অবসরের পরও বেনজীরের নিরাপত্তায় থাকবে অস্ত্রধারী পুলিশ

অবশেষে আগামীকাল শুক্রবার ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যাচ্ছেন পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। নিরাপত্তাজনিত কারণে অবসরের পরও তার সঙ্গে ও বাড়িতে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার ২৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শফিকুল ইসলামের সই করা চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদের অবসর প্রস্তুতিজনিত ছুটিকালে তার বাড়িতে এবং সঙ্গে একটি গাড়িতে সাদা পোশাকে অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের অবসরের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৭ নং আইন) এর ধারা ৪৩(১) (ক) অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো।

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, তার অনুকূলে ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ল্যাম্পগ্রান্টসহ ১ অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ বছরের অবসর ও অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) মঞ্জুর করা হলো। বিধি অনুযায়ী অবসর ও অবসরোত্তর ছুটিকালীন সুবিধাদি পাবেন বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ড. বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের এপ্রিলে পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। আইজিপি হওয়ার আগে তিনি র‍্যাব মহাপরিচালক ও ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। বেনজীর আহমেদ গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

কাউন্সিলর একরামুলের ঘটনা আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি: বেনজীর আহমেদ: এবার কাউন্সিলর একরামুল হকের নিহতের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিদায়ী মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, কাউন্সিলর একরামুল হকের ঘটনা আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি। আজ বৃহস্পতিবার ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ড. বেনজীর আহমেদ এ কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, আমাদের দেশে একধরনের নষ্ট রাজনীতির দুষ্টচর্চা ছিল, এখনো আছে। একশ্রেণির মানুষের নষ্ট রাজনীতির দুষ্টচর্চায় যারা আমাকে অন্যায় ও আযৌক্তিকভাবে তাদের বিপক্ষে আবিষ্কার করেছে তাদের প্রতিও আজ আমার কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ নেই। তারাও ভালো থাকবেন, সে প্রত্যাশা করবো।

এদিকে একরামুলের ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, যে ঘটনাটির কথা উল্লেখ করলেন এটা কিন্তু একটা লিগ্যাল বিষয়। লিগ্যাল বিষয়টা যদি অন্যায্য বা অনৈতিক এ ধরনের কিছু চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। এটা আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি। এটা ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে…। আমার ফিল্ড লেভেলের লোকজন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনা ঘটার পরে যে ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন তার সঙ্গে কিন্তু ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। এটা কিন্তু ব্যক্তিগত বিষয় না।

আইজিপি আরও বলেন, ‘খুন হলেও দুটো পক্ষ হয়ে যায়। ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত। পুলিশ দুই দলকে খুশি করতে পারে না। এ কারণে একপক্ষ সব সময় ভুল বোঝে। আইনি দায়িত্ব পালন করতে যাওয়ায় অনেকেই বিপক্ষে গেছেন। সেটা বিদায়লগ্নে আর বলতে চাই না।’ সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘জিম্মিদশা থেকে ওই এলাকার মানুষকে মুক্ত করতে পেরেছি।’

এদিকে পুলিশের সবচেয়ে বড় পদে দায়িত্ব পালনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কোনো মানুষই আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এর বাইরে আরেকটা বিষয় থাকে সামাজিক প্রত্যাশা। সামাজিক প্রত্যাশার জন্যও অনেক কিছু করতে হয়েছে। দায়িত্ব পালনে যিনি অপর পাড়ে ছিলেন। লাইনের উল্টো দিকে ছিলেন। তিনি নিজেকে প্রতিপক্ষ মনে করলে সঠিক হবে না। ’

পুলিশ আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালায়: বিদায়ী আইজিপি বেনজীর: সংসদ সদস্য হতে চান কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের বিদায়ী মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানুষ। চ্যালেঞ্জময় জীবন আমার। আগামীতে চ্যালেঞ্জ আসলে নেবো।’

এদিকে অবসরে যাওয়ার আগে আজ বৃহস্পতিবার ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, পুলিশের গুলিতে মানুষের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত, এসব ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তবে পুলিশ আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালায়।

এ সময় বেনজীর আহমেদ জানান, পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যদের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রোধে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে কয়েক ধাপে শাস্তির আওতায় আনার বিধান রয়েছে।

এদিকে সুন্দরবনের জলদস্যু আত্মসমর্পণের বিষয়েও কথা বলেন বিদায়ী এ আইজিপি। তিনি বলেন, এটা ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। পুলিশ তাদের আত্মসমর্পণ না করালেও পারতো। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে তাদের একটা নতুন জীবন দেয়া হয়েছে। তাছাড়া চাকরি জীবনে তার সব সাফল্য শেখ হাসিনা সরকারের; আর ব্যর্থতা নিজের বলেন জানান বেনজীর আহমেদ।

সব ভালো কাজের ক্রেডিট দেশের মানুষের, ব্যর্থতা আমার: শেষ কর্মদিবসে বেনজীর: এবার ডিএমপি কমিশনার, র‌্যাব ডিজি ও পুলিশের আইজিপি হিসেবে পুলিশের শীর্ষ পদে দীর্ঘ ১২ বছর দায়িত্ব পালনকালে সব ভালো কাজের ক্রেডিট সরকার ও জনগণের। আর ব্যর্থতাগুলো নিজের বলে মন্তব্য করেছেন বিদায়ী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার ২৯ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

