১০ কিলোমিটার নৌকা ভাড়া ৫০ হাজার টাকা!

সিলেটে টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। ইতিমধ্যেই বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ১৯৯৮ সালের জুন মাসে সিলেট বিভাগে অনেকটা এমন বন্যা হয়েছিল। প্রায় ২৪ বছর পর আবারও এমন বন্যা দেখতে পেল সিলেটবাসী। এমন কঠিন মুহুর্তে দেশবাসীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছে বন্যায় আটকে পড়া সাধারণ মানুষ।

তবে এই বিপদের মাঝেও কিছু অসাধু মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের কুৎসিত খেলায় মেতেছেন। গ্রামীন প্রবাদ ‘মরার উপরে খাড়ার ঘা’-এর মতো। বন্যার কবল থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষ। এজন্য তাদের একমাত্র বাহন এখন নৌকা। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কয়েকগুন বেশি নৌকা ভাড়ায় আদায় করছে কিছু অসাধু মানুষজন। নৌকা দিয়ে ১০ কিলোমিটার পার হতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ভূক্তভোগীরা।

কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখালের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই ১০ কিলোমিটার দূরত্বে যাওয়ার জন্য নৌকা ভাড়া ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

তেলিখালে গ্রামের বাড়িতে পানিবন্দি অবস্থায় থাকা অসুস্থ স্ত্রীকে আনতে সালুটিকরে নৌকা ভাড়া করতে আসেন মারুফ আহমদ। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে একমাত্র ভরসা নৌকা, কিন্তু এই নৌকাই এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। মারুফ বলেন, ‘চাকরির জন্য আমি সিলেট শহরে থাকি। বাড়িতে আমার অন্তঃসত্ত্বা পানিবন্দি হয়ে আছেন। তাকে আনার জন্য একটি নৌকা ভাড়া করতে এসেছিলাম, কিন্তু ৫০ হাজার টাকার নিচে কোনো নৌকা যেতে চাচ্ছে না। আমি ৪০ হাজার পর্যন্ত বলেছি। কেউ যায়নি।’

ভাড়া এমন বাড়িয়ে দেয়া প্রসঙ্গে ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকার চালক তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘আমরা মালিকের নির্দেশমতো কাজ করছি। মালিক এমন ভাড়া নিতে বলেছেন।’

কেবল এই এলাকাই নয়, বন্যাদুর্গত পুরো সিলেটেই নৌকার জন্য হাহাকার দেখা গেছে। নৌকার অভাবে পানিবন্দি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রেও আসতে পারছেন না; জলমগ্ন ঘরেই আটকে আছেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের বাসিন্দা নিহাল আহমদ বলেন, ‘আমার পুরো পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে, কিন্তু তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার মতো কোনো নৌকা পাইনি। ‘বাধ্য হয়ে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি ডিঙি নৌকা কিনেছি। অন্য সময় এগুলো তিন হাজার টাকায় পাওয়া যায়।’

তরুণ কন্ঠশিল্পী তাসরীফ হোসাইনের ভেরিফাইড পেইজে পোস্ট করে লিখেছেন, আজ সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ গিয়েছিলাম একজন অন্তসত্বা মহিলাকে উদ্ধার করার জন্যে। জানেন? এখানে কোন কোন নৌকা এক ঘন্টার জন্যে ৫০ হাজার এক লাখ টকাও চাইছে। ওরাই বা কি করবে ওদের ত সব গেছে।

যাবার পথে দেখলাম সেনাবাহিনীও নৌকার খোঁজ করছে ঘাটে বসে। হেল্প চাইলাম, উনারাও নিরুপায়। অনেক কষ্টে একজন মাঝির হাতে পায়ে ধরে রোগির কথা বলিয়ে রাজি করালাম। তবে মাঝি আস্তে আস্তে বলছিল “আমার ঘরের লোক গলা পানিতে ভাসতাসে আমি জাইতাম না”।

সিলেটে ভারী বৃষ্টি হতে পারে আরও একদিন, ভয়াবহ পরিস্থিতির শঙ্কা

অবিরাম ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারনে এক মাসের ব্যবধানে সিলেটে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে এই বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহতে রূপ নিচ্ছে। ভেঙেছে আগের সব রেকর্ড। উজান থেকে আসা ঢলে এই বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা বর্তমানে পানির নিচে। এরইমধ্যে সারা দেশেই আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টি হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। পুর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় রেকর্ড পরিমাণ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে ওই অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শনিবার (১৮ জুন) আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এমনটাই বলা হয়েছে। পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মোঃ হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হওয়ার সাথে বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া আজ সারাদেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশেই বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সময়ে দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে, ২৩৯ মিলিমিটার। এছাড়া কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১৩৫, ময়মনসিংহে ১২৭, নেত্রকোনায় ২০৬, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৮৮ ও সিলেটে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এসময় ঢাকায় ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে, ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সীতাকুণ্ডে, ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, অতিভারি বৃষ্টির কারণে সিলেটের বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় শনিবার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নৌবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে গেছে ব্রিজ, ট্রেন চলাচল বন্ধ

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যার কবলে নেত্রকোনা। ইতিমধ্যে বন্যার পানির তোড়ে নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ রেলপথের বারহাট্টা উপজেলার ইসলামপুর এলাকায় ৩৪ নম্বর রেলব্রিজটি আজ শনিবার (১৭ জুন) সকাল ৮টার দিকে ভেঙে গিয়েছে। এতে নেত্রকোনার সঙ্গে ঢাকা, ময়মনসিংহসহ সারা দেশের রেলযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

বারহাট্টা রেলস্টেশনের মাস্টার গোলাম রাব্বানী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পানির তোড়ে ব্রিজের পিলারের গোড়ার মাটি সরে যাওয়ায় আজ সকাল ৮টার দিকে ব্রিজটি ভেঙে গেছে। বারহাট্টা উপজেলা থেকে মোহনগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত এই রেললাইনের বেশির ভাগ জায়গায় পানি কানায় কানায় রয়েছে।

নেত্রকোনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. নাজমুল হক খান জানান, ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ২৬২ নম্বর লোকাল ট্রেনটি মোহনগঞ্জ স্টেশনে যেতে পারেনি। বারহাট্টা স্টেশন থেকে ঘুরে এসে ময়মনসিংহ চলে গেছে। আন্ত নগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনটি মোহনগঞ্জ স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যেতে পারেনি।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলো সিলেট-সুনামগঞ্জ

পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা। পানি এখন বাড়িঘরের ছাদ ছুঁই ছুঁই। জেলায় পানিবন্দি প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তর, হাটবাজার—সবই পানির নিচে। কোথাও গলা পানি, কোথাও তার চেয়েও বেশি। এমতাবস্থায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ দুই জেলার সবগুলো বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে এই দুই জেলা এখন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কয়েকটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শনিবার বেলা ১২ টার পরে এই দুই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ অন্ধকারে। মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক থেকেও মানুষ বিচ্ছিন্ন। কেউ কারো সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারছে না। পানিবন্দি অবস্থা থেকে বাঁচতে মানুষ আকুতি জানাচ্ছে। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে স্বজনরা দুশ্চিন্তায়। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল দুপুর থেকে উদ্ধার তৎপরতায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।

বৃহস্পতিবার রাতেই পানিতে তলিয়ে যায় সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক। এতে ওই রাতেই সড়ক পথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জ। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিদ্যুতহীনতা, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকায় সবদিক থেকেই এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জ। জেলা ও উপজেলা শহরের বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট ও সরকারি বেসরকারি স্থাপনার সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে সুনামগঞ্জ ও ছাতকের বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ডুবে গেছে। যে কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ।

জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যা আক্রান্ত সুনামগঞ্জ শহর, সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক ও জামালগঞ্জ উপজেলা। সুনামগঞ্জ শহরের একতলা সব বাসায়ই পানি। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগের সড়কও। ফলে সুনামগঞ্জের একেকটি উপজেলা পরিণত হয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে।

জেলার ছাতক উপজেলার খুমনা এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। পুরো এলাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে আছে সাপসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের ভয়। কী পরিমাণ মানুষ পানিবন্দি আছে এমন কোনো তথ্য নেই জানিয়ে জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, সব জায়গায় পানি। জেলার সব মানুষই পানিবন্দি। ফলে আলাদা করে এখন পানিবন্দি কতজন, তা গুণে দেখা সম্ভব নয়।

বন্যার্তদের উদ্ধারে গিয়ে বন্যার পানিতে ডুবে যুবক নিখোঁজ নেত্রকোনা দুর্গাপুরে বন্যার পানিতে ডুবে এক যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলার চণ্ডিগড় ইউনিয়নের তেলাচী গ্রামে এ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। নিখোঁজের প্রায় ১৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখনো সন্ধান মেলেনি তার।

নিখোঁজ যুবকের নাম আক্কাস আলী (২৭)। সে পৌর শহরের দশাল গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, বন্যায় চণ্ডিগড় ইউনিয়নের তেলাচী গ্রামের আক্কাসের আত্মীয় আব্দুল বারেক এর বাড়িঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ খবর শুনে আক্কাস শুক্রবার বিকালে আক্কাস লোকজন নিয়ে আব্দুল বারেকের বাড়ির দিকে রওনা হয়। পথে চণ্ডিগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে তার সঙ্গে থাকা তিনজনসহ তিনি নিজেও পানির চক্করে পড়ে যান। পরে সঙ্গে থাকা তিনজন সাঁতার কেটে উপরে উঠলেও ডুবে নিখোঁজ হয়ে যায় আক্কাস আলী। তাদের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা এসে ফায়ার সার্ভিস ও থানা-পুলিশকে খবর দেয়।

ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন দুর্গাপুর ফায়ার স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার কিশোরগঞ্জ থেকে ডুবুরি দল আসবে। তার পর পুনরায় উদ্ধার কাজ শুরু হবে। এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে দ্রুত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য এলাকাগুলোতেও নজরদারী রাখছে দুর্গাপুর থানা পুলিশের দল।

সিলেট ছাড়তে রেলস্টেশনে মানুষের হিড়িক

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। উজান থেকে আসা ঢলে এই বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। ইতিমধ্যে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছাতে রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের হিড়িক পড়েছে।বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ১৯৯৮ সালের জুন মাসে সিলেট বিভাগে অনেকটা এমন বন্যা হয়েছিল।

শুক্রবার (১৭ জুন) রাতে এমনই চিত্র দেখা যায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ও কদমতলী বাস স্টেশনে। সরেজমিনে দেখা যায়, বাস কাউন্টার ও রেল স্টেশনে মানুষের ঢল নেমেছে। যে যেখান থেকেই পারছেন, যেভাবে পারছেন সিলেট ছাড়ছেন। এছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওযায় ৫ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী সিলেট ত্যাগ করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হাওয়ার কারণে ওই এলাকার লোকেরা নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য বাস কাউন্টার ও রেল স্টেশনে ভিড় করতেছে। কথা হয় ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হওয়া রেলওয়ে স্টেশনে আসা রফিকুল হক নামের এক যাত্রীর সাথে। তিনি বলেন, সিলেট বন্যার পরিস্থিতি খারাপের দিকে ধাবাতি হচ্ছে। এর জন্য বাড়িতে চলে যাচ্ছি। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার সিলেটে ফিরবো।

নরসিংদীগামী আবুল কাসেম বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ সিলেটে কাপড়ের ব্যবসা করে আসছি। এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে সিলেটে বসবাস করতাম। তবে বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হওয়ায় দোকানপাট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, তাই একটু স্বস্তির জন্য বাড়িতে চলে যাচ্ছি।

এদিকে, গতরাত থেকে সিলেটে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ও বন্যার পানি বাড়তে থাকায় জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এতে বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নগর এলাকারও প্রায় অধিকাংশ স্থান বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় সেসব স্থানে বিভিন্নভাবে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন তারা।

কল দিলে মোবাইল বন্ধ, সিলেট-সুনামগঞ্জে নেটওয়ার্ক বিপর্যয়

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার কারণে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যয় ঘটেছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় কিছু কিছু জায়গায় দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর চালিয়ে ব্যাকআপ দেওয়া হচ্ছিল। কোথাও কোথাও জেনারেটরের তেলও (জ্বালানি) ফুরিয়ে গেছে। ফলে মোবাইল টাওয়ারগুলো ডাউন (বন্ধ) হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় বন্যার্তরা কথা বলতে পারছেন না, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে না। সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ বলে জানা গেছে। গ্রামীণফোন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল কিছু কিছু টাওয়ার বন্ধ ছিল, এ সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

টেলিটকের সিলেট জোনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের ৬০ শতাংশ টাওয়ার ডাউন হয়ে গেছে। হাওর এলাকায় অবস্থা বেশি খারাপ। যেখানে-যেখানে সম্ভব হচ্ছে, কর্মীরা জ্বালানি নিয়ে গিয়ে জেনারেটর চালু রাখার চেষ্টা করছে। সিলেটের হাওর এলাকারও অবস্থা একই। শহরের কিছু এলাকায় নেটওয়ার্ক ঠিক আছে। যেগুলোতে সম্ভব হচ্ছে টাওয়ার চালু করতে জেনারেটর চালানোর জন্য জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় জ্বালানি পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে।

মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছে, তাদের কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় পোর্টেবল জেনারেটর (বহনযোগ্য) পৌঁছে মোবাইল টাওয়ার সচল রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এদিকে সুনামগঞ্জে দ্রুত টেলিযোগাযোগ সেবা দিতে না পারলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।

শুক্রবার (১৭ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সুনামগঞ্জে আজ সকাল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে বিটিএসগুলো ‘পাওয়ার ব্যাকআপ’ দিতে পারছে না। এরফলে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দ্রুত সুনামগঞ্জে টেলিযোগাযোগ ইন্টারনেট সেবা দিতে না পারলে আটকে পড়া মানুষরা যোগাযোগ করতে পারবে না, এমনকি সেনাবাহিনীর রেসকিউ টিম-কে জানাতে সক্ষম হবে না। ফলে প্রাণহানির আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব ভ্রাম্যমাণ জেনারেটরের মাধ্যমে বিটিএসগুলোতে পাওয়ার সাপ্লাই করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

সিলেটে বন্যার্তদের জন্য মন কাঁদছে তামিমের

টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকালে নদীর তীর উপচে নতুন করে বিভিন্ন বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় বন্যাকবলিত পরিবারগুলো দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগের আশঙ্কা করছে।

বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ বিপর্যস্ত। বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষণে সিলেটবাসীর জন্য মনে কাঁদছে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের। তামিম এখন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে রয়েছেন। সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির চিত্র দেখে ব্যথিত তামিম সেখান থেকেই আজ (১৭ জুন) এক ফেসবুক পোস্ট করেছেন।

তামিম ইকবাল তার ফেসবুক ভেরিফাইড পেইজে পোস্ট করেন, অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সিলেট-সুনামগঞ্জ আজ বিপর্যস্ত ভয়াবহ বন্যায়। বিভিন্ন ছবি দেখে এবং বন্যার খবর জেনে খুব খারাপ লাগছে। সবাই ধৈর্য রাখুন, মানসিকভাবে শক্ত থাকুন। যতটা সম্ভব সবাই দুর্গতদের পাশে থাকুন, পরস্পরের সহায়তা করুন।
প্রার্থনা করছি যেন এই বিপদ দ্রুত কেটে যায়।
আল্লাহ সবার সহায় হোন। #sylhetflood ,Tamim Iqbal

আসাম-মেঘালয়ে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ, নিহত ৩১

প্রতিবেশী দেশ ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়সবহ আকার ধারণ করেছে। অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে রাজ্য দুটির বহু জায়গায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। এতে এ পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আসামের ২৮টি জেলার অন্তত ১৯ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং নবগঠিত বাজালি জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া ইতিমধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত আশেপাশের অনেক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।কর্মকর্তারা জানান, ব্রহ্মপুত্র ও গৌরাঙ্গ নদীর পানি অনেক এলাকায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আসামে গত দুই দিনে বন্যায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মেঘালয় প্রশাসন গত ২ দিনে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোর প্রশাসন সতর্কতা জারি করেছে- জরুরি প্রয়োজন না হলে বা কোনো জরুরি চিকিৎসাজনিত প্রয়োজন না হলে মানুষকে বাড়ির বাইরে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া বন্যায় প্রায় তিন হাজার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

টানা ৩ দিন থেকে আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে অবিরাম বৃষ্টিপাত চলছে। ইতিমধ্যে জলাবদ্ধতার কারণে আসামের রাজধানী গুয়াহাটির বেশির ভাগ অংশ স্থবির হয়ে পড়েছে। গুয়াহাটি শহরেও বেশ কয়েকটি ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে এবং নুনমতি এলাকার অজন্তানগরে তিনজন আহত হয়েছে।বক্সা জেলায় অবিরাম বর্ষণ এবং দিহিং নদীর পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বুধবার সুবনখাটা এলাকায় সেতুর একটি অংশ ধসে পড়েছে।

একজন কর্মকর্তা জানান, আসামের নিম্নাঞ্চল রাঙ্গিয়া বিভাগের নলবাড়ি এবং ঘোগরাপারের মধ্যে রেললাইনে জলাবদ্ধতার কারণে কমপক্ষে ছয়টি ট্রেন বাতিল এবং চারটি আংশিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এক টুইটার পোস্টে বলেন, বলিউড অভিনেতা অর্জুন কাপুর ও পরিচালক রোহিত শেঠি রাজ্যটির বন্যা-দুর্গত মানুষের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৫ লাখ রুপি অনুদান দিয়েছেন।

ইতিমধ্যে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে মেঘালয়ের চারটি অঞ্চল দেখার জন্য চারটি কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। প্রতিটি কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন একজন করে মন্ত্রী। কিছু অংশ ধসে পড়লে জাতীয় মহাসড়ক-৬ এ ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মহাসড়কটি ত্রিপুরা, দক্ষিণ আসাম, মিজোরাম এবং মেঘালয়ের কিছু অংশের যোগাযোগের একমাত্র উপায় বলা যায়।

About admin

Check Also

মেয়ের সঙ্গে ঈদ করা হলো না বাবার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আবু জাহের। দীর্ঘ চার বছর পর বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে ফিরেছেন। দেশে …