আমের মুকুল ও কুড়ি ঝরা রোধে করণীয়

আম বাংলাদেশের অর্থকরী ফল। বাংলাদেশের ফলের রাজা বলা হয়ে থাকে আমকে। আম একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। সাধারণত মার্চ মাসের দিকে আম গাছে মুকুল আসা শুরু করে। মুকুলে অনেক পরিমাণে ফুল থাকে। আসুন জেনে নিই আমের মুকুল ও কুড়ি ঝরা রোধে করণীয়:-

আমরা অনেক সময় ভাবি আমদের গাছে অনেক মুকুল আসছে কিন্ত তবুও কেন ফুলগুলো ঝরে পরে যাচ্ছে, এই সমস্ত কথা অনেক আম চাষিই বলে থাকে। আম গাছের একটা ডালে অনেকগুলা ফুল থাকে, যদি ওই একটা ডাল থেকে একটা ফল ও হয় তাহলে একে বাম্পার ফলন বলা হবে। কিন্তু এই বাম্পার ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।

তারপরও অনেক সময় পত্রিকার পাতায় দেখা যায় বৃষ্টি বা ঝড়ের জন্য আমের মুকুল ঝরে পড়ছে। যেখানে আমের বাম্পার ফলন হওয়ার কথা সেখানে আম ঝড়ে পরছে অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির জন্য অথবা পরিচর্যার অভাবে। তাহলে এই মুকুল ঝড়া প্রতিরোধ করা কতটা জরুরী। এর জন্য সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। তার আগে জেনে নিই আমের মুকুল কি এবং মুকুল ঝড়ে পরার কারন কি?

আমের মুকুল ঝরে পড়ার কারণ:

মূলত আমের ফুলগুলোকে একত্রে আমের মুকুল বলা হয়ে থাকে। আমের মুকুলের মধ্যে হাজার হাজার ফুল থাকে। পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল একসাথেই থাকে। এই মুকুল থেকেই আমের গুটি আসা শুরু করে। এই মুকুল থেকে আমের গুঁটি জন্মায়।

(১) হপার পোকার আক্রমণ মুকুল ঝড়ে পরার একটি অন্যতম কারন। একটা হপার পোকা প্রায় ১৫০টা ডিম পাড়তে পারে। এই ডিম গুলা পরে ৫-৭ দিনের মাথায় ডিম ফুটে নিম্ফ হয় এবং এই ডিম গুলো পরে আম গাছের পাতা, ফুল, ফলের রস শুষে খায় তখন এক ধরণের রস নিঃসরণ করে যাকে ”হানি ডিউ” বলে। এই আঠালো একটা পদার্থের জন্য আম গাছে শুটি মোল্ড নামে এক ধরণের ছত্রাক জন্মায় ফলে সম্পূর্ণ গাছের পাতা, মুকুল কালো হয়ে যায়। তখন বলা হয় মহালাগা।

ভিডিওতে আরও দেখুন আমের মুকুল/গুটি ঝরা বন্ধ করতে-বোরিক এসিড,ইউরিয়া ও পানি ট্রিট্মেন্ট

(২) অ্যানথ্রাকনোজ রোগ আমের মুকুলে হয়ে থাকে। এটি কোলিটোট্রিকাম গোলেসপোরিওডিস (Colletotrichum gloeosporioides) নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। এই রোগের ফলেও আমের মুকুল ঝড়ে পড়ে।

(৩) পাউডারী মিলডিউ ওডিয়াম মেংগিফেরা (Oidium mangiferae) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের কারণে আক্রান্ত অংশে সাদা পাউডারে আমের মুকুল ঢেকে যায় ও আমের মুকুল ঝড়ে যায়। এখন আমাদের যেই বিষয়টা লক্ষ্য রাখতে হবে আমের মুকুল আসা ও ফল ধরার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

(৪) প্রাকৃতিক কারণ যেমন বৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, শিলা বৃষ্টির জন্য মুকুল ঝড়ে পরে।

(৫) মাটিতে রসের অভাব হলে আমের মুকুল ঝড়ে পরে যায়।

আমের মুকুল ঝড়ে পরা রোধে করণীয়:

(১) আমবাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আগাছামুক্ত ও খোলামেলা অবস্থায় রাখতে হবে । মরা ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত ডাল, পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

(২) শীতের পর গরম শুরু হয়।এই সময়টাতে আম গাছের প্রচুর পানির প্রয়োজন পরে। তাই গাছের গোড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পায় তা লক্ষ্য রাখতে হবে।

(৩) ফুল থেকে যখন ফল মটর দানার মতো হবে তখন একটা স্প্রে করতে হবে হপার পোকা দমনের জন্য। সাধারণত মুকুল আসার আগে হপার পোকার জন্য স্প্রে করতে হয়।হপার পোকার জন্য ডায়াজিনন ৬০ ইসি বা লেবাসিড ৫০ ইসি চা চামচের ৪ চামচ ৮.৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর দুই বার স্প্রে করতে হবে। অথবা ম্যালাথিয়ন বা এমএসটি ৫৭ ইসি উপরোক্ত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।এছাড়া সাইপারমেথ্রিন১০ ইসি(সিমবাস বা রিপকর্ড)@ ২মিলি./১লি. স্প্রে করা যেতে পারে।

(৪) আমটা যখন গুটি আকার ধারণ করবে তখন ১০-২০ দিন পর পর বোরিক এসিড@৬ গ্রাম/১০ লি. পানি স্প্রে করলে আমের গুটির পরিমাণ বেড়ে যাবে।

ভিডিওতে আরও দেখুন আমের মুকুল আসার পর থেকে যা করতে হবে

(৫) সালফার জাতীয় কীটনাশক আমের গুটিতে স্প্রে করতে হবে যাতে ছত্রাক আক্রান্ত না করতে পারে।অথবা ম্যানক্রোজেন ২ গ্রাম/লি. নামক ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। ব্যাভিসটিন WP ০.২ % হারে অথবা ডাইথেন-এম ০.৩ % হারে দুই বার ফুল ধরার আগে ও পরে স্প্রে করতে হবে।

(৬) পাউডারী মিলডিউ রোগ দমনে থিয়োভিট ০.৩ % হারে ফুল ফোটার পূর্বে এক বার ও পরে দুই বার স্প্রে করতে হবে। ম্যালাথিয়ন ০.২ % হারে ফুল ফোটার পর একবার ও গুটি আসার পর ১৫ দিন পর পর দুই বার স্প্রে করতে হবে।

৭) আম যখন মারবেলের মতো ছোট ফল হবে তখন ইউরিয়া সার @২০ গ্রাম/লি. স্প্রে করতে হবে।

(৮) আম গাছের পাশে মৌমাছি পালন করতে হবে প্রাকৃতিক পরাগায়নের জন্য। এছাড়া আম বাগানে বিভিন্ন জাতের আম গাছ লাগানোর করতে হবে এবং পাশাপাশি বিভিন্ন ফুল গাছ লাগাতে হবে যাতে বিভিন্ন পোকামাকড় পরপরাগায়নে সহযোগিতা করে।
লক্ষ্য রাখতে হবে গাছে যখন ফুল ফুটে যাবে তখন কোনো প্রকার স্প্রে করা যাবে না। আম গাছে মুকুল আসার আগে স্প্রে করা যেমন জরুরি না, তেমনি মুকুল ফোটার পর স্প্রে করার জরুরি নয়। কেননা এই সময় অনেক উপকারী পোকারা পরাগায়নের জন্য আসে।

ফুল আসার আগে

আম গাছে ফুল আসার ১৫ দিন আগে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। টিএসপি ও এমপি সার ২০০-২৫০ গ্রাম করে দিতে হবে দুই-তিন বছর বয়সের গাছে। চার-পাঁচ বছর বয়সের গাছে ৩০০-৩৫০ গ্রাম। ছয়-সাত বছর বয়সের গাছে ৪০০-৫০০ গ্রাম। আট-নয় বছর বয়সের গাছে ৫০০-৮০০ গ্রাম। ১০ বছরের ঊর্ধ্বে ৮৫০ থেকে ১২০০ গ্রাম প্রতি গাছে।

