নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আবু জাহের। দীর্ঘ চার বছর পর বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে ফিরেছেন। দেশে ফিরেই আদরের মেয়ের মুখটা প্রথমবারের মতো দেখলেন। মেয়েও জন্মের পর বাবাকে প্রথম দেখলেন। কিন্তু এই দেখায় যে শেষ দেখা হবে তা কে জানত? বাবাকে কাছে পেয়ে চোখের আড়াল হতে দিত না মেয়ে তাসপিয়া। সবসময় বাবার সঙ্গে থাকত। এমনটাই বর্নণা দিচ্ছিলেন নোয়াখালীতে গুলিতে নিহত চার বছরের শিশু তাসপিয়ার বাবা আবু জাহের। তিনি বলেন, যেখানেই যাই আমার পিছু ধরে। কিন্তু প্রথম দেখাই যে শেষ দেখা হবে তা বুঝিনি। আমার কলিজা খালি করে দিল সন্ত্রাসীরা। মেয়েটার সঙ্গে ঈদটাও করতে দিল না।
গতকাল শনিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর দুইটার দিকে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একটি কেবিনে বসে কথা গুলো বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তাসপিয়ার বাবা। এসময় পাশে বসা তাসপিয়ার মা জেসমিন আক্তারের কান্নাও যেন থামছিল না। তিনি বলেন, আমার ছোট্ট একটা মেয়ে। তার কী দোষ? যারা আমার মেয়েকে মারছে, আমি তাদের সবার ফাঁসি চাই।
হাসপাতালের বিছানায় বসে নিহত তাসপিয়ার বাবা আবু জাহের বলেন, হাজীপুর এলাকাটা কয়েকটা পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না। কেউ কিছু বললেই অত্যাচার করে। মেয়েদের ইভটিজিংসহ নানা ভাবে অত্যাচার চালায়। তাদের নামে থানায় ৮-১০ টি মামলা রয়েছে। বেগমগঞ্জ থানা প্রশাসন এখনো তাদের কিছু করতে পারেনি। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে চাইলেও তিন দিন পার হয়ে গেছে। একটা সন্ত্রাসীকেও ধরতে পারেনি। আমি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি তাঁর কাছে মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
তিনি বলেন, আমি বিদেশে থাকি। ৮ বছর পর আল্লাহ আমাকে একটি মেয়ে সন্তান দিয়েছে। জালিম সন্ত্রাসিরা আমার মেয়েকে এমন ভাবে গুলি করেছে, আমাকে মেয়ের সঙ্গে ঈদটাও করতে দিল না। আমার কলিজা খালি হয়েছে, ভবিষ্যতে যেন কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। তিনি আরো বলেন, এই সন্ত্রাসীরা চিহ্নিত। এদের নামে আট-দশটা মামলা আছে। ইমন, মঈন, রহিমসহ আরও কয়েকজন আছে। আমি বিদেশ থাকায় সবার নাম জানি না। আমরা চার ভাই বিদেশ থাকি। বাড়িতে পুরুষ লোক নেই। হাসপাতালে বসেই শুনতে পাচ্ছি, লোকজন বলছে, আমাদের বাড়িতে হামলা করবে। আমি আমার পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তারও দাবি জানাচ্ছি।
আবু জাহের পূর্ববিরোধের কারণ জানিয়ে বলেন, আমাদের পাশের বাড়ির ফিরোজ ও সুফি আলমদের মাটি কিনেছিল বাদশা। সে বেশি মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছিল। এ নিয়ে বাদশার সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব হয়। আমি প্রতিবেশী হিসেবে বাদশার মাটি কাটায় বাধা দিয়েছিলাম। এ নিয়ে মিটিংও হয়েছে। সেটা এক সপ্তাহ আগের ঘটনা। ওই বাদশারই ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আমার মেয়েকে গুলি করে মেরেছে। আমি আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে দোকানে বসে ছিলাম। প্রথমে রিমন ওপরের দিকে গুলি ছুড়ল। এরপর বলল তুই তো মিটিংয়ে ছিলি। এই বলে আমার মেয়েকে প্রথমে একটা পাথর মারল। এরপর আমি মেয়েকে কোলে নিয়ে দৌড় দিলে তারা গুলি করল। এতে শিশু তাসপিয়ার মাথায় গুলি লাগে। আর তার বাবাও গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে ওই দিন রাত সাড়ে ৮টায় কুমিল্লায় তাসপিয়ার মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকেল চারটার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামের মালেকার বাপের দোকান নামক স্থানে মাওলানা আবু জাহের (৩৭) ও তাঁর কোলে থাকা ৩ বছরের শিশু তাসফিয়া আক্তার ওরফে জান্নাতকে স্থানীয় রিমন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত শিশুর পিতা সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহেরও (৩৭) গুলিবিদ্ধ হন। তিনি উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের রাসাদ মিয়ার বাড়ির মৃত জানু সরদারের ছেলে। অভিযুক্ত রিমন (২৫) একই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের দানিজ বেপারী বাড়ির মমিন উল্যার ছেলে। রিমন এলাকার চিহিৃত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গুলিবিদ্ধ আবু জাহের গত আট বছর ধরে সৌদিপ্রবাসী। তিনি সেখানকার একটি বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করেন। গুলিতে আবু জাহেরের ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শুক্রবার থেকে তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি ডান চোখে দূরের কিছুই দেখছেন না। কাছের কিছুও একেবারে ঝাপসা দেখছেন।
Sotto TV We Publish technology, various types of tips, career tips, banking information, methods of earning online