বড় বোনকে প্রে.গ’ন্যা.ন্ট করে বিয়ে করলো ছো.ট ভাই। এটা কী.ভাবে সম্ভব

বলা হয়, বোন থাকা মানে সারা জীবনের জন্যই একজন বন্ধু থাকা। দুই বোনের মধ্যকার স’ম্প’র্ক যেন পৃথিবীর অনেক স’ম্প’র্ককে হার মানায়। দুজনে সুখে-দুঃখে থাকে পাশে, মনের বাতি হয়ে।

এ এক মায়াময় স’ম্প’র্ক। সামাজিক রীতিনীতি, পারিপার্শ্বিক চা’প অনেক সময়ই দুই বোনের সুস’ম্প’র্ক ধরে রাখতে পারে না। বিশেষ ক’রে বড় বোনের আগে যদি ছোট বোনের বি’য়ে হয়ে যায়। যেমনটা হয়েছে সোমা ও রত্নার (ছদ্মনাম) জীবনে ছোট বোন সোমাকে পৃথিবীর সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসেন রত্না।

ছয় বছরের ছোট এই বোনকে একরকম পুতুলের মতোই আদর-যত্নে কোলে-পিঠে ক’রে বড় ক’রেছেন। একসময় রত্নার আগে সোমার বি’য়ে হয়। সোমা একজনকে ভালোবাসতেন, বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হতে থাকায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও মা-বাবা বড় মেয়েটির আগে ছোট মেয়েটির বি’য়ে দেন। সোমা আগে বি’য়ে করায় রত্নার মনে ক্ষো’ভ জ’ন্মে না ঠিকই,

তবে আশপাশের মানুষের কানাঘুষায় তাঁর মনে একটা ক’ষ্ট জমতে থাকে। চারদিক থেকে চা’প আসায় রত্না একসময় বিষণ্ন হয়ে পড়েন। তবে রত্নার মতো নীরবে ক’ষ্ট চে’পে রাখেননি কৃতি ও মায়া। পিঠাপিঠি দুই বোন তাঁরা। বড় বোন কৃতি পড়াশোনার পাট চুকিয়ে চাকরি ক’র’ছে’ন। পাত্র দেখাদেখি চলছে বেশ অনেক দিন ধরেই, তবে ব্যাটে-বলে মিলছে না।

অন্যদিকে মায়াও মানসিকভাবে প্রস্তুত বি’য়ের জন্য। একজন মনের মানুষও আছে তাঁর। ছেলেটি দেশে পড়াশোনা শেষ ক’রে বাইরে চলে যাচ্ছে। বি’য়ে ক’রে যেতে চান। দুই পরিবারও রাজি। তবে সব আ’ট’কে আছে কৃতির কারণে। বড় মেয়েকে রেখে ছোট

মেয়ের বি’য়ে দিতে চান না মা-বাবা। মানুষ কী বলবে? যদি বড় মেয়ের আর বি’য়ে না হয়। এই জটিলতা দুই বোনের স’ম্প’র্কে ফাটল ধ;রায়।

বদলে যেতে থাকেন দুজন। এমন পরিস্থিতির জন্য একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকেন। একসময় দুই বোনের মধ্যে কথা বলাও বন্ধ হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রেই এমন নেতিবাচক ঘ’ট’না হয়তো ঘ’টে না। ছোট বোনের পর বড় বোন দিব্যি বি’য়ে ক’রে সংসার ক’র’ছে’ন, ভালো আছেন—এমন উদাহরণও আছে।

আসলে সমাজ অনেক বিষয় মাথায় গেঁথে দেয়। পরিবারের বড় মেয়ের বি’য়ে হবে আগে, এমন বিষয়গুলো সামাজিক রীতি হিসেবে গড়ে উঠেছে। উল্টোটা হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে পরিবারের দিক থেকে সহযোগিতা থাকলেও অনেক সময় পারিপার্শ্বিক নেতিবাচক আ’চ’র’ণের কারণে দুই বোনই মানসিকভাবে বি’প’র্য’স্ত হন।

সাধারণত বড় মেয়েটিকে আশপাশের মানুষের কথা বেশি শুনতে হয়। মেয়েও অনেক সময় বিষয়টি সামলে নিতে পারেন না।

একাকিত্বে ভোগেন। বিষণ্নতায় ভু’ল কিছু ক’রে ফে’লেন। তবে এসব আ’চ’র’ণ-কথাকে গু’রু’ত্ব না দেওয়াই হলো বুদ্ধিমানের কাজ। ছোট বোন কান্তার বি’য়ের কেনাকা’টা থেকে শুরু ক’রে সব আয়োজনই ক’রেছেন বড় বোন রেশমা।

