কেমন ছিল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবন

আল্লাহর বার্তাবাহক , ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা , একাধারে ধর্মীয় , সামজিক , রাজনৈতিক নেতা ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ।আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি মিরাজ তথা উরদ্ধারোহন করেন । মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষ যানের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং তাতে বেহেশত ও দোজক দেখার ও সৌভাগ্য হয় । আর এটাই ইসলামের ইতিহাসে মিরাজ নামে পরিচিত। তিনি মক্কার অর্থনৈতিক দুরবস্তার সময় যাকাত প্রদান করার বিধান চালু করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।এই সেই নবী যাকে আল্লাহ জিব্রাহিল আঃ এর মাধ্যমে আলোকিক ভাবে ২ বার সিনা চাক (বক্ষ প্রসারণ) করেন ।

প্রথমবার চার বছর বয়সে তাঁকে শুইয়ে বুক চিরে দিল বের করে ফেরেশতা বললেন ,এটা শয়তানের অংশ । এরপর দিল একটি তশতরিতে রেখে যমযমের পানি দিয়ে ধুয়ে যথাযথ স্তাথানে স্থাপন করলেন। এভাবে দ্বিতীয়বার ঘটে মিরাজ উপলক্ষে ঊর্ধ্বজগত পরিভ্রমণের প্রস্তুতিপর্বে। যা বর্তমানে ওপেন হার্ট সার্জারি বলা হয়ে থাকে , কিন্তু চিন্তা করেন কোন ডাক্তার ছাড়াই কি করে সম্ভব ? তাও সম্ভব হল। মুল কথা মহান আল্লাহ কি না পারেন ? কিয়ামতের দিন হাউজে কাওচারের ও মালিক হবেন এই নবী মুহাম্মদ সাঃ।

আর এই মহামানবের আগমনের কারণে প্রাচীন যুগের মানুষের ভ্রান্ত মতবাদের অবসান হয় । মুছে যায় মানুষের নিজের বানানো দেবতার কাছে আত্মসমর্পণের অধ্যায়। তিনি কন্যা সন্তানকে জীবিত হত্যার মত অমানবিক কাজ থেকে তাঁর নেতৃত্বে পেরেছিলেন মানুষকে বিরত রাখতে । বিবাহ হীন সমাজে যেখানে মানুষ যিনাহ ব্যবিচারে লিপ্ত ছিল, তখন নারীদের কেবল ভোগের সামগ্রী মনে করা হত । সেখানে তিনি এনে দিয়েছিলেন বিবাহের মাধ্যমে নারীদের এক বিশেষ মর্যাদা।

যুগ যুগ থেকে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত থাকা আরব সমাজকে দিয়েছিলেন বিরোধ মুক্ত একটি শান্তিময় আরব উপহার । আইন বিহীন তৎকালীন আরবের অসহায়দের সহায়তা, দুস্তদের আশ্রয়দান ও পীড়িতদের সাহায্যদানের জন্য তিনি যুবক অবস্তায় প্রতিষ্ঠা করেন হিলফ উল ফুজুল নামে একটি সংঘ। এই সংঘের প্রচেষ্টায় মক্কা অনেক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায় এবং কাবাঘরের কালোপাথর পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । তিনি ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম ঘোসনা করেন এবং ওজনে কম দিওনা এই নীতির প্রবর্তন করেছিলেন ।

যিনি তাঁর দাস জায়েদ বিন হারিস কে মুক্ত করার মাধ্যমে দাস প্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেন এবং নিজে যা খান তা দাসদের ও খাওয়ানোর নির্দেশ দেন । এতিমদের তিনি খুব ভালোবাসতেন, তাই তিনি ঘোসনা করেন, যারা এতিমদের দেখাশুনা করবে তারা তাঁর সাথে জান্নাতে ২ আঙ্গুলের মাঝখানে যে পরিমাণ জায়গা থাকে সেরকম নিকটবর্তী অবস্হায় বেহেশতে থাকার সুযোগ লাভ করবে। তিনি উম্মতের অপারগতার কথা চিন্তা করে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ থেকে আল্লাহর কাছ থেকে কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত করে নিয়ে এসেছিলেন ।

