ফেসবুক থেকে আয় করার উপায়

ফেসবুক তো কমবেশি সবাই ব্যবহার করেন। কিন্তু ফেসবুক থেকে আয় করা সম্ভব – এই তথ্যটি জানতেন কি? হ্যা, আসলেই ফেসবুক থেকে আয় করার একাধিক উপায় রয়েছে। এই লেখায় আমরা ফেসবুক থেকে আয় করার ১১টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে জানবো। চলুন দেখি ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়।

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ, এমনকি ফেসবুক গ্রুপ থেকেও আয় করা সম্ভব। এছাড়াও আরো অনেকগুলো ফেসবুক থেকে আয় করার মাধ্যম রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক ফেসবুক থেকে আয় করার উপায়সমুহ সম্পর্কে বিস্তারিত।

ফেসবুক পেজ থেকে আয় করার উপায়
ফেসবুক পেজ থেকে আয় এর একাধিক প্রমাণিত পদ্ধতি রয়েছে। ফেসবুক পেজ থেকে আয় করতে হলে প্রথমত দরকার হবে একটি সাজানো গোছানো এবং জনপ্রিয় পেজ। প্রথমেই ফেসবুক পেজ খোলার নিয়ম জেনে নিন। এখানে জনপ্রিয় বলতে আমরা এমন একটি পেজের কথা বুঝাচ্ছি যে পেজে পর্যাপ্ত লাইক, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ওপর কনটেন্ট ও একটিভ ফলোয়ার রয়েছে।

ফেসবুক পেজ থেকে আয় করতে গেলে দরকারী বৈশিষ্ট্যগুলি তো জানলাম, এবার জানি চলুন কিভাবেই বা এই ফেসবুক পেজ আপনার টাকা আয়ের উৎস হতে পারে।

আপনি যদি ভিডিও তৈরী করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য সুখবর। ইউটিউবের মত ফেসবুকেও ভিডিও এর মাধ্যমে আয় সম্ভব। আপনার পেজ যদি ফেসবুক মনিটাইজেশন পায়, তাহলে আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। এই বিজ্ঞাপন দেখানোর বিনিময়ে আপনাকে টাকা দেবে ফেসবুক।

ইউটিউবের তুলনায় ফেসবুকের ক্ষেত্রে ভিডিওতে ভিউস আনা অনেকটাই সহজ। এছাড়াও ফেসবুক পেজের লাইক বাড়ানো আহামরি কোনো ব্যাপার নয়। তাই আপনি যদি নিয়মিত ভিডিও কনটেন্ট বানান, সেক্ষেত্রে একই কনটেন্ট ইউটিউব ও ফেসবুক, উভয় প্ল্যাটফর্মেই পোস্ট করতে পারবেন।

ফেসবুক পেজে মনিটাইজেশন পেতে হলে কিছু শর্ত বেধে দিয়েছে ফেসবুক কতৃপক্ষ। ফেসবুক পেজমনিটাইজেশন পেতে আপনার পেজে কমপক্ষে ১০ হাজার লাইক থাকতে হবে। ১০ হাজার লাইকের পাশাপাশি সর্বশেষ ৬০ দিনের মধ্যে কমপক্ষে ৬লক্ষ ভিউস থাকতে হবে। এছাড়াও পেজে কমপক্ষে ৫টি ভিডিও থাকা বাধ্যতামূলক।

ফেসবুক থেকে আয় করার উপায়
এছাড়াও আপনার কনটেন্ট এর দৈর্ঘ্য যদি তিন মিনিট বা তার বেশি হয়, সেক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন দেখাতে সুবিধা হয়। তাই ফেসবুক কতৃপক্ষ তিন মিনিট বা তার অধিক দৈর্ঘ্যের ভিডিও আপলোডে উৎসাহী করে থাকে।

ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায় – মার্কেটপ্লেস
ফেসবুক কিন্তু বর্তমানে একাই অনেক ধরনের ওয়েবসাইটের ভূমিকা পালন করছে। যেমনঃ ফেসবুককে বর্তমানে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অনলাইন মার্কেটপ্লেস বলা চলে। প্রচারের মাধ্যম হিসাবে ফেসবুক অনেক সহজ ও কার্যকরী বলে ছোটখাটো ব্যবসাও দারুণ লাভে চালানো যায় ফেসবুকের মাধ্যমে।

