স্ত্রী ও বিভিন্ন মেয়েদের নাম দিয়ে খোলা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করতেন নাসিমার স্বামী টুটুল। এরপর মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের টার্গেট করে নারী পরিচয়ে কথা বলা শুরু হয়। ফেলা হয় প্রেমের ফাঁদে। একপর্যায়ে ভিডিও কলে স্ত্রীকে ব্যবহার করে কথা বলানো হয় ফাঁদে ফেলা ব্যক্তিদের সঙ্গে। একান্তে সময় কাটাতে ডেকে আনা হয় বাসায়। এরপরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সেই ব্যক্তিকে বাসায় এনে আপত্তিকর অবস্থায় ফেলে ব্ল্যাকমেইল করতেন স্বামী টুটুল ও তার দুই সহযোগী।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে তারা এমন প্রতারণায় জড়িত। রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় বসবাস টুটুল-নাসিমা দম্পতির। নাসিমা ফেসবুকে আইডি খুলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের। এরপর সেই ব্যক্তির সঙ্গে মেসেঞ্জারে আলাপের পর ভিডিও কলে কথা বলতেন নাসিমা। এরপর প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে আনতেন। নিজের বেডরুমে নিয়ে জড়াতেন আপত্তিকর অবস্থায়। তখনই পরিকল্পনামাফিক হাজির হতেন তার স্বামী টুটুল ও আরও কয়েকজন যুবক। নিজেদের পরিচয় দিতেন পুলিশ বা সাংবাদিক হিসেবে। ধারণ করে রাখা হতো ভিডিও। এরপর ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেওয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা।
ব্ল্যাকমেইল করার কৌশল বর্ণনা করে টুটুল পুলিশকে জানান, কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে আসার পর আমরা তাকে বলতাম, এটা কি আপনি ভালো কাজ করেছেন নাকি খারাপ? আপনার বাসা কোথায়। তখন তিনি বলতেন, খারাপ কাজ হয়েছে। অন্যায় হয়েছে। তিনি স্বীকার করে আমাদের কাছে মাফ চাইতেন। আমরা বলতাম, আপনি যে এই খারাপ কাজ করতে আসছেন, আপনার বাসায় এটা আমরা বলে দেব। এরপর তিনি বলতেন, আমার মানইজ্জত নষ্ট না করতে কিছু টাকা দিত এবং আমরা এটা নিতাম।
সম্প্রতি এভাবেই ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন নৌবাহিনীর সাবেক এক কর্মকর্তা। তাকে দিতে হয় ৫ লাখ টাকার বেশি। ভুক্তভোগী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তারা আমাকে বলে ১০ লাখ টাকা দিতে পারলে আমাকে সসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হবে। তা না করলে মিডিয়া আসবে, এলাকার লোকজন আসবে, বিশ্রি একটা অবস্থা হবে। পুলিশ জানায়, এ চক্রের মূল টার্গেট মধ্যবয়সী পুরুষরা। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তারা ফাঁসিয়েছেন বহু মানুষকে।
গুলশান গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আসামিরা এই কুকর্মের জন্য স্ত্রী-বোনদের ব্যবহার করেন। অন্যদিকে ভুক্তভোগীরাও পরিবার পরিজন রেখে একটা বাড়তি প্লেজারের জন্য অন্যদের খুঁজে বেড়ান। আমরা অনুরোধ জানাব, ফেসবুকে, মেসেঞ্জারে দুই দিনের প্রেমে পড়ে দুই দিনের পরিচয়ে প্লেজারের অনুসন্ধানে যেতে গেলে একটা পর্যায়ে আপনাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হতে হবে। মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই এই চক্রগুলো প্রতারণার সুযোগ পাচ্ছে।