নববধূকে ফিরে পাওয়ার আশায় পদ্মাপাড়ে অপেক্ষায় রুমন

স্ত্রী সুইটিকে বাঁচানোর জন্য শাড়ি খুলে সুটকেস ধরে ভাসতে বলেছিলেন স্বামী আসাদুজ্জামান রুমন। তবে ওই নববধূ শাড়ি খুলতে রাজি হননি। সৌভাগ্যক্রমে রুমন বেঁচে গেলেও নদীর পানিতে তলিয়ে যান সুইটি। বিয়ের এক দিন পরই রাজশাহীর পদ্মায় মর্মান্তিক নৌ দুর্ঘটনায় নববধূসহ ৯ স্বজনকে হারিয়ে শোকের সাগরে ভাসছেন দুই পরিবারের সদস্যরা। স্বামী রুমনও পাগলপ্রায়। এ ঘটনায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া গেছে মোট ছয়জনের লাশ। নববধূসহ তিনজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক ও তার দক্ষতার অভাবে দুর্ঘনাটি ঘটেছে।

দুই পরিবারের স্বজনরা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর চরখিদিরপুর এলাকার প্রয়াত ইনসার আলীর ছেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় আসাদুজ্জামান রুমনের সঙ্গে বিয়ে হয় পবা উপজেলার কর্ণহার থানার শাহীনের মেয়ে সুইটির। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুইটিকে নেওয়া হয় চরখিদিরপুরে রুমনের বাড়িতে। শুক্রবার সেখানে বৌভাত ছিল। সুইটির স্বজনরা বৌভাতের দাওয়াত খেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় সুইটি ও তার স্বামী রুমনকে নিয়ে ফিরছিলেন। ইঞ্জিনচালিত দুটি ছোট নৌকা ৪১ যাত্রী নিয়ে নগরীর শ্রীরামপুরে পদ্মা পার হওয়ার সময় মাঝনদীতে ঝোড়ো হাওয়া ও ঢেউয়ের মাঝে পড়ে। এ সময় নৌকার ইঞ্জিন বিকল হলে যাত্রীরা ভয়ে নড়াচড়া করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের নৌকা ডুবতে থাকে।

নববধূকে হারিয়ে পাগলপ্রায় স্বামী রুমনের উদ্বেগের সময় কাটছে পদ্মা পাড়ে। নববধূকে ফিরে পাওয়ার আশায় পদ্মায় যেখানে নৌকা ডুবে শনিবার সেখানে নদীর পাড়ে বিষণ্ন মন নিয়ে বসে ছিলেন রুমন। তিনি জানান, নৌকাটি ডোবার পর তিনি সুইটিকে শাড়ি খুলে সুটকেস নিয়ে ভাসতে বলেন। সুইটি শাড়ি খুলতে রাজি হননি। সুটকেস হাতে দিতেই তিনি তলিয়ে যান। তারপর বালুবাহী আরেকটি নৌকা এগিয়ে এলে সেটিতে ওঠেন অন্তত ৩২ জন। তাদের মধ্যে সাতজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে সুইটির ভাগ্নি নগরীর বসুয়া এলাকার রতনের মেয়ে মরিয়মকে (৬) মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

নিখোঁজদের উদ্ধারে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের-সমকাল
উদ্ধারকর্মীরা জানান- ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা এসে রাতভর উদ্ধার অভিযান চালায়। সকালে দুর্ঘটনাস্থলের প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে পাওয়া যায় কনে সুইটির চাচি মনির (৩০) লাশ। বিকেলে দুর্ঘটনাস্থলের পাশ থেকেই মনির স্বামী শামীম ও মেয়ে মদিনা ওরফে রশ্মির লাশ উদ্ধার করা হয়। তারা আরও জানান, শামীমের লাশটি পাওয়া যায় মেয়ে রশ্মিকে বুকে জড়িয়ে রাখা অবস্থায়। এর আগে দুপুরে উদ্ধার হয় কনে সুইটির খালাতো ভাই এখলাসের (২৫) লাশ। এরপর দুলাভাই রতনের (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিখোঁজদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে গঠিত কমিটির সমন্বয়কারী আবু আসলাম জানান, কনে সুইটি (১৮), তার খালা আঁখি (২২) ও ফুপাতো বোন রুবাইয়ার (১২) লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।

তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করতে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার তিনটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো- দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, অপ্রাপ্তবয়স্ক অদক্ষ চালক এবং লাইফ জ্যাকেট না থাকা।

তিনি বলেন, পদ্মা নদীতে আগামীতে চলাচলের জন্য লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করবে তদন্ত কমিটি।

এদিকে এ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দীন, জেলা প্রশাসক হামিদুল হকসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা উদ্ধার অভিযানে সব ধরনের সহযোগিতার নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

About admin

Check Also

মেয়ের সঙ্গে ঈদ করা হলো না বাবার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আবু জাহের। দীর্ঘ চার বছর পর বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে ফিরেছেন। দেশে …