প্রমিত ভাষা যেভাবে শিখবেন – ৬ষ্ঠ শ্রেণি ১ম অধ্যায়

প্রমিত ভাষা যেভাবে শিখবেন – ৬ষ্ঠ শ্রেণি ১ম অধ্যায় দেখুন ভাষা হচ্ছে মনের ভাব প্রকাশের আদি ও সহজ মাধ্যম। জন্মের দুই বছরের মাথায় আমরা কথা বলতে শিখি এক্ষেত্রে পরিবার সমাজ হচ্ছে আমাদের ভাষা শিক্ষক। একট শিশু যে অঞ্চলে বেড়ে উঠে ওখানকার ভাষা তার কথ্য ভাষা হবে এটা স্বাভাবিক। যেমন ধরুন বাংলাদেশের শিশুরা বাংলায় আমেরিকান শিশুরা ইংরেজিতে কথা বলবে।

তবে ভাষার ক্ষেত্রে দুইটা ভাগ আছে প্রমিত এবং আঞ্চলিক বা অপ্রমিত।কমজানা মানুষ প্রমিতকে শুদ্ধ এবং অপ্রমিত বা আঞ্চলিক ভাষাকে অশুদ্ধ ভাষা বলে ভুল করে। এটা করা যাবে না।সকল ভাষা’ই শুদ্ধ। ভাষায় শুদ্ধ অশুদ্ধ হয়না। আমরা সাধারণত পারিবারিক আবহে অপ্রমিত ভাষায় কথা বলি আর অফিসিয়াল কোন জায়গায় প্রমিত ভাষায় বলি। কিন্ত যারা প্রমিত ভাষায় ইজি নয় তারা কি করবে? যেহেতু অনেক জায়গায় এটা নিয়ে তাকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়..

এক্ষেত্রে যিনি অপ্রমিত বা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছেন তাঁর কিচ্ছু করতে হবে না।তিনি এটা চালিয়ে যেতে পারেন যা করার সেটা করবে আমাদের সমাজ।অপ্রমিত ভাষাকে তুচ্ছজ্ঞান করা মিডলক্লাস ইডিয়টদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।

কথিত শুদ্ধ যে মনের ভাব প্রকাশের একমাত্র ওয়ে না সেটা ছড়িয়ে দিতে হবে।ভাষা নিয়ে সমাজের প্রতিষ্ঠিত প্রেজুডিস ভাঙতে হলে আপনাকে স্বতঃস্ফূর্ত হতে হবে।আপনি যদি আঞ্চলিক টানে ইজি হোন তাহলে সেটাই চালিয়ে নিন প্রমিত শেখার জন্য টেনশন করতে হবেনা।

উচ্চারণ ঠিক রেখে ছড়া পড়ি

ছড়া পড়তে নিশ্চয় তোমাদের ভালো লাগে। এখানে একটি ছড়া দেওয়া হলো। ছড়াটির নাম ‘চিঠি বিলি’। এটি লিখেছেন রোকনুজ্জামান খান। ছড়াটি নেওয়া হয়েছে তাঁর ‘হাট্ টিমা টিম’ নামের বই থেকে। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু-কিশোরদের জন্য ‘কচিকাঁচার মেলা’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

ছড়াটি প্রথমে নীরবে পড়ো; এরপর সরবে পাঠ করো।

চিঠি বিলি

রোকনুজ্জামান খান

কবি-পরিচিতি (Biography)

নাম : রোকনুজ্জামান খান, তবে দাদাভাই নামে সমধিক পরিচিত।

জন্ম : ৯ই এপ্রিল ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ, পাংশা, রাজবাড়ী।

কর্মজীবন: সাংবাদিক- শিশু সওগাত, দৈনিক মিল্লাত, সাপ্তাহিক পূর্বদেশ, পাকিস্তান ফিচার সিন্ডিকেট; সম্পাদক- মফস্বল সম্পাদক ও শিশু বিভাগ ‘কচিকাঁচার আসর’ দৈনিক ইত্তেফাক, মাসিক কচিকাঁচা।

সাহিত্যসাধনা : ছড়া: হাট্টিমা টিম, খোকন খোকন ডাক পাড়ি। সম্পাদনা: আমার প্রথম লেখা, ঝিকিমিকি (গল্প সংকলন), বার্ষিক কচি ও কাঁচা, ছোটদের আবৃত্তি। অনুবাদ: আজব হলেও গুজব নয় ইত্যাদি।

পুরস্কার ও সম্মাননা: বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ শিশু জয়েডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক, স্বাধীনতা পুরস্কার প্রভৃতি। রোটারি ইন্টারন্যাশনাল এবং রোটারি ফাউন্ডেশন ট্রাস্টি কর্তৃক ‘পল হ্যারিস ফেলো’ সম্মানে ভূষিত।

জীবনাবসান : ৩রা ডিসেম্বর, ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ।

ছড়া

ছাতা মাথায় ব্যাঙ চলেছে
চিঠি বিলি করতে,
টাপুস টুপুস ঝরছে দেয়া
ছুটছে খেয়া ধরতে।
খেয়ানায়ের মাঝি হলো
চিংড়ি মাছের বাচ্চা,
দু চোখ বুজে হাল ধরে সে
জবর মাঝি সাচ্চা।

পাঠসংক্ষেপ (Summary): চিঠি বিলি করার জন্য ছাতা মাথায় দিয়ে ব্যাঙ চলেছে। এদিকে বৃষ্টিও পড়ছে। চিংড়ি মাছ যেন খেয়া নৌকার মাঝি, সাচ্চা মাঝির মতো চোখ বুজে হাল ধরেছে। বিলের খলসে আজ চিঠি লিখছে, তারও চোখ যেন রোদে ঝলসে যাচ্ছে। নদীর ওপারে ব্যাঙ গিয়ে জানায় ভেটকি মাছের নাতনি বিদেশ গেছে- কাতলা সেই চিঠি লিখেছে। এবার সারাদেশে বৃষ্টি হবে বলে ছাতা কিনেছে। চিংড়ি মাঝির খেয়া নয়, কাতলার এবার ছাতাই ভরসা।

শব্দের অর্থ (Word Note)

কাতলা: মাছের নাম

খলসে: মাছের নাম

খেয়া: নদী পার হওয়ার নৌকা।

খেয়া না: খেয়া নৌকা

খেয়ানায়ের মাঝি: খেয়া নৌকার মাঝি

চিঠি: কোনো খবর জানিয়ে লেখা কাগজ।

চিঠি বিলি করা : চিঠি পৌছে দেওয়া।

ঝলসানো : উজ্জ্বল আলোয় চোখ ধাঁধানো।

টাপুস টুপুস : বৃষ্টি পড়ার শব্দ।

দেয়া : বৃষ্টি।

বাদলা : একনাগাড়ে বৃষ্টি।

ভরসা : নির্ভর করা, অবলম্বন।

ভেটকি : মাছের নাম।

সাঁঝের বেলা : সন্ধ্যার সময়।

সাচ্চা : সত্য।

শব্দ খুঁজি

অনেক শব্দ তোমার অঞ্চলের মানুষ ভিন্নভাবে উচ্চারণ করে। আবার, অনেক প্রমিত শব্দের বদলে তোমার অঞ্চলের মানুষ আলাদা শব্দ ব্যবহার করে। এ রকম শব্দ খুঁজে বের করো এবং নিচের ছক অনুযায়ী তালিকা করো।

আঞ্চলিক উচ্চারণ/শব্দপ্রমিত শব্দ

উত্তর:

আঞ্চলিক উচ্চারণ/শব্দপ্রমিত শব্দ
মোডামোটা
হাজসাঁঝ
চিডিচিঠি
খইলহাখলসে
ওইলোহলো
কত্তেকরতে
মাতামাথা
রউদরোদ
হেরতার
হেপারওপার
বিছরাইখুঁজি

প্রমিত ভাষার চর্চা করি

এই পরিচ্ছেদ শুরুর পরিস্থিতি তিনটিতে যেভাবে কথোপকথন হয়েছে, সেই কথাগুলো এবার প্রমিত ভাষায় বলার চেষ্টা করো।

  1. খেলার সময়ে কোনো একটা বিষয়ে নিয়ে তর্ক হচ্ছে।
  2. পড়াশোনা কেমন চলছে তা নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে কথা হচ্ছে।
  3. সবজি কিনতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দরাদরি হচ্ছে।

এই পরিচ্ছেদ শুরুর পরিস্থিতি তিনটিতে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। খেলার সময় ভাষাগত ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে তর্কাতর্কি হয়। পড়াশোনা করতে গিয়ে ভাষার বৈচিত্র্য জানতে হয়। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দরাদরি হয়। এসবই ভাষার কারণে হয়। তাই যে ভাষা সবার জন্য বোধগম্য এবং বহুল প্রচলিত তাই ব্যবহার করা উচিত। আর সেই ভাষা হচ্ছে প্রমিত ভাষা।

প্রমিত ভাষা এর নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর

১. সব অঞ্চলের মানুষের বোধগম্য ভাষাকে কী ভাষা বলে?

ক) সাধু ভাষা

খ) চলিত ভাষা

গ) প্রমিত ভাষা

ঘ) আঞ্চলিক ভাষা

২. কোন রূপের কারণে একেক অঞ্চলের মানুষ একেক রকমের ভাষায় কথা বলে?

ক) সাধু রূপ

খ) প্রমিত রূপ

গ) চলিত রূপ

ঘ) আঞ্চলিক রূপ

৩. অঞ্চলভেদে অনেক শব্দের কী হয়?

ক) বদল

খ) প্রসারণ

গ) বিবর্তন

ঘ) সংকোচন

৪. ‘চিঠি বিলি’ ছড়াটি কার লেখা?

ক) জসীমউদ্দীন

খ) সুকুমার রায়

গ) সুফিয়া কামাল

ঘ) রোকনুজ্জামান খান

৫. ‘হাট্ টিমা টিম’ নামে বইটি কে লিখেছেন?

ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

খ) শামসুর রাহমান

গ) কাজী নজরুল ইসলাম

ঘ) রোকনুজ্জামান খান

৬. রোকনুজ্জামান খান শিশু-কিশোরদের জন্য ‘কচিকাঁচার মেলা’ নামের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন-

ক) ১৯২০ সালে

খ) ১৯৫৬ সালে

গ) ১৯৪৫ সালে

ঘ) ১৯৭০ সালে

৭. ‘দাদাভাই’ নামে পরিচিত কোন ছড়াকার?

ক) শামসুর রাহমান

খ) সুকুমার রায়

গ) জসীমউদ্‌দীন

ঘ) রোকনুজ্জামান খান

৮. কে চিঠি বিলি করতে যাচ্ছে?

ক) ব্যাঙ

খ) চিংড়ি

গ) খলসে

ঘ) কাতলা

৯. ব্যাঙ কী মাথায় দিয়ে চিঠি বিলি করতে যাচ্ছে?

ক) টুপি

খ) ছাতা

গ) চাদর

ঘ) পাগড়ি

১০. ‘দেয়া’ শব্দের অর্থ কী?

ক) জল

খ) বৃষ্টি

গ) পানি

ঘ) আকাশ

১১. ব্যাঙ ছাতা মাথায় দিয়ে কী ধরতে ছুটছে?

ক) মাছ

খ) পতঙ্গা

গ) খেয়া

ঘ) চিংড়ি মাছের বাচ্চা

১২. খেয়া নৌকার মাঝি কে?