যিনি তাঁর দুধ বোন আশ শায়মার সাথে যুদ্ধ ময়দানে দেখা হলে সাথে কিছু না থাকাতে উনার গায়ের চাঁদর মাটিতে বিছিয়ে দিয়েছিলেন বসার জন্য এবং এটাই শিক্ষা দিলেন বোনদের হকের ব্যাপারে । যাকে আল্লাহ কোরআন শরিফে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন মাস্টার নবী হিসাবে, মানব জাতির পথ প্রদর্শক হিসাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবীকে প্রেরণ করেছিলেন বলে আমরা বিভিন্ন পাপাচার মুক্ত একটা সুন্দর জীবন লাভ করতে সক্ষম হয়েছি । সৌদি আরবের মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ২৯ আগস্ট বা আরবি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান পুরুষ । উনার পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা ।

এই নবজাতকের জন্মের পূর্বে তাঁর পিতা মারা জান এবং জন্মের ৬ বছর বয়সে মা কে হারিয়ে ইয়াতিম হয়ে যান । মা মারা যাওয়ার পর আবু লাহাবের বাঁদী ‘সুওয়াইবা’র দুগ্ধ পান করেন । পরবর্তীতে তিনি ধাত্রী হালিমার তত্তাবদানে চলে গেলেন এবং সেখানে হালিমার দুগ্ধ পান করেন তাই মা হালিমা কে তাঁর দুধ মা হিসাবেও কেউ কেউ অভিহিত করে থাকেন । মহান আল্লাহ হালিমার ঘর বরকতে পরিপূর্ণ করে দেন যদিও মক্কায় সে সময় দুর্ভিক্ষ চলছিল । পাঁচ বছর বয়সে তিনি দুধ ভাইদের সাথে মাঠে ছাগল চরাতেন ।

পরবতটিতে তিনি পর্যায়ক্রমে দাদা আব্দুল মুত্তালিব ও চাচা আবু তালিবের সযত্নে তিনি বড় হয়ে উঠেন। কথিত আছে তিনি চাচা আবু তালিবকে বকরি লালন-পালন ও শাম দেশের ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন । জানা যায় শিশু মুহাম্মদের জন্ম সংবাদ দাদা আব্দুল মুত্তালিবকে জানানো হলে তিনি ছুটে আসেন এবং এই শিশুটিকে কোলে নিয়ে কা’বার ভেতরে প্রবেশ করেন,মহান আল্লাহর হামদ বর্ণনা করেন এবং দোয়া করেন আর এই শিশুটির নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’(প্রশংসিত)। আরও জানা যায়, মা আমিনা গর্ভাবস্তায় স্বপ্নের মাধ্যমে মহান আল্লাহর কেরামতিতে ‘আহমদ’(উচ্চ প্রশংসিত )নামটি লাভ করেন । আর এই নাম অনুসারে আহমদ নামটি ও প্রচলিত ছিল ।

এই দুটি নামই প্রবিত্র কোরআনে উল্লেখ্য পাওয়া যায় ।এই পৃথিবীর মানুষ যখন পাপাচারে লিপ্ত ছিল, যেমন ,পুতুল পূজা, ঝগড়া বিবাদ , আর কন্যা সন্তান হত্যা, বলা যায় নারীদের কোন মর্যাদাই যখন ছিলনা , গোত্রে গোত্রে বছরের পর বছর সংগ্রাম , ওজনে মানুষ ঠকানো , মিথ্যা বলা যখন সহজ ব্যাপার ছিল সেই সময়ে মুহাম্মদ আল্লাহর দূত জিব্রাহিল (আঃ) এর মাধ্যমে ওহি ( আল্লাহর বানী)প্রাপ্ত হন । তখন তিনির বয়স ছিল ৪০ বছর।প্রথমে তিনি স্বপ্নে সে নিদর্শন লাভ করলেও পরবর্তীতে তা সরাসরি লাভ করেন । সর্বপ্রথম তিনি সরাসরি ওহি লাভ করেন মক্কার ‘জাবালে নূরে’ অবস্তিত ‘গারে হেরা ‘ যা হেরা গুহা নামে পরিচিত সেই স্হানে।