রেশমা এখনই বি’য়ের জন্য প্রস্তুত নন। অন্যদিকে কান্তা চাইছিলেন বি’য়ে করতে। তাই পরিবারের সদস্যরা দুই বোনের মতামত নিয়েই বি’য়ের আয়োজন ক’রেন। ধুমধাম ক’রে বি’য়ে হয়। বি’য়ের অনুষ্ঠানে অনেক কাছের মানুষই বিষয়টি ভালোভাবে দেখেননি। তবে এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন রেশমা।

তিনি বলেন, ‘বি’য়ে হলো দুটো মানুষের মধ্যে একটি স’ম্প’র্ক তৈরির সেতু। এই সেতুর ভিত দৃঢ় না হলে তা একসময় ভে’ঙে যায়। তাই পারিপার্শ্বিক চা’পে, তাড়াহুড়ো ক’রে স’ম্প’র্ক তৈরি করার কোনো আগ্রহ নেই আমার। পরিবারও আমার মতামতকে সম্মান

ক’রেছে।’ কান্তা ও রেশমার বাবা আফসারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আসলে আমাদের দুই মেয়েরই ই’চ্ছাকে গু’রু’ত্ব দিয়েছি।

আমরা চাইনি কারও মনে ক’ষ্ট দিয়ে কিছু করতে। রেশমা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। অন্যদিকে কান্তা বি’য়ে করতে চাইছিল। তাই ওদের মতামত নিয়েই এগিয়েছি আমরা।’ এমনটিই আসলে করা উচিত বলে মনে ক’রেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে

পরিবারগুলোর উচিত দুই বোনের মধ্যে আস্থা তৈরি করা। বড় বোনেরও উচিত এ বিষয়ে উদারভাবে বিবেচনা করা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, এ ধরনের ক্ষেত্রে বাস্তবতা দুই রকম। এক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বড় মেয়েটি সংসারের প্রতি দায়িত্বশীল, পড়ালেখা ক’র’ছে’ন,কোনো স’ম্প’র্কে জড়াতে আ’গ্র’হী নন।

অন্যদিকে ছোট মেয়েটি সেভাবে পারিবারিক চা’প অনুভব ক’রেন না বা অন্য কোনো কারণেই হোক স’ম্প’র্কে জড়ান।

ছোট মেয়েটির বি’য়ে দিতে বাধ্য হয় পরিবার আরেকটি বাস্তবতার কথাও বললেন মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন, ‘দেখা যায়, ছোট মেয়েটি বড় মেয়েটির চেয়ে দেখতে সুন্দর। তাই ছোটটির তাড়াতাড়ি বি’য়ে হয়ে গেল। তবে আমাদের দেশে এখনো বেশির ভাগ পরিবারই

চায় না এই রীতি ভাঙতে। সামাজিক চা’পে পড়তে চায় না মানুষ। বড় মেয়েকে নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়, হয়তো তাঁর কোনো খুঁত আছে? পারিবারিক বন্ধনে একটা টানাপোড়েন দেখা যায়।’

অনেক সময় বি’য়ে না হওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যরাও বড় মেয়েকে দোষারোপ ক’রেন। এটা ওই পরিবারের নিচু মানের সংস্কৃতির বিষয়টি নির্দেশ ক’রে, যা হওয়া উচিত নয়। এমনটাই মনে ক’রেন মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন। তাঁর মতে, পরিবারগুলোর উচিত, সমাজের উচিত দুটি মেয়ের মধ্যেই আস্থা তৈরি করা। পাশে দাঁড়ানো।

বড় মেয়ে বি’য়েতে আ’গ্র’হী না হলে তাঁর আগ্রহের কাজে তাঁকে উৎসাহিতকরা। সুন্দর-অসুন্দরের বিষয়টি পুরোপুরি অগ্রাহ্য করা। মেয়েটিকেও ভাবতে হবে বি’য়েই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। আবার ছোট মেয়েকেও নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করা যাবে না। আমাদের সমাজে এ বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে।

অনেক সময় এ ধরনের ঘ’ট’নায় বড় মেয়েটি একাকিত্বে ভোগেন। একেবারে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ সবার সামনে আসায় নিজেকে নিয়ে ভীত হয় পড়েন। এসব ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং করা উচিতদেখা যাচ্ছে, এ রকম বিষয়ে দুই বোন কিংবা পরিবারের মধ্যে তেমন

কোনো সমস্যা হয়তো তৈরি হতো না, যদি পারিপার্শ্বিক চা’প না থাকত। দুই বোন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া থাকলে যাঁর বি’য়েই আগে হোক, স’ম্প’র্কটা মধুরই থাকবে।