৮ লাখে বিক্রি হবে বগুড়ার হিরো আলম

কুরবানীতে এবার বগুড়ার হিরো আলমের দাম উঠেছে ৮ লাখ টাকা। লম্বায় ৮ ফুট, উচ্চতায় সাড়ে ৫ ফুট এবং ওজন ৯ শ’ কেজির এই হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাড়টির নাম বেশ শখ করেই দিয়েছেন এর মালিক মো. জিয়াম।কালো এবং সাদা রংয়ের ষাড়টি এবার কোরবানি উপলক্ষে বিক্রি করা হবে।

এরই মধ্যে ষাঁড়টি এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। ষাড়টির মো. জিয়াম বগুড়া সদর উপজেলার ফুলবাড়ী মধ্যপাড়ার যুবক জিয়াম হামদর্দ ইউনানী মেডিক্যালে কলেজ পড়াশোনা করছেন। পাশাপাশি বাবা’র ব্যবসায় সহযোগিতা এবং গরু পালন করছেন। তিনি বলেন, তার বাবা দাদা’রা পূর্ব থেকেই বাড়িতে গরু পালন করতেন। ‘হিরো আলম’ তাদের বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেছে। বয়স প্রায় ৪ বছর। তবে তাদের বাড়িতে গরু পালন করলেও এত বড় কখনও করা হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যেই গরু বিক্রি করা হতো। যে কারণে জন্মের কয়েক মাস পরই জিয়াম তার বাবাকে বলেন, তিনি ষাড়টি পালন করতে চান। তার বাবা রাজি হয়ে গেলে শখ থেকেই ষাড়টিকে লালন পালন শুরু করেন।

ষাড়টির পরিচর্যায় কোনো ধরনের ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। জিয়াম জানান,ষাড়টির পরিচর্যায় কোনো ধরনের ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ব্যবহার করেননি। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে খড়, তাজা ঘাস, খৈল, ভুষি, চালের কুড়া, ভুট্টা, ভাতসহ পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে লালন পালন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত দুই বার করে গোসল করানো, পরিষ্কার ঘরে রাখা ও রুটিন অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেওয়াসহ প্রতিনিয়ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ষাড়টির যে ওজন এত বেশি হবে বুঝতে পারিনি। হঠাৎ করেই ষাড়টি এতটা স্বাস্থ্যবান হয়েছে। ষাড়টি পালন করতে করতে তার ওপর অনেক মায়া জন্মে গেছে। আর এ কারণে ভালোবেসে ষাড়টি’র নাম দিয়েছি ‘হিরো আলম’।

‘ষাড়ের নাম হিরো আলম দিয়েছেন। হিরো আলম বিষয়টাকে কি তিনি সহজভাবে নেবেন বলে মনে করছেন?’ এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেখুন হিরো আলমকে তো আর আমি খাটো করিনি। তাছাড়া আমি তার একজন ভক্ত। আমি তাকে পছন্দ করি বলেই ভালোবেসে আমার শখের গরুটির নাম হিরো আলম দিয়েছি। ‘হিরো আলমের কোন বিষয়টি ভালো লাগে’- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হিরো আলম যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা অনুপ্রেরণার। অবশ্যই সবাই তাকে সেভাবে গ্রহণ করেননি হয়তো। তবে তাকে দেখেছি তার অবস্থান থেকে করোনা’র সময় সে মানুষকে সহযোগিতা করেছে, এবার বন্যায় করলো। সবচেয়ে বড় কথা তার বিরুদ্ধে যেই যতো কথা বলুক তিনি সেটা কানে নেন না।

ষাড়টিকে বাড়ি থেকেই বিক্রি করতে চান বলেও জানান তিনি। জিয়াম জানান, তিনি ষাড়টিকে বাড়ি থেকেই বিক্রি করতে চান। যে কারণে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি ও ষাড়টির বিবরণ দিয়ে বিক্রি করতে চাচ্ছেন। তিনি ষাড়টির দাম চেয়েছেন ৮ লাখ টাকা। তিনি ধারণা করছেন ৭ লাখ টাকার উপরে তিনি বিক্রি করতে পারবেন।

