মা-বাবাকে একা করে হারিয়ে গেলেন তিন ভাই

ছুটির দিনের সন্ধ্যায় তিন ভাই মিলে গিয়েছিল বেড়াতে। মাকে বলে গিয়েছিল, ঝুলন্ত সেতু দেখতে যাচ্ছে। তবে কেউই জানত না, এটিই হবে তাদের শেষ দেখা। কয়েক মাস ধরে মেরামতকাজ চলার পর গত ২৬ অক্টোবর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ভারতের গুজরাট রাজ্যের মরবির ঝুলন্ত সেতুটি। সময়টা ছিল দীপাবলি উৎসবের। স্কুলে ছুটি ছিল। অনেক পরিবারই সেতুটি দেখতে যাচ্ছিল। তাদের দেখেই হয়তো ৩ ভাই-২০ বছরের চিরাগ মুকচাদিয়া, ১৭ বছরের ধার্মিক ও ১৫ বছরের চেতনের বেড়ানোর সাধ জেগেছিল। তাই গত রোববার (৩০ অক্টোবর) বেড়িয়ে পড়ে তিন ভাই। কিন্তু সেই যাওয়াই তাদের শেষযাত্রা হয়ে যায়। সেতু ছিঁড়ে হারিয়ে যায় তারা।

সম্প্রতি হারিয়ে যাওয়া এই তিন ভাইকে নিয়ে বিবিসিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসির ওই প্রতিবেদনে জানা গেছে নীতিন কাভিয়া নামের আরও এক ব্যক্তির ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। প্রায় সমবয়সী তিন ভাই ২০ টাকা (১৭ রুপি) দিয়ে টিকিট কেটেছিল। মনের আনন্দে হেঁটে বেড়াচ্ছিল ৭৫৫ ফুট লম্বা সেতুতে।সেতু ছিঁড়ে পড়ার মুহূর্তটি দেখেছেন নীতিন কাভিয়া নামের এক ব্যক্তি। দেখেছেন, সেতু থেকে অসংখ্য মানুষকে পড়ে যেতে। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল প্রায়। ওই পড়ে যাওয়া মানুষদের মধ্যে হয়তো ছিল ওই তিন ভাইও।

এই ঘটনা চলাকালীন সময়ে তাদের মা কান্তাবেন তখন সংসারের কাজে ব্যস্ত। সে সময়ই হঠাৎ ছেলেদের এক বন্ধুর মুখে শোনেন, সেতু ছিঁড়ে পড়ার দুঃসংবাদ। অস্থির হয়ে ওঠেন মা। তাঁর তিন ছেলে তো সেই সেতুতে বেড়াতে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি ছেলেদের ডাকাডাকি শুরু করেছিলাম। অনেক খুঁজেও পাইনি।’ বাবা রাজেশও ঘটনাস্থলে দৌড়ে যান। সেখানেও ছেলেদের খোঁজ না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে থাকেন। রাত ১১টায় তিনি ধার্মিক ও চিরাগকে মরবির একটি হাসপাতালে খুঁজে পান। পুলিশ, স্থানীয় কর্মকর্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল ও সামরিক কর্মকর্তারা উদ্ধার অভিযান চালাতে থাকেন। রাত তিনটার দিকে পাওয়া যায় চেতনের লাশ।

নিহতদের মা আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের সবকিছু, আমাদের তিন ছেলেকে হারিয়েছি। এখন আমাদের কী আছে? আমি ও আমার স্বামী এখন একা।’বাবা রাজেশ বললেন, হারিয়ে যাওয়া ছেলেরা কে কেমন ছিল। ২০ বছরের ছেলে চিরাগ একটি চশমার দোকানে কাজ করতেন। বাবা রাজেশ ছিলেন গাড়িচালক। দুজনের আয়েই চলত সংসার।রাজেশ বলেন, ‘চিরাগ খুবই ভালো ছেলে ছিল। আমি যা বলতাম, সে সব শুনত। সে যা চাইত, আমিও তাকে তা দেওয়ার চেষ্টা করতাম।’বাবা রাজেশ আরও বলেন, আগামী ১৪ ডিসেম্বর ধার্মিক ১৮ বছরে পা দিত। সে চাকরি খুঁজছিল। সে খুব দুষ্টু ছিল। কত মজার স্মৃতি তার সঙ্গে। এখন তারা সবাই চলে গেছে। মা বলেন, ধার্মিক তেলে ভাজা পরোটা পছন্দ করত। প্রায়ই বানিয়ে দিতে বলত।

ছোট চেতন স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত। বাবা রাজেশ বলেন, সে ছিল তুখোড় ছাত্র। মা-বাবার কাছে আছে কয়েক বছর আগে তোলা তিন ভাইয়ের পাসপোর্ট সাইজের ছবি। সেটাই এখন স্মৃতি তাঁদের কাছে।মা কান্তাবেন ছেলেদের মৃত্যুর জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের শাস্তি চান। বাবাও বলেন একই কথা। বলেন, ‘আমরা উত্তর চাই। আমরা ন্যায়বিচার চাই।

About admin

আমার পোস্ট নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথরা মেইল করতে পারেন admin@sottotv.com এই ঠিকানায়।