অনলাইন মার্কেটপ্লেস এর মাধ্যমে আয় করার অনেক উপায় থাকলেও ফেসবুক এর ই-কমার্স ফিচারগুলোকে কাজে লাগাতে পারলেই অল্পতেই অধিক প্রচারের পাশাপাশি সফল ব্যবসা দাড় করানো সময়ের ব্যাপার মাত্র। আপনার প্রোডাক্ট যদি ভালো হয় আর ক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারলে, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস ই হতে পারে আপনার ব্যবসার উন্নতির ট্রাম্প কার্ড। ফেসবুক থেকে কিভাবে আয় করা যায় তার এটাও একটা উপায়।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বর্তমানে অনলাইনে আয়ের হট টপিক বলা চলে। কম পরিশ্রমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আয়ের সম্ভাবনা থাকায় অনেকেই ঝুঁকছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের দিকে। ফেসবুক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এরও সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র।

যারা জানেন না অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি, তাদের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে এর খুঁটিনাটি তুলে ধরি। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনি হলেন একজন ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যজন। আপনার সুপারিশে যদি কোনো ক্রেতা কোনো প্রডাক্ট ক্রয় করেন, সেক্ষেত্রে আপনি যেহেতু প্রোডাক্টটির ক্রয়ের পেছনে ক্রেতাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন তাই আপনি পাবেন কমিশন।

অ্যামাজন, দারাজ বা বিডিশপ এর মত অনলাইন শপ থেকে মানুষ নিয়মিত প্রোডাক্ট ক্রয় করে থাকে। এখন কোনো ক্রেতা যদি আপনার রেফারেল লিংক ব্যবহার করে প্রোডাক্ট ক্রয় করে, সেক্ষেত্রে পণ্যটির দামের একটি নির্দিষ্ট অংশ আপনার আয় হবে। আপনার রেফারেল লিংক থেকে যত বেশি সেল হবে, আপনি তত বেশি আয় করতে পারবেন।

ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করার উপায়
ফেসবুক গ্রুপগুলোর জনপ্রিয়তা দিনদিন বেড়েই চলেছে। ফেসবুক গ্রুপের এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আপনিও আয় করতে পারেন। ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় এর ক্ষেত্রে আপনার দরকার পড়বে একটি ফেসবুক গ্রুপ যেখানে নিয়মিত পোস্ট হয় আর ভালো এনগেজমেন্ট রয়েছে।

প্রথমত আপনার ফেসবুক গ্রুপে অর্থের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করতে পারেন, যা বর্তমানে একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও আপনার পণ্য বিক্রিতেও ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করে আয় করতে পারেন।

মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট
ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালায়। এই মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের জন্য দরকার পড়ে যোগ্য মার্কেটিং ম্যানেজারের। ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কে আপনার ভালো জ্ঞান থাকলে বিভিন্ন পেজের মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের কাজ নিতে পারেন, যার থেকে ভালোই আয় সম্ভব।

ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল
আপনার যদি একটি ব্লগ বা নিউজ ওয়েবসাইট থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার ব্লগ পোস্ট বা নিউজ ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল দ্বারা মনেটাইজ করে আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে ফেসবুক। গুগল সার্চ র‍্যাংকিং আর গুগল এডসেন্স যদি আপনার ওয়েবসাইটে রেভিনিউ যোগাতে সক্ষম না হয়, সেক্ষেত্রে ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনার ব্লগ বা নিউজ সাইট থেকে আয় করতে পারবেন।

