গাড়ি চালাচ্ছিলেন বরের বাবা, ৭ জনের মাঝে বেঁচে রইলেন শুধু নবদম্পতি

নতুন বর হৃদয়ের বাবা মো. রুবেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। রাস্তা প্রায় ফাঁকাই ছিল। হঠাৎই বিআরটির প্রকল্পের গার্ডার পড়ে দেবে যায় পুরো গাড়ি। তখনই প্রাইভেটকারের ৫ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো দুইজন। সোমবার বিকেলে উত্তরা জসীম উদ্দীন এলাকায় আড়ংয়ের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবারের এক সদস্য বলেন, আমার বোনের বিয়ের বৌভাত শেষে বোনের শ্বশুর গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় গাড়িতে আরোহী

ছিলেন মোট সাতজন। এর মধ্যে দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচজন গাড়িতে আটকে রয়েছে। জানা গেছে, গত শনিবার হৃদয়-রিয়ামনির বিয়ে হয়েছে। আজ কাওলায় হৃদয়দের বাড়িতে ছিল বউভাতের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে নিজেই গাড়ি চালিয়ে তাদের আশুলিয়ার খেজুরবাগানে রিয়াদের বাসায় পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুর্ঘটনা ঘটে।

স্বজনেরা জানান, শরিয়তপুর সদরের ঢালী বাজার এলাকার বাসিন্দা ও আহত হৃদয়ের বাবা মো. রুবেল (বর্তমান ঠিকানা- কাওলা) গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। হৃদয়ের পরিবার দক্ষিণখান থানার কাওলা আফিল মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। আর কনে রিয়া মনির বাড়ি আশুলিয়ার খেজুরবাগানে আসরাফউদ্দিন চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সড়কের একপাশে যানবাহন চলাচল করে।

উড়াল সড়কের একটি গার্ডার ক্রেনে স্থানান্তর করার সময় চলতে থাকা প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে যায়। প্রকাণ্ড এই গার্ডারের চাপে থেতলে যায় ঢাকা মেট্রো গ-১১৬০০৮ নম্বরের প্রাইভেট কারটি। গাড়ির ভেতরে যারা ছিলেন তাদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় টেনে বের করে স্থানীয়রা। আহতদের উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজে যোগ দিতে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস। সেখানে আছে পুলিশ ও র‍্যাব।

৭ জনের মাঝে বেঁচে রইলেন শুধু নবদম্পতি মাত্র ২ দিন আগেই বিয়ে করেছিলেন হৃদয় (২৫) ও রিয়া মনির (২১)। আজ সোমবার (১৫ আগস্ট) স্বজনেরা নবদম্পতিকে নিয়ে কনের বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে উত্তরার জসিমউদ্দিন মোড় সংলগ্ন সড়কে বিআরটির প্রকল্পের গার্ডার পড়ে তাদের প্রাইভেটকারের ওপর। প্রাইভেটকারে সেসময় সর্বমোট ৭ জন আরোহী ছিলেন বলে জানায় স্বজনরা। তারা হলেন- হৃদয়ের বাবা রুবেল (৬০), হৃদয়ের শাশুড়ি ফাহিমা (৪০), কনে রিয়া মনির খালা ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। তবে এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৫ জন। শুধু বেঁচে গেছেন হৃদয় ও রিয়া। নব দম্পতিকে গুরুতর

অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বজনেরা জানান, শনিবার হৃদয় ও রিয়ার বিয়ে হয়। তারা সোমবার ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। হৃদয়ের পরিবার দক্ষিণখান থানার কাওলা আফিল মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। আর কনে রিয়া মনির বাড়ি আশুলিয়ার খেজুরবাগানে আসরাফউদ্দিন চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায়।

দুর্ঘটনায় আহত হৃদয়ের চাচাতো ভাই রাকিব (১৯) বলেন, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তারা দুর্ঘটনার খবর পান। কিন্তু এতো সময় পরও গাড়ি থেকে মরদেহগুলো বের করতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। ভেতরে যদি কেউ বেঁচে থেকেও থাকেন তাহলে এতোক্ষণে মারা গেছেন। রাকিব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার কীভাবে এভাবে অব্যবস্থাপনার মধ্যে কাজ করছে? আমরা কার কাছে বিচার দিব!

আমাদের অন্তত লাশগুলো বের করে দিক। কিন্তু এখানে তো কোনো উন্নত যন্ত্রপাতি নেই।’ ইতিমধ্যে দুর্ঘটনাস্থলে স্বজনেরা আসছেন। তাদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা লিভার দিয়ে গার্ডার উঁচুর করে তুলে গাড়ি বের করার চেষ্টা করছেন। তবে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চেষ্টায়ও গার্ডার সরেনি। এখন ক্রেন আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

About admin

Check Also

মেয়ের সঙ্গে ঈদ করা হলো না বাবার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আবু জাহের। দীর্ঘ চার বছর পর বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে ফিরেছেন। দেশে …