আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখরিত ইজতেমা ময়দান, কাল আখেরি মোনাজাত

এবার ইবাদত-বন্দেগি, যিকির-আযকার ও দেশ-বিদেশের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শুনে টঙ্গীর ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্বের প্রথম দিন অতিবাহিত করেছেন মুসল্লিরা। আজ শনিবার চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন। বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদুল হকের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এদিকে মাওলানা ক্কারী যোবায়েরের বয়ান বাংলায় তরজমা করছেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমা মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম। তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লিদের উদ্দেশে তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা কোরআন-হাদিসের আলোকে ঈমান, আমল, আখলাক ও কালেমা সম্পর্কে বয়ান করেন। প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত এ বয়ান চলে।

এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয় গতকাল শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হকের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে। দুপুরে ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণকালের বৃহৎ জুমার নামাজ। জুমার নামাজে ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লিদের পাশাপাশি ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের জেলার লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নেন।

ইজতেমার প্রথম পর্বে দেশের ৬৪ জেলার মাওলানা জুবায়ের অনুসারী দেশি বিদেশি মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। এর জন্য ইজতেমা ময়দানকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। কিন্ত মুসল্লি সমাগম বেশি হওয়ায় ইজতেমা শুরুর আগের দিনই ময়দান পূর্ণ হয়ে যায়। পরে মুসল্লিরা নির্ধারিত খিত্তায় স্থান না পেয়ে তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে, ময়দানের পাশের কামারপাড়া সড়কে ও ফুটপাতে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাতে এবং খোলা জায়গায় অবস্থান নিয়ে ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে আগত বিদেশি মুসল্লিদের জন্য ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিমপাশে তৈরি করা হয়েছে বিদেশি নিবাস। দ্বিতীয় দিনও ইজতেমায় যোগ দেওয়া দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের ময়দানে আসা অব্যহত রয়েছে। ইজতেমা উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের পদচারণায় টঙ্গীর ইজতেমাস্থল এবং এর আশপাশ এলাকা এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে।

আগামীকাল রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। পরে চারদিন পর আগামী ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয়পর্ব। এ পর্বে মাওলানা সাদ অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নেবেন।

বিশ্ব ইজতেমায় এসেছেন ৬৬ দেশের ৫২৮৬ জন মুসল্লি

আজ চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন। বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদুল হকের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এদিকে বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সেবা প্রদানের লক্ষে এবারই প্রথম ইজতেমায় কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ। এখন পর্যন্ত ৬৬ দেশ থেকে ৫ হাজার ২৮৬ জন বিদেশি মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। আরও কিছু মুসল্লি আসবেন। আজ শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১১টার সময় গাজীপুর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম পুলিশ কন্ট্রোল রুমে এসব কথা বলেন টুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি মো. ইলিয়াস শরীফ।

তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিদের অনেকের পাসপোর্ট হারিয়ে যাচ্ছে, সিম পাচ্ছেন না, ম্যানিবাগ হারিয়ে যাচ্ছে। তাদের এসকল সমস্যা অন্যান্য সেবা সংস্থার সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি। আমাদের হট লাইন চালু রয়েছে। আমরা সবার সাথে যোগাযোগ রাখছি যেন বাংলাদেশ ভ্রমণ তাদের জন্য নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হয়। তিনি আরো বলেন, ইজতেমা মোনাজাত শেষে বিদেশি মেহমানরা দেশের বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। আমরা টুরিস্ট পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছি। তারা কে কোথায় যায় তার সঠিক তথ্য সংগ্রহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সাল থেকে টুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে।

আগামীকাল রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। পরে চারদিন পর আগামী ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয়পর্ব। এ পর্বে মাওলানা সাদ অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নেবেন।

ইজতেমায় বেশি দামে খাবার বিক্রি, ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫টি অভিযান পরিচালনা করেছেন। এসব অভিযানে ১৪ মামলায় ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও আদায় করা হয়েছে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ইজতেমা মাঠের আশপাশে এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন জানান, বেশি দামে খাবার বিক্রি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করার অভিযোগে সাত অভিযানে সাত জনকে ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এদের মধ্যে আল মদিনা হোটেলকে আট হাজার, হোটেল বাগেরহাটকে পাঁচ হাজার, আল্লাহর দান হোটেলকে পাঁচ হাজার, হোটেল কাতারকে তিন হাজার, হোটেল হেভেনকে তিন হাজার, বগুড়ার দইকে ১০ হাজার ও একটি কম্বলের দোকানকে তিন হাজার টাকা জরিমানা ও আদায় করা হয়। এ সময় প্রায় ৩০ কেজি বাসি খাবার ও দই বিনষ্ট করে সতর্ক করা হয়েছে।

অপরদিকে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সায়েম ইমরান জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মুন্নু গেট পর্যন্ত আশপাশের এলাকায় দোকানে অভিযান পরিচালনা করে তিন জনকে এক হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। খাবার ও অন্যান্য পণ্যের দাম বেশি রাখায় তাদেরকে জরিমানা করা হয়। বোর্ডবাজার এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন হোটেল এবং রেস্তোরাঁয় চার জনকে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেন।

তিনি আরও জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি না করা এবং অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি না করার জন্য ইজতেমা এলাকার অন্যান্য হোটেল মালিক, খাবার ও ফল বিক্রেতাদেরকে সচেতন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।