রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য সম্প্রতি অনেকে রাসেল ভাইপার সাপ এর নাম শুনেছেন। অনেকে এই বিষয় নিয়ে আতংকিত আছেন। অনেকে হয়তো এই প্রথম এই সাপের নাম শুনেছেন। বাংলাদেশের কয় একটি জেলায় রাসেল ভাইপার সাপ দেখা গিয়েছে। ইতিমধ্যে কয় এক জনকে এই সাপ কামড় দিয়েছে এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাই জেলা থেকে জেলা পর্যায় আতংক ছড়িয়েছে। এই সাপ কামড় দিলে বাঁচার সম্ভবনা খুব কম। এমনকি ভ্যাকসিনও কাজ হচ্ছে না। আক্রান্ত রুগী মারা যাচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে আতঙ্কের নাম রাসেল ভাইপার সাপঃ বাংলাদেশে এখন আতঙ্কের নাম রাসেল ভাইপার সাপ। কারণ ইতি মধ্যে কয়েক জনকে কামড় দিয়ে মেরে ফেলেছে। রাসেল ভাইপার সাপ ভয়ঙ্কর বিষাক্ত সাপ। যদি কাউকে এই সাপ কামড় দেয় তবে ২ ঘন্টার মধ্যে এন্টিভেনম(সূত্র যুগান্তর ) নামের একটি ভ্যাকসিন আছে ওই ভ্যাকসিন দিতে হবে।
যদি এই ভ্যাকসিন না দাওয়া যায় তবে সাপে কাটা রোগী মারা যেতে পারে। এইতো কিছু দিন আগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় রাসেল ভাইপার নামের মরণঘাতী বিষধর সাপের দেখা মিলেছে। স্থানীয়রা এই বিষধর সাপ দেখে মোবাইল ভিডিও করে ফেইসবুক ছড়িয়ে দিলে তা ফেইসবুক এ বেশ ভাইরাল হয়।ফরিদপুর ছাড়াও বেশ কয়েকটি জেলায় এই মরণঘাতী বিষধর সাপের দেখা মিলেছে।
রাসেল ভাইপার সাপ কত বড় হয়
রাসেল ভাইপার (Russell’s viper) সাপ সাধারণত ১২০ সেন্টিমিটার (৪ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে বড় প্রজাতির রাসেল ভাইপারগুলি প্রায় ১৬৬ সেন্টিমিটার (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কিছু বিরল ক্ষেত্রে এদের দৈর্ঘ্য আরও বেশি হতে পারে, তবে সাধারণত এই পরিসরের মধ্যেই থাকে।এটি বেশিরভাগ ভাইপারের চেয়ে সরু।
রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে অজানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ রাসেলস ভাইপার সাপ বাংলাদেশের অনেকে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নাম জানে। এই সাপ অতি বিষধর সাপ। বাংলাদেশে যে কয় প্রজাতির সাপ দেখা যায় তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিষধর সাপ এই চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া। এই সাপ যদি শরীরে দংশন করে তবে সারা শরীরে বিষ ছড়িয়ে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমনঃ পক্ষাঘাত,স্নায়ু বৈকল্য,কিডনির ক্ষতি ,রক্ত জমাট বাঁধা,চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, অঙ্গহানি,রক্তপাত, ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যেতে পারে।
সব থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই বিষধও সাপ বাংলাদেশে অনেক বছর আগে দেখা গিয়েছিলো পরে বিলুপ্ত হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে থেকে এই সাপ আবার দেখা গিয়েছে এবং কয়েকজনকে কামড় দিয়ে আক্রান্ত করেছে তারা মারাও গিয়েছে। এই প্রজাতির সাপ নতুন ভাবে আবার বাংলাদেশে আসছে এবং এই বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে কথা থেকে আসছে ।
রাসেল ভাইপার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বৈজ্ঞানিক নামঃ রাসেলস ভাইপার সাপ বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত। কিন্তু এই সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii
দৈর্ঘ্যঃ সাধারণত ১২০ সেন্টিমিটার (৪ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়, তবে বড় প্রজাতির সাপগুলো প্রায় ১৬৬ সেন্টিমিটার (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে পারে।
রঙ এবং প্যাটার্নঃ রাসেল ভাইপারগুলির গায়ে বাদামী বা হালকা বাদামী রঙের হয় এবং তাদের দেহে গোলাকার প্যাটার্ন দেখা যায়। এই প্যাটার্নগুলি সাপটিকে সহজেই চিনতে সাহায্য করে।
বসবাসের স্থানঃ রাসেল ভাইপার সাধারণত ঘাসযুক্ত এলাকা, চাষযোগ্য জমি এবং বনাঞ্চলে বসবাস করে। এগুলি প্রায়শই মানুষের বসতবাড়ির কাছাকাছি চলে আসে।