সেখানে আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) সর্বপ্রথম উপস্তিত হন, তখন নবীর বয়স ছিল ৪১ বছর , ২৭ই রজব মুতাবিক ৬১০ খ্রিস্টাব্দে । আর প্রথম কথাটি ছিল “পড় তোমার প্রতিপালকের নামে তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন কি ভাবে পড়ব? আল্লাহর বার্তাবাহক বললেন, পড় তোমার প্রতিপালকের নামে , যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে , তোমার পালন কর্তা মহা দয়ালু। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন ।

শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না”। ( সূরা আলাক; ১-৫ ।)মহান আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া আদায়ের ভাষা আমাদের জানা নেই এই কারণে যে তিনিই আমাদেরকে তাঁর নবীর মাধ্যমে শিক্ষিত ও আধুনিক মানুষ করে গড়ে তুলেছেন বলে ।৬৩ বছরের মধ্যে যিনি একটি মিথ্যা কথা বলেননি, তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ সাঃ।

নবীর সত্যবাদিতা , নম্রতা ও ভদ্রতার জন্য আরবরা তাই ছোট বেলা থেকে সবাই তাঁকে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী বলে ডাক তো । মহান নবীর সততা ও বিশ্বস্ততার খবর যখন মক্কার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেল এবং ব্যবসাতেও খ্যাতি অর্জন করতে লাগলেন তখন মা খাদিজা ব্যবসার প্রস্তাব পাঠালে নবী মুহাম্মদ সাঃ রাজী হয়ে যান এবং পরবর্তীতে প্রিয় রাসুলের বিভিন্ন গুনের কারণে খাদিজা মুগ্ধ হয়ে আবার ও যখন বিয়ের প্রস্তাব পাঠান তখন ও তিনি রাজী হয়ে যান । যদিও সে সময়ে নবী মুহাম্মদের সাঃ এর বয়স ছিল ২৫ আর বিবি খাদিজার বয়স ছিল ৪০ বছর । বিশ্বনবীর সন্তানদের মধ্যে পুত্র সন্তান হলেন, কাসিম,আব্দুল্লাহ,ইব্রাহিম প্রমুখ এবং কন্যাগণ ছিলেন, জয়নাব, রুকাইয়া,উম্মে কুলসুম এবং ফাতিমা। একমাত্র ফাতেমা ছাড়া আর সবাই নবীর বেচে থাকা অবস্তায় মারা যান ।

কোন কোন ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে ইসলাম প্রচার বন্ধ করার জন্য কাফেররা বিশ্বনবীকে সুন্দরি রমণী বিয়ের অফার প্রদান করেছিলেন কিন্তু নবী তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। প্রিয় নবীর মোট ১১ জন পত্নী ও ২ জন উপপত্নী ছিলেন। এই সৌভাগ্যবান রমণীরা হলেন, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ,সাওদা বিনতে জামআ,আয়েশা বিনতে আবু বকর,হাফসা বিনতে উমর,জয়নব বিনতে খুযায়মা,উম্মে সালমা হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়া,রায়হানা বিনতে জায়েদ(উপপত্নী), জয়নব বিনতে জাহশ,জুওয়াইরিয়া বিনতে আল হারিস,রামহাল(উম্মে হাবীবা)বিনতে আবু সুফিয়ান,সাফিয়া বিনতে হুইয়াই,মায়মুনা বিনতে আল হারিস,মারিয়া আল কিবতিয়া(উপপত্নী) প্রমুখ।আর এই বিয়ে গুলি পরবর্তীতে উম্মতের জন্য বিয়ের বিধি নিষেধ এর ব্যাপারে এক শিক্ষার বিষয় হয়ে যায় ।

