খেলোয়াড়ি জীবনে কোনো কিছুরই কমতি ছিল না লিওনেল মেসির। সাতবারের ব্যাল ডি’অর চ্যাম্পিয়নের ঝুলিতে অজস্র ক্লাব ফুটবলের স্বীকৃতিসহ আছে কোপা ও ফিনালিসিমা জয়ের কীর্তি। এতসব অর্জনের পরও একটা শূন্যতা অবশ্য ছিল এলএমটেনের। বিধাতা দুই হাত ভরে যাকে এতকিছু দিয়েছেন, তার মনে শুধু ছিল একটা বিশ্বকাপ জিততে না পারার আক্ষেপ। তবে, ভাগ্যবিধাতা যেন আগে থেকেই লিখে রেখেছিলেন সব। কাতার বিশ্বকাপে এই ফুটবল জাদুকরকে দিলেন দু’হাত ভরে। তাইতো, কিংবদন্তি খেলোয়াড় আলফ্রেডো দি স্টেফানো বলেন, মেসির অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ‘সুপার ব্যালন ডি’অর’ দেওয়া হতে পারে।
১৬ বছর আকাশি সাদা জার্সিতে রেকর্ডের ফুলঝুরি কুড়িয়েছেন লিওনেল মেসি। ক্যারিয়ারের অন্তিম মূহূর্তে সেই মেসির হাতে অবশেষে ধরা দিলো সোনালি রঙের ট্রফি। তিনি এমন একজন, যার হাতেই মানায় সোনালি ট্রফিটা। যে ট্রফিও হয়তো তার হাতে উঠতে পেরে আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। এই ট্রফিই হয়তো অপেক্ষার প্রহর গুনছিলো এই ম্যাজিকাল মানুষটার হাতে উঠার। সেরাদের সেরার তকমা গায়ে ছিল আচগে থেকেই, বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে সর্বকালের সেরা বনে যান ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি।
সম্প্রতি অনলাইন রেডিওতে স্পেন ও রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি আলফ্রেডো দি স্টেফানো বলেন, লিওনেল মেসিকে তার অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ার এবং বিশ্বকাপ জয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ‘সুপার ব্যালন ডি’অর’ দেওয়া হতে পারে। এটার ধারা তাকে প্রাপ্য সম্মান জানানো হবে। ৩৫ বছর বয়সে এসেও অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যে দেখিয়ে যাচ্ছেন। মেসির বাঁ পায়ের জাদু আমাকে মুগ্ধ করে। বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এছাড়া স্পোর্টস জো সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা লিওনেল মেসি ফিরেছেন স্বরূপে। লিগ ওয়ানের ১৯ ম্যাচে ১২ গোলের পাশাপাশি অ্যাসিস্টে ভূমিকা রেখেছেন ১৪’টিতে। মাঠে তার সরব উপস্থিতিতে ভেস্তে যাচ্ছে প্রতিপক্ষের সকল পরিকল্পনা। কোপা আমেরিকা ও ফিনালিসিমা’র পর এবার মেসির হাত ধরে বিশ্বকাপ শিরোপা দেখেছে আর্জেন্টিনা। এর ফলে, অষ্ঠম ব্যালন ডি’অর জয়ের দ্বরপ্রান্তে রয়েছেন এই ফুটবল জাদুকর।
‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেষ্টা কখনও বন্ধ করিনি’
কাতারে ৩৬ বছরের লালিত সপ্ন পুরণ হয়েছে মেসির আর্জেন্টিনার। শৈশব থেকে লিওনেল মেসি স্বপ্ন দেখেছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবেন। কিন্তু আগের চারবার বিশ্বকাপে খেলে কোনোভাবেই সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। অবশেষে পঞ্চমবারের চেষ্টায় তিনি সফল হয়েছেন। মেতেছেন উচ্ছ্বাসে। গতকাল দেশটির লাখো সমর্থকদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ছাদখোলা বাসে শহর ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা।
এর আগে আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে গিয়েছিলেন মেসিরা। সেখান থেকে বুয়েনস আইরেসের কেন্দ্রে ওবেলিসো স্মৃতিস্তম্ভের দিকে যাত্রা শুরু হয়। স্বপ্নের বিশ্বকাপ নিয়ে এই স্বপ্নযাত্রায় যাওয়ার আগে ইনস্টাগ্রামে এক আবেগঘন বার্তায় দেশের কিংবদন্তি এবং শৈশব থেকে এই পর্যায়ে আসা ব্যক্তিদের কথা তুলে ধরেন মেসি।
লিওলেন মেসির বিশ্বকাপ জয়ের জন্য প্রচেষ্টার কোনো কমতি ছিলো না। ২০১৪ সালে খুব কাছে গিয়েও শিরেপা জেতা হয়নি তার। তারপরও হাল ছাড়েননি; দুর্দান্ত মেসি অবশেষে ঠিকই জিতে নিলেন এই সোনালী ট্রফি। এই যে বিশ্বকাপ জেতার এই স্বপ্ন এবং তা পূরণ করার চেষ্টা, এগুলো কখনও বন্ধ রাখেননি সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই তারকা।
লিওলেন মেসি লিখেছেন, ‘গ্রান্দোলি থেকে কাতার বিশ্বকাপ পর্যন্ত প্রায় ৩০ বছর কেটে গেছে। প্রায় তিন দশকের এই সময়ে ফুটবল আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে, কিছু দুঃখও দিয়েছে। সবসময়ই আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার, আমি চেষ্টা করা বন্ধ করতে চাইনি, এমনকি কখনও এমন কিছু নাও অর্জন করতে পারি- এটা জানার পরও। ’
শুধু যে নিজের স্বপ্নপূরণের কথা বলেছেন তা নয়, মেসি লিখেছেন আগের ফুটবলারদের সেই আক্ষেপের কথাও, ‘এই ট্রফিটি আমরা জিতেছি তাদের জন্যও, যারা আগের বিশ্বকাপগুলিতে এটি অর্জন করতে পারেননি, যেমন ২০১৪ সালে ব্রাজিলে। সেবারও প্রত্যেকের এটি প্রাপ্য ছিল, কারণ তারা ফাইনাল পর্যন্ত লড়াই করেছিল, কঠোর পরিশ্রম করেছিল এবং জিততে চেয়েছিল, ঠিক আমি যতটা পরিশ্রম করেছিলাম ও চেয়েছিলাম… অমন বাজেভাবে শেষ হওয়া ফাইনালেও আমাদের ট্রফিটি প্রাপ্য ছিল। ’
মেসি মনে করতে ভুলেননি দেশটির কিংবদন্তি প্রয়াত ডিয়েগো ম্যারাডোনাকেও। কোচিং স্টাফসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দিয়েগোর (মারাদোনার) জন্যও, যিনি স্বর্গ থেকে আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। এই সাফল্য তাদের সকলের জন্য, যারা সবসময় ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে জাতীয় দলের পাশে থেকেছে, আমাদের চেষ্টা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে, এমনকি যখন সবকিছু চাওয়া অনুযায়ী হয়নি তখনও…আর অবশ্যই কোচিং স্টাফ এবং জাতীয় দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য, যারা আমাদের জন্য সবকিছু সহজ করতে দিনরাত কাজ করেছেন। ’
সবশেষে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে মেসি বলেন, ‘ব্যর্থতা অনেক সময় যাত্রা এবং শেখার অংশ। হতাশা, ব্যর্থতা ছাড়া সাফল্য পাওয়া অসম্ভব। হৃদয় থেকে সবাইকে অনেক ধন্যবাদ! চলো আর্জেন্টিনা এগিয়ে যাই। “
সত্যই কি আর্জেন্টিনার ব্যাংক নোটে জায়গা পাচ্ছেন মেসি? নাকি কৌতুক
কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে নাটকীয় জয়ের মাধ্যমে দীর্ঘ ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে শিরোপা জিতেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। আর এই আনন্দে আর্জেন্টিনার ব্যাংক নোটে জায়গা পেতে পারে বিশ্বকাপ জয়ে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করা সময়ের সেরা ফুটবলার মেসির ছবি।
এল ফিয়ানসিয়েরোর বরাত দিয়ে ব্রিটেনের দ্য সান প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশটির ১০০০ পেসোর নোটে থাকবে মেসির ছবি।মূলত, দেশটির ফাইন্যান্সিয়াল গভর্নিং বডি বিশ্বকাপ জয়ের মতো বড় জাতীয় অর্জনকে স্মরণীয় করে রাখতে চায়। আর সে জন্যই ব্যাংক নোটে রাখতে চাচ্ছে মেসির ছবি। ১০০০ পেসোর নোটের এক পাশে থাকবে মেসির ১০ নম্বর জার্সি পরা একটি ছবি। সেখানে থাকবে মেসির স্বাক্ষরও। তার নিচে লেখা থাকবে ‘কাতার-২০২২’ এবং লিওনেল মেসির নাম। অন্য পাশে থাকবে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়ের পর উল্লাস করা দলগত ছবি।
তবে সংবাদমাধ্যম এল ফিয়ানসিয়েরোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত কর্তৃপক্ষ বিশ্বকাপ ফাইনালের আগেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিল। তবে ছবির বিষয়টি আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদস্যদের দ্বারা ‘কৌতুক করে’ প্রস্তাবিত হয়েছিল, যদিও লিসান্দ্রো ক্লেরির সহ অন্যান্য পরিচালকরা এবং এডুয়ার্ডো হেকার এতে সম্মত হন । এই নকশার একটি ব্যাংক নোট আর্জেন্টিনার সংগ্রহের চেতনাকে জাগ্রত করবে বলেও জানান তারা।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষ্যে আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্মারক কমার্সিয়াল কয়েন চালু করেছিল। তখন কপার, নিকেল ও অ্যালুমিনিয়ামের ২০ পেসো, ৫০ পেসো ও ১০০ পেসোর কয়েনের এক পাশে ছিল বিশ্বকাপের লোগো। অন্যপাশে ছিল ফুটবল খেলার দৃশ্য ও স্টেডিয়ামের ছবি। এর পাশাপাশি একইভাবে সিলভারের ১০০০ পেসো, ২০০০ পেসো ও ৩০০০ পেসোর কয়েন ছেড়েছিল।