গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে পুরোপুরি ভোট গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা ইসির

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, গাইবান্ধা -৫ উপনির্বাচনের পুরোপুরি ভোট গ্রহণ বন্ধ করেছে নির্বাচন কমিশনার। আজ বুধবার )১২ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের নিজ দপ্তরের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে আজ সকালে নির্বাচন বন্ধ করবেন কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নেবো যে কমিশন যদি মনে করি নির্বাচন সঠিক ভাবে হচ্ছে না তাহলে কমিশন নির্বাচন বন্ধ করতে পারে। আমরা সেই আলোকে নিদ্ধান্ত নিচ্ছি। এবং চূড়ান্ত সুদ্ধান্ত যখন নেবো, তখন জানাবো। নিয়ন্ত্রণের বাইরে কেন চলে গেল তা আমরা বলতে পারবো না। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে অনেকটাই। আপনারাও দেখতে পেয়েছেন যে গোপন কক্ষে হচ্ছে, এবং সুশৃঙ্খলভাবে হচ্ছে না। কেন হচ্ছে এমন তা চটজলদি বলতে পারবো না।

গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটিসহ মোট ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে মিলে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ১৬০ জন।

নির্বাচনে পরের দিন পর্যন্ত প্রতি ইউনিয়নে একজন করে মোট ১৭ জন নির্বাহী হাকিম ও দুই জন করে বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এক হাজার দুইশোর বেশি। থাকছে কয়েক প্লাটুন বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও।

উল্লেখ্য, গত ২২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। এর দুই দিন পর তার সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়।

নৌকা ছাড়া সব প্রার্থীর ভোট বর্জন

অনিয়মের অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপনির্বাচনে একযোগে চার প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। বুধবার (১২ অক্টোবর) ভোটগ্রহণের সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাঘাটা উপজেলার বগেরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একযোগে ভোট বয়কটের ঘোষণা দেন তারা।

চারজন প্রার্থী হলেন- লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে এইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জু, কুলা প্রতীক নিয়ে বিকল্প প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, আপেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ ও ট্রাক প্রতীক নিয়ে মাহবুবুর রহমান। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কে মাহমুদ হাসান রিপন এখনো ভোটের মাঠে রয়েছেন।

এর আগে সকাল ৮টা থেকে সাঘাটা উপজেলার ৮৮টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৫৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এর মধ্যে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

গাইবান্ধায় কোনো ভোটকেন্দ্রেই নৈরাজ্য হয়নি: হানিফ

গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রেই নৈরাজ্য হয়নি। কমিশন ভবনে বসে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এতগুলো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত ইসি কীভাবে নিলো তা বোধগম্য নয়। এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল হানিফ। বুধবার (১২ অক্টোবর) আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে গাইবান্ধা নির্বাচন ইস্যুতে এ মন্তব্য করেন তিনি।

গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোটগ্রহণে নানা অনিয়মের অভিযোগে ৫০ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

সিইসি বলেন, নির্বাচন ভবনে বসে সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন তারা। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে উল্লেখ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার নিজেই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। কোথাও গোপন বুথে একাধিক ব্যক্তি আনাগোনা করছেন। ভোটে এমন ডাকাতির অনেক অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। সেজন্যই নির্বাচনে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায় ইসি।

নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের বাইরে: সিইসি

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের ভোট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল। এ উপনির্বাচনে ৪৩ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার (১২ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা যায়, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে দুই উপজেলার ১৪৫টি কেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে বুধবার (১২ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে সকাল থেকে অনিয়মের অভিযোগে ৪৩টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মাহামুদ হাসান রিপন- নৌকা প্রতীক, জাতীয় পার্টি থেকে এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু- লাঙ্গল প্রতীক, বিকল্পধারার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম- কুলা প্রতীক, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ- আপেল প্রতীক ও মাহবুবুর রহমান- ট্রাক প্রতীকসহ মোট পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়েছিলেন।

সাঘাটা ও ফুলছড়ি এ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন। এতে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। নির্বাচনে সাঘাটা উপজেলায় ৮৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ৫৭টিসহ মোট ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২ বুথে ১৪৫ প্রিসাইডিং অফিসার, ৯৫২ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং এক হাজার ৯০৪ জন পোলিং অফিসার দায়িত্বে ছিলেন।

ভোটকেন্দ্র এবং ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুলিশ সদস্য, র‌্যাবের ৯টি টিম, ৪ প্লাটুন বিজিবি এবং আনসার ও ভিডিপি নিয়োজিত ছিল। এ ছাড়া সাঘাটা উপজেলায় তিনজন ও ফুলছড়ি উপজেলায় দুজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক তদারকিতে ছিলেন। সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়। এবারই প্রথম এ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।