ইসলাম প্রচার কালে বিপদের দিনের বন্ধু ছিলেন তাঁর সহধর্মিণী বিবি খাদিজা তাই তাঁর মর্যাদা নবীর কাছে ছিল সর্ব উচ্চে। এছাড়া হাদিছ বর্ণনাকারীর মধ্যে সর্ব উত্তম ছিলেন মা আয়েশা (রাঃ), এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নবীর সব পত্নীয়ই ছিলেন নবীর জন্য আশীর্বাদস্বরূপ । জানা যায়, ইসলাম প্রচারে টাকা পয়সা খরছের একটা ব্যাপার ছিল তাই স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য, গোত্রে গোত্রে পুরনো বিবাদের অবসান এর জন্য , বিধবা ও অসহায় নারীদের আশ্রয়ের জন্য ও তিনি এই বিবাহ গুলি করেন ।

তিনি বিবিদের সাথে ঘরের কাজে ও সহযোগিতা করতেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাদের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা ও করতেন । চাঁদের মত সুন্দর ছিলেন নবী । কোরআনের ভাষায় বলা যায় লাবণ্যময়, মাঝারি আকৃতির ফর্সা রঙ্গের এবং সুঠাম ও শক্তিশালী একজন পুরুষ ছিলেন । তিনি মক্কার বিশিষ্ট কুষ্ঠিগির রুকানাকে ধরে ৩ বার আচার মেরেছিলেন । বিশ্ব নবীর হাতের তালু রেশম কাপড়ের ছেয়েও নরম ছিল ।প্রিয় নবীর পছন্দ ছিল জয়তুন তেল তাই জয়তুন তেল ব্যবহার করতেন শরীরে এবং জয়তুনের ডাল দিয়ে মেছওয়াক করতেন।জানা যায়, তিনির মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দাড়ি আর চুল সর্ব মোট বিশ্বটির বেশি পাকতে দেখা যায় নাই।

তাঁর বুক ও ললাট ছিল প্রশস্ত, নাক ছিল খাড়া, পিঠের মধ্যে কবুতরের ডিমের মত ছিল বাম কাঁধে যা মুহরে নবুয়ত নামে অভিহিত করা হয় আর এই কারণে তিনি যেভাবে সামনের দিক দেখতেন পিছনের দিক ও ঠিক সেরকম দেখতে পারতেন।মাথার মধ্যে সিঁথি করে রাখতেন এবং সেখানে আতর ডেলে রাখতেন যা সুগন্দি ছড়াতো, চুল রাখতেন কানের লতি পর্যন্ত, কখনো কানের মাঝ খান পর্যন্ত, আবার কখনো কাঁধ বরাবর ও রাখতে দেখা যায়। দাঁতগুলি ছিল পরিপাটি হাসলে বুঝা যেত যেন মুক্তা ঝরছে, নিজের চেয়ারা আয়নাতে দেখে আল্লাহর কাছে দুয়া করতেন তাঁর চেয়ারার মত যেন চরিত্র ও আল্লাহ সুন্দর করে দেন। তিনি শিশুদের ভালবাসতেন তাই তিনি তাদের মাথায় হাত বুলাতেন। হাসান বিশ্ব নবীকে গুড়া বানিয়ে ছড়তেন। খাবার এর বেলায় ও ছিলেন সচেতন, বাসি খাবার খেতেন না , খুব গরম খাবার ও খেতেন না এবং খুব বেশি ও খাবার খেতেন না , পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খালি রাখতেন ।

নবীর খাবারের মধ্যে ছিল বার্লি,খেজুর, ডুমুর, আঙ্গুর, মধু,তরমুজ, দুধ, মাশরুম, অলিভ অয়েল, ডালিম-বেদানা, ভিনেগার, ছাগলের সিনার মাংস ও পানি ইত্যাদি জিনিস । তিনি বিনয়ের সাথে হাঁটতেন, মুচকি হাঁসি হাসতেন সব সময়, খুব বেশি লাজুক ছিলেন , ছোটবেলায় নবী ক্ষুদা কিম্বা ব্যথা ফেলে কাঁদতেন না , কাঁদতেন শরমের জায়গা থেকে কাপড় সরে গেলে ,তিনি ছিলেন ডানপন্থী ,মেহমানদারী ভালোবাসতেন তাই মেহমান আসলে খুশি হতেন,বিচারে ইনসাফ করতেন,জরুরী কথা তিনবার বলতেন,তাকওয়ার উপর গুরুত্য দিতেন, উত্তম মধ্যস্ততাকারি হিসাবে বিবাদের মীমাংসা করে দিতেন, সাহাবিদের শিক্ষা দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে প্রশ্ন ও করতেন ।

