শিমুকে হত্যার নির্মম বর্ণনা দিলেন ঘাতক স্বামী

স্বামীর হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন ঢাকাই সিনেমার অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু। স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলার চেষ্টা করেও বাঁচতে পারেননি স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল (৪৮)। পুলিশের কাছে ধরা পড়েছেন ঘটনার একদিন পরেই। গ্রেফতারের পর হত্যার দায় স্বীকারও করেছেন তিনি। যদিও নোবেলের দাবি স্ত্রীকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা ছিল না তার।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল জানান, সকালে দুজনের মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে তিনি শিমুকে থাপ্পড় দেন। এতে শিমু তার ওপর চড়াও হন। সেই পরিস্থিতিতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিমুর গলা চেপে ধরেন নোবেল। এতেই নিস্তেজ হয়ে পড়েন শিমু।

স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার গ্রিন রোড এলাকায় নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকতেন এই অভিনেত্রী। ওটা নোবেলদের নিজেদের বাড়ি। নিজেদের থাকার ফ্ল্যাটটা তারা বড় করেই বানিয়েছিল। শিমুকে হত্যার সময় তাদের দুই সন্তান (১৭ বছরের মেয়ে ও ৫ বছরের ছেলে) সেই বাসাতেই ছিলো। তবে ঘরগুলো দূরে থাকায় ছেলেমেয়েরা কিছু টের পাননি।

পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের কারণে শিমুকে হত্যা করেছে তার স্বামী শাখাওয়াত আলী নোবেল। এরপর শিমুর লাশ টুকরো করে বস্তায় ভরে গুম করতে সহায়তা করেছেন নোবেলের বন্ধু ফরহাদ। নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান নোবেল। প্রথমে তারা মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে আবার বাসায় ফেরেন। সন্ধ্যায় আবার তারা লাশ গুম করতে মোহাম্মদপুর, বসিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকায় যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর লাশটি ফেলে চলে যান। রাতেই কলাবাগান মডেল থানায় স্ত্রী নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন শিমুর স্বামী নোবেল।

একদিকে মায়ের মৃত্যু, অন্যদিকে কারাগারে বাবা। এই নির্মম পরিস্থিতিতে শিমুর বাচ্চাগুলো খুব অসহায় হয়ে পড়েছে। বাচ্চাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সবাই চিন্তা ভাবনা করছে। শিমুর পরে খালাকেই (ফাতেমা নিশা) বাচ্চা দুটো বেশি পছন্দ করে। এজন্য তাদের ছোট খালার বাসায় রাখা হয়েছে। শিমু-নোবেলের দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে, এগুলো নিয়ে এই মুহূর্তে না ভেবে পরবর্তীতে সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান দুই পরিবারের সদস্যরা।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে সিনেমায় অভিষেক হয় অভিনেত্রী শিমুর। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তিনি প্রায় ২৫টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও অর্ধশতাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। দুই দশকেরও বেশি সময় অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছেন শিমু।

অভিনেত্রী হিসেবে দেশের খ্যাতনামা পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন রাইমা ইসলাম শিমু। এর মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলাম, পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, এ জে রানা, শরিফুদ্দিন খান দীপু, এনায়েত করিম ও শবনম পারভীন। তাছাড়া শিমু অভিনয় করেছেন দেশের প্রথম সারির অভিনেতা শাকিব খান, রিয়াজ, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, জাহিদ হাসান ও মোশাররফ করিমসহ অনেকের বিপরীতে। প্রযোজক হিসেবেও দেখা গেছে তাকে