কোরআনে কারিমের হাফেজ ৮ বছরের মেয়ে- পবিত্র কোরআনে কারিম মুসলমানদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। ইসলামি ইতিহাস অনুসারে, আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে ধীরে ধীরে রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট অবতীর্ণ হয় পবিত্র কোরআন। পবিত্র কোরআন মুসলমানের সংবিধান। একজন মুসলমান হিসেবে তাই আমাদের কোরআন পড়া উচিত, কোরআন বুঝা উচিত, কোরআনের বিধানমতে জীবন পরিচালনা উচিত। যুগ যুগ ধরে বহু মানুষ কোরআন নিয়ে গবেষণা করেছেন, কোরআনের সেবা করেছেন, কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন, মানুষকে কোরআন শিখিয়েছেন, অনেকেই শিখছেন।
পবিত্র কোরআনের খেদমতের এসব কাজের ধারাবিকতায় এবার পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া ৮ বছরের এক শিশু মাত্র ৪ মাসে পুরো কোরআন মজিদ হেফজ (মুখস্ত) করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। পেশোয়া নামুস, পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া ৮ বছরের মেয়ে। এই ছোট্ট বয়সে মাত্র ৪ মাসে পুরো কোরআন শরিফ মুখস্ত করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। কোরআন শরিফ হেফজের মাধ্যমে পেশোয়া তার সহপাঠীদের কোরআন মুখস্তের রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে।
কীভাবে এত কম সময়ে পেশোয়া পুরো কোরআন মুখস্থ করেছে তা উঠে এসেছে তার মায়ের এক সাক্ষাতকারে।
সম্প্রতি পাকিস্তানের একটি বেসরকারি টেলিভিশন তার মায়ের একটি সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়েছে। ওই সাক্ষাতকারে পেশোয়ার আম্মা বলেন, ‘পেশোয়া নামুস একনিষ্ঠভাবে কোরআনের সবক মুখস্ত করতে বসলে ঘরের দরজা বন্ধ করে পড়তে বসতো।
যতক্ষণ তার সবক মুখস্ত না হতো, ততক্ষণ সে দরজা খুলতো না, কারো সঙ্গে কথা বলতো না- এমনকি খাবারও খেতো না সে।’
পেশোয়ার মা আরও জানান, আল্লাহতায়ালার একান্ত রহমতে খুব অল্পসময়ে পেশোয়া পবিত্র কোরআন মুখস্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ও সারাক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে বিচলিত থাকতো। তাকে আমরা বারণ করতাম, সান্তনা ও সাহস দিতাম। কিন্তু ও এসব শুনতে চাইতো না। এক রাতে ৩টার সময় ঘুম থেকে উঠে দেখি পেশোয়া জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করছে। এ থেকে বুঝা যায়, দ্রুত পুরো কোরআন হেফজের বিষয়ে পেশোয়ার প্রতি আল্লাহতায়ালার বিশেষ রহমত কাজ করেছে। না হলে এই বয়সি মেয়ের মাঝে এই অনুভূতি আসে কোথা থেকে?