ফুল ফোটার সময়

মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে পুষ্পমঞ্জরিতে পাউডারি মিলডিউ ও অ্যানত্রাকনোজ রোগের আক্রমণ হতে পারে। এতে গাছের পাতা, কচি ডগা, মুকুল ও কচি আমে কালো দাগ পড়ে। প্রতিকার হচ্ছে- মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে একবার প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ১ মিলিলিটার রিপকর্ড বা সিমবুস ১০ ইসি এবং ০.৫ মিলিলিটার টিল্ট ২৫০ ইসি একসাথে মিশিয়ে আমের মুকুল, পাতা, কাণ্ডে স্প্রে করতে হবে।

প্রাকৃতিক পরাগায়ণ

এর জন্য আম বাগানে মৌমাছি পালন, চারদিকে ফুলের গাছ রোপণ এবং বাগানে বিভিন্ন জাতের আম গাছ লাগানো প্রয়োজন। আম গাছে মুকুল আসার সময় হপার পোকা কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। এছাড়া রস চোষার সময় পোকা আঠালো পদার্থ নিঃসৃত করে। এতে ফুলে পরাগরেণু আটকে পরাগায়ণে বিঘ্ন ঘটে। এ পোকা দমনের জন্য রিপকর্ড বা সিমবুস ও টিল্ট আগের নিয়মে স্প্রে করতে হবে।

পূর্ণাঙ্গ ফুল পেতে

ত্রুটিপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ ফুল এবং বর্ধিষ্ণু ভ্রুণের পুষ্টিহীনতা দূর করার জন্য মুকুল ধরার ১৫ দিন আগে উপর্যুক্ত নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে। একই ডালে অনেক ফল ধরলে পুষ্টির জন্য ফলগুলো প্রতিযোগিতা করে বলে ফল ঝরে যায়। অতিরিক্ত ফল পাতলা করে দিতে হবে। হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থ স্প্রে করলেও আমের মুকুল ও কচি আম ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করা যায়।

গুটি বাঁধার পর

আমের মুকুল গুটি বাঁধার দুই সপ্তাহ পর ২০ পিপিএম মাত্রায় ২৪-ডি স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আমের গুটি মসুর দানার মত বড় হলে ১০ লিটার পানিতে দুই-তিন মিলিলিটার প্লানোফিক্স স্প্রে করলে ফল ঝরা বন্ধ হয়।

আম গাছের মুকুল ঝরে যাচ্ছে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

প্রতিকার: আমের মুকুল ঝরে পড়া রোধে করণীয়- রোগাক্রান্ত ডাল, পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। * এছাড়া গাছের নিচ থেকে মরা পাতা কুড়িয়ে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। * এ সময়ে গাছের গোঁড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি রাখতে হবে। * ফল মটরদানার মতো হলে হপার পোকা দমনের জন্য স্প্রে করতে হয়।

আমের কালো দাগ প্রতিরোধের উপায়

ফসল কাটার পরে সংক্রামিত উপাদানগুলি সরিয়ে ফেলুন এবং পরবর্তী বছরের জন্য রোগের ঝুঁকি কমাতে এটি ধ্বংস করুন । দাগের জন্য পাতা এবং উত্থিত কালো দাগের জন্য ফল পর্যবেক্ষণ করুন। যদি BBS উপস্থিত থাকে, তাহলে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি কপার ছত্রাকনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে প্যানিকেল বের হওয়া থেকে ফলের সেট পর্যন্ত।

আম ফল রক্ষার উপায়

ফল গাছের জাল দিয়ে আম গাছ ঢেকে দেওয়া আম উঠতে শুরু করলে সঙ্গে সঙ্গে জাল দিয়ে গাছ ঢেকে দিন। ফলের গাছের জাল শুধু পাখিদের প্রবেশে বাধা দেয় না অন্যান্য প্রাণীদেরও বাধা দেয়। আম বাড়তে শুরু করলে এটি ইনস্টল করুন এবং মৌসুমের সম্পূর্ণ পাকা আম উপভোগ করতে ফসল কাটার সময় এটি সরিয়ে ফেলুন।

