অর্থ : আমাদের সকল সালাম শ্রদ্ধা, আমাদের সব নামায এবং সকল প্রকার পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নবী, আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমাদের এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর আল্লাহ্র রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া (ইবাদাতের যোগ্য) আর কেউ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল।
নামাজের তাশাহুদে বর্ণিত শবে মেরাজে আল্লাহ ও তাঁর রাছুলের কথোপকথন: ইতিহাস, ব্যাখ্যা গুরুত্ব ও মাসয়ালা
ভিডিওতে দেখুন তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ:
তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) এর ইতিহাস: আমরা যারা নামাজ পড়ি, সকলেই জানি নামাজের দ্বিতীয় ও চতুর্থরাক’য়াতের শেষে-তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব। কিন্তু জানা আছে কি তাশাহহুদ এর ইতিহাস ?
কি পড়ি আমরা তাশাহহুদ এর মধ্যে ? আসুননা, আমরা আজকে জানার চেষ্টা করি তাশাহহুদ এর অর্থ আর ইতিহাস।
শুরুর কথা………… .হযরত খাদিজা (রাঃ) ইন্তেকাল করেছেন। মক্কার মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করলেও,,, অধিকাংশই মুশরিক রয়ে গেছে। তাই রাসুল (সাঃ) এর মনে অনেক ব্যাথা। দিনে দিনে রাসুলের (সাঃ) প্রতি কোরাইশদের অত্যাচারের মাত্রাও বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন রজব মাসের এক মহিমাম্বিত রজনীতে তার প্রিয় বন্ধুকে হযরত জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে তার সান্ধিধ্যে ডেকে নিলেন, যা ইতিহাসে মে’রাজ নামে পরিচিত। রাসুল (সাঃ) বায়তুল্লাহ হয়ে বায়তুল মোকাদ্দাস, অতপর উর্দ্ধজগতের সফর শুরু করলেন। বোরাক নামক বেহেশতি বাহনে চড়ে প্রথম আসমান, দ্বিতীয় আসমান, তৃতীয় আসমান করে অতপর সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছলেন। এ পর্যন্ত হযরত জিব্রাইল (আঃ) রাসুল (সাঃ) এর সাথী হলেন। সিদরাতুল মুনতাহাতে গিয়ে হযরত জিব্রাইল (আঃ) রাসুল (সাঃ) এর কাছ থেকে বিদায় নিলেন। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তার বন্ধুর জন্য বোরাকের থেকেও গতি সম্পন্ন বাহন ‘রফরফ’ পাঠিয়ে দিলেন। এ বাহনে চড়ে রাসুল (সাঃ) আল্লাহর নূরের সত্তর হাজার পর্দা অতিক্রম করে মহান প্রভুর দরবারে গিয়ে পৌছলেন। দুজন দুজনার খুব নিকটবর্তী হলেন। আল্লাহ হলেন মেজবান আর আমার নবী (সাঃ) হলেন মেহমান। সুন্নততরীকা হলো মেহমান কারো বাড়িতে গেলে মেজবানের জন্য কিছু তোহফা/উপহার নিয়ে যাওয়া। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাতে গেছেন তার প্রিয় রাসুল(সাঃ), তিনি কি নিয়ে যেতে পারেন ? আল্লাহতো দুনিয়াবী কোন কিছুরমুখাপেক্ষী নন। তাহলে ?
আল্লাহর হাবীব জনাবে মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন আল্লাহর খুবই নিকটবর্তী হলেন, এমনকি তাদের মাঝে একটি রশি বা একটি ধনুকের সমান জায়গার ব্যাবধান ছিলো তখন- শ্রেষ্ঠ তোহফা হিসেবে পড়লেন. “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াসসালাওয়াতু ওয়াত্তয়্যিবাত” “সকল মর্যাদাব্যঞ্জক ও সম্মানজনক সম্বোধন আল্লাহর জন্য। সমস্ত শান্তি, কল্যাণ ও প্রাচুর্যের মালিক একমাত্র আল্লাহ। সব প্রকার পবিত্রতার মালিকও তিনি।” এক কথায় রাসুল (সাঃ) আর্থিক, শারিরীক ও মৌখিক সব ধরনের ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য তোহফা হিসেবে পেশ করলেন।
অতপর আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.) কে তিনটি জিনিষ দিলেন এভাবে- “আসসালামু আ’লাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লহি ওয়াবারাকাতুহু” হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক।
উম্মতের কান্ডারী নবী (সাঃ) এমন মিলন মুহুর্তেও তার উম্মতকে ভুলেন নাই। আল্লাহর অনুগ্রহ তার উম্মতের জন্যও চেয়ে নিলেন এভাবে-“আসসালামু আ’লাইনা ওয়া আ’লা- ই’বাদিল্লাহিস সলিহীন” “আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাহদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।”
