‘বাবা হতে পারবেন না’ জেনেও করেন দ্বিতীয় বিয়ে, ছেলে হওয়ায় খুন

প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ১২ বছর কাটালেও কোনো সন্তানের মুখ দেখেননি ইখলাছ উদ্দিন। সন্তানের আশায় বছর চারেক আগে করেন দ্বিতীয় বিয়ে। যদিও ডাক্তার আগেই বলেছিলেন তিনি কখনো বাবা হতে পারবেন না। কিন্তু দ্বিতীয় সংসার বাঁধতেই কোলজুড়ে আসে সন্তান। তবে এ সন্তান নিজের করে নিতে পারেননি ইখলাছ।

শুধু তাই নয়, স্ত্রীর গায়ে লাগান পরকীয়ার তকমা। তবু ক্ষান্ত হননি, মাত্র আড়াই মাস আগে পৃথিবীর আলো দেখা নিজের ছেলেকেও হত্যা করলেন। তাও বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে। পুলিশের কাছে এভাবেই আড়াই মাসের শিশু ইকবাল হোসেনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন ইখলাছ উদ্দিন। বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন। একই দিন সকালে ইখলাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে

মামলা করেছেন শিশুটির মা মিতা খাতুন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ১২ বছর দাম্পত্য জীবনে কোনো সন্তান হয়নি ইখলাছ উদ্দিন ও তার প্রথম স্ত্রীর। তবে প্রায় চার বছর আগে মিতা খাতুনকে বিয়ে করেন তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মাঝেরপাড়ার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ইখলাছ।

পরে তাদের কোলজুড়ে আসে এক ছেলেসন্তান। এরপর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রী মিতাকে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে ওই ছেলে তার না বলে জানান। ৩০ মার্চ সকাল ৮টার দিকে বাড়ির কাজ করছিলেন মিতা। তখন ছেলেকে কোলে নেন ইখলাছ। পরে শিশু ইকবালের বাম পায়ে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করেন তিনি। এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে ইকবালকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসক। সেখানে নেয়ার পথে বিকেলে মারা যায় শিশুটি। নিহত শিশুর মা মিতালী খাতুন বলেন, এর আগে আমার অন্য আরেক জায়গায় বিয়ে হয়েছিল।

পারিবারিক কলহের কারণে বিচ্ছেদ হয়। সেই পক্ষের দুই ছেলেসন্তানও রয়েছে। তারা নানাবাড়িতে থাকে। প্রথম স্ত্রীর কোনো সন্তান না হওয়ায় চার বছর আগে ইখলাছ আমাকে বিয়ে করেন। পরে আমাদের কোলজুড়ে আসে এক ছেলেসন্তান। এরপর থেকে তিনি আমাকে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করতে থাকেন। তিনি আরো বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে একটি ওষুধের মধ্যে বিষ মিশিয়ে আমার ছেলে ইকবালকে হত্যার চেষ্টা করেন ইখলাছ। এ সময় দ্রুত হাসপাতালে নিলে রক্ষা পায় আমার ছেলে। পরে বাবার বাড়ি গিয়ে ছেলেকে নিয়ে একা থাকার কথা বলি।

কিন্তু ওই ধরনের কাজ আর করবে না বলে আমাদের ফিরিয়ে আনেন ইখলাছ। বুধবার সকালে ইনজেকশনের মধ্যে বিষ মিশিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করেন তিনি। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। অভিযুক্ত ইখলাছ উদ্দিন বলেন, শারীরিক সমস্যার কারণে সন্তানের বাবা হতে পারব না বলে জানান চিকিৎসক। মিতালীর সঙ্গে ফোনে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাকে বিয়ে করি। আড়াই মাস আগে সন্তান হলে আমার সন্দেহ হয়। ওই সন্তান আমার নয় বলে জানাই। ওই সন্তানকে অন্য কারো কাছে দেওয়ার জন্যও বলি।

কিন্তু তিনি কোনো কথা না শুনলে আমি শিশু ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা করি। বুধবার সকালে ইনজেকশনের মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে তার শরীরে পুশ করি। পরে মারা যায় সে। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন জানান, গ্রেফতার বাবা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিষমিশ্রিত ইনজেকশন পুশ করে শিশু ইকবালকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্বামীর নামে মামলা করেন শিশুর মা মিতা খাতুন। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। দুপুরে তাকে আদালতে তোলা হয়।

About admin

আমার পোস্ট নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথরা মেইল করতে পারেন admin@sottotv.com এই ঠিকানায়।