৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প হয়ে গেল ১৩৬ কোটি টাকা!

নড়াইলের কালিয়া বারইপাড়া ব্রীজ ১ বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫ বছরেও হয়নি শেষ। জন-ভোগান্তি শেষ হয়েও হচ্ছেনা শেষ। নদী বেষ্টিক জেলা নড়াইলের যোগাযোগের প্রধানতম অন্তরায় সরাসরি নৌ পারাপার। খরস্রোতা নবগংগা নদী উপজেলা জেলা সদর কে দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছে উত্তর দক্ষিণে। নদীর উত্তরে ৮টি ও দক্ষিণে ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভা নিয়ে কালিয়া এই উপজেলা। দীর্ঘ দিনের গনদাবীতে নবগংগার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নিরবিচ্ছন্ন করার লক্ষে জেলার কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর বারইপাড়া নামক স্থানে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

নির্মাণাধীন সেতুর কাজ গত ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শেষ করতে সক্ষম হয়নি। আর এই দীর্ঘসূত্রিতায় সেতুর সুবিধা থেকে বঞ্চিত দুই পারের হাজারো জনগণ। কর্তৃপক্ষ বলছে নকশায় ত্রুটি ধরা পড়ায় কাজ স্থগিত রয়েছে। নতুন করে নকশা করে পাঠানো হয়েছে বরাদ্দ পেলে কাজ পুনরায় শুরু হরে।

এ উপজেলায় প্রায় ২৩১টি গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। বিশেষ করে জেলা সদরের সঙ্গে কালিয়া উপজেলার সরাসরি যোগাযোগের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। কালিয়া উপজেলাকে নড়াইল জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এই নদী। জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় উপজেলার মানুষদের। সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য কালিয়ার বারইপাড়া ঘাটে একটি সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বারইপাড়া ঘাট দিয়ে নদী পার হয়ে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালে বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াত করে থাকেন।

যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো শিল্প-কলকারখানা। এলাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য শহরে আনতে চরম দুর্ভোগে পড়েন। এছাড়া এলাকায় মারামারি ঘটনা ঘটলে পুলিশ যথাসময়ে ঘটনাস্থলে আসতে পারে না, আগুন লাগলে দমকল বাহিনী ও জরুরী রোগী পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত পৌঁছাতে পারে না। ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। সেতুটি নির্মাণে শুরু হলে যারা সবচেয়ে খুশি হয়েছিল, তারাই এখন সবচেয়ে বেশী হতাশ। অভিযোগ জনপ্রতিনিধিরা সহ সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির সুর তাদের কণ্ঠে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায় ৬৫১.৮৩ মিটার দীর্ঘ ও ১০.২৫ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৬৮ কেটি টাকা। ১৮ মার্চ ২০১৮ সালে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ০১ জুলাই ২০১৯ তারিখে। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়েও এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে মাত্র ৬০ ভাগ।

আর এ বছরের মার্চ থেকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে। এলাকাবাসীর দাবী সংশ্লিষ্টরা দ্রুত এ সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে জেলার দক্ষিণের মানুষের বিভাগীয় শহর খুলনা জেলা সদর সহ রাজধানীর যোগাযোগ নিরবিচ্ছন্ন করতে সহযোগীতা করবে। আর উন্নয়নের মূল ধারায় সংযুক্ত হবে পিছিয়ে পড়া জনপদ নড়াইল।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আতিকুল্লা জানান, নড়াইল-কালিয়া সড়কে নবগঙ্গা নদীর ওপর বারইপাড়া সেতু নির্মাণের কাজ শুরুর পরই কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে, নদীটিতে নৌচলাচলের জন্য কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয় নির্মাণ কাজ সাথে অবাধে নৌচলাচলের ক্ষেত্রে নকশায় ত্রুটি ধরা পড়ে। নকশার ত্রুটি সংশোধন করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতনেরা এসে পরিদর্শন করে অনুমোদনও অর্থ বরাদ্দ দিলে কাজ পুনরায় শুরু হবে। আর সে ক্ষেত্রে ব্যয়ও প্রায় ২ গুনে বেড়ে দাঁড়াবে। সেতু নির্মাণের জন্য এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।

নড়াইল- ০১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি বলেন, আমাদের কালিয়ার মানুষের অনেক আশা স্বপ্ন ছিল নবগঙ্গা নদীর উপর ব্রীজ। সেটাকে অনুধাবন করে সরকারের সদিচ্ছা,আমাদের ঐকান্তিক চেষ্টায় কারণে এই ব্রীজটি কাজ শুরু হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য যারা নির্বাহী, কাজগুলো বাস্তবায়নের সাথে জড়িত, যারা ডিজাইনের সাথে জড়িত এদের ত্রুটির কারণে এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছে আমাদের একটা হতাশা তৈরী হয়েছে। তারপরেও কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করে এই সরকারে মেয়াদেই সেতুটির কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা করেন।

About admin

Check Also

মেয়ের সঙ্গে ঈদ করা হলো না বাবার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আবু জাহের। দীর্ঘ চার বছর পর বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে ফিরেছেন। দেশে …