আমরা আলো দেখছি, সেমিফাইনাল প্রসঙ্গে সাকিব

চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সফলতম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই বলা যায়। কারণ এর পূর্ববর্তী আসরগুলোর ‍মূলপর্বে সাফল্য তো দূর জয়ের দেখাও ছিল না টাইগারদের। সেখানে এবারের বিশ্বকাপের আসরে ইতিমধ্যেই দুইটি জয় পেয়েছে সাকিব-লিটনরা।

ফলে সুপার টুয়েলভের গ্রুপ-২ থেকে ৬ দলের লড়াই সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্নও দেখছে বাংলাদেশ। কারণ ইতিমধ্যেই তিন ম্যাচে দুই জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে অবস্থান করছে সাকিবের দল। যদিও সেমিফাইনালে যাওয়ার সমীকরণটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন। কারণ শেষ দুই ম্যাচেই জয় খুঁজতে হবে টাইগারদের। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ থাকবে শক্তিশালী ভারত ও পাকিস্তান।

বিষয়টি কঠিন মনে হলেও স্বপ্ন ঠিকই দেখছেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের পর কাপ্তান জানিয়েছেন, তারা শেষ পর্যন্ত লড়াইটা চালিয়ে যাবেন।

সাকিব বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা পরবর্তী দুইটি ম্যাচ খুব ফ্রি থাকবো। চাপমুক্ত ক্রিকেট খেলতে পারবো। যদিও আমাদের প্রতিপক্ষ যথেষ্ট শক্তিশালী, তবে আমরাও শেষ পর্যন্ত লড়াই করবো। কারণ দুই জয়ের পর কিছু আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি। ফলে আশা করছি, সামনে আরও জয়ের দেখা পাবো।’ সাকিব আরও বলেন, ‘এবারের বিশ্বকাপটা খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। ফলে আগে থেকেই কিছু অনুমাণ করে বলে দেওয়া যাচ্ছে না।’

জিম্বাবুয়ের ম্যাচ প্রসঙ্গে সাকিব মনে করেন টার্নিং পয়েন্ট ছিল উইলিয়ামসের সেই রান আউট। অধিনায়ক বলেন, ‘আমি মনে করি ম্যাচের গুরুত্বপূর্ন মোমেন্ট ছিল উইলিয়ামসের রান আউট। তবে মোসাদ্দেককেও কৃতিত্ব দিতে হয়। সে শেষ ওভারে তার কাজটা সম্পূর্ন করতে পেরেছে।’

শেষ বলের আগেও সোহানকে সতর্ক করেছিলাম: সাকিব

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখলো বাংলাদেশ। ব্রিসবেনের গাব্বায় টসে জিতে আগে ব্যাটিং করে জিম্বাবুয়েকে ১৫১ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় টাইগাররা। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪৭ রানে শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ফলে ৩ রানের জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে চলে এসেছে সাকিবের দল।

তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই জয়টা মোটেও সহজ ছিল না বাংলাদেশের। কারণ শেষ ওভারের শেষ বলে জয় নিশ্চিত করতে হয়েছে সাকিব বাহিনীর। সেই শেষ বল জুড়েও ছিল নাটকীয়তা। মোসাদ্দেকের শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৫ রান। ২০তম ওভারের মোসাদ্দেকের শেষ বলটি ব্যাটের ছোয়া না লেগে সরাসরি চলে যায় কিপারের গ্লাভসে। ফলে আপাতদৃষ্টিতেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। কিন্তু না! উইকেটরক্ষক সোহানের ভুলে শেষ হয়েও হয়নি শেষ।

টিভি ক্যামেরায় দেখা যায় বলটি স্ট্যাম্পের আগে থেকেই তালুবন্দি করেছেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। ফলে স্ট্যাম্পের আগে থেকে বলটি তালুবন্দি করায় ‘নো বল’ ঘোষণা হয় সেই ডেলিভারিটি। যার কারণে আরও অতিরিক্ত এক রান ও একটি বল পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ফলে শেষ বলে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ৪ রান। আবারও বল হাতে নিয়ে যান মোসাদ্দেক। এবারও শেষ বলটি ব্যাটে লাগাতে পারেননি মুজারাব্বানি। ফলে ৩ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।

চরম নাটকীয়তার এই ম্যাচে জয়ের টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান জানালেন, শেষ বলের আগেই সোহানকে সতর্ক করেছিলেন তিনি। তবুও এই ভুল কিভাবে হলো সেটাই যেনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না।

ম্যাচ শেষে সাকিব বলেন, ২০তম ওভারের ৫ম বলে সোহান একটি স্ট্যাম্পিং করেন। আমি তখনই ওকে সতর্ক করে বলেছিলাম বল তালুবন্দি করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে। তবুও সে শেষ বলে এই ভুল কিভাবে করলো সেটা আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। সাকিব আরও বলেন, এরপর আমি শেষ বলের আগে মোসাদ্দেকের সঙ্গে কথা বলতে যাই। ও আমাকে আস্বস্ত করে সবকিছু নিয়ন্ত্রনে আছে। কিন্তু তবুও আমি খুব চিন্তিত ছিলাম।

সাকিব মনে করেন ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল সেই রান আউট। অধিনায়ক বলেন, আমি মনে করি ম্যাচের গুরুত্বপূর্ন মোমেন্ট ছিল উইলিয়ামসের রান আউট। তবে মোসাদ্দেককেও কৃতিত্ব দিতে হয়। সে শেষ ওভারে তার কাজটা করতে পেরেছে।

কত ক্রিকেট ভক্তের যে হার্ট অ্যাটাক হতো ঠিক নাই: পাপন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। টানটান উত্তেজনার এই ম্যাচের ফল নির্ধারণ হয়েছে শেষ বলে। যেখানে ভাগ্য হেসেছে বাংলাদেশের হয়েই।

বাংলাদেশের এমন টানটান উত্তেজনার ম্যাচ দর্শকদের উপর প্রভাব ফেলে বলে মন্তব্য করেছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের পর সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘আজকের ম্যাচটা জেতা উচিতই ছিল বাংলাদেশের। নয়তো আমি সত্যিই খুব কষ্ট পেতাম। যদি এরকমটা না হতো, তাহলে কত ভক্তদের যে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো সেটার ঠিক নাই।’

তবে ৩ রানের জয়ে মন ভরেনি পাপনের।। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘ জিতলে তো ভালো লাগে। কিন্তু যে অবস্থা… টি-টোয়েন্টিতে আমরা এমন অনেকগুলো ম্যাচ হেরেছি।’

ডেথ ওভারের ব্যাটিং আর বোলিং নিয়ে বেশি হতাশা কাজ করছে পাপনের মনে। তিনি জানান, ‘শেষ ৩ ওভারে ব্যাটিং ও বোলিং দুটোতেই আমরা ভালো করছি এমন বলার প্রশ্ন ওঠে না। মানে খুবই খারাপ অবস্থা। আমরা শেষ ৩ ওভারে রানও পাচ্ছি না বল হাতে প্রচুর রানও দিয়ে দিচ্ছি। আজকের যে প্রতিপক্ষ, তাদের বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে না জেতার কোনো কারণই নেই। যেকোনো দল এই ম্যাচ আরও বড় ব্যবধানে জিতত। সেদিক দিয়ে মনটা একটু খারাপ।’

টি-টোয়েন্টিতে দীর্ঘদিন ধরে ছন্দহীন বাংলাদেশ দল ঘাটতিগুলো এখনও দূর করতে পারেনি বলে মনে করেন বোর্ড সভাপতি। তার ভাষায়, ‘টি-২০তে আমাদের যে সমস্যা রয়েছে এটা থেকে বের হতে পারছি না। এখনও ঐ সমস্যা রয়েই গেছে। তারপরও জিতেছে, ভালো।’

আমিও জীবনের প্রথমই দেখলাম: তাসকিন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের পর একটি বাক্যেই সবচেয়ে বেশি চর্চিত হয়েছে, সেটি হচ্ছে- ‘এক ম্যাচ দুইবার জিতেছে বাংলাদেশ দল।’ যদিও এটি কখনোই সম্ভব নয়, কিন্তু ব্রিসবেনের গাব্বায় এমন কিছুরই সাক্ষী হতে হয়েছে ক্রিকেট প্রেমীদের।

এদিন বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫১ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে জিম্বাবুয়ের শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। বল হাতে ম্যাচের শেষ ওভারটি করতে আসেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। প্রথম ৫ বলে খরচ করেন ১১ রান। ফলে জয়ের বন্দরে পৌছাতে জিম্বাবুয়ের শেষ বলে দরকার ছিল ৫ রান।

জিম্বাবুয়ের ১১তম ব্যাটার মুজারাব্বানি মোসাদ্দেকের শেষ বলটি ব্যাটেই লাগাতে পারেননি। ফলে বলটি সরাসরি চলে যায় উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। আপাতদৃষ্টিতেই তারই সঙ্গে জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। কিন্তু না! উইকেটরক্ষক সোহানের ভুলে শেষ হয়েও শেষ হয়নি ম্যাচটি।

টিভি ক্যামেরায় দেখা যায় বলটি স্ট্যাম্পের আগে থেকেই তালুবন্দি করেছেন সোহান। ফলে স্ট্যাম্পের আগে থেকে বলটি তালুবন্দি করায় ‘নো বল’ ঘোষণা হয় সেই ডেলিভারিটি। যার কারণে আরও অতিরিক্ত এক রান ও একটি বল পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ফলে শেষ বলে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন হয় ৪ রান। আবারও বল হাতে নিয়ে যান মোসাদ্দেক। এবারও শেষ বলটি ব্যাটে লাগাতে পারেননি মুজারাব্বানি। ফলে ৩ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।

স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেট ম্যাচে এরকম দৃশ্যের দেখা মেলে না কখনো। যেমনটা স্বীকার করে নিয়েছেন টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদও। বল হাতে তিন উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ম্যাচ শেষে এই টাইগার পেসার তার পুরস্কার গ্রহণ করতে গেলে সঞ্চালক বলেন, ‘শেষ বলে এমন নো বলের ঘটনা এবারই প্রথম দেখতে হলো আমাদের।’ জবাবে তাসকিন বলেন, ‘হ্যাঁ! শেষ বলে এরকম নো বল বা ম্যাচ পরিস্থিতি বোধ হয় এবারই জীবনের প্রথম দেখলাম। ওই সময়ে আমরা খুবই চিন্তিত ছিলাম। তবে আলহামদুলিল্লাহ আমরা ম্যাচটি জিততে পেরেছি।’

নিজের বোলিং নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘আমি সবসময়ই আমার উন্নতির দিকে বেশি নজর দিচ্ছি এবং আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আলহামদুলিল্লাহ সেটা করতে পেরে আমি খুশি। তাসকিন আরও বলেন, আমাদের বর্তমানে বেশ ভালো মানের কিছু পেস বোলার রয়েছে। সম্পূর্ন কোচিং প্যানেল আমাদের সমর্থন জোগাচ্ছে। একে অন্যেকে সাহায্য করছে।

শেষ মুহূর্তে দম বন্ধ হয়ে আসছিল: বুবলী

‘শেষ হয়েও হয় না শেষ’ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ কেমন ছিল, তার উত্তর হয়তো এই এক বাক্যেই দিতে চাইবে সকলে। ব্রিসবেনের গাব্বায় বাংলাদেশ-জিম্বা্বুয়ের ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে। যেখানে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ বলে জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচে এটি দ্বিতীয় জয় বাংলাদেশের। এই জয়ের ফলে সেমিতে যাওয়ার স্বপ্নও বেঁচে থাকল সাকিব বাহিনীর।

তবে আজকের জয়টা অতটা সহজ ছিল না সাকিব আল হাসানের দলের জন্য। বিশেষ করে ইনিংসের শেষ বলে ৪ রানে ‘জিতে’ প্লেয়াররা মাঠ ছাড়ার পরই ঘটে আসল নাটকীয়তা! আম্পায়ার জানিয়ে দেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের করা ওই বলটি ছিল ‘নো’ বল। ফলে আবার শুরু হয় শেষ বলের খেলা। শেষ পর্যন্ত চরম নায়কীয় এই ম্যাচে জিতে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। ম্যাচের শ্বাসরুদ্বকর এমন মুহূর্তে টাইগার ভক্তরাও ছিলেন চরম উত্তেজনায়। অনেকেই জানিয়েছেন এ সময় টেনশনে তাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা শবনম বুবলীও আছেন এই দলে।

এমন অসাধারণ জয়ের পর নিজের ফেসবুক পেজে টাইগারদের অভিনন্দন জানিয়ে নায়িকা বলেছেন, ‘শেষ মুহূর্তে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল! কিন্তু ফাইনালি আমরা জিতেছি। তোমাদের নিয়ে অনেক গর্বিত-বাংলার বাঘেরা।’ সঙ্গে ভালোবাসার ইমোজির মাঝখানে লেখেন, ‘বিডি’ মানে বাংলাদেশ। বুবলীর এই কথার সঙ্গে তার ভক্ত-শুভকাঙক্ষীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেন। অভিনন্দন আর বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসাময় সব মন্তব্যে ভরিয়ে দেন নায়িকার পোস্ট।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে হওয়া বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের এই ম্যাচটি পেন্ডুলামের মতো দুলছিল দুই দিকেই। ঠিক তখনই অধিনায়ক সাকিব বল তুলে দেন মোসাদ্দেকের হাতে! শেষ ওভারে ১৬ রানে জিম্বাবুয়েকে আটকাতে হবে তাকে। এমন দৃশ্যপটে সত্যিকারের সমর্থকদের দম বন্ধই হয়ে আসে। ছক্কা হজম করে উত্তেজনা বাড়ালেও মোসাদ্দেক শেষমেশ নিরাশ করেনি। নাটকীয়তা ছড়ানো ম্যাচে শেষ হাসি হাসে বাংলাদেশ!

About admin

Check Also

আমরা ভারতকে হারালে সেটা অঘটন হবে: সাকিব

আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে এশিয়ার অন্যতম দুই পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তান। বিশ্বকাপে …