হোয়াটসঅ্যাপে মেয়েদের ভিডিও কল আসছে, রিসিভ করায় বিপদ, প্রতারিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ

ইন্টারনেট জগতের হাজারো সুবিধা থাকলেও অসুবিধাও কম নয়। আজকাল, স্ক্যামাররা ক্রমবর্ধমানভাবে সোশ্যাল মিডিয়া এবং মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে সাইবার জালিয়াতিতে প্রতারিত করছে৷ প্রতারকদের ক্রমবর্ধমান উদ্ভাবনের কারণে মানুষের শান্তিতে বসবাস করা আজ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আজকাল হ্যাকাররা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের হয়রানির জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তবে সম্প্রতি জানা গেছে যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহারকারীদের হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলের সাহায্যে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার টাকা হারিয়েছেন অনেকে। কিন্তু ঠিক কীভাবে ঘটছে এই কেলেঙ্কারি? চলুন একটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

এই হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কল কেলেঙ্কারি কীভাবে শুরু হয়েছিল?

এই ধরনের স্ক্যামে, ব্যবহারকারী প্রথমে একটি অজানা নম্বর থেকে একটি বার্তা পায়। সেখানে একজন ব্যক্তি নিজেকে নারী বলে দাবি করেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীকে একটি ভিডিও কল করার নির্দেশ দেন (একটি নির্দিষ্ট নম্বরে)। আবার, অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা হোয়াটসঅ্যাপে সরাসরি অজানা নম্বর থেকে ভিডিও কল পেয়েছেন। কিন্তু ওপার থেকে আসলে কে ডাকছে তা জানা যায়নি। তারপর কল রিসিভ করা মাত্রই শুরু হয়ে যায় আসল খেলা!

এই ধরনের ভিডিও কলে বেশির ভাগ সময় ফোনকারীর মুখ দেখা না গেলেও সেখানে একটি মেয়েকে দেখা যায়। কখনো কখনো মেয়েটি সম্পূর্ণ উলঙ্গ বা অর্ধনগ্ন। স্বভাবতই অনেকেই (বয়স নির্বিশেষে) এই অচেনা মহিলার ডাকে বিভ্রান্ত। কিন্তু বাস্তবতা হলো মানুষ মনে করে সামনে থেকে কোনো মেয়ে নগ্ন ভিডিও কল করছে। কিন্তু বাস্তবে সেখানে কোনো মেয়ে নেই, বরং অশ্লীল ভিডিও দেখানো হয় সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীকে। প্রতারকরা ভিডিও কল চলাকালীন কিছু উত্তেজক দৃশ্য দেখিয়ে ব্যবহারকারীর সম্পূর্ণ প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করে। পরে সেই রেকর্ড করা ভিডিও ব্যবহার করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল যে প্রতারকরা যারা ভিডিও কলের সময় একজন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করে তারা এমনকি সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর হাতের লেখাও লক্ষ্য করে না। এর পরে, ভিডিও কলের রেকর্ডিং শেষ হওয়ার সাথে সাথে ভিকটিমকে পাঠানো হয় এবং প্রতারকরা মোটা অংকের টাকা না দিলে অশ্লীল ভিডিও কলের রেকর্ডিং ভাইরাল করে ব্যবহারকারীর মানহানি করার হুমকি দেয়। স্বভাবতই অপমান এড়ানোর একমাত্র উপায় হল মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান; আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হ্যাকাররা এ পর্যন্ত বহু মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা লুট করেছে।

ব্যবহারকারীদের একবার নয়, বহুবার ব্ল্যাকমেইল করা হয়

আরও উদ্বেগের বিষয় হল যে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের শুধু একবার নয় বারবার ব্ল্যাকমেইল করা হয়। অর্থাৎ একবার মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে যে স্বস্তি দেওয়া যায়, তা নয়, পরে আবার অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল করার নামে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে, আপনি যদি কখনও এই ধরনের কোনো কেলেঙ্কারির শিকার হওয়ার জন্য যথেষ্ট দুর্ভাগ্যজনক হন, তাহলে কাউকে টাকা না দিয়ে সরাসরি পুলিশের কাছে আপনার অভিযোগ দায়ের করুন। কারণ চুপচাপ টাকা দিলেও এ ধরনের সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই অপবাদের ভয় না পেয়ে সরাসরি সাইবার সেলের সাথে যোগাযোগ করাই ভালো।

অপরিচিত নম্বর থেকে আসা কল বা মেসেজ এড়িয়ে যাবেন না

এছাড়াও, অপরিচিত নম্বর থেকে ভিডিও কল গ্রহণ করবেন না। কারণ এমনকি কয়েক সেকেন্ডের জন্য আপনার মুখ রেকর্ড করাই স্ক্যামারদের বড় করার জন্য যথেষ্ট। উল্লেখযোগ্যভাবে, সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করার জন্য, হ্যাকাররা বর্তমানে শুধু হোয়াটসঅ্যাপই নয়, অনেক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ব্যবহার করছে। তাই মোদ্দা কথা হল অজানা নম্বর থেকে আসা যেকোন বার্তা বা কল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আকস্মিক কথাবার্তার আগে এবং পরে চিন্তা না করে কাউকে বিশ্বাস করার দরকার নেই। সর্বদা মনে রাখবেন, হ্যাকারদের সন্দেহাতীত ব্যক্তিদের ঠকাতে অনেক কৌশল রয়েছে। তাই, আপনি যদি প্রতারণার শিকার হতে না চান, তাহলে যতটা সম্ভব সচেতন হোন এবং চোখ কান খোলা রাখুন।

About admin

Check Also

মেয়ের সঙ্গে ঈদ করা হলো না বাবার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আবু জাহের। দীর্ঘ চার বছর পর বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে ফিরেছেন। দেশে …