মাছের দ্রুত বৃদ্ধিতে করণীয়

মাছের খাবার তালিকা, কয়েকটি উদাহরন দিয়ে মাছের ঠিক কতখানি খাদ্য প্রয়োজন, তা খাদ্য তালিকা অনুযায়ী ব্যাখ্যা করা যাক: ধরা যাক, একটি পুকুরে ১০০০ টি ২৫ গ্রাম ওজনের চারা পোনা ছাড়া হয়েছে। তাহলে ২৫ গ্রাম মাছের জন্য প্রতিদিন ২ গ্রাম খাদ্য দরকার। তাহলে ১০০০ টি মাছের জন্য প্রতিদিন খাদ্য দরকার ১০০০ X ২ গ্রাম = ২০০০ গ্রাম বা ২ কেজি । পুকুরে মাছের জন্য ২ খাদ্য দরকার। পুকুরে প্রতিদিন দুবার খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে । সকাল (৬.৩০ – ৭.৩০) ১ কেজি ও বিকেল (৩.৩০- ৪.৩০) ১ কেজি খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।

মাছ চাষের মোট খরচের প্রায় ৫০-৬০ শতাংশই সার এবং সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের জন্য খরচ হয়।শীতকালে মাছের খিদে কম পায়। ফলে বৃদ্ধিও কম হয়। আবার মাছের রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। তাই শীতকালে প্রয়োজন মাছের পরিচর্যা। সাধারণত জলাশয়ে শীতে মাছ চাষ হয় না। পোনা মাছের বৃদ্ধি এ সময় কম হয়। আবার যাঁরা বাণিজ্যিক মাছের চাষ করেন তাঁরা শীতে পুকুর শুকিয়ে পরের বছরের চাষের জন্য প্রস্তুতি নেন। শীতের সময়ে পুকুরের বদ্ধ জলে মাছ চলাফেরা খুবই কম করে। দিন ছোট হওয়ায় রোদ অল্প সময় পুকুরের জলে পড়ে। শীতকালে জলের তাপমাত্রা কমতে থাকে। সাধারণত তাপমাত্রা ২৮-৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হলে মাছের বিপাক ক্রিয়া ভাল হয়।

প্রাকৃতিক খাদ্য: জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সবুজ কণা তৈরি হয়, যা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- শেওলা, ফেকাস, নষ্টক, ডায়াটম, ভলবক্স, এনাবিনা ইত্যাদি। এসব প্রাকৃতিক খাদ্য জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। তবে বেশি পরিমাণে জন্মানোর জন্য জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রাকৃতিক খাদ্য খাওয়া মাছ দ্রুত বড় হয় ও মাছ খেতে সুস্বাদু হয়।

সম্পূরক খাদ্য: পুকুরে উৎপাদিত প্রাকৃতিক খাদ্যের অভাব হলে মাছের দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধির নিমিত্তে প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি সম্পূরক খাবার সরবরাহ করা একান্ত প্রয়োজন। মাছ ছাড়ার পরের দিন হতে প্রতিদিন সকালে ও বিকেল মজুদকৃত মাছের মোট শরীরের ওজনের শতকরা ৫-৬ ভাগ হারে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। উল্লে­খ্য, প্রতি ২০ কেজি মাছের জন্য অন্ততপক্ষে ১ কেজি খাবার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

ভিডিওতে দেখুন: মাছ চাষের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন প্রয়োগ ও পরিমাণ

মাছের ভিটামিন ঔষধের নাম

Vitamin a, Vitamin b1 Vitamin b2 Vitamin b6, Vitamin b12, Vitamin d3 Zinc, Selenium, DL-methionine, L-Lysine Sodium chloride, Calcium carbonate, 27 Herbal Ext. Essential Probiotics.
Vitamine, Vitamin k3, Nicotinic acid
Folic acid, Biotin, D2-tnypthan, Ascorbic-acid Dextrose, Copper sulphate, Iron, Cobalt, Copper
GOT
১ কেজি
বৈশিষ্ট্য : মাছ ও চিংড়ির প্রয়োজনীয় ভিটামিন মিনারেল ও এ্যামাইনো এসিড/হারবাল
নির্যাস ও উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংমিশ্রণে তৈরী মাছ ও চিংড়ির আদর্শ স্বাস্থ্য বৃদ্ধি উদ্দীপক।

কার্যকারীতাঃ
মাছ ও চিংড়ির দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে
দেহের ওজন বৃদ্ধি পায়, খাদ্য রূপাউরি (FCR) উন্নত করে এবং জীবিত থাকার হার বৃদ্ধি। করে।
মাছ ও চিংড়ির প্রজনণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
চিংড়ির খোলস পরিবর্তনে সাহায্য করে।
মাছ ও চিংড়ির শারীরিক কাঠামো মজবুত করে ও রোগ প্রতিরোধ করে। ব্যবহারের মাত্রাঃ ১-২ গ্রাম/কেজি
(পিলেট/ভাসমান ফিডে ব্যবহার করা যায়)

