চলতি কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে হট ফেবারিট ব্রাজিল। পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ব্রাজিল কিন্তু কখনই বিশ্বকাপের মঞ্চে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারেনি। এখন পর্যন্ত দুইবারের দেখায় দুটি ম্যাচই ড্র হয়েছে। আগামী সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার ম্যাচে এই ইতিহাস কি বদলাবে?
এই নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে একই গ্রুপে পড়েছে ব্রাজিল আর সুইজারল্যান্ড। গত রাশিয়া বিশ্বকাপে দুই দলের ম্যাচটি ১-১ ড্র হয়েছিল। এর আগে ১৯৫০ বিশ্বকাপে দুই দলের প্রথম দেখার ম্যাচটি ড্র হয় ২-২ ব্যবধানে।
তাই আগামী সোমবার দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ বৈশ্বিক আসরে পরস্পরের বিপক্ষে প্রথম জয়ের খোঁজে আছে দুই দলই। সব মিলিয়ে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে সব মিলিয়ে ৯টি ম্যাচ খেলেছে ব্রাজিল। যার মধ্যে তিনটিতে জয় তাদের, দুটি জিতেছে সুইসরা। আর বাকি চারটি ড্র।
এদিকে দুই দলই জয় দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু করেছে। সার্বিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতেছে ব্রাজিল। আর ক্যামেরুনকে ১-০ গোলে হারিয়েছে সুইসরা। আজকের ম্যাচ যারা জিতবে, তারাই ‘জি’ গ্রুপ থেকে শেষ ষোলোর টিকিট পাবে।
গত ১০ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ হারেনি ব্রাজিল
চলতি কাতার বিশ্বকাপে আজ মাঠে নামছে ব্রাজিল। প্রতিপক্ষ সার্বিয়া। এই ম্যাচ দিয়েই বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু হচ্ছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। ‘জি’ গ্রুপে ব্রাজিলের বাকি দুই প্রতিপক্ষ হলো সুইজারল্যান্ড ও ক্যামেরুন। ২০০২ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল প্রতি আসরেই ফেভারিট থাকে। এবারের দলটি দুর্দান্ত হওয়ায় প্রত্যাশা আরো বেশি।
গত ১০টি বিশ্বকাপ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ব্রাজিল কখনো প্রথম ম্যাচ হারেনি। ১৯৮২ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল ব্রাজিল। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে স্পেনকে হারিয়েছিল ১-০ গোলে। ওই আসরে তারা বিদায় নেয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। আর ঐতিহাসিক ফাইনালে শিরোপা জিতে নেয় দিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা।
১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সুইডেনকে ২-১ গোলে উড়িয়ে দেন দুঙ্গা, তাফারেল, মুলাররা। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে ব্রাজিল নিজেদের চতুর্থ শিরোপা জিতে নেয়। প্রথম ম্যাচে ২-০ গোলে তারা হারিয়েছিল রাশিয়াকে। ব্রাজিলের চিরকালীন দুঃখ ১৯৯৮ বিশ্বকাপ। ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে যাওয়া ব্রাজিল প্রথম ম্যাচটি জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। প্রতিপক্ষ ছিল স্কটল্যান্ড।
২০০২ বিশ্বকাপে পঞ্চম তথা সর্বশেষ শিরোপা জিতে ব্রাজিল। ওই আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা হারিয়ে দেয় ২-১ গোলে হারিয়েছিল তুরস্ককে। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতেছিল ব্রাজিল। ২০১০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ ছিল উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে। ম্যাচটি ব্রাজিল জিতেছিল ২-১ গোলে।
ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ২০১৪ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতেছিল ব্রাজিল। একমাত্র আত্মঘাতী গোল করেছিলেন মার্সেলো। গত রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে জয়রথ থামে ব্রাজিলের। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচ ড্র হয়েছিল। আজ সার্বিয়ার বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করবে ব্রাজিল?
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সর্বোচ্চ ফাউলের শিকার নেইমার
আগের মতো এবারও ফাউলের বড় শিকার নেইমার। সার্বিয়ার বিপক্ষে হাফ টাইম না পেরোতেই পাঁচবার আক্রমণ করা হয় তাকে। যা এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ৫১ মিনিটে প্রথমবার ডি বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেন নেইমার। কিন্তু ফাউলের হাত থেকে তার রেহাই কই। যদিও এর বিপরীতে ফ্রি-কিক পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। কর্ণার পেলেও আবারও ব্যর্থ হন তিনি। যদিও শেষ হাঁসি হেসেছে ব্রাজিল।
এদিন শুরুর অর্ধে যোজন যোজন ব্যবধানে সার্বিয়ার চেয়ে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধেও দেখা মিলল একই দৃশ্যের। তবে গোলের দেখা মিলছিল না যেন কিছুতেই। ম্যাচের ঘড়িতে এক ঘণ্টা পেরোনোর পর অবশেষে গোলের দেখা পেল পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নরা। তাও একবার নয়, দুবার!গোল দুটো করলেন রিচার্লিসন। নেইমার-রাফিনিয়ার সৃষ্টিশীলতা, ভিনিসিয়াসের গতিতে সেলেসাওরা প্রতি আক্রমণেই ত্রাস ছড়াচ্ছিল বেশ।
তবে টুর্নামেন্টের ফেভারিট যারা, তাদের পারফর্ম্যান্স তো এমন হবারই কথা! ম্যাচের ১৩ মিনিটে ম্যাচের প্রথম কর্নারটা যায় ব্রাজিলের পক্ষে। নেইমার সরাসরি গোলেই শট করে বসেছিলেন। গোলরক্ষক ভানজা মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ দারুণভাবে বলটা প্রতিহত করেন। তবে ম্যাচের প্রথম গোলমুখে শটটা আসে ২১ মিনিটে। নেইমারের সেই শটটা রুখতে কোনো সমস্যাই হয়নি ভানজার।
প্রতি আক্রমণে এরপর সার্বিয়াও খানিকটা ত্রাস ছড়াতে চেয়েছে। তবে সেসবকে গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার পর্যন্ত পৌঁছুতে দেয়নি ব্রাজিল রক্ষণ। ব্রাজিল প্রথম বড় সুযোগটা তৈরি করে ২৮ মিনিটে। থিয়াগো সিলভার রক্ষণচেরা পাস বামপাশে অরক্ষিত ভিনিসিয়াসকে খুঁজে পায়, তবে গোলরেখা থেকে এগিয়ে এসে সেটা ঠেকিয়ে দেন ভানজা মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ।
ম্যাচের ৩৫ মিনিটে রাফিনিয়া বড় একটা সুযোগই পেয়ে বসেছিলেন বক্সের একটু ভেতরে। তবে দুর্বল শটে সে সুযোগটা নষ্ট করেছেন তিনি। ৪১ মিনিটে সার্ব রক্ষণের ভুলে সুযোগ পায় সেলেসাওরা। নিকোলা মিলেঙ্কোভিচ বলটা তুলে দিয়েছিলেন ভিনিসিয়াসের পায়ে। তবে শেষমেশ তার ট্যাকলেই গোলটা হজম করা থেকে রক্ষা পায় তার দল সার্বিয়া।
ম্যাচের প্রথমার্ধে খুব একটা সময় নষ্ট হয়নি। তাই ১ মিনিট দেওয়া হয়েছিল ইনজুরি সময়, গোলের দেখা তখনো পায়নি ব্রাজিল কিংবা সার্বিয়ার কেউ। ফলে গোলহীনভাবেই শেষ হয় ম্যাচটির প্রথম ৪৫ মিনিট। বিরতির পরও ম্যাচে শ্রেয়তর দল হয়ে থাকল ব্রাজিলই। প্রথমার্ধে দারুণ খেলা গোলরক্ষক মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ মারাত্মক ভুল করে বসেন বিরতি থেকে ফিরেই, বল তুলে দেন রাফিনিয়ার পায়ে। তবে দারুণ একটা সেভ দিয়ে তিনি শেষমেশ সে যাত্রায় রক্ষা করেন তিনিই।
এরপর অ্যালেক্স সান্দ্রোর দারুণ এক শট তার হাত ফাঁকি দেয়, প্রতিহত হয় বারপোস্টে। ব্রাজিলের অপেক্ষাটা তাই কেবল বাড়ছিলই। সে অপেক্ষাটা শেষ হয় এসে ৬২ মিনিটে। নেইমারের হারানো বলটা বক্সের ভেতর পান ভিনিসিয়াস। তার শটটা ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ, তবে রিচার্লিসনের ফিরতি শটটা আর ফেরাতে পারেননি। ম্যাচের প্রথম এক ঘণ্টায় দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে কম শট নেওয়া খেলোয়াড়টাই সোনালী এক ছোঁয়ায় ব্রাজিলকে এনে দেন স্বস্তি।
ম্যাচের ৭৩ মিনিটে আবারও রিচার্লিসনের জাদু। বাম প্রান্ত থেকে ভিনিসিয়াস বলটা বাড়ান তাকে। হেভি টাচে বলটা আয়ত্বে নেন রিচার্লিসন, তবে সেটা পুষিয়ে দিলেন পরের ছোঁয়াতে। অ্যাক্রোব্যাটিক কারিশমা দেখালেন যেন, অনেকটাই উলটে গিয়ে করলেন অবিশ্বাস্য এক শট। বলটা তাতে গিয়ে আছড়ে পড়ল সার্বিয়ার জালে। দ্বিতীয় গোলের দেখা পাওয়া ব্রাজিল পেয়ে গেল জয়ের দিশাও।