মেয়ের সাথে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মা

নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলায় বয়সকে হার মানিয়ে, সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে নিজের বড় মেয়ের সঙ্গে এবারে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন হার না মানা মারুফা আক্তার (৩৬) নামের এক প্রতিভাবান মা। আজ রোববার (৬ নভেম্বর) সারা দেশে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় জেলার ডিমলায় তিনি পরীক্ষা দিচ্ছেন। লেখাপড়া করার অদম্য ইচ্ছে ছিল কিন্তু পরিবারের চাপে অল্প বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় মারুফা আক্তারকে।

গত ২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার কিন্তু বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে বছর আর পরীক্ষা কেন্দ্রে বসতে পারেননি তিনি। বুকের ভিতর লালিত স্বপ্ন আর এগোতে না পারায় প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তির ওপর ভর করে মারুফা নতুন করে শুরু করেন লেখাপড়া। নিজের মেয়ের সঙ্গে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। মেয়ের সাথেই একসঙ্গে পাশ করেন এসএসসি।

এবার সেই মেয়ের সঙ্গেই এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। অদম্য সাহসী ও প্রতিভাবান এই নারীর বাড়ি নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নে। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারী মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে চলতি বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ‘ডিমলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট’ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। এ দিকে মেয়ে শাহী সিদ্দিকা (১৮) একই প্রতিষ্ঠান থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ডিমলা সরকারী মহিলা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। মারুফা আক্তারের স্বামী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মারুফা আক্তার চার সন্তানের জননী। এই চার সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে।’

মারুফা আক্তার জানান, ‘ছোট বেলা থেকে আমি পড়াশুনায় মনোযোগী ছিলাম। কিন্তু বিয়ের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারিনি। বিয়ের ১৭ বছর পরে স্বামীর অনুপ্রেরণায় এসএসসি দেই। পর্যায়ক্রমে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি। এসএসসিতে মেয়ের চেয়ে আমার ফলাফল ভালো হয়েছে। এবারও ভালো ফলাফল হবে আশা করি। উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল আসলে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চেষ্টা করবো।’

মারুফা আক্তারের স্বামী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জন্য একটু কষ্ট হলেও আমি তার ইচ্ছার মর্যাদা দিয়েছি। সে যতদূর পড়াশোনা করতে পারে, আমি চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব। এদিকে নীলফামারী জেলার ৬টি উপজেলায় এইচএসসি, আলিম এবং এইচএসসি (ভোকেশনাল ও বিএম) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এইচএসসি কারিগরি বোর্ডের বাংলা পরীক্ষা স্থগিত

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি বাংলা প্রথম পত্র (নতুন ও পুরাতন সিলেবাস) পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আজ রবিবার (৬ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান। কী কারণে পরীক্ষা স্থগিত হলো তা বলা হয়নি।

তবে, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অনিবার্য কারণে এই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত বিষয়ের পরীক্ষার নতুন সময়সূচি পরিবর্তীতে জানানো হবে। আজ দুপুর ২টায় যথারীতি পরীক্ষা শুরু হয়। ৪টায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে এক ঘণ্টা পর বিকেল ৩টার দিকে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

উল্লেখ্য, আজ রবিবার (৬ নভেম্বর) সারাদেশে একযোগে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এবার মোট ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে এই পরীক্ষায়। এর মধ্যে ছাত্র ছয় লাখ ২২ হাজার ৭৯৬ জন এবং ছাত্রী পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ জন। এই বোর্ড পরীক্ষায় মোট দুই হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ১৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে।

মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৩ জন। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল), ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে এক লাখ ২২ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৮৮ হাজার ৯১৮ জন এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ১৩ জন। কারিগরি বোর্ডের আওতায় মোট এক হাজার ৮৫৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬৭৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে পরীক্ষার্থীরা।