মাছের এন্টিবায়োটিক বা মাছের রোগঃ

চাষ করা মাছের রোগ হলে বেশিরভাগ চাষী বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করেন যার প্রকার ও ডোজের ভিন্নতা এবং সঠিকতার মাপকাঠি না জানার কারনে অনেক সময় ভালো ফলাফল পেতে ব্যর্থ হন এবং/অথবা পরবর্তিতে মানুষের দেহে বিরুপ প্রভাব রাখতে পারে।

সেজন্য – প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম (prevention is better than cure)

রোগ প্রতিরোধের পন্থাঃ

নিয়মিত পুকুরের পাড় ও পানির আগাছা দূর করুন
নিয়মিত হররা/কাঠী/জাল টানুন
তারপরপরই পাথুরে চুন ২-৩ ঘন্টা ভিজিয়ে প্রয়োগ করুন (শতাংশ প্রতি ৩০০-৫০০ গ্রাম)
১-২ ঘন্টা পর লবণ ছিটিয়ে দিন (শতাংশ প্রতি ১০০-৩০০ গ্রাম)
১-২ ঘন্টা পর গ্যাস দূরীকরণী ঔষধ ছিটিয়ে দিন (শতাংশ প্রতি ২-৩ গ্রাম)
১-২ ঘন্টা পর জীবানুনাষক বা ডিজইন্ফেক্ট্যান্ট ঔষধ ছিটিয়ে দিন (শতাংশ প্রতি ২-৩ গ্রাম) যেমন— যেকোন ১টি:
Timsen (পাউডার) — শতাংশ প্রতি ১-২ গ্রাম
Potassium per manganate (ডাক্তারী পটাশ) — শতাংশ প্রতি ৫-৭ গ্রাম
Copper sulphate (তুতেঁ/তুত্ত্যা) — শতাংশ প্রতি ৭-১০ গ্রাম
এইদিন ও পরের দিন পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রেখে ৩য় দিন থেকে দিন

রোগ প্রতিকারের পন্থাঃ

রোগ যদি হয়েই যায়, তাহলে উপরোক্ত রোগ প্রতিরোধের পন্থা যথাযথভাবে সম্পাদন করে সহনীয় মাত্রার ঔষধ, যা মানব দেহে ক্ষতিকর নয় এমন, ঐ ৩য় দিন থেকে ভাতের মাড় ঠান্ডা করে তার সাথে মিশিয়ে আবার খাদ্যে মিশাতে হবে ৩-৫-৭ দিন ও খাওয়াতে হবে; যেমন—
Oxytetracycline — 1–2 gm/kg fish feed
Vitamin B + C — 0.5–1 gm/kg fish feed
Enzyme liquid — 0.5–1 gm/kg fish feed
একটি পুকুরের মাছের মোট খাদ্য চাহিদার (সাধারণত: বয়স ও আকারভেদে দেহ ওজনের ২-৯%) সাপেক্ষে মোট ঔষধ হিসেব করে ৪ ভাগের মাত্র ১ ভাগ ফিডে ঐ সমস্ত ঔষধ ঐভাবে মিশাতে হবে
বিঃদ্রঃ

মাছ ও পুকুরের বিভিন্ন প্রভাবকের উপর পার্থক্য করে ঔষধের প্রকার ও পরিমানের উপর।
রেজিষ্টার্ড ভেট ডাক্তার অথবা মৎস্য বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন ও পরামর্শ নিন।

কোন মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়
অনেক সময় মাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ফলে শীতের মরসুমে ওই সব প্রজাতির মাছের বৃদ্ধি হয় না বললেই চলে। কিন্তু এই সময় সাইপ্রিনাস কার্প, রুপোলি রুই বা সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প বা ঘেসো রুই-প্রভৃতি প্রজাতির মাছ চাষের উপযুক্ত সময়। এই সব প্রজাতির মাছ ৪-৫ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও খাবার খেয়ে দ্রুত বাড়তে সক্ষম।

মাছের গ্রোথ প্রোমোটার
মাছ ও চিংড়ি চাষে: প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৩-৫ গ্রাম মেগা সুপার প্লাস মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। পুকুরের প্রাকৃতিক খাবার বৃদ্ধির জন্য প্রতি বিঘায় ৩-৫ ফুট গভীরতার জন্য ১ কেজি মেগা সুপার প্লাস পানিতে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে, অথবা, ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।

মাছের জীবানুনাশক ঔষধ
রকেট প্লাস – মাছ ও চিংড়ির জীবাণুনাশক