সাক্ষাতকারে পেশোয়া বলেন, আমার এক সহপাঠী ৫ মাসে কোরআন মুখস্থ করেছে। আমি চেয়েছি ওর চেয়ে কম সময়ে কোরআন মুখস্থ করতে। সত্যি কথা কথা বলতে কী, আমি ওকে হারাতে চেয়েছি। আল্লাহতায়ালা আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি খুশি, অনেক খুশি।
পেশোয়া নামুস তার ১৭ জন সহপাঠীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সবার আগে পুরো কোরআন মুখস্থ করেছে। পেশোয়ার বড় দুই বোনও পবিত্র কোরআনের হাফেজ। পেশোয়া নামুস বড় হয়ে বিচারক হতে চায়।
আজাহারী মাজহারি জামায়াতের প্রোডাক্ট, মিথ্যা-আজেবাজে কথা বলে- ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ধর্মীয় বক্তা মিজানুর রহমান আজাহারীকে জামায়তের প্রোডাক্ট বলে মন্তব্য করেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ।
সারাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর গুণগান ও ইসলামের ব্যাখা প্রসঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই আমাদের নজরে এসেছে।
আজহারি মাজহারি এগুলো কিন্তু জামাতের সৃষ্টি। এরা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে জামাতের কথাই বলে। এদের বাল্যকাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সেই শিক্ষা-দীক্ষাই দিয়েছে জামাত।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্মাণাধীন জামালপুর জেলায় তিনটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে কতিপয় বক্তাদের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জামাতের টাকা-পয়সায় তারা শিক্ষিত হয়ে এই মুহূর্তে প্রকাশ্যেই তারা জামাতের কথা বলতো। কিন্তু প্রকাশ্যে জামাতের কথা বলার রাজনৈতিক সুযোগ নাই বিধায় তারা খুব সূক্ষ্মভাবে যেসব কথাবার্তা বলে, আর যেসব ওয়াজ করে, হাদিস কোরআন সম্পর্কে যে সমস্ত ব্যাখ্যা দেয়, তার একটাও সত্য না।
একটাও সত্য না বলাটা হয়তো একটু বেশিই হয়ে গেল। কিন্তু অধিকাংশই মি’থ্যা’র আশ্রয় নিয়ে তারা কিন্তু আজে বাজে কথাবার্তা বলে থাকে।’
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এসব কর্মকাণ্ড আমাকে খুবই ব্যথিত করে। আমি মনে করি ধর্ম মন্ত্রণালয় এই মুহূর্তে এগুলো যদি বন্ধে কিছু করতে না পারে তাহলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থাকার কোনো প্রয়োজন নাই। কাজেই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছি।
প্রধানমন্ত্রীকেও এবং সরকার ও আমাদের সকল নেতৃবৃন্দকেও বিষয়টি অবহিত করে এই অপ’তৎ’প’র’তা বন্ধ করা হবে। তারা অনেক কৌশলে চলতেছে। এই কৌশলটা আমাদের ধরতে হবে। তাদের এই কর্মকাণ্ডকে চিরদিনের জন্য এই বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।’
ধর্মের নামে মানুষকে বি’ভ্রা’ন্ত করার জন্য তারা যেন কোনো এলাকাতেই ঢুকতে না পারে সেই দিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
ধর্ম প্র’তি’ম’ন্ত্রী জামালপুর শহরে প্রায় ১৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প এলাকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘একই জায়গায় ৭০ বছরের পুরনো মসজিদ ছিল। সেই মসজিদটিই মডেল মসজিদে রূপান্ততি হচ্ছে।
পাশাপাশি একই পাশে ৩০০ বছরের পুরনো একটা মন্দির এমনভাবে চলছে, কেউ কারো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে নাই। কোনো গোলমাল নাই। এখানে এসে দেখলাম সুন্দর সা’ম্প্র’দা’য়ি’ক সম্প্রীতিই বাস্তবায়িত হয়েছে। সারা পৃথিবীতে এমন কোনো নজির সৃষ্টি হয়নি।’
হজ প্রসঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রনীতির সফলতাকে কাজে লাগিয়ে গত বছর হাজিদের জন্য খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেসনের ব্যবস্থা করা হয়। তারা যে কত খুশি হয়েছেন। মাত্র দুই-তিনমিনিটের মধ্যে তাদের ইমিগ্রেসন হয়ে গেছে। গত বছরের চাইতে এবার আরো অধিকতর ভালোভাবে হজে পাঠানোর প্রস্তুতি রয়েছে।
এ বছর আরো ১০ হাজার হাজির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আরো অনেক অসুবিধা দূর করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে সরকার। বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে শুনি অনেক গোলমাল হয়ে থাকে।’
তাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় খুব সুন্দরভাবে হজ পালনে উদ্ধুব্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসন ও মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে সবাইকে জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
পরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জামালপুর পৌরসভার দেউরপাড় চন্দ্রা এলাকায় নির্মাণাধীন জামালপুর সদর মডেল মসজিদ ও মেলান্দহ উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। এছাড়াও তিনি বিকেলে মেলান্দহ উপজেলায় জামিয়া হুসাইনিয়া আরাবিয়া মাদরাসার ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত ইসলামি মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
এর আগে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সকালে ঢাকা থেকে আন্ত:নগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে জামালপুর সফরে আসেন। জামালপুর সার্কিট হাউজে রাত্রিযাপন করে কাল বুধবার ভোরে আন্ত:নগর ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।