আল্লাহ এবং তার রাসুল (সাঃ) এর এমন মধুর আলোচনা শুনে আরশবাহী- সকল ফেরেশাতাগণ সমস্বরে একত্রে বলে উঠলেন- “আশহাদু আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মোহাম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসুলুহু” “আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি মোহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দাহ এবং রাসুল।”
আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামিন, রাসুল (সাঃ) এবং ফেরেশতাদের এমন সম্মিলিত কথোপকথনই হয়ে গেলো তাশাহহুদ, যা মে’রাজের রজনীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোহফা হিসেবে পাওয়া পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ সহ প্রত্যেকনামাজের দুই রাকাত বা চার রাকা’তের বৈঠকে পড়া ওয়াজিব।
শব্দের অর্থ আকারে তাশাহহুদ:
তাশাহুদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা: তাশাহ্’হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পাচ রকমের পাওয়া যায় হাদিসের মাঝে(প্রত্যেকটির নামকরন করা হয়েছে সাহাবাদের নামে যিনি তা বর্ণনা করেছেন)
আমরা শিখব যেটা ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেছেন– তিনি বর্ণনা করেন যে নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাকে শিক্ষা দিয়েছেন তার হাত নবী (সঃ) হাতের মাঝে রেখে, ইবনে মাসউদ পরবতীতে বর্ণনা করেছেন তার ছাত্র আলকামাহকে ঠিক সেই ভাবে যেভাবে মুহাম্মদ (সঃ) তাকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং আলকামাহ শিক্ষাদেন তার ছাত্র ইবরাহিম -আন-নাকাহ কে ঠিক একই ভাবে ইবরাহিম থেকে হাম্মাদ ইবনে সালামাহ এবং তারপর আবু হানীফা সকলেই একইভাবে হাতের মাঝে হাত রেখে তাদের ছাত্রকে শিক্ষা দেন –এতেই বুঝা যায় তাশাহ্’হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) এর গুরুত্ব।
ইবনে আব্বাস ইবনে মাসউদ এবং বাকীরা বর্ননা করেন যে নবী করিম (সঃ) তাশাহ্’হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) শিক্ষা দিতেন যেন তিনি কোরআনের সুরা শিক্ষা দিচ্ছেন এটাই প্রামান করে তাশাহ্’হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) এবং এটা মুখস্ত করার গুরুত্.।
তাশাহুদের গুরুত্ব: ওমর (রা.) বলেন, তাশাহ্হুদ ছাড়া কোন নামাযই যথেষ্ট হয় না [মোসান্নাফ আবদুর রাযযাক, ২য় খন্ড, ২০৬ পৃঃ, সুনামে সায়ীদ ইবনে মনসুর, তারীখে বুখারী, আল আসয়েলাহ, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃঃ]।
তাই ইবনে আব্বাস (রা.) ও জাবের (রা.) বলেন, রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম আমাদেরকে তাশাহ্হুদ ঐভাবে শেখাতেন যেমন কুরআনের কোন সূরা শেখাতেন (মুসলিম, নাসায়ী, মেশকাত ৮৫ পৃঃ)।
ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহ ওয়া সালস্নাম আমাদেরকে নামাযের তাশাহ্হুদ ঐরূপ শেখাতেন যেমন কোন শিক্ষক ছোট ছেলেদের শেখান।
ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম এর যুগে এস্তেখারাহ এবং তাশাহ্হুদ ছাড়া আর কিছু লিখতাম না (মোসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, ১ম খন্ড, ২৯৪ পৃঃ)।
আবু সায়ীদ বলেন, আমরা কুরআন এবং তাশাহ্হুদ ছাড়া আর কিছু লিখতাম না। [ঐ, ২৯৩ পৃঃ]। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আবু বাকর (রা.) তাঁদেরকে মেম্বারে বসে তাশাহ্হুদ শেখাতেন, যেমন শিশুদেরকে মক্তবে শেখানো হয় (ঐ, ২৯২ পৃঃ)।
রাসুলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম বলেন, তোমরা তাশাহ্হুদ শিখে নাও। কারণ, তাশাহ্হুদ ছাড়া নামাযই নেই [বাযযার, তাবারানী আওসাত, কান্যুল ওমমাল, ৭ম খন্ড, ৩৩৯ পৃঃ)
Keyword: তাশাহহুদ এর বাংলা উচ্চারণ, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, দোয়া মাসুরা বাংলা, দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ, দোয়া মাসুরা, কবর জিয়ারতের দোয়া বাংলা উচ্চারণ, তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ,তাশাহুদ আরবি ও বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ( আত্তাহিয়্যাতু ), তাশাহুদের বাংলা উচ্চারণ, তাশাহুদ বাংলা অর্থ এবং উচ্চারণ, আত্তাহিয়াতু সূরা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ, তাশাহুদের উচ্চারণ ও অর্থ, তাশাহুদ অর্থ | তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ | আত্তাহিয়্যাতু উচ্চারণ, ‘আত্তাহিয়্যাতু’র উচ্চারণ ও অর্থসহ ফজিলত