বাবার ‘অনৈতিক’ প্রেমে পাল্টে যায় সালমান খানের পুরো পরিবার

হিন্দি সিনেমার গৌরবময় ইতিহাসের কথা বলতে গেলে যেসব মহারথীদের নাম শুরুতেই আসে, তাদের মধ্যে একজন — সালমান খানের বাবা সেলিম খান। ১৯৭০-এর দিকে এই কিংবদন্তি কাহিনী লেখক ও তার বন্ধু জাভেদ আখতার মিলে মুম্বাই ফিল্মের গতানুগতিক ধারাকে আমূল পাল্টে দিয়েছিলেন।

\’শোলে\’ কিংবা \’জাঞ্জির\’–এর মতো একের পর এক সুপারহিট চিত্রনাট্য উপহার দিয়ে বলিউডে সূচনা করেছিলেন এক নতুন অধ্যায়ের। এমনকি, তার একক প্রচেষ্টাতেই ফিল্ম-সংশ্লিষ্ট লোকজন প্রথমবারের মত পুরোপুরি বুঝতে পারে যে, একটা সিনেমার সাফল্যের পেছনে একজন লেখক বা চিত্রনাট্যকারের ভূমিকা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।

যাই হোক, বলিউডের এই গল্পকারের বাস্তব জীবনও তার লেখা মশলাদার চিত্রনাট্যের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বরং অনেকাংশে আরও রঙিন ও চমকপ্রদ! অবশ্য এর পেছনে রয়েছে দুই নারীর বিশেষ যোগসাজশ, যারা তার জীবনকে বিশেষভাবে রাঙিয়ে তুলেছেন। তারা হচ্ছেন—সুশিলা চরক এবং হেলেন জেইরাগ রিচার্ডসন।

খান পরিবারের এ কাহিনী অনেকের কাছেই প্রায় অজানা। \’বলিউডের ভাইজান\’ খ্যাত সাল্লু মিয়ার বাবার যে দুটি স্ত্রী আছে সেটাও খুব সম্ভবত অনেক ভক্ত-শ্রোতারা জানেন না।

চলুন, সেলিম খানের ঘটনাবহুল ও রোমান্টিক জীবনের কথা সম্যক জেনে নেওয়া যাক।

১৯৩৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কেন্দ্রীয় প্রদেশ, মানে এখনকার মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন সেলিম খান। তার বাবা আবদুল রশিদ খান ছিলেন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা। ২৩ বছর বয়সে হিন্দি সিনেমার পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হয় তার।

রঙিন জগতে আসার কয়েক বছরের মধ্যেই সুশিলা চরক নামের এক অখ্যাত মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি, এবং ১৯৬৪ সালে তার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধাও সেরে ফেলেন। বিয়ের পর সুশিলার নতুন নাম হয়ে যায় সালমা খান। এক সাক্ষাৎকারে সেলিম খান তার প্রথম বিয়ে সম্পর্কে বলেছেন, \’সুশিলার সঙ্গে পাঁচ বছরের মতো প্রেম করার পরই আমরা মূলত বিয়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।\’

তবে মজার ব্যাপার হলো, ঠিক ওই একই সময়ে তিনি পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী ও ড্যান্সার হেলেনের প্রেমেও হাবুডুবু খেতে লাগলেন। যদিও অনেকে বলে থাকেন, হেলেন ছিলেন সে-সময় সেলিমের জীবনে অনেকটা হঠাৎ উদ্ভূত \’পর-নারী\’র মতো। কিন্তু বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। আসল কাহিনী হচ্ছে \’ক্যাবারেট কুইন\’ খ্যাত এই অভিনেত্রীর সঙ্গে বিয়ের বহু আগে থেকেই তার পরিচয় ছিলো। \’তেসরি মঞ্জিল\’ \’শারহাদি লুটেরা\’র মতো ছবিতে একসঙ্গে দেখা গেছে তাদের দুজনকে।

হেলেনের সঙ্গে প্রেমের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সেলিম জানিয়েছেন, কয়েক বছর মন দেওয়া নেওয়া পর অবশেষে ১৯৮০ সালে লাস্যময়ী হেলেনের সঙ্গে তিনি গাঁটছড়া বাঁধেন। তার ভাষায়, \’ঠিক কখন হেলেনের প্রেমে পড়েছিলাম, তা মনে নেই। তবে দীর্ঘদিন জানাশোনার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে—আমাদের সম্পর্কের একটা পরিণতি দেওয়া দরকার। এবং ১৯৮০ সালে আমরা বিয়ে করি।\’

