‘পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন সবাই করি যত্ন’ স্লোগানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখিমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলা উপলক্ষে সারা দিন ক্যাম্পাসে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। শিশু-কিশোরদের নিয়ে বেড়াতে আসা মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে পাখিদের বিচরণক্ষেত্রগুলোয় পর্যাপ্ত সুরক্ষা না থাকায় পাখির বসবাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ দর্শনার্থীদের। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন তারা।
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় উপাচার্য বলেন, পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীরা বেশি ভাবেন। পাখিদের যত্নে রাখতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, পাখিমেলার মূল উদ্দেশ্য পাখি সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়ানো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মফিজুল কবির, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের কান্ট্রি ডিরেক্টর (আইইউসিএন) রাকিবুল আমিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ফিরোজ-উল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের আয়োজনে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাখি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এ বছর প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার তিনজন সাংবাদিককে ‘কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ দেয়া হয়। অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রতিদিনের সংবাদের জাবি প্রতিনিধি তহিদুল ইসলাম, বাংলানিউজের বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বপন ও মাই টিভির সাভার প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল ওয়াহিদ। দিনব্যাপী মেলায় বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে ছিল আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলার দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, স্টল সাজানো প্রতিযোগিতা (পাখির আলোকচিত্র ও পত্রপত্রিকা প্রদর্শনী), আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা (অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে) ও পাখিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা।
রাজধানীর মিরপুর থেকে দুই সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মনজুরুল রায়হান যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখিদের বসবাসের জন্য মনোরম পরিবেশ রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের আরও সচেতন হওয়া উচিত। কারণ দর্শনার্থীরা পাখি দেখতে ও ছবি তুলতে পাখিদের কাছে চলে যাচ্ছে। পাখিরা বিরক্ত হয়ে উড়ে যাচ্ছে। এটা কাম্য নয়। তিনি বলেন, সচেতনতার জন্য মেলা করে যদি নিজেরাই সচেতন হতে ও করতে না পারি তবে এসব আয়োজন নিরর্থক হবে। তাই কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেয়া উচিত। সরেজমিন দেখা যায়, যেসব লেকে পাখি বিচরণ করে সেগুলোয় দর্শনার্থীর জন্য সচেতনতামূলক সাইনবোর্ডই লেখা আছে। কিন্তু লেকের পাড়ে নতুন করে কোনো তারকাঁটা কিংবা বেড়া দেয়া হয়নি। পুরাতন তারকাঁটা ভেদ করে অনায়াসেই দর্শনার্থীরা লেকের পাড়ে প্রবেশ করছে। পাখির ছবি তোলার জন্য ক্যামেরাম্যানরা একেবারেই পাখির কাছাকাছি গিয়ে পাখি উড়িয়ে ছবি তুলছেন।
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখিমেলার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। এবার ছিল ২০তম আসর।
Sotto TV We Publish technology, various types of tips, career tips, banking information, methods of earning online