এদিকে আগামীকাল শুক্রবার ৩০ সেপ্টেম্বর আইজিপি বেনজীর আহমেদ দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৩৪ বছরের পুলিশের কর্মজীবন শেষে অবসরে যাচ্ছেন। অবসরে যাওয়ার আগে শেষ কর্মদিবসে নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের নানা অর্জনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। চাকরি জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন, সব চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ। যতক্ষণ না পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম না করতে পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত সেটাই নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, আপনারা মনে করতে পারছেন কিনা ফরমালিনের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতা নিয়ে শত শত টন ফরমালিন মেশানো মাছ-মাংস-ফল-সবজি ধ্বংস করে জাতিকে ফরমালিনমুক্ত খাবার উপহার দিয়েছি। ওই সময়ে দেশে বছরে প্রায় ৭০০ টন ফরমালিন আমদানি হতো। এখন আমদানি হয় কম-বেশি ১০০ টন।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করা আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল। এ সমস্যা প্রায় ৪০০ বছরের, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছর পর্যন্ত দস্যুরা সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সুন্দরবনে যারা জীবিকা নির্বাহ করতো তারা দস্যুদের কাছে জিম্মি ছিলেন। মৌসুমের সময় নিয়মিত অপহরণ হতো সাধারণ মানুষ। আমরা তিন ডজন ডাকাতকে আত্মসমর্পণ করিয়েছি।

এ সময় বিদায়ী আইজিপি বলেন, এ ১২ বছরে যা কিছু ভালো হয়েছে তার ক্রেডিট সরকারের ও দেশের মানুষের। ব্যর্থতা থাকলে সেগুলোর দায় ডেফিনিটলি আমার। কারণ সেসব ক্ষেত্রে হয়তো রাষ্ট্রের দায়িত্ব আমি ঠিকমতো প্রতিপালন করতে পারিনি। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাকে সফলতা ব্যর্থতার মাপকাঠি হিসেবে না দেখি। আমি দেখতে চাই অর্জন কতটা হয়েছে, আর অর্জনের কী বাকি আছে? অর্জনের বিষয়টা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া কখনো শেষ হবার নয়।

তিনি বলেন, আমি দৌড়িছি, এখন আমার সহকর্মীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর হলে তিনি দৌড়াবেন। থিউরি অব পারফেকশন বলে পৃথিবীতে কোনো কিছুই পারফেক্ট না। মানুষের মানবিক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের যা কিছু করতে হয় মানবিক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই করতে হয়।

কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরাম নিহত হওয়ার ঘটনার সময় র‍্যাবের মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ। একরামের নিহত হওয়ার ঘটিনাটি তাকে অনুতপ্ত করে কিনা জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এ বিষয়টি একটি লিগ্যাল বিষয়। যে পর্যন্ত বিষয়টি অন্যায্য বা অনৈতিক প্রমাণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমার অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি, ঘটনাটি ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার ফিল্ড লেভেলের লোকজনের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, যেই ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন তার সঙ্গে ওই মাঠ পর্যায়ে লোকজনের ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না। তাই বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমরা একটি বিষয় দেখি আমাদের কোনো সহকর্মী দায়িত্বের বাইরে গেছে কিনা। কেউ যদি দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একরামের বিষয়েও একাধিক তদন্ত হয়েছে।

পুলিশের মধ্যে মানবাধিকার উন্নয়নের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশকে মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেবে বলে এদেশের এনজিওগুলো শত শত কোটি টাকা নিয়ে এসেছে। এখন এ হিসাব বের করলে দেখা যাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে। এসব টাকা আমরা আনিনি এনেছে এনজিওগুলো পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। এনজিও কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, তবে যখনই তারা ডেকেছে পুলিশ গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। পুলিশের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ সব সময় দেওয়া হয়। এছাড়া সরকার থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশের জবাবদিহিতা আছে।

অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত দায়িত্বে আছি। অবসর নেব আগামীকাল। আগামীকালের পরে অবসর নিয়ে ভাববো। তবে অবসরের পর এ সমাজের অংশ হিসেবে মানুষের সঙ্গে বসবাস করবো বাকি সারাটা জীবন। অনেকে বলে ড. বেনজীর আহমেদ চাকরি জীবন শেষে রাজনীতিতে আসবেন, তিনি রাজনৈতিক নেতাদের মতো বক্তব্য দেন। এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আমি তো এমন কথা কখনো বলেনি। অন্যের বক্তব্যের বিষয়ে আমি কোনো উত্তর দিতে আগ্রহী না।

এদিকে বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে অনেক সময় মানুষ মারা যায়, এ বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো আনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমাদের প্রাথমিক ও প্রধান লক্ষ্য থাকে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য। এর জন্য আমাদের হাতে অস্ত্র থাকে। এছাড়া এসব ঘটনার বিষয় নির্বাহী ও বিভাগীয় তদন্ত হয়।

About admin

আমার পোস্ট নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথরা মেইল করতে পারেন admin@sottotv.com এই ঠিকানায়।