দেশের ইতিহাসে স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে বড় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। বন্যার্তদের জন্য তিন ধাপে ত্রাণ বিতরণ ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য এ বছর সর্বমোট ১০০ কোটি টাকার সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফাউন্ডেশনটির চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।
ইসলামিক এই স্কলার জানান, বন্যার্তদের জন্য আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে অনুদান ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে এই ১০০ কোটি টাকার মাইলফলক পার হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষের অনুদান ও দান করতে এখন কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না। একটা সময় ছিল- যখন মানুষ কোনো দান করলে, কেন এখানে টাকা দেওয়া হলো এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো। কিন্তু সেই ভয়টা না থাকায় এখানে অনুদানের পরিমাণটা অনেক বেড়েছে।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, সর্বমোট ১ লাখ ৬০ হাজার পরিবারের জন্য খাবারের আয়োজনসহ আরও ৫ হাজার পরিবারের জন্য থাকবে পুনর্বাসন কার্যক্রম। বন্যা পরবর্তী এ পুনর্বাসনে দেওয়া হবে টিন ও নগদ টাকা।
এদিকে, শায়খ আহমাদুল্লাহ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) তার ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেন, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন বন্যা তহবিলে অনুদান পাঠানোর শেষ সময় আগামী মঙ্গলবার রাত ১২ টা। এরপর বন্যা তহবিলে টাকা না পাঠানোর জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের পর কেউ টাকা পাঠালে সেটা পরবর্তী বন্যা-দুর্যোগে ব্যয় করা হবে।
চলতি মাসেও বন্যার শঙ্কা, হানা দেবে তাপপ্রবাহ ও বজ্রঝড়
চলতি সেপ্টেম্বরে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এছাড়া চলতি মাসে ৩-৫ দিন বজ্রঝড়ের পাশাপাশি ১-২টি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সেপ্টেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাসে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. ছাদেকুল আলমের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সদ্য বিদায়ী আগস্টে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি (+৪৬.২ শতাংশ) বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ রেকর্ড করা হয়। এছাড়া আগস্টে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। যার প্রভাবে বিদায়ী মাসটিতে দৈনিক সর্বোচ্চ ২৭৬ মিলিমিটার (মাইজদীকোর্ট) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তবে চলতি সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পাশাপাশি এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যারমধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ২-৩ দিন মাঝারি ধরণের ঝড় এবং সারাদেশে ৩-৫ দিন হালকা বজ্রঝড় হতে পারে। সেই সঙ্গে চলতি সেপ্টেম্বরে দেশে বিচ্ছিন্নভাবে ১-২টি মৃদু তাপপ্রবাহ (৩৬-৩৮° সে.) বয়ে যেতে পারে। এতে চলতি মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা সামান্য বেশি থাকতে পারে। এছাড়া সেপ্টেম্বরে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উল্লেখ্য, আগস্টের শেষদিকে টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তলিয়ে যায় দেশের ১১ জেলা। সেই সঙ্গে পানিবন্দি হয়ে পড়েন লাখ লাখ মানুষ। বৃষ্টিপাত কমে আসায় বন্যাকবলিত জেলাগুলো বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। সবশেষ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বন্যায় ৫৯ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু (২৩ জন) হয়েছে দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের জেলা ফেনীতে।