ক) ব্যাঙ

খ) চিংড়ি মাছের বাচ্চা

গ) খলসে

ঘ) কাতলা

১৩. খেয়া নৌকার হাল ধরে আছে কে?

ক) ব্যাঙ

খ) চিংড়ি

গ) খলসে

ঘ) কাতলা

১৪. সাঁঝের বেলার রোদে কার চোখ ঝলসে গেছে?

ক) ব্যাঙের

খ) খলসের

গ) চিংড়ির

ঘ) কাতলার

১৫. কে চিঠি লিখেছে?

ক) ব্যাঙ

খ) কাতলা

গ) খলসে

ঘ) ভেটকি

১৬. ব্যাঙ কোথায় গিয়েছিল?

ক) বিলের ধারে

খ) খালের ধারে

(গ) নদীর ওপারে

ঘ) ডোবায়

১৭. কে দেশের বাইরে চলে গেছে?

ক) ব্যাঙের বাচ্চা

খ) কাতলা মাছের বাচ্চা

গ) চিংড়ি মাছের বাচ্চা

(ঘ) ভেটকি মাছের নাতনি

১৮. ভেটকি মাছের নাতনির দেশের বাইরে যাওয়ার খবরটি কে দিয়েছে?

ক) ব্যাঙ

খ) কাতলা

গ) চিংড়ি

ঘ) ভেটকি মাছ

১৯. কার চিঠি এসেছে?

ক) ব্যাঙের

খ) চিংড়ির

গ) নাতনির

ঘ) কাতলার

২০. ভেটকি মাছের নাতনির চিঠি আসার খবর কে লিখে জানিয়েছে?

ক) ব্যাঙ

খ) চিংড়ি

গ) কাতলা

ঘ) ভেটকি

প্রমিত ভাষা যেভাবে শিখবেন ভিডিও দেখুন…

২১. এবার সারা দেশ জুড়ে কী হবে?

ক) রোদ

খ) ঝড়

গ) বাদল

ঘ) বন্যা

২২. ছাতা কিনেছে কে?

ক) ব্যাঙ

খ) চিংড়ি

গ) কাতলা

ঘ) ভেটকি

২৩. কে বর্ষার আগমনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে?

ক) ব্যাঙ

খ) চিংড়ি

গ) কাতলা

ঘ) ভেটকি

২৪. ব্যাঙের শেষ ভরসা কী?

ক) ছাতা

খ) খেয়া

গ) ছাতা ও খেয়া

ঘ) খেয়া ও বাদলা

২৫. কে চিঠি বিলি করে বেড়ায়?

ক) ব্যাঙ

খ) ভেটকির নাতনি

গ) কাতলা

ঘ) খলসে

২৬. ব্যাঙ কার খেয়া নৌকা দিয়ে নদী পার হয়েছিল?

ক) ভেটকি মাছের নাতনির

খ) খলসে মাছের ছেলের

গ) চিংড়ি মাছের ছেলের

ঘ) কাতলার

২৭. ‘সাচ্চা’ শব্দের অর্থ কী?

ক) খুব

খ) সত্য

গ) সাদা

ঘ) স্বচ্ছ

প্রমিত ভাষা নিয়ে এক্সকুসিভ স্টাডি 

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ভাষায় আছে- ভিন্নতা।

অনেকেই ছেলেকে বলে- পুত, ব্যাটা, পোলা।

অনেক শব্দই বদলে যায়- অঞ্চলভেদো ”

About admin

Check Also

মন খারাপের অবহেলা নিয়ে স্ট্যাটাস

মন খারাপের অবহেলা নিয়ে স্ট্যাটাস

মন খারাপের অবহেলা নিয়ে স্ট্যাটাস খুব কষ্ট হয় যখন বিশেষ কেউ আপনাকে অবহেলা করতে থাকে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *