চলতি কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচটা জয় দিয়েই রাঙিয়েছে ব্রাজিল। সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নেয় তারা। তবে, ম্যাচ শেষে নেইমারের ইনজুরি চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ব্রাজিল শিবিরে। ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে ডান পায়ের গোড়ালিতে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় নেইমারকে।
এদিন নেইমারের ইনজুরির ঘটনাটি ঘটে ম্যাচের ৭৭তম মিনিটে। সার্বিয়ার ডিফেন্ডার নিকোলা মিলেনকোভিকের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন নেইমার। নিকোলার পায়ের সঙ্গে লেগেই পা মচকে যায় নেইমারের। সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে বসে পড়েন তিনি। এরপর দ্রুত দলের মেডিকেল টিম মাঠে প্রবেশ করে।
এদিকে মাঠ থেকে বের হয়ে ডাগআউটে বসে জার্সি দিয়ে মুখ ঢেকে দেন নেইমার। অনেকেরই ধারণা, হয়তো কান্না রোধ করার জন্য মুখ ঢাকেন তিনি। তবে নেইমারের এই ইনজুরিটা কতটা গভীর কিংবা নেইমার আগামী ম্যাচগুলো খেলতে পারবে কিনা সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও একদিন।
তাছাড়া সার্বিয়ার বিপক্ষে ৯ বার ফাউলের শিকার হওয়া নেইমারের ইনজুরি প্রসঙ্গে ব্রাজিল দলের ডাক্তার রদ্রিগো লাসমার জানান, নেইমারের পা মচকেছে। এই চোট কতটা গভীর, সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা।
এদিকে আগামী মঙ্গলবার ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ব্রাজিল নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে সুইজারল্যান্ডের। সেই ম্যাচে নেইমারকে পাওয়া যাবে কি না, সেটি জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু সময়।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সর্বোচ্চ ফাউলের শিকার নেইমার
আগের মতো এবারও ফাউলের বড় শিকার নেইমার। সার্বিয়ার বিপক্ষে হাফ টাইম না পেরোতেই পাঁচবার আক্রমণ করা হয় তাকে। যা এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ৫১ মিনিটে প্রথমবার ডি বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেন নেইমার। কিন্তু ফাউলের হাত থেকে তার রেহাই কই। যদিও এর বিপরীতে ফ্রি-কিক পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। কর্ণার পেলেও আবারও ব্যর্থ হন তিনি। যদিও শেষ হাঁসি হেসেছে ব্রাজিল।
এদিন শুরুর অর্ধে যোজন যোজন ব্যবধানে সার্বিয়ার চেয়ে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধেও দেখা মিলল একই দৃশ্যের। তবে গোলের দেখা মিলছিল না যেন কিছুতেই। ম্যাচের ঘড়িতে এক ঘণ্টা পেরোনোর পর অবশেষে গোলের দেখা পেল পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নরা। তাও একবার নয়, দুবার!গোল দুটো করলেন রিচার্লিসন। নেইমার-রাফিনিয়ার সৃষ্টিশীলতা, ভিনিসিয়াসের গতিতে সেলেসাওরা প্রতি আক্রমণেই ত্রাস ছড়াচ্ছিল বেশ।
তবে টুর্নামেন্টের ফেভারিট যারা, তাদের পারফর্ম্যান্স তো এমন হবারই কথা! ম্যাচের ১৩ মিনিটে ম্যাচের প্রথম কর্নারটা যায় ব্রাজিলের পক্ষে। নেইমার সরাসরি গোলেই শট করে বসেছিলেন। গোলরক্ষক ভানজা মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ দারুণভাবে বলটা প্রতিহত করেন। তবে ম্যাচের প্রথম গোলমুখে শটটা আসে ২১ মিনিটে। নেইমারের সেই শটটা রুখতে কোনো সমস্যাই হয়নি ভানজার।
প্রতি আক্রমণে এরপর সার্বিয়াও খানিকটা ত্রাস ছড়াতে চেয়েছে। তবে সেসবকে গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার পর্যন্ত পৌঁছুতে দেয়নি ব্রাজিল রক্ষণ। ব্রাজিল প্রথম বড় সুযোগটা তৈরি করে ২৮ মিনিটে। থিয়াগো সিলভার রক্ষণচেরা পাস বামপাশে অরক্ষিত ভিনিসিয়াসকে খুঁজে পায়, তবে গোলরেখা থেকে এগিয়ে এসে সেটা ঠেকিয়ে দেন ভানজা মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ।
ম্যাচের ৩৫ মিনিটে রাফিনিয়া বড় একটা সুযোগই পেয়ে বসেছিলেন বক্সের একটু ভেতরে। তবে দুর্বল শটে সে সুযোগটা নষ্ট করেছেন তিনি। ৪১ মিনিটে সার্ব রক্ষণের ভুলে সুযোগ পায় সেলেসাওরা। নিকোলা মিলেঙ্কোভিচ বলটা তুলে দিয়েছিলেন ভিনিসিয়াসের পায়ে। তবে শেষমেশ তার ট্যাকলেই গোলটা হজম করা থেকে রক্ষা পায় তার দল সার্বিয়া।
ম্যাচের প্রথমার্ধে খুব একটা সময় নষ্ট হয়নি। তাই ১ মিনিট দেওয়া হয়েছিল ইনজুরি সময়, গোলের দেখা তখনো পায়নি ব্রাজিল কিংবা সার্বিয়ার কেউ। ফলে গোলহীনভাবেই শেষ হয় ম্যাচটির প্রথম ৪৫ মিনিট। বিরতির পরও ম্যাচে শ্রেয়তর দল হয়ে থাকল ব্রাজিলই। প্রথমার্ধে দারুণ খেলা গোলরক্ষক মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ মারাত্মক ভুল করে বসেন বিরতি থেকে ফিরেই, বল তুলে দেন রাফিনিয়ার পায়ে। তবে দারুণ একটা সেভ দিয়ে তিনি শেষমেশ সে যাত্রায় রক্ষা করেন তিনিই।
এরপর অ্যালেক্স সান্দ্রোর দারুণ এক শট তার হাত ফাঁকি দেয়, প্রতিহত হয় বারপোস্টে। ব্রাজিলের অপেক্ষাটা তাই কেবল বাড়ছিলই। সে অপেক্ষাটা শেষ হয় এসে ৬২ মিনিটে। নেইমারের হারানো বলটা বক্সের ভেতর পান ভিনিসিয়াস। তার শটটা ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ, তবে রিচার্লিসনের ফিরতি শটটা আর ফেরাতে পারেননি। ম্যাচের প্রথম এক ঘণ্টায় দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে কম শট নেওয়া খেলোয়াড়টাই সোনালী এক ছোঁয়ায় ব্রাজিলকে এনে দেন স্বস্তি।
ম্যাচের ৭৩ মিনিটে আবারও রিচার্লিসনের জাদু। বাম প্রান্ত থেকে ভিনিসিয়াস বলটা বাড়ান তাকে। হেভি টাচে বলটা আয়ত্বে নেন রিচার্লিসন, তবে সেটা পুষিয়ে দিলেন পরের ছোঁয়াতে। অ্যাক্রোব্যাটিক কারিশমা দেখালেন যেন, অনেকটাই উলটে গিয়ে করলেন অবিশ্বাস্য এক শট। বলটা তাতে গিয়ে আছড়ে পড়ল সার্বিয়ার জালে। দ্বিতীয় গোলের দেখা পাওয়া ব্রাজিল পেয়ে গেল জয়ের দিশাও।
নেইমার বিশ্বকাপ খেলবে: ব্রাজিল কোচ
এবার রিচার্লিসনের ম্যাজিকে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সহজ জয় দিয়ে শুরু করেছে ব্রাজিল। তবে স্বস্তির মাঝে অস্বস্তির খবর গোড়ালির ইনজুরিতে পড়েছেন তাদের অন্যতম স্তম্ভ নেইমার। ম্যাচের ৮০ মিনিটে বাধ্য হয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। কারণ ডান পায়ের গোড়ালিতে পেয়েছেন ব্যথা।
এদিকে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে তাকে একাধিকবার সার্বিয়ান ফুটবলারদের ট্র্যাকলের শিকার হতে হয়েছে। গোটা ম্যাচে মোট ৯ বার! এর মধ্যে নিকোলা মিলানকোভিচের ট্যাকলটি ছিল সবচেয়ে সর্বনাশা। মাঠ ছাড়ার সময় দেখা যায় অনেকটাই বিষণ্ন নেইমার।
এ সময় চোখে ছিলো পানি। এরপর ম্যাচ শেষে বিভিন্ন ফুটেজে দেখা যায় তার ডান পায়ের গোড়ালি ফুলে গেছে। তবে কি শঙ্কায় নেইমারের পরের ম্যাচ খেলা? আশার আলোয় কিন্তু দেখালেন সেলেসাও কোচ তিতে।
এদিকে ম্যাচ পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিল বস জানালেন, নেইমারের ইনজুরি যতটা খারাপ দেখাচ্ছে ততটা নয়। দ্রুতই সেরে উঠবেন নেইমার, বিশ্বকাপেও খেলবেন। নেইমারকে অশ্রুসজল দেখে দুশ্চিন্তায় পড়া ভক্তরা কিন্তু তিতের কথা থেকে আশাবাদী হতেই পারেন।
টানা ৮৪ বছর ধরে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হারেনা ব্রাজিল