স্বভাবতই সেলিমের এই দ্বিতীয় বিয়ে তার পরিবারে বড় ধরণের অসন্তোষের সৃষ্টি করে। অবশ্য শুরুর দিকে হেলেনের মনেও কিছুটা অপরাধবোধ কাজ করতো। যেহেতু সেলিম তখন বিবাহিত ছিলেন। তাই নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেছেন বেশ কয়েকবার, কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। হেলেনের ভাষায়, \’সেলিম বিবাহিত থাকা সত্বেও আমার প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়েছিলো। ফলে, আমি তার জীবনে আসায় প্রথম দিকে নিজেকে অপরাধী মনে হতো।\’
সেলিম–হেলেনের বন্ধন এতোটাই শক্তিশালী ছিলো যে, সেলিম খান হেলেনের দুঃসময়েও তার পাশে পাশে থাকতেন, খোঁজখবর নিতেন এবং কখনো কোনোরকম সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতেন না। হেলেন কথায় এমনটাই আভাস পাওয়া যায়। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, \’সেলিম ইন্ডাস্ট্রির অন্য আর দশজনের মতো নয়\’ আমি তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। সে কোনো প্রকারের বিনিময় ছাড়াই দুঃসময়ে আমার পাশে থাকার চেষ্টা করতো।\’

সেলিম এবং হেলেনের বিয়ের পর তাদের দু\’জনকে একসাথে দেখে মনে হতো যেন—\’মেড ফর ইচ আদার\’। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা যেন তাদেরকে স্রেফ একে অপরের জন্যই তৈরি করেছিলেন! কিন্তু সেলিমের প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানরা এটা সহজে মেনে নিতে পারেনি। তারা হেলেনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করে। এমনকি সালমা খানও এক সাক্ষাতকারে ব্যাপারটা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে, ওই সময়ে তিনি \’খুবই হতাশ ও বিরক্ত\’ ছিলেন।

প্রথম বউ সালমা হেলেনের সঙ্গে যেভাবে বাজে আচরণ করতেন, তার সন্তানরাও ঠিক সেভাবেই তাকে অনুসরণ করতেন। সেলিমের কথায়, \’সন্তানরা ওদের মা যেভাবে বলতো, ঠিক সেভাবেই হেলেনের সঙ্গে ব্যবহার করতো।\’ অর্থাৎ বাজে ব্যবহার চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো। কিন্তু, হেলেন ছিলেন এক অসাধারণ বুদ্ধিমতী নারী। নীরবে সব কিছুই মুখ বুজে সহ্য করার ক্ষমতা তার ছিলো।

তবে অল্প কিছুদিন পর সব মিটমাট হয়ে যায়। কারণ প্রথম স্ত্রী সালমা আর হেলেনের মধ্যকার বৈরিতা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ব্যাপারটা সেলিমের জন্য সৌভাগ্যই বলা যায়। জানা গেছে, বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই সালমা ও তার সন্তানেরা বুঝতে পারে যে, হেলেন অন্য সাধারণ নারীদের মতো নয়।

বরং অসম্ভব ভালো এবং নানান গুণে গুণান্বিত একজন নারী। ফলে, ধীরে ধীরে সবাই তাকে গ্রহণ করে নেয়। এমনকি, সেলিমের প্রথম পক্ষের সন্তানরাও হেলেনকে নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসতে শুরু করেন। বিশেষ করে, সালমান খানের সঙ্গে হেলেনের ভালো একটা সখ্যতা গড়ে ওঠে।

যাই হোক, শেষ অবধি সেলিম-হেলেনের লাভ স্টোরির \’হ্যাপি এন্ডিং\’ হয়েছে। কিন্তু বলিউডের এই খ্যাতনামা চিত্রনাট্যকার কাউকে কখনোই এরকম করতে উৎসাহিত করবেন না। ভারতীয় গণমাধ্যম \’ডিএনএ\’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেলিম নিজেকে নিয়ে বলেছেন এভাবে, \’দুবার প্রেমে পড়া ছিলো আমার জন্য একটা অসাধারণ অ্যাকসিডেন্ট! শেষ পর্যন্ত আমি ওই দুর্ঘটনাটা সার্ভাইভ করতে পেরেছি। কিন্তু আমি চাই না এমনটা কেউ করুক।\’ পিংকভিলা.কম অবলম্বনে