আসল কথা তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল মানবজাতির জন্য একটি সুন্দর জীবন পরিচালনার জন্য উত্তম উধাহরন ।নবীজির মেয়ে ফাতিমার উত্তম চরিত্রের কারণে তিনি বেহেশতের সরদারনীর মর্যাদা লাভ করবেন বলে মুসলিম সমাজ জানে ও বিশ্বাস করে । যদিও তিনি ছিলেন নবীর মেয়ে তবুও চলাফেরা ছিল অত্যন্ত সহজ সরল ও দারিদ্রতা পূর্ণ । ইসলামের জন্য শহীদ হাসান ও হোসেনের ও নানা হন প্রিয় মুহাম্মদ সাঃ ।তিনি বিবাদমান দুটি গোত্রের মধ্যে একজন মধ্যস্হতাকারী হিসাবে সকল গোত্রকে একত্রিত করে ঐতিহাসিক মদিনা সনদ স্বাক্ষর করান যা পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম সংবিধান বলে অভিহিত হয় । আর এই সনদ দ্বারা স্বাধীন মদিনা রাষ্ট্রের জন্ম হয় ।

উল্লেখ্য এর পূর্বে এক গোত্রের মানুষ অন্য গোত্রের মানুষের সাথে চলাফেরা নিষিদ্ধ ছিল । আর তাই তিনি আরবদের রক্তারক্তি আর বিভিন্ন কুসস্কারের মুলৎপাথন করে দক্ষ রাজনীতিবিদ ও একজন সমাজ সস্কারের ভূমিকায় নিজেকে অবতীর্ণ করেন । নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকেই শুরু হয় ধর্ম প্রচার। শুরু হয় বিধর্মীদের বিরোধিতা আর নির্যাতন।তিনি আঙ্গুল তুলে চাঁদ দুভাগে বিভক্ত করেন, এটা ছিল তাঁর এক মুজিজা কিন্তু আরবরা তাঁকে যাদুকর বলে ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত থাকে । তিনি নিজ মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় ও হিজরত করেছিলেন ,সেখানে তিনি ‘মসজিদে কু’বা নির্মাণ করেন ,সেখানকার উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল মসজিদে নববী নির্মাণ ও আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্তাপন। ইসলাম প্রচারের দুশমনির কারণে তিনি শিবে আবু তালিবে জীবনে ৩ মাস জেল ও কেটেছিলেন । জীবনে একবার আল্লাহর ওহি আসতে দেরি হওয়াতে তিনি আত্মহত্যার ও চেষ্টা করেন । সর্বপ্রথম তাঁর দাওয়াতে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেন বিবি খাদিজা ।

এছাড়া মুহাম্মদের চাচা হামজা এবং কুরাইশ নেতা ওমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণের কারণে কিছুটা সহজ হয় ইসলাম প্রচার ।পরবর্তীতে যখন আবুবকর রাঃ এর ধারাবাহিকতায় হযরত ওমর রাঃ যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন ইসলাম প্রচার ও প্রসার সহজ হয়ে যায় । ইসলামের ইতিহাসে প্রথম প্রধান বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় হলে মুসলিমরা উৎসাহ লাভ করে । উহুদের যুদ্ধে নবীর ২টি দাঁত হারান তাই এই যুদ্ধ খুবই দুঃখজনক, এছাড়া খন্দকের যুদ্ধ, হুদাইবিয়ার সন্ধি , খায়বারের যুদ্ধ, মুতার যুদ্ধ ও মক্কা বিজয় উল্লেখযোগ্য। মক্কা বিজয় ইসলাম ও বিশ্বসভ্যতার কাছে এটি একটি ঐতিহাসিক বিষয় । খ্রিস্টীয় ৬৩০ অব্দে প্রায় রক্তপাতহীনভাবে প্রায় ১০ হাজার মুসলিম সৈন্য নিয়ে মক্কা বিজয় করেন হযরত মুহাম্মদ সাঃ। এটি ছিল মুসলমানদের জন্য গৌরবের বিষয় । মুসলিম চিন্তাবিদরা মনে করেন এটি হচ্ছে ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয় । নবীর নির্দেশে মক্কা বিজয়ের জন্য ১৬রমজান মক্কায় তাঁবু গাড়লেন মুসলিম যুদ্ধারা।

