পুড়ে মারা যাওয়া সেই ঘুমন্ত কিশোরী ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো

লক্ষ্মীপুরে বসতঘরে অগ্নিকাণ্ডে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা যাওয়া কিশোরী আনিকা (১৭) তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল বলে জানা গেছে। ৮ মাস আগে একই গ্রামের চা দোকানদার মো. রতনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সে স্থানীয় গোপালপুর দারিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। কয়েক দিন আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে সে। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন তার মা জোৎস্না বেগম (৪০) ও ছোট ভাই রোকন মাহমুদ রুপম (৯)। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাদের শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

বুধবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে কিশোরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিস (স্টেশন অফিসার) রণজিৎ কুমার সাহা। এদিকে খবর পেয়ে বুধবার (১২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৬০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা করেন জেলা প্রশাসক।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। দগ্ধ দুইজনকে প্রথমে সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় পাঠানো হয়। মৃত আনিকা ৩ মাসের গর্ভবতী ছিলজ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাত ১টার দিকে হঠাৎ করে উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের গোপালপুর পূর্ব মাগুরি গ্রামের সৌদি প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের ঘরে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এ সময় ঘরে ঘুমিয়ে ছিল আনিকা আক্তার, তার মা ও ভাই রুপম। আগুন লাগার পর জোৎস্না ও রুপম আঁচ করতে পেরে চিৎকার চেঁচামেচি করে।

এছাড়া নিহত আনিকার ফুফু শেফালী বেগম বলেন, ঘরে আমার ভাবী, ভাগনে রিফাত হোসেন (২০), রুপম ও ভাগনি আনিকা ঘুমিয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডের পর তিনজন বের হতে পারলেও আনিকা ঘুমিয়ে থাকায় ঘরেই পুড়ে মারা গেছে। তার সঙ্গে গর্ভের সন্তানটিও মারা গেল। আনিকার চাচা কামাল হোসেন বলেন, সবার সহযোগিতায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আগুন নেভানোর পর আনিকার পোড়া কঙ্কাল পাওয়া যায়। আমার ভাবী ও ভাতিজা রুপমকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রণজিৎ কুমার সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আমরা যাওয়ার আগেই সব কিছু পুড়ে গেছে। স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত হয়েছে। আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার জয়নাল আবেদিন বলেন, হাসপাতালে দগ্ধ দুইজনকে আনা হয়েছিল। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাৎক্ষণিক শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, আগুন লাগার ঘটনার তদন্ত চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন লাগার রহস্য উদঘাটন করা হবে।

মাকে বাঁচাতে চলন্ত লঞ্চ থেকে ঝাঁপ, মা ফিরলেও ছেলে হলেন লাশ

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মাকে বাঁচাতে চলন্ত লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে নিখোঁজ নাইম হোসেনের(২১) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার হোসেন্দি এলাকার মেঘনা নদী থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।

নিহত নাইম শরিয়তপুরের সুখীপুর থানার আক্তার হোসেনের ছেলে। এর আগে গত সোমবার (৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে গজারিয়ায় চলন্ত লঞ্চ থেকে মা-ছেলে নদীতে ঝাঁপ দেন।গজারিয়া নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মো. ইজাজ জানান, দুপুরে নদীতে এক যুবকে মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা খবর দিলে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে শরিয়তপুর থেকে এম বাইজিদ জুনাইদ-১ লঞ্চ মুন্সিগঞ্জের চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় পৌঁছালে জামিরুন বেগম ও ছেলে নাঈম হোসেনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে জামিরুন রাগ করে লঞ্চ থেকে নদীতে লাফিয়ে পাড়েন। এসময় মাকে বাচাঁতে ছেলে নাইমও নদীতে লাফিয়ে পড়েন। পরে মা জীবিত অবস্থায় তীরে আসতে পারলেও ছেলে সাঁতার না জানায় তলিয়ে যান।

About admin

Check Also

মেয়ের সঙ্গে ঈদ করা হলো না বাবার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আবু জাহের। দীর্ঘ চার বছর পর বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে ফিরেছেন। দেশে …