খাদ্যঃ
এই সাপগুলি প্রধানত ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, গিরগিটি এবং মাঝে মাঝে অন্যান্য সাপ খায়।
প্রজননঃ
রাসেল ভাইপাররা ডিম পাড়ে না বরং সরাসরি জীবন্ত বাচ্চা প্রসব করে। একটি প্রজননকালে একটি স্ত্রী সাপ প্রায় ২০-৪০টি বাচ্চা জন্ম দিতে পারে।
বিষঃ রাসেল ভাইপারের বিষ অত্যন্ত বিষাক্ত এবং এটি হিমোটক্সিক (রক্তের উপর প্রভাব ফেলে) এবং কোয়াগুলেটিভ (রক্ত জমাট বাঁধায়) বৈশিষ্ট্যযুক্ত। রাসেল ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুহার খুবই বেশি, এবং যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি মারাত্মক হতে পারে।
রাসেল ভাইপারের কামড়ের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ
তীব্র ব্যথাঃ এই বিষধর সাপ কামড় দিলে ক্ষত স্থানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। ফুলে যাওয়া এবং রক্তপাত: এই বিষধর সাপ কামড় দিলে ক্ষত স্থানে ফুলে যেতে পারে এবং কামড়ের জায়গায় প্রচন্ড রক্তপাত হতে পারে।
মাথাব্যথা, মাথা ঘোরাঃ আক্রমণ করার পরে মাথা ব্যাথা হতে পারে আবার মাথা ঘুরতে পারে।
বমি বমি ভাবঃ
রোগীর বমি বমি ভাব হতে পারে।
রক্তচাপ কমে যাওয়াঃ রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
রাসেল ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে । চিকিৎসা গ্রহণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং সঠিক সময়মতো চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী এই কামড়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
রাসেল’স ভাইপারের দশংনে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্রুত মৃত্যু হয়ঃ রাসেল’স ভাইপার কামড় সহজে আক্রান্ত রুগী মারা যায় এই কথা মোটেও সত্য নয়। বরং রুগী সহজে মারা যায় না চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়।(গবেষক মোঃ আবু সাইদ) ৭২ ঘন্টা আগে আক্রান্ত রোগী মারা যায় না। আমাদের এই বাংলাদেশে সাপের কামড়ে ১৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে ছিল এমন রেকর্ড ও আছে।
ডাঃ মোঃ আবুল ফয়েজ (বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি)সাপের দংশন ও এর চিকিৎসা বিস্তারিত সহ এই বিষয় বই লিখেছেন। এই বইয়ে তিনি সাপের দংশন ও এর চিকিৎসা সম্পূর্ণ উল্লেখ করেন।এই বইয়ে তিনি লিখেন যে ,কেউটে সাপের দংশনে রোগী গড়ে ১৮ ঘন্টা পরে গোখরো সাপের দংশনে রুগি গড়ে ৮ ঘন্টা পরে ,ন্দ্রবোড়া সাপের দংশনে ৩ দিন পরে মৃত্যু হতে পারে।
রাসেল ভাইপার সাপের ছবি
নিচে কিছু রাসেল ভাইপার সাপের ছবি দাওয়া হলো। যা দেখে আপনাদের কিনতে সুবিধা হবে রাসেল ভাইপার সাপ আসলে দেখতে কেমন।
ভারতের সবচেয়ে ভয়ংকর সাপ কোনটি
কিং কোবরা (King Cobra): বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ বিষধর সাপ। এটি প্রধানত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। এর বিষ নার্ভ সিস্টেমে আক্রমণ করে এবং দ্রুত মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
ভারতীয় কোবরা (Indian Cobra): খুবই সাধারণ এবং ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে পাওয়া যায়। এর বিষ অত্যন্ত মারাত্মক এবং মানুষ ও প্রাণীর জন্য বিপজ্জনক।
রাসেল ভাইপার (Russell’s Viper): ভারতে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত এবং এর কামড় প্রায়শই মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে। এর বিষ রক্তের ক্লটিং প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণ হতে পারে।
ক্রেট (Krait): বেশ কয়েকটি প্রজাতি আছে, যেমন কমন ক্রেট ও বেঙ্গল ক্রেট। এদের বিষ নার্ভ সিস্টেমকে পঙ্গু করে দিতে পারে এবং কামড় প্রায়শই মারাত্মক হয়।
সো স্কেল্ড ভাইপার (Saw-scaled Viper)”: আকারে ছোট হলেও অত্যন্ত আক্রমণাত্মক এবং দ্রুত কামড় দেয়। এর বিষ হেমোটক্সিক যা রক্তের ক্ষতি করে। (সূত্র: BBC)