এবং মক্কায় প্রবেশের জন্য ৪ ভাগে ভাগ করে দিলেন নবী। ১৭ রমজান হযরত আব্বাস রাঃ আবু সুফিয়ানকে বন্দি করে রাসুলের সামনে নিয়ে আসলে আবু সুফিয়ান রাসুলের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন । ২০ রমজান রাসুল সাঃ বিনা বাধায় ও কালো পতাকা নিয়ে সূরা আল ফাতাহ উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করে প্রবেশ করেন মক্কায় তাঁর সাথে ছিলেন সৈন্যরা । ৩ জন মুসলমান সৈন্য শহীদ হন। কুরাইশদের ১৩ জন সৈন্য নিহত হয় । বিজয় পরবর্তী সময় নবীর নির্দেশ অনুযায়ী মক্কার মানুষদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিয়ে আসা হয় ।কা’বা ঘরের ৩৬০ টি মূর্তি ও বিভিন্ন চিত্র অঙ্কিত এই সব নিঃশেষ করা হয় । অতঃপর সবাইকে নিয়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করেন নবী । আর এভাবেই বিজয় হয় মক্কার ।৬৩২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে লক্ষাধিক মুসলমান নিয়ে হজ্ব সমাপ্ত করেন নবী মুহাম্মদ আর এটাই বিদায় হজ্ব নামে পরিচিত ।

উল্লেখ্য নবী ৪ বার ওমরা ও একটি হজ্ব করেন। বিদায় হজ্বের ভাষণে নবী সাঃ পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত একটি সমাজকে পুনরুদ্ধার করে ইহ পারলৌকিক কল্যাণের দিকে ধাবিত করার নির্দেশনা দেন এবং আল্লাহ তাআলার বানী তিলাওত করেন ,”আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলাম তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম”। এছাড়া তাঁর মৃত্যুর পরে কিভাবে চলবে মুসলিম বিশ্ব তাঁর ও দিক নির্দেশনা দেন ।

তাই এই ভাষণের তাৎপরয অনেক বেশি। বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পর তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। তাপমাত্রা প্রচণ্ড হলে সকল স্ত্রীর অনুমতি নীয়ে আয়েশা (রাঃ)এর কামরায় অবস্তান করেন অবশেষে ১২ রবিউল আউয়াল,১১ হিজরি,৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুন তারিখ সোমবারে নবী মৃত্যুবরণ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন ।আলী (রাঃ) উনাকে গোসল দেন এবং কাফন পরান।আয়েশা (রাঃ)এর কামরায় যে স্হানে মৃত্যুবরণ করেন, জানাযার পর সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। পরিশেষে বলব, এই মহামানবের কর্মগুণের ইতিহাস রচনা শেষ হবার নয় ।

মা আয়েশার মতে নবীর চরিত্র ছিল কোরআনের চরিত্র। তাই যুগে যুগে তিনি আমাদের কাছে চির চেনা রূপে সম্মানিত হয়ে থাকবেন এবং তাকে যদি কেউ অনুসরণ করে তবে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ প্রাপ্ত হবে এটা নি:সন্দহে বলা যায়। আর এই মহামানব সম্পর্কে যদি কেউ কিছু না জানে,তবে তাঁর জীবনে বিরাট কিছু জানা থেকে বাদ পড়ল আমি এটা মনে করি। তাই সবাইকে প্রিয় নবী সম্পর্কে জানার ও তাঁর কথা বা নির্দেশ মানার অনুরুধ করি বারবার। আর এই অনুরুধ করছি এই কারণে যে একটা বিশাল রহমত থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হয় ।
লেখক, আজিজুল আম্বিয়া , প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। azizul.ambya@yahoo.co.uk

About admin

আমার পোস্ট নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথরা মেইল করতে পারেন admin@sottotv.com এই ঠিকানায়।