জুমার দিন গরিবের হজের দিন কথাটি সত্য নাকি মিথ্যা বিস্তারিত পড়ুন

জুমার দিন গরিবের হজ্জের দিন একটি বানোয়াট হাদিস: প্রশ্ন: “জুমার দিন গরিবের হজ্জের দিন।” এ কথাটা কি সঠিক? আমাদের গ্রামের মসজিদে প্রতি জুমার বয়ানের ভূমিকাতেই ইমাম সাহেব এ কথাটা বলে থাকেন।
উত্তর:
“জুমার দিন গরিবের হজ্জের দিন”, “টঙ্গির এজতেমা হল, গরিবের হজ্জ” এসব কথাবার্তা হল, ইসলামের ৫ম স্তম্ভ ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজ্জ এর সাথে উপহাস মাত্র। ইসলামে এসব কথার কোনও ভিত্তি নাই।

এ মর্মে কিছু হাদিস পেশ করা হয় সেগুলো বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের মতে সেগুলো বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যাচার। যেমন:
الجمُعةُ حَجُّ الفقراءِ ، وفي لفظٍ : المساكينِ
“জুমা হল গরিবদের (অন্য বর্ণনায়, মিসকিনদের) হজ্জ।”

নিম্নে এ হাদিসের ব্যাপারে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য তুলে ধরা হল:

◈ শাওকানি বলেন, لا أصل له “এ হাদিসটির কোনও ভিত্তি নাই।” [দ্রষ্টব্য: আল ফাওয়াইদুল মাজমুআ/৪৩৭] ◈ সগানি বলেন, এ হাদিসটি বানোয়াট। [মাউযুআতে সাগানি/৫০] এ ছাড়াও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ কেউ যইফ (দুর্বল) আর কেউ বানোয়াট বলেছেন।
◈ আলবানি বলেন, হাদিসটি موضوع বানোয়াট। [দ্রষ্টব্য: যাইফুল জামে/২৬৫৮, সিলসিলাহ যাইফা/১৯১০]

এ ব্যাপারে আরেকটি হাদিস পেশ করা হয়। তা হল,
الدجاجُ غَنَمُ فُقراءِ أُمَّتي والجمُعةُ حجُّ فُقَرائِها
“মুরগি হল, আমার উম্মতের ছাগল আর জুমা হল, গরিবদের হজ্জ।”
এটিও হাদিসের নামে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যাচার।

নিম্নে এ হাদিসের ব্যাপারে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য তুলে ধরা হল:

◈ এ হাদিস সম্পর্কে ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন, موضوع لا أصل له “এটি একটি ভিত্তিহীন বানোয়াট হাদিস।” [কিতবুল মাজরূহীন ২/৪৩৮] ◈ ইবনুল জাওযিও এ হাদিসটিকে তার বানোয়াট হাদিস সংকলন ‘কিতাবুল মাউযুআত’ كتاب الموضوعات কিতাবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। [৩/১৪৩] ◈ যাহাবি বলেন, باطل “হাদিসটি বাতিল ও বানোয়াট।” [দ্রষ্টব্য: মিযানুল ইতিদাল ৪/৩০১০, তাহযিবুত তাহযিব ১১/৪৮] তিনি আরও বলেছেন, فيه عبد الله بن يزيد محمش – كذاب “এর বর্ণনা সূত্রে আব্দুল্লাহ বিন ইয়াজিদ মুহাম্মাশ নামক একজন মিথ্যাবাদী রয়েছে।” [দ্রষ্টব্য: তারতীবুল মাউযুআত/২১৮]

এছাড়াও ইমাম দারাকুতনি, শাইখ আলবানি সহ বহু মুহাদ্দিস এটিকে বানোয়াট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং ভ্রান্তি উন্মোচন এবং মানুষকে হাদিসের নামে মিথ্যাচারের ব্যাপারে সচেতন করার উদ্দেশ্য ছাড়া এ জাতীয় বানোয়াট, ভুয়া ও ফেইক হাদিস প্রচার-প্রসার করা এবং বয়ান-বক্তৃতায় উল্লেখ করা হারাম।

তবে হাদিসে জুমার দিনকে মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। যেমন: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِينَ ، فَمَنْ جَاءَ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ ، وَإِنْ كَانَ طِيبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ ، وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ
“নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের জন্য জুমার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। সুতরাং জুমায় শরিক হওয়ার পূর্বে গোসল করে নিবে। আর সুগন্ধি থাকলে, ব্যবহার করবে। আর অবশ্যই মিসওয়াক করবে।”
[সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/ ১০৯৮, শাইখ আলবানি এটিকে হাসান বলেছেন। দ্রষ্টব্য: সহিহ ইবনে মাজাহ] আল্লাহু আলাম।

জুমার দিন সর্বোত্তম দিনঃ হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সূর্য উদয় হয়েছে এমন দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্ত দিন জুমআ`র দিন। এদিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। এদিন তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। এদিনই কেয়ামাত সংঘটিত হবে।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)

◈ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন (ফরজ গোসলের মত) গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানি করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানি করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানি করল।

অতপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানি করল। অতপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।’ (সহিহ বুখারি : ৮৮১)

অতএব জুমার দিন গরিবের হজের দিন কোথাও উল্লেখ নেই, তকে ঈদের সাথে তুলনা করা যায়।

About admin

আমার পোস্ট নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথরা মেইল করতে পারেন admin@sottotv.com এই ঠিকানায়।