এবার কাতারে সার্বিয়ার বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলো ব্রাজিল। আর এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে ইতিহাস থেকে সুখস্মৃতিই খুঁজে পেল তিতের দল। গত ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিল ব্রাজিল। সেবার তারা হেরে গিয়েছিল প্রথম ম্যাচ, পরের আসরেও ঘটে একই ঘটনা। এরপর ৮৮ বছরে আর কখনোই বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ হারেনি তারা।
এর মধ্যে ১৯ ম্যাচে অপরাজিত থেকেছে তারা, হেরেছে দুইটিতে। প্রথম বিশ্বকাপে তারা যুগোস্লোভিয়ার কাছে হারে ২-১ গোলে হারে। পরের আসরে ইতালির কাছে হারতে হয় ২-১ গোলে। বিশ্বকাপজয়ী পাঁচ টুর্নামেন্টের সবগুলোতেই প্রথম ম্যাচ জিতেছে সেলেসাওরা। নিজের খেলা তিন বিশ্বকাপের সবগুলোতেই প্রথম ম্যাচে গোল করেছেন পেলে।
বিশ্বকাপে ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচের ফল-
১৯৩০- ব্রাজিল ১-২ যুগোস্লাভিয়া
১৯৩৪- ব্রাজিল ১-৩ স্পেন
১৯৩৮ – ব্রাজিল ৬-৫ পোল্যান্ড
১৯৫০- ব্রাজিল ৪-০ মেক্সিকো
১৯৫৪- ব্রাজিল ৫-০ মেক্সিকো
১৯৫৮- ব্রাজিল ৩-০ অস্ট্রিয়া
১৯৬২- ব্রাজিল ২-০ মেক্সিকো
১৯৬৬- ব্রাজিল ২-০ বুলগেরিয়া
১৯৭০- ব্রাজিল ৩-১ চুকোস্লাভিয়া
১৯৭৪- ব্রাজিল ০-০ যুগোস্লাভিয়া
১৯৭৮- ব্রাজিল ১-১ সুইডেন
১৯৮২- ব্রাজিল ২-১ সোভিয়েত ইউনিয়ন
১৯৮৬- ব্রাজিল ১-০ স্পেন
১৯৯০- ব্রাজিল ২-১ সুইডেন
১৯৯৪- ব্রাজিল ২-০ রাশিয়া
১৯৯৮- ব্রাজিল ২-১ স্কটল্যান্ড
২০০২- ব্রাজিল ২-১ তুর্কি
২০০৬- ব্রাজিল ১-০ ক্রোয়েশিয়া
২০১০- ব্রাজিল ২-১ উত্তর কোরিয়া
২০১৪- ব্রাজিল ৩-১ ক্রোয়েশিয়া
২০১৮- ব্রাজিল ১-১ সুইজারল্যান্ড
২০২২- ব্রাজিল ২-০ সার্বিয়া
মোট- ২০ জয়, তিন ড্র ও দুই হার। গোল করেছে- ৪৯টি, প্রতিপক্ষ গোল দিয়েছে ১৯টি।
কাতার বিশ্বকাপ জিতবে কে, ভবিষ্যৎ বাণী করলো গরু
এবার ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা আর জার্মানির পতাকায় মোড়ানো তিনটি ড্রাম। ওপরে রাখা ঘাস। গরু যে দেশের পতাকা মোড়ানো ড্রামের ঘাস খাবে, সেই দেশই হবে এবারের কাতার বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন! পশু দিয়ে এমন ভবিষ্যৎ বাণীর আয়োজন করে কুষ্টিয়ার একদল ফুটবলপ্রেমী। মজার এই কাণ্ড দেখতে ভিড় জমান অনেকে।
এদিকে বিশ্বকাপ এলে কে চ্যাম্পিয়ন হবে তা নিয়ে চলে নানা ভবিষ্যৎ বাণী। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পশু-পাখিও অংশ নেয়। কুষ্টিয়াতে কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে ভবিষ্যৎ বাণী করলো একটি গরু। জেলার আড়ুয়াপাড়া তরুণ সংঘ পাঠাগার ও ক্লাব মাঠে এই আয়োজনে অংশ নেন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও জার্মান সমর্থকরা।
তিন দলের পতাকা মোড়ানো ড্রামের ওপর রাখা হয় কাঁচা ঘাস। নিয়ে আসা হয় একটি গরু। শর্ত, গরুটি যে ড্রাম থেকে ঘাস খাবে সে দলই হবে বিজয়ী! গরুটি ঘাস খায় ব্রাজিলের ড্রাম থেকে। প্রিয় দল বিজয়ী হবে এই অনুমানে উল্লাসে ফেটে পড়েন ব্রাজিল সমর্থকরা।
তবে গরুর এই ভবিষ্যৎ বাণী মেনে নিতে পারছে না আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। সব অনুমান সঠিক হয় না এমন দাবি করেন তারা। তারা জানান, আমরা হার দিয়ে শুরু করেছি মানে এই নয় যে, আমরা তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাবো। ইনশাআল্লাহ আমরা কামব্যাক করবো।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন দেখতে জড়ো হন অনেকে। ফুটবল বিশ্বকাপ এলে এমন নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে বেড়ান সমর্থকরা।