লাইক কমেন্ট শেয়ার
ফেসবুক পোস্ট এ লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করে আয় করার কথা হয়ত কমবেশি সবাই শুনেছেন। আসলেই কিন্তু ফেসবুকে লাইক, শেয়ার কিংবা কমেন্টের মাধ্যমে আয় সম্ভব। এসব ছোটোখাটো কাজকে মাইক্রোওয়ার্ক বা মাইক্রোজব বলে। মাইক্রোওয়ার্কার্স, পিকোওয়ার্কার্স এর মত অনেক সাইটেই ফেসবুকে লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার এর কাজ করে আয় করা যায়। তবে অবস্থাভেদে এই কাজগুলো ফেসবুকের নীতিমালার লঙ্ঘন হয়ে যেতে পারে, যা আপনার ফেসবুক একাউন্টকে ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।

ফ্রিল্যান্সিং
আপনি কি একজন ফ্রিল্যান্সার? তবে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে আপনার কাজ তুলে ধরে কাজ পেতে পারেন। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ভিডিও এডিটরস বাংলাদেশ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে যেখানে দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষ তাদের এডিট করা সেরা ভিডিওগুলো পোস্ট করে থাকেন।

এসব পোস্ট থেকে অনেকেই বিভিন্ন কাজে ভিডিও এডিটিং এর জন্য হায়ার করেন। এছাড়াও প্রয়োজনে অনেকেই ভিডিও এডিটর এর খোঁজে এই গ্রুপে পোস্ট করে থাকেন। ফেসবুকে বর্তমান প্রতিটি বিষয়ের জন্যই গ্রুপ রয়েছে। আপনার কাজের মূল্যয়ন দিবে এমন গ্রুপের অভাব থাকার কথা নয়।

লিংক শর্টনার
ফেসবুকে বিভিন্ন রিসোর্সনির্ভর গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপে মানুষ যা খুঁজছে তার সমাধান দিন লিংক শর্টনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আর আয় করুন ফেসবুক থেকে খুব সহজেই। ধরুন, কেউ একজন একটি ভিডিও ক্লিপ কিংবা অ্যাপ এর লিংক খুঁজতে গ্রুপে পোস্ট দিলো।

আপনার কাছে যদি ওই ভিডিও বা অ্যাপ থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে অ্যাপটি কোনো একটি লিংক শর্টনার এর মাধ্যমে প্রদান করলেন। এক্ষেত্রে উক্ত ব্যাক্তির ও উপকার হলো আর আপনিও লিংক শর্টনার ওয়েবসাইট থেকে আয় করতে পারবেন। লিংক শর্টনার হিসেবে Adfly বা Ouo.io এর মত বিভিন্ন টুল ব্যবহার করতে পারেন।

একাউন্ট বা পেজ ম্যানেজমেন্ট
অনেকের ফেসবুক পেজ বা একাউন্টে প্রচুর ফলোয়ার থাকার পরও এসব চালানোর সময় পান না। সেক্ষেত্রে একাউন্ট বা পেজ ম্যানেজ করার জন্য তারা মানুষ নিয়োগ করেন। অন্যের ফেসবুক একাউন্ট বা পেজ ম্যানেজমেন্ট এর কাজ করেও ফেসবুক থেকে আয় করতে পারেন।

ফেসবুক একাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ বিক্রি
শুরুতেই বলে নিই, ফেসবুক একাউন্ট, পেইজ বা গ্রুপ বিক্রি করা ফেসবুকের নীতিমালার লঙ্ঘন হতে পারে, যা আপনার একাউন্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ফেসবুক একাউন্ট, পেজ বা গ্রুপ খোলা হয়ত সহজ। কিন্তু এগুলোকে বড় করে তোলার কাজটাই সবচেয়ে কঠিন বলা চলে। পুরোনো ফেসবুক একাউন্টের সিকিউরিটি অপেক্ষাকৃত বেশি বলে অনেকেই এসব আইডি কিনে থাকেন। আবার লাইক ও মেম্বার এর জন্য অনেকে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ কিনে থাকে।

আপনি কি ফেসবুক থেকে আয় করেন? আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন কমেন্টে!

Check Also

Health for Life Nutrition A Guide to Living Well

Health for Life Nutrition A Guide to Living Well

In today’s fast-paced world, maintaining good health can seem overwhelming. But the truth is, a …