হাট কাঁপাতে আসছে ৫০ মণের ‘কালো মানিক’

আসন্ন কুরবানির ঈদে হাট কাঁপাতে আসছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে আলোচিত ৫০ মণ ওজনের কালো মানিক।মালিক জাকির হোসেন সুমন জানান, গত কুরবানির ঈদে কালো মানিকের দাম হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বিক্রি হয়নি। তাই কালো মানিকের মালিক আরও এক বছর লালন-পালন করে এ কুরবানির ঈদে ৫০ মণ ওজনের কালো মানিকের দাম হাঁকাচ্ছেন ৪০ লাখ টাকা। মালিকের দাবি, ময়মনসিংহ অঞ্চলে সবচেয়ে বড় গরু তার এ কালো মানিক।

জানা যায়, এটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় কালো মানিক। গত পাঁচ বছর ধরে লালন-পালন করে আসছেন উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের খামারি জাকির হোসেন সুমন। এর ওজন ৫০ মণ। ষাঁড়টি শান্ত প্রকৃতির ও কালো রঙের হওয়ায় আদর করে এর নাম রাখা হয়েছে কালো মানিক। কালো মানিকের নাম আশপাশের এলাকাসহ সবার মুখে মুখে।

বিশাল আকারের কালো মানিককে দেখতে ক্রেতাসহ সাধারণ মানুষ তো বটেই দূর-দূরান্ত থেকেও নানা বয়সের মানুষ প্রতিদিন জাকিরের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। দেখতে আসা অনেকেই এটিকে হাতির সঙ্গে তুলনা করছেন। কালো মানিককে দেখতে আসা রাকিবুল হাসান জানান, গত বছরও কালো মানিক ষাঁড়টিকে দেখেছি, শুনেছি বিক্রি হয়নি। তাই এবারের ঈদে বিক্রি করা হবে। তাই দেখতে এলাম কত বড় হয়েছে কালো মানিক। কালো রঙের হওয়ায় ষাঁড়টি দেখতে খুবই সুন্দর ও আকর্ষণীয়। তার আকৃতি এবং রঙ সবইকে আকর্ষণ করে। আমার মতো অনেকেই এ ষাঁড়টি দেখতে আসেন। কালো মানিক এবারের ঈদে কার ভাগ্যে জুটে তা দেখার অপেক্ষায়।

কালো মানিকের মালিক জাকির হোসেন সুমন জানান, অনেক শখ করে গত পাঁচ বছর ধরে এই ষাঁড়টিকে আমি দেশীয় খাবার খাইয়ে যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি। খাবার হিসেবে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা খরচ হয়। কৃত্রিম কোনো কিছু খাওয়ানো হয় না। প্রাকৃতিক উপায়ে খৈল, ভুসি, ভুট্টা, কলা, ভাত, খড়-ঘাস খাইয়েছি। শখ করে গরুটিকে পালন করেছি। আমি নিজের চেয়েও বেশি গরুর যত্ন নিয়েছি। গত বছর ভালো দাম না পাওয়ায় কালো মানিককে বিক্রি করতে পারিনি। তবে এ বছর আশা করছি ভালো দামে গরুটি বিক্রি করতে পারব।

পশু চিকিৎসক কামাল উদ্দিন জানান, আমি কালো মানিককে গত পাঁচ বছর ধরে চিকিৎসা করে আসছি। প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে ষাঁড়টিকে। ক্ষতিকর ও মোটাতাজাকরণের কোনো ওষুধ প্রয়োগ করা হয়নি। তাই ষাঁড়টির মাংসও সুস্বাদু হবে বলে তার দাবি। এটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু।উপজেলা পশু ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ডা. হারুন অর রশিদ জানান, আমার উপজেলায় এ কালো মানিক সবচেয়ে বড় ষাঁড়। এটি ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড়। গত পাঁচ বছর ধরে খামারি এটি প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে লালন-পালন করছেন।

৩৬ মণ ওজনের ‘স্বপ্নরাজ’, দাম ২০ লাখ: বিশাল দেহের অধিকারী সাদা-কালো ফিজিয়ান জাতের ষাঁড় গরুটি হাঁটে হেলেদুলে। তবে বেশ শান্তশিষ্ট। কাউকে আক্রমণ করার প্রবণতা নেই। তিনবেলা ১৭ থেকে ১৮ কেজি স্বাভাবিক সুষম খাবারের পাশাপাশি নাশতা হিসেবে আপেল, কলা, আঙুরসহ নানা ফলমূল তার খুব পছন্দ।

