সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেছেন, পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু হাত দিয়ে খোলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জেনেছি, এত বড় একটা স্থাপনার নাট-বল্টু হাত দিয়ে খোলা যাবে না। এতে বোঝা যায় নাট-বল্টু হাতে দিয়ে খোলা হয়নি, নাট-বল্টু খোলার জন্য সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। আজ সোমবার (২৭ জুন) মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার বায়োজিদ তালহার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। বায়োজিদ অন্তর্ঘাতমূলক একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা ছিল পরিকল্পিত। তার সঙ্গে এ ঘটনায় আরও দুই জন ছিল। যারা একটি প্রাইভেট কারে করে ঘটনার দিন পদ্মা সেতুতে যায়। অপরজনকে গ্রেপ্তারে সিআইডি গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে।
এর আগে রবিবার (২৬ জুন) ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, সেতুর রেলিংয়ের দুটি নাট হাত দিয়েই খুলে ফেলেন বায়েজিদ। খোলা নাট হাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু আমাদের…পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মাসেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে। সএ সময় পাশে থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ভাইরাল কইরা ফালায়েন না। ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। পরে সিআইডি বায়েজিদকে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে আটক করে।
কঠোর অবস্থানে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ করা হয় আজ সকাল ৬টা থেকে। এরপরেও সকালে কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে আসলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সেতু পারাপারের নিয়ম মানাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন ও সেতু কর্তৃপক্ষ। কেউ যাতে গাড়ি থেকে সেতুতে না নামে ও ছবি না তোলে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, আজ সোমবার (২৭ জুন) সকাল থেকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে কোনও যানবাহনের জট নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি টোল দিয়ে সেতু পার হচ্ছে। তবে সকালে পদ্মা সেতু পার হতে না দেওয়ায় কয়েকজন মোটরসাইকেলচালক টোল প্লাজায় জড়ো হয়। রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে সাগর বলেন, আমি সকাল ১০টায় আসি। সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে দিচ্ছে না। এরপর ফেরিঘাটে যাই। সেখানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও ফেরি না পেয়ে আবারও পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় আসি।
আরেকজন মোটরসাইকেলচালক আসিক হোসেন বলেন, আমার মা অসুস্থ। আমাকে বাড়ি যেতে হবে। কয়েকজনের অপরাধের কারণে লাখ লাখ মোটরসাইকেলচালককে মাশুল দিতে হবে, এটা হতে পারে না। যারা অন্যায় করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। এদিকে পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে কৌশলে কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে সেতু পার হতে দেখা গেছে। একটি পিকআপে সাত-আটজন যুবক কয়েকটি বাইক নিয়ে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার সামনে অপেক্ষা করছেন। এ সময় তাদের ভাড়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, সেতু পার করাতে প্রতিটি বাইকে গুনতে হয়েছে ৪০০ টাকা করে।
মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজার ইনচার্জ ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সকালে কয়েকজন মোটরসাইকেলচালক সেতু পার হওয়ার জন্য টোল প্লাজায় আসেন। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আজ থেকে সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই আমরা তাদের টোল প্লাজা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছি। সকালে কিছু চাপ থাকলেও এখন যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। পিকআপ ভ্যানে মোটরসাইকেল পারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পিকআপে মোটরসাইকেল পার হওয়ার কোনও দৃশ্য আমাদের চোখে পড়েনি। দেখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লৌহজং এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, মোটরসাইকেল পার হতে দেওয়া যাচ্ছে না। শিমুলিয়া ফেরিঘাট থেকে একটি ফেরি কুঞ্জলতা প্রায় দুই শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হয়েছে। তিনি বলেন, সেতু এলাকায় মাইকিং করছে প্রশাসন। সেতুতে কোনোরকম মোটরসাইকেল ও মাঝ সেতুতে কেউ নামলে বা ছবি তুললে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (২৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি টোল দিয়ে সেতু পার হন। রবিবার ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল শুরু হয়। পরে রাতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে।