এবার পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করতে প্রিয়জনদের একটু সুখ-শান্তি রাখার নিয়তে বিদেশ-বিভুঁইয়ে পাড়ি জমান বাংলাদেশিরা। গতর খাটান, ঘাম ঝরান। শরীর ভালো নাকি মন্দ সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। প্রবাসে তাদের একটাই লক্ষ্য, কী করে একটু বেশি আয় করা যায়। কীভাবে বাড়িতে আরও কিছু বেশি টাকা পাঠানো যায়। আর তাই নিয়মিত আট ঘণ্টার কাজের বাইরেও অতিরিক্ত আরও চার-পাঁচ ঘণ্টা পরিশ্রম করেন।
যতটুকু না খেলেই নয়, ততটুকু খেয়ে টাকা সঞ্চয় করেন। মাস শেষে যে বেতন পান তার বড় অংশটুকুই পাঠিয়ে দেন বাড়িতে। মালয়েশিয়ায় এমনই একজন প্রবাসীর সন্ধান মিলেছে। টাকা বাঁচাতে যিনি ভাতের সঙ্গে শুধু একটা পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ খান। জমানো সেই টাকার পুরোটাই দেশে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন। ওই প্রবাসীর একটা অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত বুধবার ৩০ নভেম্বর স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে ১ মিনিট ছয় সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দুপুরের খাবারে ভাতের সঙ্গে পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ খাচ্ছেন ওই প্রবাসী। তবে এখন পর্যন্ত ওই প্রবাসীর নাম-ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ভাইরাল ওই ভিডিওতে এক প্রশ্নের উত্তরে ওই প্রবাসী বলছেন, খাবারে ভাতের সঙ্গে পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ খেয়ে দিন পার করে দেন তিনি। আর রাতের বেলায় তিনি শসা খেয়েই থাকেন। টাকা বেশি খরচ হবে বলে মাছ-মাংস খান না। মালয়েশিয়ায় আসার প্রথম দিকে ভালো কিছু খেলেও পরিবারের আর্থিক সংকটের কথা বিবেচনা করে তারপর তিনি মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন।
পেঁয়াজে এক কামড় আর কাঁচামরিচে এক কামড় দিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রতি মাসে ৫ হাজার ৫০০ রিঙ্গিত (মালয়েশীয় মুদ্রা) আয় করেন তিনি। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হয় ১ লাখ ৩৭ হাজারের অধিক। আয় থেকে মাত্র ৩০০ রিঙ্গিত নিজের খরচের জন্য রেখে দেন। বাকিটা পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন। অর্থাৎ প্রতিমাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা রেমিট্যান্স পাঠান তিনি।
খেতে খেতে ওই প্রবাসী আরও জানান, পরিবার-পরিজন ছেড়ে এভাবে গত ১৯ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। আর এই সময়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। সব টাকাই দেশে সঞ্চয় করেছেন বলেও জানান তিনি। তার কথা শুনে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, মা-বাবার প্রতি কর্তব্য পালন করতে এত অল্প বয়সে মালয়েশিয়ায় এসে যে কষ্ট আপনি করছেন তা দেখে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার প্রতিটি পরিবারের সন্তানদের শেখা উচিত।