স্ত্রী তালাক দেওয়ায় যেভাবে শিশুকে হত্যা করে সৎ বাবা

বগুড়ার শাজাহানপুরে স্ত্রী তালাক দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিশু শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম সাব্বিরকে (১০) নির্মমভাবে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ উপজেলার মানিকদীপা কমলা চাপড় গ্রামে একটি লাউ ক্ষেতের বাঁশের খুঁটির সঙ্গে তার লাশ রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে। সৎবাবা ফজলুল হক (৩৫) ও মা সেজে মাদ্রাসা থেকে শিশুটিকে আনতে সহায়তাকারী অনিতা রানীকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার ও কারণ প্রকাশ করেছে। স্বীকারোক্তি রেকর্ডের জন্য বুধবার বিকালে তাদের বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিনিয়া জাহানের আদালতে হাজির করা হয়। স্বীকারোক্তি না

দিলে সাতদিন করে রিমান্ডও চাওয়া হয়েছে। এর আগে দুপুরে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য দিয়েছেন। পুলিশ সুপার জানান, গত ১৭ মে সকালে শাজাহানপুর উপজেলার মানিকদীপা কমলা চাপড় গ্রামের একটি লাউ ক্ষেত থেকে গলায় রশির ফাঁস ও বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অজ্ঞাত শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে জানা যায়, লাশটি উপজেলার সাজাপুর পূর্বপাড়ার তালিমুল

কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র সামিউল ইসলাম সাব্বিরের। সাজাপুর গ্রামের মৃত তালেব আলীর মেয়ে সালেহা বেগম (২৮) শিশুটিকে তার সন্তান বলে শনাক্ত করেন। তিনি জানান, মাঝিড়া কাগজীপাড়ার মৃত মনসুর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম প্রায় ১০ বছর আগে সালেহা বেগমকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে ছেলে সামিউল ইসলাম সাব্বিরের জন্ম হয়। সাব্বির বর্তমানে ওই মাদ্রাসায় পড়তো। মাদকসেবনের কারণে প্রায় দেড় মাস আগে সালেহা স্বামী জাহাঙ্গীর আলমকে তালাক দেন। এরপর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে খরনা কমলা চাপড় গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ফজলুল হককে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে ফজলুল হক সৎছেলে সাব্বিরকে মেনে নিতে

পারছিলেন না। তাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে চাপ সৃষ্টি ও মারধর করতে থাকেন। ঘর থেকে বের করে দিয়ে অনাহারে রাখতেন। গত ঈদের দিনেও মারপিট করে তাকে খালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সন্তানের সুখের জন্য সালেহা গত ১১ মে ফজলুল হককে তালাক দেন। ১৪ এপ্রিল মাদ্রাসা খুললে সাব্বিরকে সেখানে রেখে আসেন। সাব্বিরের জন্য তালাক দেওয়ায় ফজলুল হক খুব ক্ষুব্ধ হন। তিনি শিশুটিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুসারে তিনি গত ১৬ মে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে মাদ্রাসায় গিয়ে সাব্বিরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষক আবু মুসার কাছে

আবেদন করেন। মাদ্রাসার নিয়মানুসারে মায়ের অনুমতি ছাড়া শিক্ষার্থীকে দেওয়ার বিধান না থাকায় শিক্ষক এতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় দিনমজুর ফজলুল হক তার সহকর্মী একই উপজেলার চেলো গ্রামের মৃত খিরদ চন্দ্র দেবনাথের মেয়ে অনিতা রানীকে মা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি নিজেই তার ফোন থেকে অনিতা রানীকে ফোন দেন এবং শিক্ষক মুছাকে বলতে বলেন যে, সাব্বির তার সন্তান। শিক্ষক তার ব্যক্তিগত নম্বর থেকে ফোন দিলে অপরপ্রান্ত থেকে অনিতা রানী নিজেকে সাব্বিরের মা সালেহা বেগম সেজে ছেলেকে ফজলুল হকের কাছে দিতে বলেন। তখন শিক্ষক বিশ্বাস করে সৎবাবা ফজলুল হকের কাছে সাব্বিরকে দিয়ে দেন। পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান,

সাব্বিরকে উপজেলার মানিকদীপা কমলা চাপড় গ্রামে একটি লাউ ক্ষেতে নিয়ে যান ফজলুল। সেখানে গলায় সুতা রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর লাশ বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে সটকে পড়েন। মাথার টুপি খুঁটির উপর রাখা হয়। পরদিন ১৭ মে সকাল ৮টার দিকে গ্রামবাসীরা লাশ দেখতে পেয়ে শাজাহানপুর থানা পুলিশে খবর দেন। সালেহা বেগম ছেলের লাশ শনাক্ত করার পর পুলিশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এদিকে শিশু সাব্বিরকে নির্মমভাবে হত্যা করায় পুলিশের বিভিন্ন টিম মাঠে নামে। ছয় ঘণ্টার অভিযানে ফজলুল হক ও অনিতা রানীকে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে সাব্বিরের মা শাজাহানপুর থানায় সাবেক

স্বামী ফজলুল হক ও অনিতা রানীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। শাজাহানপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই আসামি ঘটনা স্বীকার করেন। স্বীকারোক্তি রেকর্ডের জন্য তাদের বুধবার বিকালে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিনিয়া জাহানের আদালতে হাজির করা হয়েছে। স্বীকারোক্তি না দিলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিন করে রিমান্ডে প্রার্থনা করা হয়েছে।

About admin

আমার পোস্ট নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথরা মেইল করতে পারেন admin@sottotv.com এই ঠিকানায়।