অসুস্থ আম গাছের চিকিৎসা

একটি তামার ছত্রাকনাশক দিয়ে স্প্রে প্রোগ্রাম শুরু করুন । ফলের সেট থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত, আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে প্রতি 14-28 দিনে একটি তামার ছত্রাকনাশক দিয়ে অ্যানথ্রাকনোজ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিকল্প ছত্রাকনাশক নিবন্ধিত করুন। শুষ্ক মৌসুমে কম স্প্রে প্রয়োজন হয়, সময় ও কীটনাশক সাশ্রয় হয়।

আমের অ্যানথ্রাকনোজ রোগের চিকিৎসা

Post-harvest treatments are available for control of anthracnose in mango fruit. Prochloraz একটি ঠান্ডা অ-পুনঃপ্রবর্তনকারী স্প্রে হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ফলের মাছি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত গরম পানির ডিপ অ্যানথ্রাকনোজ এবং কাণ্ডের শেষ পচন নিয়ন্ত্রণ করবে।

আম ঝরে পড়ার জন্য দায়ী কোনটি?

মাটিতে রসের অভাব: মাটিতে রসের অভাব হলেও আমের গুটি ঝরে যায়। আমের বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটিতে রসের অভাব দেখা দেয়। মাটিতে রসের অভাব হলে আমের বোঁটায় তাড়াতাড়ি নির্মোচন স্তর গঠিত হয়। ফলে আমের গুটি ঝরে যায়।

আমের ফুল ফোটার জন্য কোন ঔষধ ভালো

সংসার সবুজ আম রক্ষাকারী , অবিলম্বে আম গাছ থেকে আম এবং আমের ফুলের প্রাথমিক পর্যায়ে পড়া বন্ধ করে দেয় (500 মিলি)

আম পাতার ঔষধ

আমের পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের সংক্রমণ যেমন স্টাফ ইনফেকশন এবং ত্বক পোড়ার চিকিৎসায় সাহায্য করে। আমের পাতায় প্রয়োজনীয় গুণাবলী এবং পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা ত্বকের পোড়া এবং স্ক্যাল্ডস সারাতে সাহায্য করে। আমের পাতায় উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিন পোড়া থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দেয়।

আমের খোসা দিয়ে কি করা যায়

সেই আমের চামড়া ফেলে দেবেন না-আপনি তৈরি করতে পারেন আমের ত্বকের শরবত ! আমের স্কিনগুলি 100% ভোজ্য, এবং সম্পূর্ণরূপে সুস্বাদু না হলেও, তারা নিশ্চিতভাবে একটি সুস্বাদু সিরাপ তৈরি করে! অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং ভিটামিনে ভরপুর, সমস্ত আমের অবশিষ্ট স্কিনগুলি এখনও প্রচুর স্বাদে ভরপুর!

আরও দেখুন: আমের মুকুল ঝরা,আমের মুকুল,আমের গুটি ঝরা,আমের মুকুল ঝরা রোধ করতে কী করবেন,আমের মুকুল আর ঝরবে না,আমের মুকুল ঝরা রোধে করণীয়,আমের মুকুলের পরিচর্যা,আমের মুকুল ঝরা রোধে করনীয়,আমের মুকুল ঝরা রোধে করণীয়,আমের মুকুলের ঔষধ,মুকুল ঝরা রোধে করণীয়,আমের গুটি ঝরা রোধে করণীয়,আমের মুকুল ঝরা রোগে করণীয়,আমের মুকুল ঝরা বন্ধে করনীয়,আমের গুটি ঝরা রোধে করণীয়,আমের ফল ঝরা,আমের মুকুল ঝরা রোধ,আমের মুকুল আসার পর কী করবেন,আমের মুকুল আসার পর যত্ন,আমের মুকুল আসার পর যা করতে হবে

About admin

Check Also

কোন উপায়ে সরকার নাইজেরিয়ায় কৃষি উৎপাদন উন্নত করতে পারে

কৃষি উৎপাদন কি?: কৃষিকাজ হল গাছপালা এবং গবাদি পশু চাষের পদ্ধতি। উপবিষ্ট মানব সভ্যতার উত্থানের …