ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে একই সঙ্গে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফিজয়ী ইংল্যান্ড

এবার ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে ইংল্যান্ড একই সময়ে একই সঙ্গে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফির মালিক হলো। আজ রবিবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বেন স্টোকসের গোছানো হাফ সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এই বিরল কীর্তি গড়ে তারা।

এদিকে ৩০ বছর আগে এই মাঠেই ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ইমরান খানের দলের কাছে হেরেছিল ইংল্যান্ড। এবার সেই আক্ষেপ ঘুচালো জস বাটলারের দল। ৯২-এ অনুপ্রাণিত বাবর আজমরা পারলো না সেইদিনটি ফেরাতে।

গত ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক স্টোকসের হাত ধরে এক যুগ পর টি-টোয়েন্টির শ্রেষ্ঠত্বও দখল করলো ইংল্যান্ড। তাতে করে বর্তমানে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির বিশ্বসেরা এখন ইংল্যান্ড।

এছাড়া ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের রেকর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ভাগ বসালো তারা। ২০১০ সালের পর দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হলো ইংল্যান্ড। আর ২০১২ ও ২০১৬ সালে বিশ্বসেরা হয়েছিল উইন্ডিজ।

পরিবারের সঙ্গে বিশ্বকাপজয়ীদের উল্লাস

আজ মেলোবোর্ন ক্রিকেট গ্যালারিতে পরিবারের সদস্যরা প্রস্তুতই ছিলেন। মোহাম্মদ ওয়াসিমের করা ১৯তম ওভারের বলটা বেন স্টোকস মিড উইকেটে ঠেলে দিতেই শুরু হয়ে যায় উল্লাস। দলের বাকিদের সঙ্গে মাঠে নেমে পড়েন ইংলিশ ক্রিকেটারদের পরিবারের সদস্যরাও। কারও স্ত্রী-সন্তান, কারও বাবা-মা।

আজ সবাই মিলে এক অভূতপূর্ব উদযাপন মেলোবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। এ সময় সন্তানের সঙ্গে গর্বিত বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারের আবেগমাখা উদযাপন করতে দেখ যায়।

এদিকে ফিল সল্ট জড়িয়ে ধরলেন গ্যালারিতে থাকা স্বজনকে। ইংলিশ অধিনায়কের মা-ও স্টেডিয়ামে এসেছিলেন ছেলের বিশ্বজয় দেখতে। ফাইনালের হিরো বেন স্টোকস। ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে যিনি দলকে আরও একটি বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছেন।

এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান ৮ উইকেটে ১৩৭ রান তোলে। সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন শান মাসুদ। ১২ রানে ৩ উইকেট নেন ম্যাচ ও টুর্নামেন্টসেরা স্যাম কারেন। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ১ ওভার এবং ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড। এটা তাদের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়।

ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ ও ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট পুরস্কার জিতলেন স্যাম কারেন

অবশেষে ইংল্যান্ডের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২। আজ মেলবোর্নে পাকিস্তানকে তারা হারিয়েছে ৫ উইকেটে। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন স্যাম কারেন। শুধু তা-ই নয়, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও উঠেছে এই ইংলিশ অলরাউন্ডারের হাতে।

বিশ্বকাপ ফাইনালে পাকিস্তানের ব্যাটিং একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন স্যাম কারেন। ৪ ওভার বল করে বাঁহাতি মিডিয়াম পেসে মাত্র ১২ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান।

রান তাড়ায় নেমে বেন স্টোকসের অপরাজিত ফিফটিতে ১ ওভার হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড। পুরো টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে স্যাম কারেনের উইকেট সংখ্যা ১৩টি।

এর মাঝে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার টুয়েলভের ম্যাচে মাত্র ১০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে কারেনের ম্যাচ ইমপ্যাক্টও ছিল দারুণ। তাই বেশ কয়েকজন দাবিদার থাকা সত্ত্বেও টুর্নামেন্ট সেরা হিসেবে স্যাম কারেনকেই নির্বাচন করা হয়েছে।

ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্য: বাবর

এবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর সুযোগ ছিল বাবর আজমদের সামনে। ১৯৯২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলেন ইমরান খান। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু বাবর আজম ও তার দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারলো না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে ১৩৭ রান তুলে এক ওভার থাকতে হেরেছে ৫ উইকেটে।

এদিকে যোগ্য দল হিসেবে ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলে ম্যাচ শেষে উল্লেখ করেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।

আজ ম্যাচ শেষে বাবর বলেন, ‘ইংল্যান্ডকে অভিনন্দন, তারা দারুণ লড়েছে, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্য তারা। মেলবোর্ন আমাদের ঘরের মাঠের মতো মনে হচ্ছিল। প্রতিটি মাঠেই আমরা সমর্থন পেয়েছি। ভক্তদের সেজন্য ধন্যবাদ।’

বাবর বলেন, ‘শুরুর দুই ম্যাচ হেরে আমরা আসর শুরু করি। পরের চার ম্যাচে আমরা যেভাবে খেলেছি তা অসাধারণ। খেলোয়াড়দের নেচারাল গেম খেলতে বলেছিলাম, তবে ২০ রানের মতো কম করে ফেলেছিলাম আমরা। আমাদের বোলিং বিশ্বের অন্যতম সেরা। তারা দারুণ লড়েছে। শাহিনের ইনজুরি ধাক্কা হয়ে আসে, তবে ওটাও খেলার অংশ।’

About admin

আমার পোস্ট নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথরা মেইল করতে পারেন admin@sottotv.com এই ঠিকানায়।