টাইগার বাবুর দাম উঠলো ৭ লাখ, ১০ লাখ পেলেই বিক্রি প্রবাস ফেরত অলি মিয়া (৪৫)। পরিবারের স্বচ্ছলতা দূর করতে সাত বছর আগে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। কিন্তু সেখানে কয়েক বছর থাকার পর তেমন সুবিধা করতে না পেরে দেশে ফিরে আসেন।

এরপর স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন গরুর খামার করার। দুটি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু কিনে খামারের কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। ধীরে ধীরে তার খামার বড় হতে থাকে। বাড়তে বাড়তে তার খামারের পশুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫টিতে। এরই মধ্যে সবগুলো গরু বিক্রি হয়ে গেলেও রয়ে গেছে বিশালদেহী টাইগার বাবু। ৩০ মণ ওজনের টাইগার বাবু উচ্চতায় সাড়ে ৫ ফুট এবং লম্বায় ১১ ফুট। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা ভিড় করছেন তার বাড়িতে। এ পর্যন্ত এর দাম উঠেছে সাত লাখ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের মছলন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা অলি মিয়া বলেন, দেশে এসে বছর দুয়েক আগে স্ত্রী হাবিবা বেগমের পরার্মশে বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তুলি খামার। একে একে বংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে গরুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫টিতে।

খামারে থাকা অন্যন্য গরুগুলে বিক্রি হয়ে গেছে। এখন অবশিষ্ট রয়েছে টাইগার বাবু। প্রাকৃতিক উপায়ে একে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। নিয়মিত খৈল, ভুসি, খড়, ঘাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের মতই চলছে এর পরিচর্যা। শুধু তাই নয়, খাবারের জন্য বাড়ির পাশের জমিতে ধান চাষ বাদ দিয়ে ঘাসের আবাদও করেছি। আশা করছি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্যে আমার গরুটি সবচেয়ে বড়।

এর ওজন প্রায় ৩০ মণ। আগাগোড়া একেবারে থলথলে মাংসল। পরিবারের সদস্যের মত লালন-পালন করা এ গরুটিকে বিক্রি করতে কষ্ট হবে। এখন পর্যন্ত এর দাম উঠেছে সাত লাখ টাকা। তবে ১০ লাখ টাকা হলে এটি বিক্রি করে দেব। এরপর আবার গরু কিনে খামার বড় করব।

ওলি মিয়ার স্ত্রী হাবিবা বেগম বলেন, আমার স্বামীর পাশাপাশি আমিও গরুটির যত্ন নিচ্ছি।

স্থানীয় লোকজন বলেন, খামারি অলি গরুটির জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। গো খাদ্যের দাম বেড়ে গেলেও তিনি কষ্ট করে এটি লালন পালন করে যাচ্ছেন। এলাকায় এর চেয়ে বড় গরু আর দেখিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্ত মো. শাহ জালাল বলেন, উন্নত প্রযুক্তিতে হৃষ্টপুষ্ট করার ওপর দেওয়া প্রশিক্ষণের ফলেই বিভিন্ন খামারে ২৫/৩০ মণ ওজনের পশু পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বিক্রির ঝামেলা এড়াতে অনলাইন মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খামারি অলি মিয়া একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তার মতো উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, মিটবে কোরবানির পশুর চাহিদা।

৩৫ লাখ টাকার বিগবস কিনলে মোটরসাইকেল ফ্রি! ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের বাসিন্দা আফিল উদ্দীন। পাঁচ বছর আগে তিনি একটি গরু ক্রয় করেন। প্রাকৃতিক খাবার ও ফলমূল খাওয়ানোর পর গরুটি এখন বিশাল আকারের হয়েছে। নাম রাখা হয়েছে বিগবস। এটির ওজন ১ হাজার ৫৫০ কেজি।

