কী আছে পরীমনি, রোশান ও মোশাররফ করিমের ‘মুখোশ’-এর আড়ালে?

নিজের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র ‘মুখোশ’ নির্মাণ করেছেন ইফতেখার শুভ। ‘রক্ত’ ছবির ছয় বছর পর দ্বিতীয়বার এই ছবিতে ফিরছেন পরীমনি-রোশান জুটি, সঙ্গে আছেন মোশাররফ করিম। বার কয়েক পিছিয়ে অবশেষে এই শুক্রবার মুক্তি পাবে ছবিটি। লিখেছেন ইসমাত মুমু
গল্প নয়, পরিচালক নয়, ছবির কাস্টিং শুনেই ‘মুখোশ’-এ অভিনয় করতে রাজি হয়ে যান রোশান।

জিয়াউল রোশানের ভীষণ প্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। ছবিতে আরো আছেন আজাদ আবুল কালাম, ফারুক আহমেদ, প্রাণ রায়, ইরেশ যাকেরদের মতো গুণী অভিনেতারা। প্রিয় বন্ধু পরীমনি তো আছেনই।
এর আগে পরীর সঙ্গে ‘রক্ত’ (২০১৬) করেই অভিষিক্ত হয়েছিলেন ঢালিউডে। পরে ছবির গল্প শুনে, নিজের চরিত্রটা জেনে আগ্রহ আরো বাড়ল।

রোশান বলেন, ‘মোশাররফ ভাই আমার ভীষণ প্রিয়। আমরা যাঁদের দেখে অভিনয় শিখি, মোশাররফ ভাই তাঁদের অন্যতম। প্রস্তাব পেয়ে প্রথমেই ভাবলাম, এমন বাঘা বাঘা অভিনয়শিল্পীকে পরিচালক যখন রাজি করাতে পেরেছেন, সেখানে আমার অবশ্যই থাকা উচিত। ’

যখন মোশাররফ করিমের সঙ্গে শুটিং হলো, কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? ‘এককথায় দারুণ! শুটিং শেষে গভীর রাত পর্যন্ত মোশাররফ ভাই, পাভেল ভাইদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। আমি আর পরী মুগ্ধ হয়ে তাঁদের কথা শুনতাম’, বলেন রোশান।

পরিচালক ইফতেখার শুভর প্রথম ছবি এটি। নিজের লেখা উপন্যাস ‘পেজ নাম্বার ফোরটি ফোর’ অবলম্বনে ‘মুখোশ’।

শুভ বলেন, ‘গল্পের জোর ছিল বলেই এই অভিনয়শিল্পীরা রাজি হয়েছেন। ’ “আমি মোশাররফ ভাইকে জিজ্ঞেসও করেছি, আপনি তো বেছে বেছে ছবি করেন। আমার এই ছবি করতে রাজি হলেন কেন?

বলেছেন, ‘তোমার গল্পটা পছন্দ হয়েছে। গল্পের জোর না থাকলে আমি হয়তো রাজি হতাম না। ’ প্রায় সবাইকেই শুটিংয়ের বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসা করেছি তাঁরা রাজি হলেন কেন। সবাই প্রথমত আমার গল্পের প্রশংসা করেছেন। ” বলেন শুভ।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পেয়েছে ‘মুখোশ’। সহপ্রযোজনা করেছে পরিচালকের প্রযোজনা সংস্থা ব্যাচেলর ডটকম। সিলেট, টাঙ্গাইল, এফডিসি, একুশে বইমেলা, পদ্মার চর ও সাভারে হয়েছে শুটিং।

গল্পের প্রধান চরিত্র লেখক ইব্রাহিম খালেদি। ছবির ট্রেলারে লেখক চরিত্রের ইব্রাহিম খালেদির সন্ধান মিললেও থাকবে আরো অনেক শেড। এই ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। তাঁকে ঘিরেই যত রহস্য। ‘মুখোশ’-এর অন্য দুটি প্রধান চরিত্রে আছেন জিয়াউল রোশান ও পরীমনি। রোশানকে দেখা যাবে সুপারস্টার নায়কের ভূমিকায়, পরীমনিকে সাংবাদিকের ভূমিকায়।

পরী বলেন, ‘এখানে আমার নাম সোহানা, ক্রাইম রিপোর্টার। এমন চরিত্রে যে ধরনের চ্যালেঞ্জটা চিত্রনাট্যে থাকা দরকার, সেটাই রেখেছেন পরিচালক। ’

মোশাররফ করিমকে নিয়ে বললেন পরীমনিও, “উনি আমার দেশি লোক, বরিশাল অঞ্চলের। যখন শুটিং শুরু করি, তখনই একটা ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছিলাম। ক্যাপশন লিখেছিলাম, ‘দেশি’। প্রথম দিনের শুটিংয়ে আমরা ঢাকা থেকে বিমানে গেলাম। বিমানবন্দর থেকে একই গাড়িতে গেলাম শুটিং স্পটে। সেই সময় মোশাররফ ভাই আমাদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বললেন যেন আমরা আড়ষ্ট হয়ে না থাকি, ক্যামেরার সামনে গিয়ে তাই একদমই মনে হয়নি এত বড় একজনের সামনে সংলাপ দিচ্ছি। এমন জাঁদরেল অভিনেতার সামনে পড়লে যে ভয়টা কাজ করার কথা, সেটা হয়নি। কারণ মোশাররফ ভাই আমাদের সেই কমফোর্ট জোনটা আগেই তৈরি করে দিয়েছেন। ”

শুটিং শেষে ডাবিংয়ের আগে প্রায় এক মাস যেন দুঃস্বপ্নের মধ্যে কাটিয়েছেন পরীমনি। থানা, আদালত আর কারাগারে থাকার ওই দুঃসময় পার করে তিনি জামিনে মুক্ত হন।

মুক্তি পাওয়ার সাত দিনের মাথায় ‘মুখোশ’-এর ডাবিংয়ে অংশ নেন। পরিচালক শুভ বলেন, ‘আমরা তখন একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। পরী যখন কাজে ফিরেছেন আমরা সবাই মিলে তাঁর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। যাতে তিনি মানসিক ঝড়টা কাটিয়ে উঠতে পারেন। তিনি যথেষ্ট শক্ত মানসিকতার, যাকে বলে লড়াকু। এ কারণেই এত ঝড় কাটিয়ে উঠতে পারছেন। ’

ছবির টাইটেল গান বা ট্রেলার দেখে দর্শকের মনে যে ছবিটা তৈরি হয়েছে, পর্দায় এই ছবি দেখতে বসলে নাকি ভিন্ন চিত্র আসবে দর্শকের সামনে। শুভ বলেন, ‘হলফ করে বলতে পারি, দর্শক পরতে পরতে ধাক্কা খাবেন। কোনো চরিত্র গল্পে চাপিয়ে দিতে চাইনি। গল্পের মোড়ে মোড়ে এই চরিত্রগুলো এসেছে।

অভিনেতারা সেটা দায়িত্ব নিয়ে পরিবেশন করেছেন। দর্শকদের ছবিটি দেখার অনুরোধ করছি। খারাপ লাগলেও যেন সেটা আমাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান। চলচ্চিত্র ভালোবাসি বলেই এমন বৈরী সময়ে এমন একটা বড় বাজেটের ছবি নির্মাণ করেছি।

সরকারি অনুদানের পরও ছবিটি নির্মাণে আমার প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। দর্শক দেখলেই আমার শ্রম ও অর্থের প্রতিদান পাব আশা করি। এটাই শেষ নয়, এই ছবির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামনে আরো ছবি বানাব। ’

গত বছর মে মাসে ছবিটির শুটিং শেষ হয়। এর আগে শুটিংয়ে যেমন ছিল করোনার ধাক্কা, তেমনি মুক্তির পরিকল্পনা করেও কয়েকবার পেছাতে হয়েছে। আগামীকাল ৩৮টি সিনেমা হলে মুক্তি পাবে ছবিটি।

রোশান বলেন, ‘আমরা ওয়ার্ড অব মাউথে বিশ্বাস করি। দর্শক এই ছবি দেখে ঠকবেন না, মুগ্ধতা নিয়েই হল থেকে বের হবেন। আমার বিশ্বাস, যিনি ছবিটা দেখবেন তিনিই দায়িত্ব নিয়ে এই ছবির প্রচারণা চালাবেন। ’

About admin

Check Also

সুন্দরী বৌদি ধানের ক্ষেতে মাছ ধরে তাক লাগিয়ে দিল, ইন্টারনেটে তুমুল ভাইরাল ভিডিও

গ্রামে গঞ্জে মাছ ধরার দৃশ্য আমরা সবাই দেখেছি৷ পাল তৌলা নৌকায় করে নদীতে জেলেরা মাছ …