প্রকৃতির অপার কৃপায় সাজেকভ্যালি যেন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের দার্জিলিং। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এই পর্যটন এলাকাটি। ইতোমধ্যে সাজেকে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক পর্যটন রিসোর্ট।
ইটকাঠের শহুরে জীবনের কোলাহল থেকে ছুটি নিয়ে অনেকেই ছুটে যাচ্ছেন প্রকৃতির রাজ্যে। এ কারণে আনন্দ ভ্রমণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে স্থানটি।
সাজেকভ্যালির অবস্থান রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকায়। ওপারে ভারত আর এপারে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে দেখা মেলে সাজেকভ্যালির প্রকৃতির ভূস্বর্গ। মেঘে ছুঁয়ে যায় আকাশছোঁয়া পাহাড় চূড়ায়। ছুঁয়ে যায় হিমেল বাতাস। চারদিকে ঘন সবুজের সমারোহ। পাদদেশে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি নদী সাজেক। সেই অপরূপ পাহাড়ি নদীর নাম ঘিরেই সাজেকভ্যালি।
সেখানে বিভিন্ন পর্যটক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাজেকভ্যালি ঘিরে পর্যটন স্থাপনার আবিষ্কার ২০০৮ সালের দিকে। ওই সময় স্থানীয় লোকজন এবং বিজিবির উদ্যোগে নির্মিত হয় কয়েকটি সাধারণ কটেজ। পরে পরিচিতি পাওয়ায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে পর্যাপ্ত রিসোর্ট। যেখানে রয়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ স্থানীয় লোকজনের বহু স্থাপনা।
সরকারিভাবে সাজেকভ্যালিকে পর্যটন জোন ঘোষণা করার কথা থাকলেও আজও তা হয়নি। পর্যটন জোন ঘোষণা করা হলে দ্রুত অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে যাবে বলে মন্তব্য বিভিন্ন মহলের।
সাজেকের প্রকৃতি এখন সজীব। প্রকৃতির ছোঁয়া, হিমেল হাওয়ার পরশ নিতে আর মেঘের বিশাল রাশিমালা ‘ছুঁতে’ এবং সকাল-বিকাল দৃষ্টিনন্দন কুয়াশা উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে আসেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। সড়কপথে সাজেক যাওয়া যায় সরাসরি ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা হয়ে। চট্টগ্রাম থেকেও যাওয়া যায় সরাসরি খাগড়াছড়ি জেলা হয়ে সড়কপথে। বিভিন্ন মহলের মন্তব্য— সরকারিভাবে পর্যটন ঘোষণা করা হলে সাজেকভ্যালি হবে বাংলাদেশের দার্জিলিং। এতে দ্রুত পাল্টে যাবে অর্থনৈতিক দৃশ্যপট।
স্থানীয় বাসিন্দা এরিন্টা ত্রিপুরা জানান, সাজেক থেকে সামান্য দূর পায়ে হেঁটে গেলেই ভারতের মিজোরাম। বাংলাদেশ ও ভারত সরকার সফল উদ্যোগ নিলে দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিট পয়েন্ট তৈরি করে পর্যটকদের ভ্রমণে অনেক ধাপ এগিয়ে যাবে সাজেকভ্যালি। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে মোটেল, রিসোর্ট গড়ে তোলা হলে এবং রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানির ব্যবস্থাসহ সর্বাত্মক সুবিধা নিশ্চিত করা হলে সাজেকভ্যালি থেকে আয় হবে বিপুল টাকার রাজস্ব।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা নয়ন জানান, সাজেককে পর্যটন জোনে পরিণত করতে সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। সাজেকের রাস্তাঘাটগুলো সমতলের মতো উন্নত করা হলে এখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কম হবে। এখন মানুষ রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনার ভয়ে অনেকে সাজেকে আসতে চাইছে না।
বর্তমানে সাজেকে প্রায় ১৫০টি পর্যটন রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এসব রিসোর্ট সব ব্যক্তিমালিকানায় তৈরি। এখন সাজেকে যে হারে পর্যটক যাচ্ছেন, সেখানে সরকার চাইলে পাঁচতারকা মানের সুপার স্টার আবাসিক হোটেল নির্মাণ করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাঙামাটি পর্যটন মোটেল অ্যান্ড হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, পর্যটকরা অনেকেই এখন সাজেকভ্যালি যাচ্ছেন ঘুরতে। পর্যটক টানতে সাজেকে নতুন উন্নতমানের রিসোর্ট গড়ে তোলা উচিত। সাজেকভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা, তা আমার জানা নেই। তবে পার্বত্য অঞ্চলের সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্পকে উন্নত করতে পর্যটন খাতকে আরও ঢেলে সাজাতে হবে।
Sotto TV We Publish technology, various types of tips, career tips, banking information, methods of earning online