আসন্ন কোরবানির ঈদে গরুটি বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন আফিল। দাম হাঁকছেন ৩৫ লাখ টাকা। গরুটি ক্রয় করলে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে একটি পালসার মোটরসাইকেল।

বিশাল এই গরুটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে এলাকাজুড়ে। প্রতিনিয়ত গরুটি দেখার জন্য আফিল উদ্দীনের বাড়িতে ভিড় করছে উৎসুক জনতা। জেলার বাইরে থেকেও অনেক মানুষ গরুটি এক পলক দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছে তার বাসায়। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও গরুটি কেনার জন্য ছুটে আসছেন অনেকে। তবে দামে না মেলায় কিনতে পারছেন না তারা।

গরুটি দেখতে আসা রাণীশংকৈল উপজেলার মাহবুব আলম বলেন, আমি কিছুদিন আগে শুনেছি হাতির মতো দেখতে গরু আছে। তাই আজকে নিজেই দেখতে আসলাম। আসলেই বিশাল আকৃতির এটা। এত বড় গরু আমি এর আগে কখনো দেখিনি। গরুটি রুম থেকে বাইরে নিয়ে আসতে ২০-২৫ জন লোক লাগছে

প্রতিবেশী ইমরান হোসেন বলেন, আফিল গরুটির জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। আমরা দেখেছি দুই তিনজন মানুষ দিয়ে হতো না। গরুটার পেছনে ওদের পরিবারের সবাই শ্রম দিয়েছে। তার ফল হিসেবে তারা এমন একটি গরু তৈরি করতে পেরেছে। আশা করছি কোরবানির ঈদে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন।

গরুটি কিনতে আসা ব্যবসায়ী জাকির আহমেদ বলেন, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গরুটি সম্পর্কে জানতে পারি। তারপরে এখানে গরুটি ক্রয় করার জন্য আসি। মালিক অনেক বেশি দাম চাওয়ায় আমি নিতে পারিনি। তবে গরুটি অনেক ভালো লেগেছে। নাম যেমন বিগবস, তেমনি দেখতেও।

গরুর মালিক আফিল উদ্দিন বলেন, আমি কোনো গরু ব্যবসায়ী নই। শখের বসে এলএলসি জাতের গরুটি ক্রয় করেছিলাম এক বছর বয়সে। তারপর এটির পেছনে পাঁচ বছর সময় দিয়েছি। গরুকে মোটাতাজা করার জন্য কোনো প্রকার ওষুধ ব্যবহার করিনি। বিগবসকে খেসারির ডাল, ভুসি, ছোলা, মসুর ডাল ও খুদ খাওয়ানো হয়েছে। আর রাতে আপেল, কলা ও আঙ্গুর খাওয়ানো হয়। এতে গড়ে আমার প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি টাকা খরচ হয় তার পেছনে। তার চাল-চলনে নাম রেখেছি বিগবস। প্রতিদিন পাঁচ-সাতশ মানুষ আসেন বিগবসকে দেখতে। এই কোরবানির ঈদে বিগবসকে বিক্রি করব। দাম ৩৫ লাখ টাকা। আর যিনি কিনবেন তার জন্য উপহার হিসেবে দেওয়া হবে একটি পালসার মোটরসাইকেল। এখন পর্যন্ত এটির দাম ২২ লাখ টাকা উঠেছে।

হরিপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু কায়েস বিন আজিজ বলেন, বিগবস গরুটি আমাদের জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় আকৃতির ও বেশি ওজনের গরু। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে প্রায়ই সেটির খোঁজখবর নিই। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে বা পরামর্শ লাগলে গরুর মালিক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

About admin

Check Also

মেয়ের সঙ্গে ঈদ করা হলো না বাবার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আবু জাহের। দীর্ঘ চার বছর পর বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে ফিরেছেন। দেশে …