স্বামীর জন্য দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ হল ‘নেককার স্ত্রী’

দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ- রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আমি আমার স্ত্রীদের নিকট উত্তম।

বর্তমানে সমাজে নারীপ্রতি করা হচ্ছে নি’র্ম’ম, নির্দয় নি’র্যা’ত’ন। এমন কোনো নি’র্যা’ত’ন নাই যাই করা হয় না। অথচ পৃথিবীতে একজন পুরুষ মানুষের জন্য সর্বোত্তম সম্পদ হচ্ছে নেককার স্ত্রী।

সুতরাং দাম্পত্য জীবনে এ নারী যদি পুত-পবিত্র সচ্চরিত্রা হয়, তাহলে জীবন স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। সমস্যা সংকুল জীবনেও শান্তির ফল্গুধারা বয়ে যায়। যে শান্তি নারী-পুরুষের বৈবাহিক জীবনের মাধ্যমে শুরু হয়। বিবাহিত জীবনে নেককার স্ত্রীর গুরুত্ব অত্যধিক। তাই ইসলাম স্ত্রীকে দিয়েছে সর্বোত্তম মর্যাদা। বৈবাহিক জীবনে নারী অধিকার সম্পর্কে কুরআন হাদিসের বক্তব্য তুলে ধরা হলো-

নারীর বিয়ে-

ইসলাম পূর্ব যুগে বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াই মহিলাদেরকে পুরুষের মালিকানাধীন মনে করা হতো এবং একজন পুরুষ যত খুশী বিয়ে করতে পারত। ইসলাম নারীদের জন্য বিবাহকে বৈধ এবং আবশ্যক করেছেন। এ বিবাহের মাধ্যমে একজন নারীকে একটি সম্মানজনক আসনে সমাসীন করা হয়।

আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যকার পুরুষ আর মহিলাদের মধ্য থেকে তাদের বিয়ে দিয়ে দাও যারা দাম্পত্য ছাড়া জীবন অতিবাহিত করে।’ (সুরা নূর)

নারীর মোহর-

মোহরকে নারীর ইজ্জতের গ্যারান্টি করা হয়েছে। ইসলাম পূর্ব যুগে নারীরা তাদের বিয়ের দেন মোহরের মালিকানা পেত না। ইসলাম নারীর মর্যাদা রক্ষায় মোহরের বিধান প্রবর্তন করে তা স্বামীর উপর ফরজ সাব্যস্থ করেছেন। তাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, যদি মোহর রূপে অঢেল সম্পদও দেয়া হয় তা ফেরত নেয়া যাবে না। কেননা মোহর বিবাহের শর্ত হওয়ায় সেগুলো মহিলার মালিকানাধীন হয়ে যায়।

আল্লাহ বলেন, আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে (কিছু) অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। (সুরা নিসা : আয়াত ৪)

স্ত্রী হিসেবে নারী-

মোহর নির্ধারণের মাধ্যমে নারী-পুরুষ পরস্পর ইজাব-কবুল করে একজন পুরুষ একজন নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে। স্ত্রী হিসেবে নারীকে এক স্বকীয় মর্যাদায় অধিষ্টিত করেছে ইসলাম। তাই স্বামীকে স্ত্রীর সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সদাচরণের ভিত্তিতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে জীবন-যাপন কর।’ (সুরা নিসা)

সংসার জীবন সুখের লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের আবরণ স্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য আবরণ স্বরূপ।’ (সুরা বাকারা)

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘মহিলাদের পুরুষদের উপর যেরূপ অধিকার আছে তেমনি পুরুষদেরও মহিলাদের উপর অধিকার রয়েছে।’ (সুরা বাক্বারা)

নেককার স্ত্রীকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলা হয়,এখন বদকার কোনো মহিলাকে কি সম্পদ বলা যেতে পারে? কাজেই শ্রেষ্ঠ সম্পদ হতে হলে সেরূপ বৈশিষ্ট্যও তো থাকা চাই।

ঈমানের পর সর্বোচ্চ নিয়ামত হচ্ছে সচ্চরিত্র স্বামীকে মুহব্বতকারিনী, চরিত্রবতী ও সন্তানবতী স্ত্রী সুবহানাল্লাহ। এরূপ মহিয়সী নারীকে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার রাজত্ব অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে।

আর কুফরীর পর সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট বস্তু হচ্ছে কর্কশভাষীনী ও অসচ্চরিত্রা স্ত্রী। নাঊযুবিল্লাহ! কাজেই প্রত্যেক স্ত্রীরই স্বামীকে মুহব্বত করত সচ্চরিত্রের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, তবেই সে তার স্বামীর জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে স্ত্রী প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনসহ নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

যে ৪ টি আমল করলে নারীর জন্য জান্নাত- বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমের দীর্ঘ একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন যে, একবার ঈদুল ফিতরের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গিয়ে উপস্থিত নারীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে নারী সম্প্রদায়! দান খয়রাত কর; কেননা আমাকে জানানো হয়েছে যে, দোজখের অধিকাংশ অধিবাসি তোমাদের নারী সম্প্রদায়েরই হবে।

অন্য এক হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘যে নারী-

১- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে;

২- রমজানের রোজা রাখবে;

৩- স্বীয় গুপ্তস্থানের হেফাজত করবে ( পর্দা রক্ষা করে এবং ব্য’ভি’চা’র থেকে বিরত থেকে);

৪- স্বামীর আনুগত্য করবে।

এমন নারীদের জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিজি ও তাবরানি)

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদিসের আলোকে কোনো নারী যদি তার ওপর অর্পিত উল্লেখিত ৪টি কাজ যথাযথভাবে পালন করে; ওই নারীর জন্য জান্নাতের ৮টি দরজাই খোলা থাকবে। কারণ উল্লেখিত কাজগুলোর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত নারীর জন্য সব বিধানই পালন করা হয়ে যাবে।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহ সব নারীদেরকে উল্লেখিত হাদিসের আলোকে নামাজ, রোজা, চরিত্র ও স্বামীর আনুগত্য করার তাওফিক দান করুন। জান্নাতের সব ক’টি দরজাই তাদের জন্য সুনিশ্চিত থাকুক। আল্লাহুম্মা আমিন।

Check Also

Where Do Health Care Assistants Work? A Comprehensive Guide

Where Do Health Care Assistants Work? A Comprehensive Guide

Health care assistants play a crucial role in the medical field, offering hands-on care to …