শেখ হাসিনা সভাপতি, তার থেকে যে ওহি নাজিল হয় তা আপনাদের কাছে আমরা পৌঁছে দেই। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বর্ধিত সভায় দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন। শনিবার (১ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে এ বর্ধিত সভার আয়োজিন করা হয়।
সভায় অংশ নিয়ে জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজম বলেন, আমাদের তেতাল্লিশ বছরের সকলের আমলনামা নেত্রীর কাছে আছে। দ্বিতীয় অধিবেশনের সিদ্ধান্ত যা আসবে সকলকে মেনে নিতে হবে। এখানে আপনাদের টেনশনের কোনো বিষয় নেই। শেখ হাসিনা যা চাইবেন তাই হবে।
তিনি আরও বলেন, গতকাল ঢাকার পুলিশ কমিশনার বলেছেন—পঞ্চাশ জনের মতো জঙ্গি যারা বাড়ি থেকে পলাতক, তাদের (পুলিশ) কাছে খবর আছে যে, সহিংস ঘটনা ঘটানো হতে পারে। তাদের টার্গেট আওয়ামী লীগকেও আঘাত করা। এ কারনে উন্মুক্ত স্থানের মধ্যে কোনটা সবচেয়ে নিরাপদ তা আলোচনা করে সেটা আপনারা নির্ধারণ করবেন।
মির্জা আজম আরও বলেন, আজকের সভায় স্থান নির্ধারণ করে দুই-একদিনের মধ্যেই আরেকটি কার্যকরী কমিটির সভা দেবেন। আপনারা সকলের বক্তব্য শুনেছেন। সকলকে দেখভাল করার দায়িত্ব জেলা আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। নিরাপত্তা সাজসজ্জার জন্য অনেকগুলো কমিটি করতে হবে। যাদের দায়িত্ব দেবেন তারা যেন দায়িত্ব পালন করেন। নয়তো সম্মেলন সঠিকভাবে হবে না।
মেয়ের সুস্থতা কামনা করে মসজিদের দানবাক্সে প্রার্থনামূলক চিঠি!: কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়- এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করে থাকেন। একইভাবে প্রতিবন্ধী মেয়ের সুস্থতা কামনা করে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে প্রার্থনামূলক চিঠি দিয়েছেন এক মা। সন্তানের সুস্থতা চেয়ে চিঠিতে মা লিখেছেন, ‘পাগলা বাবার মসজিদে আর্জি দিচ্ছি যে, আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী, আপনার উছিলায় যাতে আমার মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া ভালো হয়ে যায়। আমি আপনার দরবারে ১টি ছাগল দিব। আমার আর্জি কবুল করুন।’
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম টাকা গণনা করার সময় টাকার সঙ্গে মেয়ের সুস্থতা চেয়ে এক মায়ের এই প্রার্থনামূলক চিঠিটি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদটিতে আটটি লোহার দান সিন্দুক রয়েছে। প্রতি তিন মাস পর পর এ সিন্দুকগুলো খোলা হয়। এবারও ৩ মাস ১ দিন পর শনিবার (১ অক্টোবর) দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়েছে। সিন্দুকগুলোতে এবারও বিপুল পরিমাণ টাকা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি পাওয়া গেছে।
টাকা গণনার কাজে রূপালী ব্যাংকের এজিএম ও অন্যান্য কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন। মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি খলিলুর রহমান জানান, এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন জানান এই মসজিদে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে সেখানে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনের বাসনা পূরণ হয়- এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিও দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবনও।
ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটিকে ঘিরে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ চলছে। এছাড়াও মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সহায়তা করা হয়।
মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়। এছাড়া করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছে এ দানের টাকা থেকে।
পাগলা মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৬০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।