মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে থেমে ভারি অস্ত্রের বিকট শব্দ ভেসে আসছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে। দুইদিন বন্ধ থাকার পর আবারও উত্তেজনা শুরু হওয়ায় স্থানীয় লোকজনসহ শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সীমান্তের ওপারে দুইদিন ফায়ারিং বন্ধ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে আবারও থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। তবে সীমান্তের আকাশে এখনো কোনো হেলিকপ্টার বা যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা যায়নি।
তিনি আরও জানান, সীমান্তের বাসিন্দাদের নিষেধ না থাকলেও ভয়ের কারণে ক্ষেত-খামারে যাচ্ছে না। শূণ্যরেখার বাসিন্দা রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রহিম বলেন, শূণ্যরেখায় সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। আমরা কেউ শান্তিতে নেই। এখন আতংকে দিন কাটছে।
শূণ্যরেখার আরেক বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের সরকারের সৈন্যরা গোলাগুলি বেশি করছে। এতে আমরা বেশ ভয়ে আছি। সীমান্তে সৈন্যও বাড়িয়ে দিয়েছে। দিন-রাত সৈন্যরা টহল দিচ্ছে। শতাধিক সৈন্য কাটাতাঁরের বেড়া দিয়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অস্ত্র হাতে নিয়ে টহল দিয়েছে। তাদের কাছে কোন রাত দিন নেই, যখন যেখানে খুশি তারা তাদের ইচ্ছে মতো গুলি করছে।
স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশার লাইনম্যান নুরুল আবছার জানান, গত ৩ আগস্ট সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেছিলেন তারা। ওইদিন বাইশপারি সীমান্তে দুটি মর্টারসেলও পড়েছিল। কিন্তু এর পর দুইদিন বন্ধ থাকার ফলে সীমান্তের মানুষ কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছিল। এখন আবারও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মাঝে।
গত প্রায় এক মাস ধরে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ২৮ আগস্টে পর পর দুইটি মর্টারসেল এসে পড়েছিল সীমান্তের তুমব্রু উত্তরপাড়া এলাকায়। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর আরও দুটি মর্টারসেল পড়ে বাংলাদেশের বাইশপারি এলাকায়।
সীমান্তের স্থানীয় লোকজন জানান, বেশ কিছুদিন ধরে সীমান্তে গোলাগুলি, গোলা বর্ষণ ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে মিয়ানমার সৈন্যরা। যার কারণে এখনো উৎকণ্ঠা কাটছে না সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না ঘর থেকে, অনেকেই গোয়ালে রশি দিয়ে গবাদি-পশুও বেঁধে রেখেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, গোলাগুলি আংতকে এখন বাচ্চাদেরও স্কুল যেতে দিচ্ছে না। গরু-ছাগলও রশি দিয়ে ঘরের আঙ্গিনায় বেঁধে রেখেছি। আর আমাদেরও ঘর থেকে বের হতে ভয় লাগে।
উল্লেখ্য, বান্দরবানের ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে ২২ হাজারের বেশি আর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করছে সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা।