দুই লাখ টাকা বেতনসহ ৩৫ প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন দুদকের সেই শরীফ

দেশের একটি বড় এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে মাসে ২ লাখ টাকা বেতনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হবার প্রস্তাব পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। একই সঙ্গে দেশের বেসরকারি প্রায় ৩৫টি প্রতিষ্ঠান তাকে ভালো বেতনে চাকরির অফার করেছে। বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে এমন তথ্য নিজেই জানিয়েছেন দুদকের এক সময়ের এই আলোচিত কর্মকর্তা।

সম্প্রতি দুদকের চাকরি হরিয়ে ভাইয়ের ছোটা দোকান সামলানোর খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হবার পর শরীর একের পর এক চাকরির অফার পাচ্ছেন। শরীর উদ্দিন বলেন, ‘দুদক থেকে চাকরিচ্যুত হবার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির চেষ্ঠা করেও কোন চাকরি মিলছিলো না। অপরদিকে দুদকের চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য মামলা দায়ের, মামলার খরচ সামলানো, পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল আমাকে। ফলে চট্টগ্রামের ষোলশহরস্থ ভাইয়ের দোকানে ক্যাশ সামলানোর কাজ শুরু করি। এই বিষয়টি জানাজানি হবার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান আমাকে চাকরি দিতে এগিয়ে আসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স কোম্পানি মাসিক দুই লাখ টাকা বেতনে তাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া দুই ডজনেরও বেশি কোম্পানি তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরির অফার লেটার পাঠিয়েছে। তবে আমি কোন প্রতিষ্ঠানে যোগ দেবো সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।’

চাকরি পেলেও দুদক থেকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতির বিষয়ে দায়েরকৃত মামলা চালিয়ে যাবেন বলেও জানান শরীফ। শরীফ বলেন, কক্সবাজারে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি এবং দুর্নীতির মামলা দায়ের ও তদন্ত করে দুর্নীতিবাজদের রোষানলে পড়েন তিনি। অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় তাকে। চাকরি ফিরে পাওয়ার আবেদন করলেও তা হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টা করলেও প্রভাবশালীদের বাধার মুখে হচ্ছে না। শেষমেশ বাধ্য হয়ে বড় ভাইয়ের দোকানে চাকরি করছি।

দুদকের সেই সাবেক কর্মকর্তা শরীফ এখন দোকানদার

চাকরি চলে যাওয়ার পর সিভি নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরেছি। কেউ চাকরি দেয়নি। শেষে বড় ভাই বলল-তার দোকানে বসতে। বাসার বাজার খরচ শ্বশুড়বাড়ি থেকে পেয়ে থাকি। চাকরি চলে যাওয়ার পর টেনশনে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনে ভুগছি। ওষুধ কেনার টাকা নেই। চিকিৎসককে বলেছি ওষুধ কমিয়ে দেওয়ার জন্য। কথাগুলো বলেছেন দুদক থেকে চাকরি হারানো মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন।

নগরীর ষোলশহর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একটি কনফেকশনারির দোকানে নিয়মিত বসে পণ্য বিক্রি করছেন শরিফ। দোকানটি তার বড় ভাইয়ের মালিকানাধীন। বড় ভাই ঠিকাধারীসহ অন্যান্য ব্যবসা করেন।

দুদকের সাবেক কর্মকর্তা শরিফকে কেমন আছেন জানতে চাইলে বলেন, চাকরির জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানে ধর্না দিয়েছি। কেউ চাকরি দেয়নি। বিদেশ চলে যাওয়ার চিন্তা করেছিলাম। পরে ভাবলাম আমার মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে। সেটিকে পরিচালনা করবে। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা কে দেখবে। বড় ভাই বললেন আমার দোকানটা দেখাশোনা কর। গত দেড় মাস যাবত দোকানে বসে বেচা-বিক্রি করছি। ছোট দোকান বেচা-বিক্রি মোটামুটি হয়ে থাকে। আমার ৩ বছর বয়সী ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। মেয়েটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ে। ছেলেকে এখনো ভর্তি করিনি।

চাকরি চলে যাওয়ার পর গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বেতন পাচ্ছি না। কিন্তু পারিবারিক খরচ থেমে থাকেনি। চাকরি নেই, বেতন নেই কীভাবে পরিবার নিয়ে চলবো। এই চিন্তায় এখন আমি নানা রোগে আক্রান্ত। আমার শ্বশুড়বাড়ি থেকে বাজার খরচের টাকা পেয়ে থাকি। এর বাইরে আমার নিজের ওষুধ ও মেয়ের পড়ালেখার খরচ ছাড়াও আমার নিজের অন্যান্য খরচ তো আছে। ভাইয়ের দোকান চালিয়ে যা পাই তা দিয়ে নিজের খরচ চালাতে হচ্ছে। বাবার বাসায় থাকি। তাই বাসা ভাড়া দিতে হয় না। সেই দিন ডাক্তারকে বলেছি ওষুধ কমিয়ে দিতে। কারণ এতোগুলো ওষুধ কেনার আমার টাকা নেই।

শরিফ বলেন, এখন অফিসের সহকর্মীরা ফোন করলেও রিসিভ করে না। সবাই এড়িয়ে চলছে। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। তারপরও মনোবল হারায়নি। হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন আছে। আমি আশাবাদী মামলার রায় আমার পক্ষে আসবে। আমি কোন দুর্নীতি করেনি। মামলা তদন্তে আমি অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করেছি।

দুদকের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক এই কর্মকর্তা চাকরি জীবনে অনেকগুলো স্পর্শকাতর দুর্নীতির মামলা তদন্ত করেছেন। রোহিঙ্গা এনআইডি জালিয়াতি, কক্সবাজারের কয়েকটি প্রকল্পের দুর্নীতি, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একাধিক মামলা তদন্ত করেছেন তিনি।

About admin

আমার পোস্ট নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথরা মেইল করতে পারেন admin@sottotv.com এই ঠিকানায়।