নাম তার ‘স্বপ্নরাজ’। আর তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন খামারি মোজাম্মেল হক বাবু। পাবনার চাটমোহর উপজেলার হাণ্ডিয়াল ইউনিয়নের বাঘইল মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত শহীদ আলী ফকিরের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক বাবুর খামারে রয়েছে এই ষাঁড় গরুটি। আদর করে নাম রেখেছেন ‘স্বপ্নরাজ’। চার বছর ধরে লালন-পালন করছেন তিনি। খামারি বাবুর দাবি, ছয় দাঁতওয়ালা গরুটির ওজন হবে আনুমানিক ৩৬ মণ। বিক্রির জন্য তিনি দাম হাঁকছেন ২০ লাখ টাকা। গরুটি দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন অনেকেই।

আলাপকালে কৃষক বাবু বলেন, পৈতৃক সূত্রে তারা গরুর খামারি। ছোটবেলা থেকেই গরু লালন-পালন করেন। চার বছর আগে তার নিজের খামারে গাভি থেকে একটি বাছুর হয়। সেটিকে তিনি খুব যত্ন করে লালন-পালন করতে থাকেন। তার সঙ্গে স্ত্রী আঞ্জুয়ারা খাতুনও বেশ পরিশ্রম করেন। বড় হতে থাকে ষাঁড়টি। সেই সঙ্গে বড় হতে থাকে কৃষক দম্পতির স্বপ্ন। সেই জন্য আদর করে তারা গরুটির নাম রাখেন ‘স্বপ্নরাজ’।

বাবু জানান, চার বছরে স্বপ্নরাজ এখন বিশাল দেহের অধিকারী হয়েছে। ফিতা দিয়ে গরুর দৈর্ঘ্য-ব্যাসার্ধ মেপে ধারণা, স্বপ্নরাজের ওজন অন্তত ৩৬ মণ হবে। এবারের কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য দাম হাঁকছেন ২০ লাখ টাকা। কোনো হাটে নিয়ে নয়, বাড়ি থেকেই বিক্রির আশা করছেন তিনি। গত বছর কোরবানির আগে স্বপ্নরাজের ওজন ছিল ২২-২৩ মণ। তখন দাম উঠেছিল ছয় লাখ টাকা। কিন্তু ওই দামে বিক্রি করেননি তিনি। তবে, এবার স্বপ্নরাজকে বিক্রির মাধ্যমে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চান।

মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, স্বপ্নরাজকে লালন-পালন-মোটাতাজা করতে তিনি কোনো ওষুধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করেননি, তিন বেলা সুষম খাবার দিয়েছেন। প্রতিদিন ১৭-১৮ কেজি খাবার খায় স্বপ্নরাজ। খাবারের তালিকায় রয়েছে ভুট্টা, ছোলা, যব, খেসারি ডাল, ডাবলি, ধইঞ্চা, মসুর ডাল। এগুলো ভাঙিয়ে গুঁড়া করে নেওয়া হয়। তার সঙ্গে গমের ছাল, তিলের খৈল, ধানের গুঁড়া মিশিয়ে নিয়ে জাল দিয়ে ফুটিয়ে তিন বেলা খাওয়ানো হয়। তবে এসব খাবারের পাশাপাশি তিন বেলা নাশতা হিসেবে কলা, আপেল, আঙুরসহ নানা রকম ফলমূল খুব পছন্দ স্বপ্নরাজের।

মোজাম্মেল হক বাবুর স্ত্রী আঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন, চার বছর ধরে স্বপ্নরাজকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছি। মানুষ সন্তানকে যেমন আগলে রাখে, আমিও তেমনভাবে আগলে রেখেছি। নিজের হাতে খাইয়েছি, যত্ন করেছি। এখন বিক্রি করে দিতে হবে শুনে সন্তান হারানোর মতো কষ্ট পাচ্ছি।এদিকে, এত বড় ষাঁড় গরু দেখতে খামারি মোজাম্মেল হক বাবুর বাড়িতে ভিড় করছেন অনেকেই। গরু দেখতে আসা মনিরুল ইসলাম ও শামীম হোসেন বলেন, এখানে বিশাল গরু আছে শুনে দেখতে আসছি। এত বড় গরু এর আগে দেখিনি। দেখলাম বেশ বড়। ওজন শুনলাম ৩৬ মণ। আশা করি খামারি গরুটি বিক্রি করে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন।

চাটমোহর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বড় গরুর চাহিদা আর আগের মতো নেই। আমরা কৃষককে এত বড় করতে উৎসাহিত করি না।মোজাম্মেল হক বাবুর ষাঁড় গরুর বিষয়টি জানি। আশা করি, তিনি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন। কোরবানি সামনে রেখে আমরা খামারিদের সব সময় পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকি। অনলাইনে গরু বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে উপজেলার খামারিদের গরুর ছবি ও তথ্য আপলোড করা হচ্ছে।