিকতা অনেক।
সুতরাং, বিমানবালা হবার জন্য আপনাকে আমাদের উল্লেখিত এই বিষয়গুলোর সম্পর্কে জানতে হবে এবং নিজের মাঝে সেগুলো ধীরে ধীরে আয়ত্ত করার চেষ্টা করতে হবে।
বিমানবালা হতে হলে কত টাকা খরচ পড়বে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানভেদে বিমানবালা হতে হলে মোটামুটি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। কেননা বিমান বালার জন্য একটা কোর্স কমপ্লিট করার প্রয়োজন পড়ে সেটা আমরা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি। তবে হ্যাঁ অসংখ্য বিমান সংস্থা বিভিন্ন সময় বিমানবালা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। আর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যদি আপনি আবেদন করেন এবং সিলেক্ট হয়ে যান সে ক্ষেত্রে আপনার খরচ তুলনায় কম হবে। তবে হ্যাঁ, সচরাচর এই খরচের পরিসীমাটা ভিন্ন হয় দেশভেতেও। কেননা কিছু কিছু দেশ রয়েছে যেখানে আপনি বিমানবালা হওয়ার কোর্স কমপ্লিট করতে চাইলে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকা পর্যন্তও লাগতে পারে।
বিমানবালার বেতন কতঃ একজন বিমানবালা ক্যারিয়ারের শুরুতে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বেতন পায়। অপর দিকে বিদেশি বিমান কোম্পানিগুলো বিমানবাদের শুরুতে বেতন দিয়ে থাকে প্রায় এক লক্ষ টাকা। কিন্তু বেতনের পাশাপাশি তারা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন অফার পেয়ে থাকে যেটা বেশ উন্নত মানের এবং অনেক বেশি লাভজনক।
বিমানবালাদের সুযোগ-সুবিধা কি কিঃ একজন বিমানবালা মোট অংকের টাকা বেতন হিসেবে পেয়ে থাকেন এটা আমরা জানি। তবে এর পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা হিসেবে তারা আর যা যা ভোগ করতে পারে সেগুলো হলো:-
ফাইভ স্টার হোটেলে থাকার সুবিধাঃ ফ্লাইট থেকে হোটেলে যাওয়া এবং আসার জন্য গাড়ির সুব্যবস্থা
দীর্ঘদিন চাকরি এবং ভালো পারফরমেন্সের জন্য প্রমোশনের ব্যবস্থা এক কথায়, সব মিলিয়ে বিমানবালা চাকরিটি বর্তমান স্মার্ট শিক্ষিত ও দক্ষ তরুণীদের লোভনীয় এক ক্যারিয়ার।
বিমান বালার আচরণগত গুণাবলী কি কিঃ একজন বিমানবালার মূলত আচরণগত গুণাবলীর অত্যন্ত প্রয়োজন। আর তাই এ পর্যায়ে আমরা বিমানবালা কি কি আচরণগত গুণাবলী থাকার জরুরী সেগুলো সাজেস্ট করব। যথা:-
ব্যক্তিত্বের মাধুর্য
ভাষাগত জ্ঞান ও কমিউনিকেশন স্কিল
উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্ন
টিমওয়ার্ক করার মন মানসিকতা এবং
পজিটিভিটি ও ধৈর্য।
বিমানবালা চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া
বিমানবালা চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া মূলত সার্কুলার এ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা থাকে। তবে ধারণা প্রদানের জন্য আমরা এ পর্যায়ে বিমানবালা চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। বলতে পারেন বিমানবালা চাকরির ক্ষেত্রে আপনাকে হাতে গোনা চারটি স্টেপ পার করতে হবে। সেগুলো হলো:-
- লিখিত পরীক্ষা
- গ্রুপ ডিসকাশন
- ইন্টারভিউ
- ট্রেনিং
মূলত লিখিত পরীক্ষায় আপনার গণিত এবং জেনারেল নলেজের যাচাই-বাছাই করা হবে। কেননা বিমানবালা চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাতে মূলত গণিত ও জেনারেল নলেজ এর উপর বেশি প্রশ্ন এসে থাকে। আর আপনি যদি লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করেন অর্থাৎ সিলেক্ট হয়ে যান সে ক্ষেত্রে আপনাকে গ্রুপ ডিসকাশনের জন্য ডাকা হবে। গ্রুপ ডিসকাশনের সময় মূলত আপনার উপস্থিত বুদ্ধি, তাৎক্ষণিক বিচারবোধ, বাচনিক দক্ষতা ও নেতৃত্ব দলের ক্ষমতা গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে কর্তৃপক্ষ।
সুতরাং আপনার মধ্যে যদি নিয়মিত অনুশীলন করার অভ্যাস এবং অ্যাটিটিউড থেকে থাকে তাহলে আপনি গ্রুপ ডিসকাশনে মূলত টিকে যাবেন। এরপর তৃতীয় ধাপে আপনাকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হবে। মূলত এটাই হচ্ছে শেষ থাক। আপনাকে আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতার উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে এবং পরবর্তীতে ৬ মাসের অথবা তার বেশি সময়ের একটা কোর্স কমপ্লিট করার মাধ্যমে যোগদান করতে পারবেন বিমানবালা চাকরিতে।
বিমানবালা চাকরির কোর্স কোথায় করবেন
আমরা অনেকেই জানিনা বিমানবালা চাকরির কোর্সগুলো মূলত কোথায় করা যেতে পারে। আর তাই তাদেরকে বলছি বিমানবালা জবের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা কোর্স করিয়ে থাকে। তবে গুণগত মানের কথা চিন্তা করে এবং ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি হওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন কোর্সের প্রকারভেদ অনুযায়ী সার্টিফিকেট কোর্স থেকে মাস্টার্স কোর্স পর্যন্ত করতে পারবেন আপনি।
তবে সচরাচর কোর্স এর মেয়াদ হয়ে থাকে ৬ মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত। তাই আপনি যদি চান বিমানবালা হতে তাহলে এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন এবং প্রস্তুতি নিন ভালোভাবে।