চলতি কাতার বিশ্বকাপে ‘সি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। যার ফলে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল আকাশি নীল শিবির। তাই মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচে জয়ের বিকল্প কোন পথ ছিল না লে আলবিসেলেস্তেদের সামনে। এমন সমীকরণের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ালো আর্জেন্টিনা। সেই দলের ত্রাণকর্তা হয়ে এলেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি।
এদিন মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচে নিজে একটি গোল করলেন, পরে আরেকটি সতীর্থ এনজো ফার্নান্দেজকে করতে সাহায্যও করলেন। তাতে আর্জেন্টিনাও ২-০ গোলে জিতে বিশ্বকাপের মঞ্চে রাজসিক প্রত্যাবর্তন ঘটল। আজ রবিবার ২৭ নভেম্বর দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে মেক্সিকোর বিপক্ষে ডু অর ডাই ম্যাচে মাঠে নেমেই কিংবদন্তি ডিয়াগো ম্যারাডোনার এক রেকর্ড স্পর্শ করেন। বিশ্বকাপের মঞ্চে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলেছিলেন ম্যারাডোনা, এবার তার পাশেই এসে বসলেন মেসি।
তবে একদিন আগে বিদায়ের দুই বছর পালন করা এই কিংবদন্তিকে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেই ছাড়িয়ে যাবে সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই তারকা। ম্যারাডোনা ১৯৮২ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত মোট ৪টি বিশ্বকাপে মাঠে খেলেছিলেন। তবে আর্জেন্টিনার কাপ্তান মেসি ২০০৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মোট ৫টি বিশ্বকাপে মাঠে নেমে ছাড়িয়ে গেছেন বিদায়ী এই কিংবদন্তিকে।
এবার রেকর্ড বুকেও মেসিকে পাশে নিয়ে বসলেন তিনি। বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা ২১ ম্যাচে মাঠে নেমে ৮ গোল করেছিলেন। এদিন বিশ্বকাপের মঞ্চে ঘুরে দাঁড়ানো আর্জেন্টিনাকে ম্যাচের প্রথম লিড এনে দেওয়া মেসির সেই দুর্দান্ত গোলের মাধ্যমে তিনিও ছুঁয়ে ফেলেছেন ১৯৮৬ এর বিশ্বজয়ের নায়ককে। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ দশ গোল দেওয়া গ্যাব্রিয়েল বাতিস্ততার চেয়ে দুই গোলে পিছিয়ে রয়েছে পিএসজি এই তারকা।
যদিও সামনে সুযোগ থাকছে মেসির সামনে। এছাড়া আর্জেন্টিনার জার্সিতে সবশেষ ৬ ম্যাচের সবকটিতে গোল করলেন মেসি। কাতারে দীর্ঘ ৩৬ বছরের শিরোপা ছুঁতে না পারার আক্ষেপ শেষ সুযোগ পাচ্ছেন মেসি। ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নে এসে যেভাবে গোটা দলকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন, এই লুসাইলেই কি ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি তুলে ধরতে পারবেন মেসি! এজন্য অবশ্য এখন সামনে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে লিওনেল স্কালোনির দলকে।
দলে মেসি থাকলে জয় সবসময়ই সহজ: মার্তিনেজ
আজ মেক্সিকোর বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না। এমন ম্যাচে আক্রমণে গিয়ে খেই হারাচ্ছিল আলবিসেলেস্তেরা। কিছুতেই ভাঙতে পারছিল না মেক্সিকোর জমাট রক্ষণ। প্রথমার্ধ কাটে গোলশূন্যভাবে। দ্বিতীয় অর্ধ থেকে নিজেদের ছন্দে ফিরে আর্জেন্টিনা, তবুও মিলছিল না গোলের দেখা। সেটি আসে লিওনেল মেসির পা থেকে। ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া শটে দলকে স্বস্তি এনে দেন তিনি।
এদিকে ম্যাচের শেষে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন সতীর্থ গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস। প্রথমার্ধে দারুণ একটি সেভ দেওয়া এই ফুটবলার বলেছেন, ‘মেক্সিকো আমাদের খুব কঠিন একটা ম্যাচের সামনে ফেলেছিল প্রথমার্ধে। কিন্তু লিওনেল মেসি থাকলে সবসময় সবকিছু সহজ।’
সৌদি আরবের কাছে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। ওই ম্যাচের পর ভেঙে পড়েছিলেন দলটির সমর্থকদের অনেকে। ফুটবলারদের জন্য কেমন ছিল? মেক্সিকো ম্যাচের পর মার্তিনেস বলেছেন, তাদের জন্যও গত তিনদিন ছিল কঠিন।
তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যাশার কারণে গত তিনদিন ছিল খুবই কঠিন। অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে গিয়েছিল, আমরাও ভুলভাবে বিশ্বকাপ শুরু করেছিলাম। আজকে আমরা দেখিয়েছি এখানে আরও বড় কিছুর জন্য এসেছি।’
রাত জেগে একা খেলা দেখলেন পরীমণি, ঘুমাচ্ছিলেন রাজ
চলতি কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে টিকিয়ে রাখতে তাকেই কিছু একটা করতে হবে, এটা জানতেন লিওনেল মেসি। তিনি করেও দেখিয়েছেন। দ্বিতীয়ার্ধে তার দুর্দান্ত গোলে প্রাণ ফিরে পায় আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। এরপর তার পাস থেকেই দ্বিতীয় গোলটি করেন এনজো ফার্নান্দেস। ব্যাস, সমর্থকদের আর কে পায়! উল্লাসে ফেটে পড়েন তারা।
এদিকে দেশের আলোচিত নায়িকা পরীমণি আর্জেন্টিনার অন্ধভক্ত। তবে তার স্বামী অভিনেতা শরিফুল রাজের প্রিয় দল ব্রাজিল। আর তাই রাত জেগে পরী একা খেলা দেখলেও ঘুমাচ্ছিলেন রাজ। খেলার মাঝে রাজকে ঘুম থেকে ডাকার একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন নায়িকা।
এরপর মেসি যখন প্রথম গোলটি দেন, সে সময় মেসির একটি ছবি পোস্ট করে পরী লেখেন, ‘মেসি, আই লাভ ইউ।’ ঘন্টা খানিক পর (রাত ৩টা ৩৫ মিনিট) আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেন পরী। ক্যাপশনে লিখেছেন, মেসি একটা ভালোবাসা। সঙ্গে লাভের ইমোজি।
এদিকে মাত্র তিন সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, খেলা শেষে কথা বলছেন মেসি। টিভিতে সেই দৃশ্য দেখে তাকে ফ্লাইং কিস দিচ্ছেন পরী। হাসিতে জানান দিচ্ছেন তার উচ্ছ্বাসের কথা।
মেক্সিকোকে উড়িয়ে দিয়ে শেষ ষোলোর আশা বাঁচিয়ে রাখল আর্জেন্টিনা
চলতি কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারের ফলে মেক্সিকোর বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ম্যাচটি ছিল বাঁচা-মরার। হারলেই বিদায় ও ড্র করলে নকআউট পর্বে যাওয়ার পথে কঠিন সমীকরণে আটকে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল লে আলবিসেলেস্তেদের। এমন মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জ্বলে উঠলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি। নিজে গোল করে প্রথমে দলকে এগিয়ে নিলেন। পরে সতীর্থ ইঞ্জো ফার্নান্দেজকে দিয়ে করালেন আরেক গোল।
আর তাতেই মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপে শেষ ষোলোর পথে টিকে রইল কোচ লিওনেল স্কালোনির দল। আজ রবিবার ২৭ নভেম্বর দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ডু অর ডাই ম্যাচে পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। শুরু থেকেই মেক্সিকান শিবিরে আক্রমণ চালাতে থাকে মেসি-ডি মারিয়ারা। তবে বল দখলে এগিয়ে থাকলেও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারছিলেন না। উল্টো আক্রমণে আর্জেন্টিনাকে চেপে ধরে মেক্সিকো।
ম্যাচের ১৪ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে যান মেক্সিকান ভেগার। তবে ডি-বক্সের ভেতরে গিয়ে কিক নিতেই আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক তা সহজেই লুফে নেন। এতে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা কিছুটা স্বস্তি পায়। এরপর ৩৩ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে মেসিকে ফাউল করে বসে মেক্সিকোর ডিফেন্ডাররা। ফলে রেফারি বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ফ্রি কিকের সংকেত দেন। তবে মেসির নেওয়া ফ্রি কিক মেক্সিকান গোলকিপার ওচোয়া বাঁধিয়ে দিয়ে বল ক্লিয়ার করেন৷
ম্যাচের ৪০তম মিনিটে আবারও সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার সামনে। ডি মারিয়ার নেওয়া কর্নার কিক ক্রস করে পেয়ে ডি-বক্সের মধ্যে পেয়ে যান লাউতারো মার্টিনেজ। তবে তার হেড জালের দেখা খুজে পায়নি। তবে বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার ফাউল করে বসে বদলি হিসেবে নামা মেক্সিকোর ফরোয়ার্ড গুতিরেজকে। তবে ভেগার নেওয়া দুর্দান্ত ফ্রি কিক দুর্দান্তভাবে গ্লাভস বন্দী করেন মার্টিনেজ। এতে গোলশূন্য অবস্থাতেই বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতি থেকে ফিরে আক্রমণে ধার বাড়ায় আর্জেন্টিনা। তবুও গোলের দেখা পাচ্ছিলেন না মেসি-ডি মারিয়ারা। তাই গুইদো রদ্রিগেজকে উঠিয়ে নিয়ে ইঞ্জো ফার্নান্দেজকে মাঠে নামান কোচ লিওনেল স্কালোনি। এর কিছু পরেই কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় আকাশি নীল শিবির। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে অ্যানহেল ডি মারিয়ার সহায়তায় দুর্দান্ত এক গোল করে দলকে এগিয়ে নেন সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা মেসি।
ডি মারিয়ার বাড়ানো শট ডি-বক্সের বাইরে পেয়ে নিজের জায়গা করে নেন মেসি। সেখান থেকে সোজা গোলে শট নেন তিনি। যা মেক্সিকান গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়া ড্রাইভ দিলেও ধরতে পারেননি। ফলে ১-০ তে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিন। এরপর ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মিনিট তিনেক আগে জালের দেখা পান বদলি হিসেবে নামা ফার্নান্দেজ। মেসির অ্যাসিস্ট থেকে দলকে জয়ের উপলক্ষ এনে দেন এই ফুটবলার। তাতে শেষ পর্যন্ত লে আলবিসেলেস্তেরা আসরে প্রথম জয়ের দেখা পায়।